OrdinaryITPostAd

রেশম চাষ পদ্ধতি - রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

প্রিয় পাঠক, আপনি কি রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি এ সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাছাড়াও রেশম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে রেশম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাবেন। তাই রেশম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

সর্বপ্রথম চীনের রেশম চাষ শুরু করা হলেও ঠিক ঐ সময় থেকেই ভারতবর্ষ এক ধরনের রেশম চাষ করা হয়। ভারতবর্ষে চাষকৃত রেশমকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি হয় বর্তমানে মানুষজনকে রেশম চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। রেশম চাষ একটি লাভজনক চাষ পদ্ধতি। কেননা এতে একবার চারা রোপন করলে ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত ঐ গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়।

রেশম চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ হয় বর্তমানে মেয়েরাও এটি করে থাকে। রেশম চাষ করার ফলে দেশে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। কেননা একই পরিমাণ জমিতে অন্যান্য চাষ করতে যতজন লোক প্রয়োজন হয় রেশম চাষ করতে তার চেয়ে অনেক বেশি লোকের প্রয়োজন। এর কারণে এই চাষ পদ্ধতি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দেশের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রেশম চাষ পদ্ধতিতে বছরে চারবার সুতা উৎপাদন করা যায়। যার কারণে অনেক মুনাফা অর্জন করা যায়। বাংলাদেশের রেশম শিল্প এখন বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও সুতা ও বস্ত্র রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায় সবচেয়ে বেশি রেশম চাষ করা হয়।

রেশম চাষ কাকে বলে

রেশম সুতা উৎপাদন করার জন্য রেশম পোকাকে যত্ন সহকারে লালন-পালন করাকে রেশম চাষ বলে। চীনারা সর্বপ্রথম রেশম চাষ শুরু করে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় এটি একটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রেশম চাষ করার ফলে একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত লাভ করে। রেশম চাষকে ইংরেজিতে সেরিকালচার বলা হয়ে থাকে।

রেশম চাষ হয় কোন জেলায়

রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকায় পৃথিবীর অনেক দেশেই রেশম চাষ করা হয়। বাংলাদেশেও রেশম চাষ করা হয়ে থাকে। রাজশাহী জেলায় সবচেয়ে বেশি রেশম চাষ করা হয়। রেশম চাষ করার মূল উদ্দেশ্য হলো রেশমি সুতা উৎপাদন। আর রেশমি সুতা রেশমি কাপড় তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। যার বাজার মূল্য অনেক বেশি এবং এই রেশমি কাপড় বিদেশী রপ্তানি করা যায়। রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট রেশম চাষকে গুরুত্বের সাথে দেখছে।

কোন শাসনামলে বাংলায় রেশমের চাষ শুরু হয়

সর্বপ্রথম রেশমের চাষ শুরু হয় চীনে। ভারতবর্ষেও খ্রিস্ট জন্মের পূর্বেই এক ধরনের রেশমের চাষ শুরু হয়। একে বলা হতো অতুঁত রেশম। এর এসব হবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি তসর, অন্যটি মুগা এবং আরেকটি এণ্ডি। মূলত মুঘল শাসনামলে এই রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়তে থাকে।

রেশম চাষের কারণে ইংরেজরা এদেশে বাণিজ্য শুরু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেশমের টানে ভারতবর্ষে আসে। এ সময় বাংলায় বাংলার নিজস্ব রেশম ও চীন থেকে আগত রেশম এই দুই রকম রেশমই চাষ করা শুরু হয়।

রেশম শিল্প কোথায় বিখ্যাত

বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা রেশম শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য একটি সিল্ক গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে। এছাড়াও এখানে একটি সিল্ক কারখানা তৈরি করা হয়েছে রেশম শিল্পের জন্য। মূলত রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট রেশম চাষের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

রাজশাহী অঞ্চলের রেশম চাষ সারা বাংলাদেশের সিল্ক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সুতা সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও এই অঞ্চলে উৎপাদিত সিল্ক দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রাজশাহী শহরে এই খাতের সাথে প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত আছে। রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা এর থেকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার কারণে দেশে দিন দিন রেশম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রেশম চাষ পদ্ধতি

রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি হয় অনেকেই রেশম চাষের দিকে ছুটছে। অনেকে রেশম চাষ করার ফলে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অনেকে রেশম চাষ পদ্ধতি না জানার কারণে তারা সফলতার মুখ দেখছে না। তাই রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিকে তাকিয়ে শুধু রেশম চাষ করলে চলবে না রেশম চাষ পদ্ধতি জানার পরে রেশম চাষ করতে হবে। রেশম চাষ পদ্ধতি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো

তুঁত গাছ রোপণ ও এর পরিচর্যা

রেশম চাষ করতে গেলে সর্বপ্রথম তুঁত গাছ রোপন করতে হয়। তুঁত গাছ সাধারণত উঁচু উর্বর দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। তুঁত গাছ রোপনের জন্য প্রথমে মাটিকে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। এরপর এতে গোবর সার, ইউরিয়া সার, টিএসপি সার, এমওপি সার যথাক্রমে ৪০ কেজি, ৫০ কেজি, ৩০ কেজি, ১৫ কেজি মাটির সাথে মিশে তারপর তুঁত গাছ রোপন করতে হয়। এছাড়াও মাটিতে দাবা কলম ও শাখা কর্তন এই দুই পদ্ধতিতে তুঁত গাছের চারা উৎপন্ন করা যায়।

তুঁত গাছের যত্ন

জমি তৈরি করার সময় যে পরিমাণ সার জমিতে দেয়া হয়েছিল সে পরিমাণ সার প্রত্যেক বছরে জমিতে দিতে হবে। তবে এই সার একবারে না দিয়ে বারেবারে দিতে হবে। মূলত সার পাতা তোলার পরে দিতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে বর্ষার সময় কেন গাছে সার দেওয়া না হয় এবং খরার সময় সেচ না দিয়ে সার দেওয়া না হয়। এছাড়াও গরু ছাগলের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য বেরা দিতে হবে।

তুঁত পাতা সংগ্রহ

গাছ থেকে বেশি পাতা পাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে গাছের গোড়ার গাছের পাতা ফেলে দিতে হবে। বছরের মূলত চারবার পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছ রোপনের ছয় মাসের মধ্যে প্রথম পাতা সংগ্রহ করা যায়। এরপর প্রতি তিন মাস পর পর পাতা সংগ্রহ করা যায়। প্রথম দিকে কচি পাতা এবং আস্তে আস্তে বয়স্ক পাতা পাওয়া যায়।

একটি গাছ থেকে সাধারণত ৯-১০ কেজি পাতা পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে এর বেশিও পাতা সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত পাতা ভোরে বা বিকেলে সংগ্রহ করা ভালো। সর্বদা রেশম পোকাকে শুকনো পাতা দেওয়া উচিত।

রেশম পোকার লার্ভা সংগ্রহ ও প্রতিপালন

এসব পোকার জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঘর হলো খরের ছাউনির ঘর। কেননা এসব ঘরের তাপমাত্রা ও আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ। রেশম পোকা থেকে রেশমি সূতা উৎপাদনের জন্য তাপমাত্রা ও আদ্রতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে ঘরের রেশম পোকা রয়েছে সেই ঘরে যেন কোনোভাবেই মাছি বা অন্যান্য পোকা প্রবেশ করতে না পারে।

ঘরের তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা তার পরিমাপ করার জন্য থার্মোমিটার এবং আদ্রতা পরিমাপ করার জন্য আদ্রতা পরিমাপক যন্ত্র রাখতে হবে। এছাড়াও রেশম প্রকার জন্য বাঁশের ডালা, ডালা রাখার তাক, জাল, আর্দ্রতা বাড়ানোর জন্য স্পঞ্জ, তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য চুলা ইত্যাদি। তাছাড়াও প্রতিবার চাষে রেশম পোকার ডিম, তুঁত পাতা, ফরমালিন, চুন ইত্যাদি প্রয়োজন।

এরপর রেশম পোকাকে বিভিন্ন উপায়ে পরিচর্যা করে এবং তুঁত পাতা খাইয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে রেশম গুটি সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে রেশম গুটি থেকে রেশমি সুতা তৈরি করা হয়।

রেশম পোকার জীবন চক্র

রেশম পোকার ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম ফুটানোর ব্যবস্থা করা হয়। ডিম ফুটে যখন লার্ভা বের হয় তখন তাদের পাতা খাইয়ে লালন-পালন করতে হয়। লার্ভা সাধারণত ২০ থেকে ২৫ দিন থাকে। এর মধ্যে এরা চারবার খোলস বদলায় এবং প্রতিবার খোলস বদলানোর পর এরা কিছু সময়ের জন্য অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর এরা গুটি বাঁধবার জন্য তৈরি হয়।

রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরি

রেশম পোকাকে গুটি সারানোর জন্য যে আলাদা জায়গায় রাখা হয় সেখানে রাখার তিন চার দিন পর গুটি ছাড়াতে হয়। গুটি ছাড়ানোর জন্য পোকা গুলোকে তাপ দিয়ে মেরে ফেলা হয়। গুটিতে রেশম সুতার সাথে সাথে এক ধরনের আঠালো পদার্থও থাকে যা সুতাকে গুটির সাথে আটকে রাখে।

এসব গুটিয়ে ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে কিছুক্ষণ রেখে কাঠি দিয়ে নাড়ালে সুতার মুখ উন্মুক্ত হয়। এরপর সুতার মুখ একটি চরকিতে আটকিয়ে চরকিটি অনবরত ঘুরালে সুতা চরকিতে পেচতে থাকে। একে কাঁচা সুতা বলে। একটি গুটি থেকে সাধারণত ৪০০ থেকে ১০০০ মিটার সুতা উৎপন্ন হয়।

রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। রেশম চাষ করার ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়। যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। এছাড়াও রেশম চাষ করার ফলে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হচ্ছে। যেহেতু রেশম চাষে তেমন কোন খরচ নেই তাই সব ধরনের পরিবারই এই চাষ করতে পারে। আবার এই চাষ পদ্ধতি জটিল না হওয়ার কারণে খুব সহজেই এর চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।

এছাড়াও রেশম চাষ করার কারণে দেশে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। কেননা রেশম চাষের কারণে দেশের রেশম শিল্পর উন্নয়ন ঘটছে। এবং এতে অনেক জনবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এটি একটি নারী বান্ধব শিল্প হওয়ার কারণে নারীরাও প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িত থাকছে। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে রেশম চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রেশম চাষে যেহেতু বছরে ৪/৫ বার ফসল ফলানো যায় তা এর থেকে বেশি মুনাফা পাওয়ার অর্জন করা যায়।

আবাদি অনাবাদি সকল ধরনের জমিতে তুঁত গাছ জন্মানোর কারণে এবং তুঁত গাছ ৩০ থেকে ৩৫ বছর বেঁচে থাকার কারণে এর থেকে অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়াও তুঁত গাছের ডাল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও রেশম সুতা, বস্ত্র ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। সুতরাং বলা যায় রেশম চাষের অর্থনীতি গুরুত্ব অপরিসীম।

লেখকের মন্তব্য

রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করলে দেখা যায় রেশম একটি অর্থকারী ফসল। কেননা এটি যেমন দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে তেমনি রেশম সুতা ও বস্ত্র রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাচ্ছে। যা আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। আমাদের যাদের পতিত জমি রয়েছে তারা সকলেই রেশম চাষ করার করার মাধ্যমে নিজেদের পরিবারকে সচ্ছল করতে পারি। এতে করে পরিবারের পাশাপাশি দেশ ও উপকৃত হবে।

প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। ধৈর্য সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url