চিরতা খাওয়ার ২৪ টি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই চেয়েও তা খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
আমরা সকলেই কমবেশি চিরতার ভেষজ গুণাবলী সম্পর্কে অবগত রয়েছে। এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাওয়া যায়। তবে এটি সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে ইউরোপে। ভেষজ ঔষধি গুণ সম্পন্ন এই গাছের পাতা ও শিকড়ের স্বাদ তিক্ত ধরনের কিন্তু এর ফল মিষ্টি হয়ে থাকে। প্রশস্ত পাতার এই গাছের ফল সাদা রংয়ের হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মাশরুমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
তবে এটি যত বেশি তিতা হোক না কেন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা এর অনেক বেশি। এই ভেষজ উদ্ভিদটি স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য চিরতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে চিরতার পানিকে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে চিরতার পানির পাশাপাশি এর রস ও শিকড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা চিরতা খাওয়ার নিয়ম, এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
চিরতা একটি ঔষধি গুণ সম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ। এর স্বাদ তিক্ত ধরনের। তবে চিরতা আর কালো মেঘ কিন্তু এক নয়। অনেকেই এটি গুলিয়ে ফেলেন। বহুকাল ধরে চিরতা হেপাটাইটিস, জ্বর, কাশি, প্রদাহ, প্রজনন জনিত সমস্যা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
জ্বর, সর্দি, কাশি নিরাময়ের
ঘরে বসেই চিরতা দিয়ে জ্বর, সর্দি, কাশি নিরাময় করা যায়। চিরতাতে বিদ্যমান অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি খেলে জ্বর, সর্দি, কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে চিরতা গাছের মূল বা শিকড় খেতে হবে। তবে অনেক সময় চিরতার গাছের পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি খেলেও এসবের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কৃমির উপদ্রব কমায়
কৃমি হলে আমাদের নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এর সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এক চামচ চিরতার গুড়া চিনি বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। তবে চার পাঁচ দিন দিনে একবার করে খেলে কৃমির উপদ্রব সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
পচা ঘা সারায়
যাদের শরীরে দীর্ঘদিনের পচা ঘা রয়েছে, কোন ওষুধে কোন কাজ হচ্ছে না তাদের জন্য চিরতা খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে চিরতার পাতা আগের দিন গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি ছেঁকে নিয়ে ঘায়ের জায়গা ধুয়ে দিলে পচা ঘা দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
এলার্জি দূর করে
চিরতা এলার্জি দূর করতে সক্ষম। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা আগের দিন রাতে এক গ্লাস গরম পানিতে ৫-৬ গ্রাম চিরতরে পরের দিন সকালে তার থেকে দিনে ২-৩ বার খেলে ভালো উপকার পাবেন। সেইসাথে যে সব খাবারে এলার্জি রয়েছে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিরতা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত চিরতা খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
বমি বমি ভাব দূর করে
পিত্ত জ্বর হলে অনেকের অনেক সময় বমি বমি ভাব হয় বা বমি পায়। চিরতার পাতা এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে
নিয়মিত চিরতার পাতার রস খেলে শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন বের হয়ে শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। ক্ষতিকারক টক্সিন ধীরে ধীরে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। চিরতা যেহেতু এটিকে শরীর থেকে বের করে দেয় তা একে শরীর পরিষ্কারক বলা হয়ে থাকে।
চুলকানির সমস্যায়
গায়ে চুলকানি হলে অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে ২৫ গ্রাম চিরতা বেটে নিতে হবে। এরপর 100 গ্রাম সরিষার তেল ভালো করে জল দিয়ে গরম করতে হবে। তেল গরম হয়ে ফেনা মুক্ত হলে এর মধ্যে চিরতা দিয়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে। এরপর সেই তেল ছেঁকে চুলকানির জায়গায় অল্প অল্প করে মালিশ করে লাগাতে হবে। তাহলেই দ্রুত চুলকানি সেরে যাবে।
হজমের সমস্যা দূর করে
চিরতা হজমের সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর স্বাদ তিক্ত হওয়ার কারণে এটি শরীরের লালারস ও গ্যাস্ট্রিক রসকে উদ্দীপিত করে বদ হজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও চিরতা গ্যাস্টিক এনজাইম তৈরি করে হজমে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সহায়তা
যাদের খাওয়ার প্রতি অরুচি রয়েছে তাদের জন্য চিরতার পানি কাজে আসতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে চিরতা পিত্তের নিঃসরণ বাড়ায় যা ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণে এটি ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
শরীরকে জীবাণুমুক্ত করে
চিরতার পাতা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি শরীরকে ভেতর থেকে জীবাণমুক্ত করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে
চিরতা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত এটি খাওয়ার ফলে রক্ত পরিষ্কার হয়। তবে চিরতার কোন উপাদান রক্ত পরিষ্কারের সাহায্য করে তা স্পষ্ট নয়।
লিভারের সমস্যা সমাধানে
চিরতার গাছ প্রাচীনকাল থেকেই লিভারের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এতে সোয়ারচিরিন নামে একটি যৌগ রয়েছে যা লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস এর মতো রোগও এড়ানো যায়।
রক্তস্বল্পতা কমায়
চিরতা রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে। এতে অবস্থিত ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। এর ফলে রক্তশূন্যতা কমে গিয়ে শরীরের রক্তের পরিমাণ ঠিক থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
চিরতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে অবস্থিত বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ ম্যাঙ্গিফেরিন রয়েছে। যার প্রভাবে শরীরের ইমিউন সিস্টেম উন্নত হয়। এর কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে চিরতা কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। একে চোখের টনিকও বলা হয়। ভিটামিন সি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তার চিরতাতে ভিটামিন সি বিদ্যমান। এ কারণে চোখের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধেও চিরতা ব্যবহার করা হয়েছে। চিরতাতে অ্যামরোজেন্টিন যৌগ থাকে। এই যৌগটি অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক কার্যকলাপ প্রদর্শন করে, যা ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
অতিরিক্ত সাদাস্রাব নিয়ন্ত্রণে
চিরতা অতিরিক্ত সাদাস্রাব নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিরতার রস ও শিকড় এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্যারাটাইফয়েড থেকে মুক্তি
অনেকের অনেক সময় দেখা যায় টাইফয়েড জ্বরের পরে প্যারাটাইফয়েড হয়। এক্ষেত্রে টাইফয়েড জ্বরের পর পর চিরতা খেলে প্যারাটাইফয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
নিয়মিত চিরতা ভেজা পানি সকাল ও সন্ধ্যায় পান করলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
দুর্বলতা কমায়
নিয়মিত চিরতার রস খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সেই সাথে এটি খাওয়ার কারণে দুর্বলতা কমে যায়।
তারুণ্য ধরে রাখে
নিয়মিত চিরতার পানি খাওয়ার ফলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার থাকে। এটি শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যার কারণে দীর্ঘদিন তারুণ্যতা বজায় থাকে।
ত্বকের যত্নে
ত্বকের জন্যও চিরতা খুবই উপকারী। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন, চামড়ার ঘা, অন্যান্য ক্ষত সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও রোজ চিরতার পানি খাওয়ার ফলে স্কিন ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
চুল পড়া বন্ধ করে
চিরতার পানি চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। এর জন্য আগের দিন রাতে এক গ্লাস গরম পানিতে ৫-৬ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি ছেঁকে তা দিয়ে মাথা দিয়ে ফেললে চুল পড়া কমে যাবে। একদিন পরপর এই নিয়মটি দুই সপ্তাহ মেনে চললে চুল উঠা অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে।
চিরতা খাওয়ার নিয়ম
আমাদের আশেপাশে অনেক ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। তাদের মধ্যে চিরতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটি প্রাচীনকাল থেকেই ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে নানা ধরনের বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে চিরতা খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে চিরতা খাওয়ার নিয়মগুলো জেনে নিই।
- যারা নিয়মিত চিরতার পানি পান করেন তাদের জন্য এটি রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস পানিতে ৫-৬ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খেতে পারেন। তবে আপনি চাইলে এক গ্লাস পানির অর্ধেক সকালে এবং অর্ধেক রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন।
- জ্বর ভালো করার জন্য ৬-৭ কাপ গরম পানিতে চিরতা ভালোভাবে সিদ্ধ করে সেই পানি ততক্ষণ পর্যন্ত জ্বাল দিতে হবে যাতে করে পানির পরিমাণ দুই কাপ হয়। এবার সেই পানি সকাল ও সন্ধ্যায় অর্ধেক করে খেলে ভালো উপকার মিলবে।
- যাদের ঠান্ডা কাশির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত চিরতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে কিছুদিনের মধ্যে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
- চিরতা দিয়ে চুল পড়া রোধ করতে চাইলে রাতে গরম পানিতে চিরতা ভিজিয়ে রেখে সকালে তার ছেঁকে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ভালোভাবে মাথা ধুতে হবে। তাহলে চুল পড়া কমে যাবে। এছাড়াও এই পানি দিয়ে ক্ষত সারানো যায়। সেক্ষেত্রে এই পানি দিয়ে বারবার ক্ষত মুছে দিতে হবে। তাহলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
- অনেকেরই চুলকানির সমস্যা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম সরিষার তেল চুলায় ভালো করে গরম করুন। এবার সেখানে ২০ গ্রামের মতো চিরতা দিয়ে দিন। চিরতা ভাজা ভাজা হয়ে এলে তা চুলা থেকে নামিয়ে ছেকে নিন। এবারে তেল চুলকানির স্থানে হালকা মালিশ করে লাগিয়ে দিন। কিছুদিনের মধ্যে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। তবে মনে রাখতে হবে এই তেল ক্ষতস্থানে লাগানো যাবে না।
চিরতা কতদিন খাওয়া যায়
কোন ভেষজ উদ্ভিদই একটানা অনেক দিন খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তেমনি চিরতাও একটানা বেশি দিন খাওয়া উচিত নয়। ৮ থেকে ১২ দিন খেলেই এটি থেকে উপকার পাওয়া যাবে। তবে চিরতা আপনি একটানা সর্বোচ্চ ১৫ দিন খেতে পারেন। এর বেশি সময় করে খেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
চিরতা খুবই তিতা হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন এটি খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগের সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত চিরতা খাওয়া হলে যৌন সমস্যা ও কিডনির সমস্যা হতে পারে। তাই চিরতা খাওয়ার ক্ষেত্রে একটানা সর্বোচ্চ ১৫ দিন খাওয়ার পরে আবার ১৫ দিন বিরতি দিয়ে খেতে হবে। তাহলে এর থেকে ভালো উপকার পাওয়া সম্ভব।
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
চিরতা হলো এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আমরা অনেকেই চিরতার গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা রাখি না। আবার অনেকে জানার পরও এর তিতা স্বাদের কারণে গ্রহণ করি না। তবে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নেই-
- যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন খালি পেটে চিরতার পানি খেতে পারেন। এতে হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং বদহজম হওয়ার সমস্যা কমে যাবে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিরতার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কেননা এটি রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- জ্বর, সর্দি, কাশি দূর করতে চিরতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য সকালের এক গ্লাস চিরতার পানি পান করলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ম করে সকালে খালি পেটে চিরতার রস ও মধু খাবেন। এতে দারুন উপকার পাওয়া যাবে।
- আমাদের অ্যানিমিয়ার সমস্যা রয়েছে এবং রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম রয়েছে তারা প্রতিদিন নিয়ম করে চিরতার রস খাবেন। এতে করে অ্যানিমিয়ার সমস্যার দূর হয়ে যাবে।
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
চিরত একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এটি মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত চিরতা খাওয়ার ফলে নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ চিরতা খাওয়ার ফলে কিডনির নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যারা কিডনি রোগী আছেন তারা অতিরিক্ত চিরতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
কেননা চিরতা খাওয়ার ফলে তাদের নানা ধরনের কিডনির জটিল রোগ হতে পারে। তবে তারা চাইলে সামান্য পরিমাণ চিরতা খেতে পারবে। তবে অবশ্যই তা ১৫ দিন পর পর খাওয়া বাদ দিয়ে আবার ১৫ দিন পর থেকে খাওয়া শুরু করতে হবে। একটানা ১৫ দিনের বেশি কোন অবস্থাতেই খাওয়া চলবে না।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি চিরতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি শরীর সুস্থ থাকে। তবে সব জিনিসেরই কিছু না কিছু অপকারিতা রয়েছে। চিরতারও তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন এর অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিরতা খুবই উপকারী হলেও এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার পড়তে পারেন। তাই এটি খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তাছাড়াও যাদের ব্লাড সুগার লেভেল কম তারা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। তেমনি চিরতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- অতিরিক্ত চিরতা খাওয়ার ফলে যৌন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- একটানা দীর্ঘদিন চিরতা খাওয়ার কারণে কিডনি নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- চিরতার স্বাদ তিতা হওয়ার কারণে এটি খাওয়ার ফলে অনেকের বমি হতে পারে।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়েদের ক্ষেত্রে কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাওয়া যেতে পারে। অন্যথায় এটি খাওয়ার কারণে বিপদ হতে পারে।
শেষ কথা
আমরা উপরে চিরতার অনেকগুলো উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। তবে কোন গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে চিরতার ওপর ভরসা না রেখে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করব। সেই সাথে নিয়ম মেনে চিরতা খাওয়ার চেষ্টা করব। কেননা কোন খাবার যতই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হোক না কেন যদি সেটি নিয়ম মেনে না খাওয়া হয় তবে এর থেকে উপকার আশা করা যায় না।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও এর যত গুনাগুন
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে তা আপনার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন এবং এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url