খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি - খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় বন্ধুগণ, আপনি খেজুরের গুড় খাচ্ছেন অথচ আপনি জানেন না এটি কিভাবে তৈরি হয়? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি খেজুরের রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে কিভাবে রস থেকে গুড় তৈরি হয় সেই সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানতে পারবেন। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়া আপনি আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। তাই সমস্ত কিছু জানতে আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন।
ভূমিকা
খেজুরের গুড় হলো এক ধরনের খাবার যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেজুরের রস থেকে তৈরি করা হয়। শীতকালে প্রধান আকর্ষণ খেজুরের রস ও খেজুরের গুড়। শীতের পিঠাপুলি তৈরিতে খেজুরের গুড়ের জুড়ি মেলা ভার। পিঠাপুলির স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয়। সাধারণত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়।
খেজুরের রস এবং গুড় দুটি খুবই সুস্বাদু। স্বাদ এবং মানভেদে খেজুরের গুড় বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন পাটালি, লালি, হাজারী ইত্যাদি। খেজুরের গুড়ের চাহিদা শীতকালে থাকলেও অনেকে সারা বছর এই গুড় খেয়ে থাকেন। তবে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং রস থেকে গুড় তৈরি করা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয় হয়। বর্তমানে এর প্রতি মানুষজন তেমন আগ্রহী নয়।
এতে করে খেজুরের গুড়ের উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। যদিও সারা দেশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই খেজুরের গুড় উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটাতে হবে। তাহলেই খেজুরের গুড় থেকে অর্থনৈতিকভাবে দেশ লাভবান হবে। যেহেতু খেজুরের গুড় গ্রাম অঞ্চলে বেশি উৎপাদন করা হয় তাই এটি যদি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় তবে এর থেকে গ্রামাঞ্চল বেশি উপকৃত হবে।
খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি
নানা রকম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। এর জন্য প্রথমে খেজুর গাছকে রস সংগ্রহের জন্য উপযোগী করে তোলা হয় এবং রস সংগ্রহ করার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়।
রস সংগ্রহঃ প্রথমে গাছিরা খেজুর গাছের অতিরিক্ত ডালপালা ছাঁটাই করেন। এরপর তারা গাছের মাথার দিকে ১০ ইঞ্চির মতো জায়গার বাকল তুলে ফেলেন। এভাবে কিছুদিন রাখার পর বাকল তুলে জায়গাটি শুকিয়ে যায়। তারপর গাছিরা পুনরায় সেই জায়গার ছাল তুলে ফেলেন। এর সময় একটু গভীর করে কাটা হয়।
সাধারণত দ্বিতীয়বার কাটার পর গাছ থেকে অল্প অল্প রস বের হয়। গাছ থেকে রস বের হলে গাছিরা হারে নিয়ে খেজুর গাছে ওঠেন। তারা কাটা অংশের নিচের দিকে দুই ধারে দুইটি কাঠি পুঁতে দেন। এবার দড়ির মাধ্যমে গাছের ছাল ছাড়া মানুষের একটু নিচে হাড়িটি বেঁধে দেওয়া হয়। খেজুর গাছ ত্রিভুজ আকৃতির করে কাটা হয়।
আরো পড়ুনঃ ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা
নিচের কোণের মতো অংশ থেকে হাড়ি পর্যন্ত এক টুকরো বাঁশ দেয়া হয়। বাঁশের সেতুব দিয়ে সমস্ত কাটা অংশ থেকে গরিয়ে গরিয়ে রস হাড়িতে করতে শুরু করে। গাছিরা সাধারণত সন্ধ্যার আগে গাছে হাড়ি বাঁধেন এবং পরদিন সকালে তারা হাড়ি নামিয়ে নিয়ে যান। পরে আরেকটি হাড়ি গাছে বেঁধে দেওয়া হয়।
রস সংগ্রহের সময়কালের উপর ভিত্তি করে রসকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। গাছ চাঁছার পর প্রথম রাতে যে রস সংগ্রহ করা হয় তাকে জিরান বলে। এটি গুনে ও মানে সবচেয়ে ভালো হয় এবং পরিমাণে অনেক বেশি পাওয়া যায়। পরের দিন গাছের কাঁটা অংশ আবার চেয়েছে পরিষ্কার করে যে রস সংগ্রহ করা হয় তাকে দোকাট বলে।
দোকাট রসের গুণগত মান জিরানের মতো নয়। জিরানের থেকে দোকাটের রস মিষ্টি ও পরিমানে কম হয়। তৃতীয় রাতে যে রস পাওয়া যায় তাকে ঝরা রস বলা হয়। দোকাটের চেয়েও কম মিষ্টি ও পরিমানে কম হয়। অনেক ক্ষেত্রে ঝরা রস টক হয়ে থাকে। তিনদিন সংগ্রহ করার পর পরবর্তী তিনদিন গাছকে অবসর দেয়া হয়।
এরপর আবার নতুন করে ঐ কাটা অংশে চাঁছা হয় এবং রস সংগ্রহ করা হয়। তবে রাতে যেসব রস সংগ্রহ করা হয় সেসব রসের তুলনায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যেসব রস সংগ্রহ করা হয় তার গুণগতমান খারাপ। মূলত রাতের রস দিয়েই উচ্চমানের তৈরি করা সম্ভব।
তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দিনের রস দিয়ে নিম্নমানের গুড় তৈরি করে চড়া দামে বাজারজাত করে থাকেন। গাছিরা সমস্ত গাছ থেকে একটি বড় হাড়িতে রস সংগ্রহ করেন।
রস থেকে গুড় তৈরিঃ এরপর রস বড় হাড়ি থেকে মাটির চুলার উপর রাখা একটি চতুর্ভুজাকৃতির বড় তাওয়ার উপর ভালো করে ছেঁকে ঢালা হয়। এরপর গাছিরা রস জাল করতে শুরু করেন। ততক্ষণ পর্যন্ত জাল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত রস জমাট বেঁধে গুড়ের উপযোগী না হয়। এ সময় চাষিরা জাল দেয়ার জন্য খেজুর গাছের ডাল, খর, বিভিন্ন গাছের ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন।
রস জাল করার সময় একটু পর পর রসের মধ্যে ফেনা তৈরি হয়। যেগুলো গাছিরা তুলে ফেলে দেন। রস গুড়ের উপযোগী হলে জাল দেওয়া বন্ধ করা হয় এবং ঠান্ডা করতে রাখা হয়। রস ঠান্ডা হয়ে আসলে তা তাওয়ার এক সাইডে চলে আসে।
এ সময় সেখান থেকে অল্প পরিমাণ রস আলাদা করে নিয়ে তার অন্য সাইডে জাল দেওয়া ব্যক্তি ঘষতে থাকেন। এতে রসের রং সাদা হয়ে যায়। এই সাদা অংশকে বীজ বলা হয় যা রসকে গাড় করতে সাহায্য করে। বীজ বানানো হয়ে গেলে তা আবার রসের মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে নাড়া হয়।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও এর যত গুনাগুন
এরপর সমস্ত রস একটি বড় গোলাকার মাটির পাত্রে ঢালা হয়। সেখান থেকে গুড় বানানো বিভিন্ন আকৃতির ফর্মায় রস ঢালা হয় এবং জমাট বাঁধার জন্য রেখে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেই সব গুড় বাজারজাত করা হয়। আর এভাবেই রস থেকে গুড় তৈরি হয়।
তবে কিছু অসাধু গাছিরা বেশি গুড়ের আসায় রস ঘন হয়ে আসতে শুরু করলে এর মধ্যে চিনি মিশিয়ে দেন। এতে করে অল্প রস থেকে অনেক বেশি গুড় পাওয়া যায়। তবে সেসব গুড়ের গুণগতমান ঠিক থাকে না।
খেজুরের গুড়ের ব্যবহার
শীতকালে খেজুরের গুড় সবার কাছে অনেক পছন্দের। এ সময় পিঠা খাওয়ার উৎসব তৈরি হয়। আর তার মধ্যে রসে ভিজানো পিঠাই বেশি। আর এসব পিঠা বানাতে খেজুরের গুড় সকলেরই পছন্দের তালিকায় থাকে। এছাড়াও যে কোন মিষ্টি জাতীয় পিঠা বানাতে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয়।
বাজারে গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়া সত্ত্বেও মিষ্টি পিঠা বানাতে সবাই এ সময় খেজুরের গুড় ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে পিঠার মধ্যে আলাদা ধরনের স্বাদ তৈরি হয়। এছাড়া অনেকে ক্ষীর বা পায়েস করতে খেজুরের গুড় ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবার মুখের স্বাদের জন্য খালি মুখেই খেজুরের গুড় খেয়ে থাকেন।
খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান
শীতকালে সবাই পিঠাপুলি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। আর এসব পিঠাপুলিতে ব্যবহার করা হয় খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড় ব্যবহার করার ফলে পিঠাপুলির শুধুমাত্র স্বাদই ভালো হয় ব্যাপারটি এমন নয়। খেজুরের গুড়ে রয়েছে নানারকম পুষ্টিগুণ। বহুকাল ধরেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিভিন্ন চিকিৎসায় গুড়ের ব্যবহার হয়ে আসছে।
গুড়ে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণ বিদ্যমান থাকায় এটি স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। পুষ্টিবিদরা বলেছেন চিনির থেকে গুড় খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কেননা এতে রয়েছে নানা রকম পুষ্টি উপাদান। আবার বিভিন্ন ধরনের গুড়ের থেকে খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি।
খেজুরের গুড়ে রয়েছে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি। এছাড়াও ১০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ে থাকে ১.৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.৩ চর্বি, ৮৫.৭ গ্রাম শর্করা এবং ২.৫ গ্রাম আঁশ।
খেজুরের গুড় কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোর ও ফরিদপুর জেলা বসিরহাট ও সাতক্ষীরায় এবং ভারতের নদীয়া জেলার কিছু অংশে এবং ২৪ পরগনায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছের চাষ করা হয়।
এইসব এলাকাতেই খেজুরের গুড় বেশি পাওয়া যায়। তবে শহর অঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি খেজুরের গুড় তৈরি হয়। একটি খেজুর গাছ লাগানোর সাত থেকে আট বছরের মাথায় রস ও ফল দিয়ে থাকে এবং তা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা
চিকিৎসকদের মতে চিনি থেকে খেজুরের গুড় খাওয়া অনেক বেশি উত্তম। কেননা এতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ। খেজুরের উপকারিতা গুলো হলোঃ
- এটি হজম প্রক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণ খেজুরের গুড় রাখা প্রয়োজন।
- খেজুরের গুড় চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- খেজুরের গুড়ে পর্যাপ্ত আয়রন আছে। এ কারণে এটি রক্তস্বল্পতা রোধে সাহায্য করে।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত খেজুরের গুড় খেতে পারেন। এতে করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে খেজুরের গুড়।
- খেজুরের গুড় ঠান্ডা জনিত এলার্জি থেকে অনেকটাই দূরে রাখে। তাই যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত অল্প করে খেজুরের গুড় খেতে পারেন।
- খেজুরের গুড় শরীরের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়।
- খেজুরের গুড় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- শীতকালে শরীরকে গরম রাখতে কিংবা সর্দি, কাশি ও জ্বরের হাত থেকে নিজেকে দূরে রাখতে খেতে পারেন খেজুরের গুড়। ক্ষতিকর অনুজীব বৃদ্ধি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
- দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- আমরা বেশিরভাগ সময় বলে থাকি যে মিষ্টি খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু মিষ্টি খেলে ওজন কমতেও পারে। গুড়ে রয়েছে পটাশিয়াম যার শরীরে ইলেকট্রোলাইট সমতা বজায় রাখে। এতে করে শরীরে পানি ধারণ ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। এর ফলে বাড়তি মেদও ঝরে যায়।
- খেজুরের গুড় বেশি গঠনেও সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড়ে রয়েছে রক্ত পরিশোধন করার ক্ষমতা। এই গুড় খেলে রক্ত অনেকাংশে পরিশোধন হয়। যা অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়।
- মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এই গুড় অনেক বেশি উপকারী ভূমিকা পালন করে। এটি নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।
- খেজুরের গুড় চোখের দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। এমনকি এটি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করতে সাহায্য করে।
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা
বর্তমানে কোন কিছুই আর তেমন নির্ভেজাল পাওয়া যায় না। তেমনি খেজুরের গুড়েও আজকাল ভেজাল মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে খেজুরের গুড়ের যতই উপকারিতা থাকুক না কেন তা সব সময় শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এছাড়াও খেজুরের গুড়ের নানারকম অপকারিতা রয়েছে যা নিচে আলোচনা করা হলো।
- যারা নিজেদের ওজন নিয়ে চিন্তিত এবং নিজেদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য অধিক পরিমাণ খেজুরের গুড় খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে তার ওজন বেড়ে যাবে। কারণ ১০০ গ্রাম করে আছে ৩৮৫ ক্যালোরি এবং শর্করার পরিমাণ ৮৫.৭ গ্রাম। তবে অল্প পরিমাণ খেজুরের গুড় খেলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য খেজুরের গুড় খাওয়া একেবারেই নিষেধ। চিনির চেয়ে গুড় খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হলেও গুড় মিষ্টি জাতীয় খাদ্য তাই এটি খেলে রক্তের শর্করা পরিমাণ বেড়ে যাবে। যা তাদের জন্য ক্ষতিকর।
- খেজুরের গুড় সাধারণত খোলা পরিবেশে তৈরি হয় তা এতে নানা ধরনের রোগ জীবাণু থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ কারণে এটি খেলে অন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গরম গরম খেজুরের গুড় খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও গরম গরম সদ্য তৈরি হওয়া খেজুরের গুড় খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- যদি কারো ব্যথা হচ্ছে এমন অসুখ থাকে তবে তার খেজুরের গুড় খাওয়া পরিহার করা উচিত। কেননা খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে সুক্রোজ থাকে। যা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ব্যথার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।
- প্রচন্ড গরমের দিনে গুড় খেলে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই প্রচন্ড গরমের সময় গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম।
- এছাড়া খেজুরের গুড় অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা মতে, গুড় ও মাছ কোন অবস্থাতেই একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়। আবার যাদের আলসারের সমস্যা রয়েছে তাদের গুড় খাওয়া একেবারেই মানা।
খেজুরের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। আর আমরা সবাই জানি অধিক পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে তা আমাদের ওজন বাড়িয়ে দেয়। গুড় যেহেতু একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার তাই অধিক পরিমাণ গুড় খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
কেননা ১০০ গ্রাম গুড়ে ৩৮৫ ক্যালোরি এবং ৮৫.৭ গ্রাম শর্করা রয়েছে। তাই কেউ যদি নিয়মিত অত্যাধিক পরিমাণ গুড় খেয়ে থাকে তবে তার ওজন বৃদ্ধি পাবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য পরিমাণ গুড় খেলে তা ওজন বাড়ার জন্য দায়ী থাকবে না। বরং একটি শরীরের জন্য উপকারী হবে।
শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুগণ বর্তমানে বাজারে ভেজাল গুড়ের অভাব নেই। তাই আমরা গুড় খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন হবো। কেননা গুড়ে অনেক পুষ্টিগণ থাকা সত্ত্বেও ভেজাল গুড় আমাদের শরীরের পক্ষে অনেক বেশি ক্ষতিকর। এছাড়াও যাদের আলসারের সমস্যা রয়েছে এবং যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন তাদের খেজুরের গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
আরো পড়ুনঃ মধুময় বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে তা আপনার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন এবং এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান।
খেজুরের গুড় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-১ঃ খেজুরের গুড়ের দাম কত?
উত্তরঃ খেজুরের গুড় তৈরির মৌসুমের একেবারে শুরুতে খেজুরের গুড়ের প্রতি কেজি দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা। পরবর্তীতে এটি কমে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন-২ঃ সকালে খালি পেটে গুড় খেলে কি হয়?
উত্তরঃ গুড়ে রয়েছে নানারকম পুষ্টি উপাদান। এটি সকালে হওয়ার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে, শরীরের শক্তি যোগায়। এছাড়াও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন-৩ঃ ওজন কমাতে গুড় খাওয়ার উপায়?
উত্তরঃ এক চামচ খেজুরের গুড় পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে সেই পানি প্রতিদিন পান করলে ওজন কমতে পারে।
প্রশ্ন-৪ঃ গুড় শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ ইক্ষু, তাল, খেজুর ইত্যাদি বিভিন্ন গাছের রস থেকে প্রস্তুতকৃত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বিশেষ।
প্রশ্ন-৫ঃ খেজুরের গুড় কত প্রকার?
উত্তরঃ খেজুরের গুড় সাধারণত তিন প্রকার। যথাঃ ঝোলাগুড়, চিটাগুড়, পাটালিগুড়।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url