তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও এর যত গুনাগুন
প্রিয় পাঠক আপনি কি তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নন? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি তুলসী পাতার উপকারিতা ও এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়াও আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন। তুলসী পাতা শুধু আমাদের উপকার করে বিষয়টি এমন নয়। যেহেতু অতিরিক্ত সবকিছুই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর তাই অতিরিক্ত তুলসী পাতার রস গ্রহণ করলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে।
ভূমিকা
তুলসি একটি ঔষধি গাছ। এই গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। সাধারণত মানুষজন সর্দি কাশি হলে এর রস খেয়ে থাকেন। এর রস খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। অনেকে এর পাতা গাছ থেকে উঠিয়ে ভালো করে ধুয়ে চিবিয়ে এর রস খান। আবার অনেকে তুলসী পাতার রস মধু দিয়ে খেয়ে থাকেন।
তবে চিবিয়ে খাবার থেকে মধু দিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। অতিরিক্ত তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে। তুলসীপাতা শুধু সর্দি কাশি ভালো করে এমন নয়। প্রতিনিয়ত তুলসী পাতার রস গ্রহণ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মস্তিষ্ক উন্নত হয়।
আরো পড়ুনঃ আখ চাষ পদ্ধতি - আখের সাথে সাথী ফসল চাষ
যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তুলসী পাতার রস সাহায্য করে থাকে। তবে মহিলাদের এই পাতা খাওয়ার সময় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত তুলসী পাতার রস গ্রহণ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
এছাড়াও গর্ভবতী মহিলারা যদি অতিরিক্ত তুলসী পাতার রস গ্রহণ করে তবে তাদের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে নিয়মমাফিক তুলসী পাতার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তুলসী পাতা শুধু খেলে উপকার পাওয়া যায় এমনটি নয়।
এটি রূপচর্চার কাজে ব্যবহৃত হয়। মুখের কালো দাগ, ব্রনের দাগ নির্মূল করতে তুলসী পাতা সাহায্য করে। এছাড়াও তুলসী পাতার রস চুলে দিলে চুল পাকা আটকানো যেতে পারে।
তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
আমরা সকলেই কমবেশি তুলসী পাতার উপকার সম্পর্কে জানি। তুলসী পাতার অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। তুলসী পাতা সঠিকভাবে গ্রহণ না করার কারণে আমরা এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পায় না। তুলসী একটি ভেষজ ঔষধি গাছ। সঠিকভাবে তুলসী পাতা খেলে সর্দি, কাশি থেকে সহজেই মুক্তি মিলে। তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপঃ
- তুলসী পাতা সরাসরি গাছ থেকে তুলে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে পারেন।
- আদা ও মধু দিয়ে তুলসী পাতার রস উষ্ণ গরম করে খেতে পারেন।
- আদা চায়ের সাথে পাঁচ ছয়টি তুলসী পাতা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে তা খেতে পারেন।
- কুসুম গরম পানিতে এই পাতা ফুটিয়ে সেই পানি পান করতে পারেন।
- তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণ তুলসী পাতার রস না খেয়ে ফেলি। অতিরিক্ত তুলসী পাতার রস খেলে উপকারের পরিবর্তে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
তুলসি পাতার ব্যবহার
তুলসী পাতার ব্যবহারের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। শিশু থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের মানুষ এই পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এই পাতা শুধুমাত্র সর্দি কাশির বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে তেমনটা নয়। রূপচর্চার কাজেও এই পাতা ব্যবহার করা হয়। নিচে তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- তুলসী পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে তা ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- কাঁচা হলুদের সাথে তুলসী পাতার রস ও বেসন মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে তার মুখে ব্যবহার করা যায়।
- ফুটন্ত গরম পানিতে তুলসী পাতা কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নেওয়ার পর সেই পানির ভাব নিলে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- লিকার চায়ের সাথে তুলসী পাতা মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে সেই চা খেতে পারেন। এতে করে কাশির সমস্যা থাকলে তা দূর হবে।
- ত্বক ও মুখের দাগ দূর করতে এই পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতার রসের সাথে বেসন মাখিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে তার মুখে লাগালে ত্বক ও মুখের দাগ দূর হয়।
- হাত পায়ের কালো দাগ দূর করতে দুধ, ময়দা, কাঁচা হলুদ, জাফরানের সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে তা হাত-পায়ে লাগালে হাত পায়ের কালো দাগ দূর হয়।
- কুসুম গরম পানিতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে পান করতে পারেন।
- মধু দিয়ে তুলসী পাতার রস খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
- তুলসী পাতা কাঁচা গাছ থেকে তুলে চিবিয়ে খেতে পারেন।
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
- শীতকালে শিশুদের নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। এ সময় তাদের সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা নিয়ে বাবা-মা অনেক দুশ্চিন্তা করে। তবে শিশুদের এসব সমস্যা থেকে তুলসী পাতার রস মুক্তি দিতে পারে। সেইসাথে এটি খাওয়ার ফলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- শীতকালে শিশুদের মাঝে মাঝে তুলসী পাতার শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ছয় থেকে আটটি তুলসী পাতা, সামান্য পরিমাণ আদা, জোয়ান ও হিং একসাথে মিশিয়ে তার শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এতে করে শিশুর সর্দি কাশির সমস্যা থাকলে তা থেকে মুক্তি পাবে।
- এছাড়াও শিশুকে তুলসী মধু লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে একটি পাত্রে কয়েকটি তুলসী পাতা নিয়ে ভালো করে ফোটাতে হবে। তারপর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
- ঘি দিয়ে তুলসী পাতা খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথমে তুলসী পাতা ভালো করে শুকিয়ে তা গুড়ো করে নিতে হবে। এবার তুলসী পাতা গুঁড়ো ও ঘি একসাথে মিশিয়ে শিশুকে রুটি দিয়ে খাওয়াতে পারেন। তাছাড়াও চাইলে হাফ চামচ তুলসী পাতা গুলো ও দুই চামচ ঘি একসাথে মিশিয়ে ডালের সঙ্গে দিয়ে তা শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
- শিশুকে মধু মিশ্রিত তুলসী পাতার রস খাওয়ালে গলার সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে।
তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি তুলসী পাতার অনেক উপকারী দিক রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে সুস্থ থাকতে প্রতি দিন একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খান। এতে করে যেমন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি বিভিন্ন রোগের হাত থেকেও মুক্তি মিলবে। আসুন এবার আমরা তুলসী পাতার উপকার সম্পর্কে জেনে নিই।
- তুলসী পাতা মুখের রুচি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি খাবারের অরুচি দেখা দেয় তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে করে দারুন উপকার পাবেন।
- দ্রুত জ্বর কমাতে এই পাতার জুড়ি মেলা ভার। জ্বর থাকা অবস্থায় এই পাতা খেলে দ্রুত জ্বর কমে যায়।
- সর্দি কাশি বা ঠান্ডা লাগলে এই পাতার রস খেতে পারেন। এতে করে সর্দি কাশি কমে যাবে। সকল বয়সের মানুষেরাই এই পাতা খেতে পারবেন।
- মাথাব্যথা উপশম করতে তুলসী পাতার রস কার্যকরী পালন করে। তুলসী পাতার রস খেলে মাথাব্যথা কমে যায়।
- বুকে কফ জমে গেলে নিয়মিত এই পাতার রস খান। তাহলে আস্তে আস্তে বুকে জমে থাকা কফ দূর হয়ে যাবে।
- গলা ব্যথা কমাতে আপনি চাইলে তুলসীপাতার রস উষ্ণ গরম করে মধু দিয়ে কয়েকদিন খেতে পারেন। এতে করে খুব দ্রুত আপনার গলা ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
- মানসিক অবসাদ দূর করতে তুলসী পাতার চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই চা খেলে মানসিক অবসাদ দূর হয়।
- নিয়মিত এই পাতার রস খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকে। এতে করে যে কোন কাজ মনোযোগ সহকারে করা যায়।
- বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে এই পাতা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।
- এই পাতা সিদ্ধ করে খেলে মুখের ও গলার জীবাণু দূর হয়। সেই সাথে মুখের দুর্গন্ধ থেকেও মুক্তি মেলে।
- এই পাতাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন মানসিক সুস্থতা দান করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তুলসী পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ও ঠিক রাখে। এতে করে অনেক ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
- দ্রুত ক্ষত শুকাতে ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগিয়ে দিন।
- এলাচি ও তুলসী পাতা দিয়ে ফুটানো পানি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত এ পানি পান করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দূর করতে এই পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- তুলসী পাতা ফুটিয়ে গড়গড়া করলে গলার ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।
- তুলসী পাতা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
আপনার কাশি হলে আপনিতুলসী পাতা সরাসরি গাছ থেকে তুলে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে পারেন। তবে এর থেকে ভালো হবে যদি আপনি আদা ও মধু দিয়ে তুলসী পাতার রস উষ্ণ গরম করে খেতে পারেন। এতে করে খুব দ্রুত কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ মধুময় বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
এছাড়াও আপনি আদা চায়ের সাথে পাঁচ ছয়টি তুলসী পাতা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে এরপর এতে লেবু মিশিয়ে তা খেতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে তুলসী পাতা ও আদা কিছুক্ষণ ফুটিয়ে সেই পানি পান করতে পারেন।
তুলসী পাতা দিয়ে রূপচর্চা
- তুলসী পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে তা ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- কাঁচা হলুদের সাথে তুলসী পাতার রস ও বেসন মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে তার মুখে ব্যবহার করা যায়।
- তুলসী পাতা বাটার সাথে ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে পুরো মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখলে তা মুখের ছোপ ছোপ দাগ দূর করে।
- চুলের যত্নে তুলসী পাতার রয়েছে ব্যাপক সুনাম। চুলে তেল দেওয়ার আগে তেলে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে নিন। তুলসী পাতার রস মিশ্রিত তেল চুলে লাগালে চুলের খুশকি, চুল পড়া এবং ড্রাই স্কাল্প এর সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
- তুলসী পাতা গুড়া ও আমলকি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন সেই পানি দিয়ে চুল ধুলে চুল পেকে যাওয়া রোধ করা যায়।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে তুলসী পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে কয়েকটি তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে এর পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর এর সাথে গুড়া দুধ মিশিয়ে প্যাকটি মুখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই তিন দিন করলে ত্বক বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
- ত্বক ও মুখের দাগ দূর করতে এই পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতার রসের সাথে বেসন মাখিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে তার মুখে লাগালে ত্বক ও মুখের দাগ দূর হয়।
- ফুটন্ত গরম পানিতে তুলসী পাতা কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নেওয়ার পর সেই পানির ভাব নিলে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- হাত পায়ের কালো দাগ দূর করতে দুধ, ময়দা, কাঁচা হলুদ, জাফরানের সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে তা হাত-পায়ে লাগালে হাত পায়ের কালো দাগ দূর হয়।
- শীতকালে যারা শুষ্ক ত্বক নিয়ে চিন্তিত তারা চাইলে তুলসী পাতা বেটে তার সাথে টক দই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে সেই প্যাকটি কিছুক্ষণ মুখে লাগিয়ে তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বকের শুষ্ক ভাব অনেকটাই কেটে যাবে।
তুলসী চা বানানোর পদ্ধতি
আমরা তুলসী পাতার অনেক উপকারের কথা জেনেছি। সেই সাথে তুলসী চা যে আমাদের উপকার করে থাকে সেই সম্পর্কেও অবগত রয়েছি। তুলসী যা খুব সহজেই বানানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে কয়েকটি তুলসী পাতা ও আদা একটি পাত্রে রেখে তাতে পানি দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এরপর সেই পানি কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে। এতে করে তুলসির ভেতরের সমস্ত উপকারী গুনাগুন পানির মধ্যে চলে আসবে। এবার সেই পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে লেবু ও মধু মেশাতে হবে। তাহলেই তৈরি তুলসী চা। এছাড়াও আপনি এই চায়ের সাথে এলাচ ও লং দিতে পারেন।
তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা
চা পান করতে কম বেশি সকলেই পছন্দ করেন। কেননা চা পানের রয়েছে নানা রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা। আর এই উপকারের কথা চিন্তা করে অনেকেই ভেষজ চা পছন্দ করেন। বাজারের অনেক ধরনের ভেষজ চাওয়া পাওয়া যায়। তবে আপনি চাইলে বাড়িতেই ভেষজ চা বানিয়ে নিতে পারেন। ভেষজ চায়ের মধ্যে অন্যতম তুলসি চা। নিচে আমরা তুলসী চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
তুলসী চা আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। নিয়মিত তুলসী চা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে গলার সমস্যা সমাধানে তুলসী চা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পেতে তুলসী চায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে তুলসি যা সাহায্য করতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তুলসী চা শরীরে স্ট্রেস হরমনের মাত্রা কমায়। যার ফলে মানসিক চাপও কমে যায়। রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে তুলসী চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক
তুলসী পাতার অনেক উপকার থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তুলসী পাতার ক্ষতিকার দিকগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
- গর্ভাবস্থার সময় বা মা হওয়ার পর সন্তানকে দুধ পান করানোর সময় সামান্য তুলসী পাতা খেলে তেমন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না কিন্তু অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। তাই এ সময় যত সম্ভব তুলসী পাতা এড়িয়ে চলাই ভালো।
- অতিরিক্ত তুলসী পাতা অনেক সময় নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। তাই মেয়েদের অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- তুলসী পাতা শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতাকে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে শরীরে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কোন অপারেশনের পর রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হতে পারে। তাই যারা প্রতিনিয়ত তুলসী পাতা খেয়ে থাকেন তাদের উচিত যে কোন অপারেশনের আগে এবং পরে তুলসী পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
- তুলসী পাতায় অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকার কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। রক্তচাপ একদম কমে যাওয়া ভালো নয়। এতে নানা রকম সমস্যা হতে পারে।
- বেশি বেশি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতা অতিরিক্ত খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তুলসী পাতা সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন-১ঃ প্রতিদিন তুলসী পাতা খেলে কি হয়?
উত্তরঃ প্রতিদিন তুলসী পাতা খাওয়া হলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি নানা রকম রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রশ্ন-২ঃ তুলসী গাছ কি মস্তিষ্কের উপকার করে থাকে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তুলসী গাছ মস্তিষ্কের উপকার করে থাকে। তুলসী গাছে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ফ্ল্যাভোনয়েড মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন-৩ঃ তুলসী পাতার রস মধু দিয়ে খেলে কি উপকার পাওয়া যায়?
উত্তরঃ তুলসী পাতার রস মধু দিয়ে খেলে বুকের জমে থাকা কফ দূর হয়।
প্রশ্ন-৪ঃ সবচেয়ে ছোট তুলসী পাতা কোনটি?
উত্তরঃ তুলসী গাছের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট গাছ গ্রিক তুলসী। এর পাতা গম্বুজ আকারে বৃদ্ধি পায়। এটি একটি ছোট পাত্রে চাষ করা যায়।
প্রশ্ন-৫ঃ তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম কি?
উত্তরঃ তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম হল Ocimum tenuiflorum
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা তুলসী পাতার উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, অপকারিতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এই আলোচনা শেষে এটি প্রতিয়মান হয় যে তুলসী পাতার অপকারিতা তুলনায় উপকারিতা অনেক গুণ বেশি। আমাদের উচিত প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি করে তুলসী পাতার রস গ্রহণ করা।
এতে করে যেমন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি বিভিন্ন প্রকার রোগের হাত থেকে শরীর রক্ষা পাবে। তবে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণ তুলসী পাতার রস গ্রহণ করা উচিত নয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় খুব বেশি তুলসী পাতার রস খাওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ আপেল খাওয়ার নিয়ম ও এর পুষ্টিগুণ
প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা আপনার পরিবারের মাঝে শেয়ার করুন। এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। এতক্ষন মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এইরকম আরও আর্টিকেল পড়ত আপনি আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url