কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না? তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়া আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ওজন কমাতে কালোজিরা কিভাবে সাহায্য করে থাকে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই এই সব কিছু জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
কালোজিরা বা Black Cumin এশিয়া এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি ফুল জাতীয় উদ্ভিদ। এর বীজ হাজার হাজার বছর ধরে ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মূলত একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। তবে এর গুনাগুন অনেক। এর মধ্যে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় এটি খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ঘরে বসে আয় করার সহজ উপায়
কালোজিরার উপকারিতা বর্ণনা করে শেষ করার যাবেনা। আর এজন্যই এটিকে সকল রোগের মহা ঔষধ বলা হয়। এছাড়াও প্রসূতি মায়ের স্তনের দুধ বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা বাটা ভর্তা খাওয়ানোর প্রমাণ রয়েছে। এছাড়াও এটি জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, শরীরের যে কোন স্থানের ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে।
এর পাশাপাশি কালোজিরা হাঁপানি, ডায়রিয়া, আমাশয়, অর্শ, জন্ডিস ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। ইসলামে কালোজিরা খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেন কালোজিরা হলো মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ।
আজ আমরা এই আর্টিকেলে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান বিদ্যমান। এতে রয়েছে ফসফেট, লৌহ ও ফসফরাস। কালোজিরাতে ২১% আমিষ, ৩৫% স্নেহ, ৩৮% শর্করা বিদ্যমান।
এছাড়াও এক গ্রাম কালোজিরাতে ২০৮ মাইক্রোগ্রাম আমিষ, ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১, ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম, কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম, ফসফরাস ৫.২৬ মাইক্রোগ্রাম, জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম, ফোলাসিন ৬১০ আইউ।
আরো পড়ুনঃ আপেল খাওয়ার নিয়ম ও এর পুষ্টিগুণ
এতসব পুষ্টির প্রধান বিদ্যমান থাকার কারণে কালোজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে না খেলে এটি থেকে তেমন কোন উপকার পাওয়া সম্ভব নয়। কালিজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
- প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে পানির বা মধুর সাথে মিশিয়ে দুই থেকে তিন গ্রাম কালিজিরা খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকে।
- কালোজিরা ভর্তা করে গরম ভাতের সাথে খাওয়া যেতে পারে।
- বিভিন্ন পিঠা ও খাবার সুস্বাদু করার জন্য কালোজিরা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হয় অন্যদিকে খাবারটি অনেক পুষ্টিকর হয়।
- কালিজিরা ভালো করে ভেজে গুড়ো করে রেখে দিয়ে যেকোনো সময় সরিষার তেল, লবন, পেঁয়াজ, মরিচ দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- যেকোনো তরকারি রান্নায় কালোজিরা ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কালোজিরা খালি চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে এতে তেমন কোনো স্বাদ পাওয়া যায় না।
- গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও আপনি বিভিন্ন জিনিসের সাথে কালোজিরা মেশিয়ে খেতে পারেন। নিচে সেগুলো দেয়া হলোঃ
কালোজিরার তেল, হলুদ ও দুধ
কালোজিরা তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এ তেলে প্রায় একশটির বেশি উপকারী উপাদান রয়েছে। এই তেল আমরা হলুদের রস এবং দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারি।
পান ও কালোজিরা
আমরা অনেকে পান খেয়ে থাকি। খাবার পর আমাদের মুখের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য পান খেয়ে থাকি। আবার অনেকে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পান খেয়ে থাকেন। পান খাওয়ার সাথে সাথে পানের সাথে আপনি কালোজিরাও খেতে পারেন। এটি পানের স্বাদকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।
মধু ও কালোজিরা
আমরা সকলেই মধু ও কালোজিরা খাওয়ার সাথে পরিচিত। জীবনে কখনো না কখনো এটি খেয়েছি। মধু ও কালোজিরা দুটোই ঔষধি গুন সম্পন্ন হওয়ায় এই দুটি একসাথে খাওয়ার ফলে দেহের নানা রকম উন্নতি সাধিত হয়। সেইসাথে এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
টক দই ও কালোজিরা
কালোজিরা ও টক দই একসাথে খেলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে কালোজিরা ও টক দই একসাথে খেলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। এর কারণে দ্রুত চর্বির পরিমাণ কমে যায়। সেইসাথে শরীরের ওজন কম হয়।
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরার অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। একটি প্রচলিত কথা আছে নিয়মিত কালোজিরা খেলে ৯৯ টি রোগ থেকে মুক্তি মিলে। ঔষধি গুনাগুন ও খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এর দ্বিতীয় কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেহের জন্য কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে চলুন কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
মেধা বিকাশের জন্য কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। এটি মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়ে থাকে এতে করে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও যেকোনো ধরনের দুশ্চিন্তা দূর করতে কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
সর্দি নিরাময়ে
সর্দি নিরাময়ে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক চামচ কালোজিরা মধু ও তুলসী পাতার রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে জ্বর সর্দি দূর হয়। সেই সাথে কালোজিরার তেল বুকে পিঠে মালিশ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সর্দি নিরাময়ের জন্য পাতলা সুতি কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে সেটা বারবার শুকতে পারেন। এতে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
হার্টের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে
এক চামচ কালোজিরা গুড়া এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে দৈনিক দুইবার করে চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
মাথা ব্যথা নিরাময়ে
মাথাব্যথা নিরাময়ে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর জন্য আপনাকে মাথায় এক থেকে দুই চামচ কালোজিরা তেল ভালো হবে মালিশ করতে হবে। সেই সাথে এক চামচ কালোজিরা তেল ও সমপরিমাণ মধু দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে হবে। এটি প্রায় তিন সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
বাতের ব্যথা সারাতে
আক্রান্ত স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে। সেই সাথে কাঁচা হলুদের রসের সমপরিমাণ মধু ও কালোজিরা দৈনিক তিনবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতে
যারা শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগে ভুগছেন তাদের জন্য কালোজিরা হলো আল্লাহর আশীর্বাদ। নিয়মিত এটা খাওয়ার ফলে আপনার শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কালোজিরা রাখার চেষ্টা করুন। সেই সাথে আপনি এক চামচ কালোজিরার তেল এক গ্লাস দুধে বা চায়ে মিশিয়ে দৈনিক দুই থেকে তিনবার নিয়মিত সেবন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
অনিয়মিত মাসিক ঠিক করতে
অনিয়মিত মাসিক থেকে মুক্তি পেতে আপনি এক কাপ কাঁচা হলুদের রসের সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানি ও এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার নিয়মিত সেবন করুন। তাহলে আপনার অনিয়মিত মাসিক ঠিক হয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
কালোজিরাতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আবার একে সকল রোগের মহা ঔষধ বলা হয়। কালোজিরা ও মধু নিয়মিত সেবন করলে অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্তি মিলে সেই সাথে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কালোজিরা খাওয়া উচিত।
হজমের সমস্যা সমাধানে
হজমের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য এক চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে খেয়ে নিন। এভাবে তিনি দুই থেকে তিনবার খেলে চার সপ্তাহের মধ্যে আপনার হজম শক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি গ্যাসের সমস্যা থাকলে সেও দূর হয়ে যাবে।
চুল পড়া বন্ধ করতে
অনেকের চুলে পুষ্টির অভাবে চুল পড়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়মিত কালোজিরা খান। সেই সাথে চুলের গোড়ায় কালোজিরার তেল ভালো করে মালিশ করুন। কিছুদিনের মধ্যে আপনি নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
কালোজিরা দেহের ইমিউনো সিস্টেম উন্নত করে। এর ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে দেহ যে কোন রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। কেউ যদি নিয়মিত এক চামচ কালোজিরা ও মধু খায় তবে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
আমাশয় নিরাময়ে
আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে এক চামচ কালোজিরা তেলের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার করে তিন সপ্তাহ সেবন করুন। তাহলে আমাশয় থেকে মুক্তি মিলবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কালোজিরা খুবই উপকারী। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর জন্য প্রতিদিন অল্প পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও কেউ চাইলে গরম ভাতের সাথে বা দুধের সাথে কালোজিরা খেতে পারেন। এক্ষেত্রেও একই রকম ফলাফল পাওয়া যাবে।
জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা সমাধানে
জন্ডিস বা লিভারের সমস্যার সমাধানে কালোজিরা বেশ কার্যকরী। এর জন্য একগ্লাস ত্রিপোলার শরবতের সাথে এক চামচ কালোজিরা তেল দিনে তিন থেকে চার বার করে একমাস সেবন করুন।
শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি সাধনে
শিশুর দ্রুত দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি সাধনে কালোজিরার তেল বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্ক গঠনে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। তবে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে কালোজিরা তেল খাওয়ানো উচিত নয়। তবে তাদের পুরো শরীরে কালোজিরা তেল মালিশ করা যেতে পারে।
দাঁতের ব্যথা দূরীকরণে
দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা হলে দাঁতের ব্যথা দূর করতে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলকুচি করুন।এতে আপনার জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে যাবে। আপনার দাঁতের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।
পিঠে ব্যথা দূর করতে
আপনার পিঠের যে স্থানে ব্যথা সে স্থানে কালোজিরা তেল ভালোভাবে মালিশ করুন। এটি আপনার পিঠের দীর্ঘদিনের ব্যথাও নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে।
যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে
কালোজিরা নারী-পুরুষ উভয়েরই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন কালোজিরা খাওয়ার ফলে পুরুষের স্পার্মে শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি স্পার্ম ঘন হয়। সেই সাথে পুরুষের পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে কালোজিরা সাহায্য করে।
পাইলসের সমস্যার সমাধানে
পাইলসের সমস্যা নিরাময় করতে প্রতিদিন খালি পেটে এক চামচ কালোজিরা তেল, সমপরিমাণ মাখন ও তিলের তেল ভালোভাবে মিশিয়ে তিন থেকে চার সপ্তাহ সেবন করুন। এতে পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ নিরাময়ে
বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সেই স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে কালোজিরা তেল ভালো হবে মালিশ করুন। সেই সাথে এক চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরা তেল ও মধু দৈনিক তিন বার করে এক মাস সেবন করুন।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে হবে সেই সাথে সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল ভালো করে মালিশ করে সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধা ঘন্টা থাকতে হবে। এর পাশাপাশি এক চামচ কালোজিরা তেল ও সমপরিমাণ মধু সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে
যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ ঠিকমতো পায় না তাদের জন্য কালোজিরা একটি সমাধান হতে পারে। এর জন্য মায়ের খাবারের তালিকায় প্রতিদিন কালোজিরা রাখুন। সেই সাথে ঘুমানোর আগে এক চামচ কালোজিরা গুড়া দুধের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে থাকুন। ১০-১৫ দিনের মধ্যে বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
ক্ষত নিরাময়ে
ক্ষত নিরাময়ে কালোজিরা তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা তেলে থাইমোকুইনোন নামক যৌগ রয়েছে যা টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর ফলে ক্ষতস্থানে কালোজিরা তেল লাগালে তাড়াতাড়ি সেটি শুকিয়ে যায়। এছাড়াও কালোজিরা তেলের সাথে মধু মিশে ক্ষতস্থানে লাগালে তা ব্যথানাশক হিসেবেও কাজ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
কালোজিরার তেল বিপাকে সাহায্য করে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিয়মিত কালোজিরার তেল সেবন করুন।
ব্রণ কমাতে
কালোজিরার তেল ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে ব্রণ, রোদে পোড়া দাগ, ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। কালোজিরার তেল দিয়ে তৈরি লোশন নিয়মিত দুই মাস ব্যবহার করলে ব্রণের ক্ষতসহ অন্যান্য ক্ষত উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়।
ওজন কমাতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ। এটি যে খাবারে ব্যবহার করা হয় সেই খাবারের পুষ্টিগুণ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এতে নাইজেলন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। তাই যারা ওজন কমাতে চান বিশেষজ্ঞরা তাদের কালোজিরা তেল খারাপ পরামর্শ দেন। তবে এটি খাওয়ার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে।
- ওজন কমানোর জন্য এক চামচ কালোজিরা ও সমপরিমাণ মধু কুসুম গরম পানি দিয়ে খেয়ে নিন। এই পদ্ধতিটি নিয়মিত অনুসরণ করুন। আশা করা যায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
- কালোজিরার বীজের উপর লেবুর রস চিপে নিন যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত কালোজিরা ভিজে যাচ্ছে। এরপর এটি রোদে ভালো হবে শুকিয়ে নিন। তারপর প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পাঁচটি করে বীজ খেতে থাকুন। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার মেদ কমতে শুরু করবে।
সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা রয়েছে হাজারো রকমের উপকারিতা। সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- সর্দি কাশি থেকে মুক্তি দেয়।
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
- হৃদরোগ জনিত সমস্যার আশঙ্কা কমায়।
- বাতের ব্যথা নিরাময়ের সাহায্য করে।
এছাড়াও সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত সকালে অল্প করে কালোজিরা ও মধু খাওয়া। এতে করে শরীরে কোন জটিল রোগ বাসা বাধার আশঙ্কা থাকে না।
কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা
দীর্ঘদিন কালোজিরা সেবন করলে নানা ধরনের অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ত্বক জ্বালাপোড়া করা, পাকস্থলীতে সমস্যা, বুকে জ্বালাপোড়া করা, বমি বমি ভাব হওয়া।
যারা তিন মাসের অধিক সময় পর্যন্ত একটানা কালোজিরা সেবন করছেন তাদের এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের কালোজিরা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা কালোজিরা খাওয়ার ফলে অকাল গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
শেষ কথা
কালোজিরাকে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ বলা হয়ে থাকে। তাই আমাদের সকলের নিয়মিত কালোজিরা বা কালোজিরা তেল খাওয়া উচিত। এতে করে আমাদের দেহের বিভিন্ন ধরনের উন্নতি সাধিত হবে। তবে কোন অবস্থাতেই একটানা দুই মাসের অধিক কালোজিরা খাওয়া উচিত নয়। এতে করে উপকারের পরিবর্তে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুনঃ ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে তা আপনার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন এবং এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url