নিয়মিত চা খাওয়ার ফলে যেসব উপকারিতা ও অপকারিতা মানবদেহে হয়ে থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আপনি কি প্রতিনিয়ত চা পানে অভ্যস্ত? চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এছাড়াও আপনি আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে চা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এই আর্টিকেল থেকে আপনারা আরো জানতে পারবেন চায়ের প্রকারভেদ। বিভিন্ন ধরনের চায়ের স্বাদ আলাদা। চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চায়ের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
আমাদের অনেকেরই চা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। চা পান ছাড়া আমরা চলতে পারিনা। কিন্তু আমরা জানি না যে চা খাওয়া আমাদের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর। চা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে চা খাওয়ার নিয়ম মেনে আমাদের চা খাওয়া উচিত। এতে আমরা উপকৃত হবো। কিন্তু যদি চা খাওয়ার নিয়ম মেনে চা খাওয়া না হয় তাহলে তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চা বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। উৎপাদন প্রণালীর উপর ভিত্তি করে চাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। আদা চা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও চুল পড়া রোধ করতে চা পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।তবে অতিরিক্ত চা পান স্বাস্থ্যহানী ঘটায়।
চা অর্থ কি?
চা হলো সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানিয় যা চা পাতাকে গরম পানিতে ফুটিয়ে বা ভিজিয়ে তৈরি করা হয়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। চা গাছের পাতা ,পর্ব ও মুকুলের সমন্বয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চা তৈরি করা হয়। চা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আমাদের প্রতিদিন চা খাওয়ার নিয়ম মেনে অন্তত এক কাপ চা খাওয়া উচিত।
চা পাতার প্রকারভেদ
প্রস্তুতির উপর ভিত্তি করে চা পাতাকে সাধারণত ৫ টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যেমন কালো চা,সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং চা এবং প্যারাগুয়ে চা। এছাড়াও সাদা ,হলুদ, পুয়ের চা, অপরাজিতা চা, নুন চা,কাশ্মীরি চা সহ বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে।
সকল চা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। তবে তা নিয়ম মেনে খেতে হবে। সাধারণত সকল চা-ই চা গাছ থেকে তৈরি করা হলেও তৈরীর প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে একেকটা চায়ের নাম ও স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন হয়। এছাড়াও গ্রিন টি এখন পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয়।
সবচেয়ে ভালো কোন চা
কোন চা কতটা ভালো হবে তা নির্ভর করে এর প্রস্তুত প্রণালীর উপর। প্রস্তুত প্রণালীর উপর ভিত্তি করে চায়ের স্বাদেও রদবদল হয়ে থাকে। চায়ের বিভিন্ন ধরনের গ্রেড থাকে। যেমন কিছু চা শুধুমাত্র গাছের কচি পাতা থেকে তৈরি হয় আবার কিছু চা অপেক্ষাকৃত বয়স্ক পাতা থেকে তৈরি করা হয়। সাধারণত গ্রেড ১ এর চা সবচেয়ে ভালো যা বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
আমাদের দেশের বাজারগুলোতে সাধারণত গ্রেড ২ থেকে পাওয়া যায়। এসব চায়ের উপকারিতা রয়েছে। তবে গ্রেড ১ এর চা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। চীনে সবচেয়ে ভালো চা তৈরি হয়। আমাদের দেশে মূলত সিনেনসিস-ই চাষ করা হয়। গোল্ড নামে এক ধরনের চা শ্রীমঙ্গলে তৈরি করা হয় যার স্বাদ ও ফ্লেভার অনন্য।
চা খাওয়ার নিয়ম
আমাদের অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা না হলে চলেই না। ঘুম থেকে উঠার পরপরই আমরা সর্বপ্রথম চা খুঁজি। কিন্তু চা খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। ঘুম থেকে ওঠার পরপরই চা খেলে তার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা সারারাত ঘুমানোর কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা
যেহেতু চা পাতায় নিকোটিন থাকে যা আমাদের পানি খাওয়ার আসক্তি বাড়ায়। তাই ঘুম থেকে ওঠার পর চা পান করা হলে তা শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম আমাদের পানি খাওয়া উচিত। এরপর কিছুটা বিরতি দিয়ে চা পান করা উচিত।
এছাড়াও অনেকে ভারী খাবার গ্রহণ করার পরপরই চা পান করেন। যা করা একদমই উচিত নয়। অন্ততপক্ষে ভারী খাবার গ্রহণ করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর চা পান করা উচিত। আমাদের প্রতিদিন তিন কাপের বেশি চা পান করা উচিত নয়। নিয়ম না মেনে চা খেলে আমরা কোন উপকার পাবো না বরং সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
চা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের অনেকেরই ধারণা চা খাওয়া শুধুমাত্র এক ধরনের অভ্যাস। কিন্তু এ ধারণাটি মোটেও সঠিক নয়। নিয়মিত চা খেলে এর উপকারিতা রয়েছে। তবে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে চা পান করতে হবে। অধিক চা পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চা খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
- নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে চা পান করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যা আমাদের বিভিন্ন অসুখের মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
- আমাদের প্রতিদিন অন্তত এক কাপ করে লিকার চা খাওয়া উচিত। এতে করে হার্ট ভালো থাকে। চায়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের এনজাইম হার্টের রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। বিশেষজ্ঞরা দিনে অন্তত ২ কাপ লিকার চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- চা যে শুধু হার্টের উপকার করে তা নয় চা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি হতে দেয় না। এক্ষেত্রে গ্রিন টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ক্যান্সারসহ আরো অন্যান্য আসুখ দূর করতে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ চা খাওয়া দরকার।
- চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। এতে করে নার্ভ শান্ত থাকে।
- চা মাইগ্রেনের সমস্যায় ও কাজ করে থাকে। অতিরিক্ত মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিলে যদি এক কাপ চা খাওয়া যায় তাহলে অনেকটা শান্তি পাওয়া যায়।
- শরীরে কোথাও ব্যথা পেলে মধু চা আপনাকে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
চা খেলে গ্যাস্ট্রিক হয় কথাটি কতটা সত্য
নিয়ম মেনে চা পান করলে এবং পরিমিত পরিমাণে চা পান করলে এতে ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তবে যদি কেউ ভারী খাবার গ্রহণ করার পরপরই চা পান করে তবে তার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
এছাড়াও যদি কেউ খালি পেটে করা চা গ্রহণ করে তবে তার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। তবে পেটের যে কোন সমস্যা দূর করার জন্য আদা চা খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পুদিনা চা, হলুদ চা, মৌরি চা খাওয়া যেতে পারে।
লাল চা এর যত গুনাগুন
লাল চায়ের উপকারী ও অপকারী দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় লাল চায়ের উপকারীর দিকের তুলনায় অপকারী দিকঅত্যন্ত নগণ্য। লাল চায়ে অনেক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা হার্ট সতেজ রাখে, মন ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
এছাড়াও লাল চা শরীরকে আদ্র রাখে। অনেকে মনে করেন খালি পেটে লাল চা খেলে তার শরীরের ক্ষতি করে। তবে আসল ব্যাপার হলো খালি পেটে লাল চা খেলে তা পেটের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে লাল চা হৃদরোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
লাল চায়ের অনেকগুলো উপকারি দিক থাকলেও দুধ চায়ের ক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণই আলাদা। দুধ চায়ের উপকারী দিকের তুলনায় অপকারী দিকই বেশি। চায়ে কয়েক ফোঁটা দুধ মিশালে তা চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও দুধ চা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়াও দুধ চা খেলে বদহজমের সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
একটি গবেষণায় দেখা গেছে এক কাপ চায় ৫০ গ্রাম দুধ মিশালে ইনসুলিনের কার্যকারিতা ৯০% কমে যায় এতে করে শরীরে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায়। আমরা সাধারণত মুখের স্বাদের জন্য দুধ চা খেয়ে থাকি। তবে আমাদের সকলেরই দুধ চা খাওয়া পরিহার করা উচিত। কেননা দুধ চা খাওয়ার উপকারিতার তুলনায় এর অপকারিতাই বেশি।
আদা চায়ের উপকারিতা
আদা চায়ের অনেকগুলো উপকারী দিক রয়েছে। আদাতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ ও অ্যামিনো এসিড। যার কারণে আদা চা খেলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। এছাড়াও আদার রস চর্বি জমতে বাধা প্রদান করে। ফলে প্রতিদিন আদা চা পান করলে তা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুকি কমায়। এছাড়াও মাথা ব্যথায়, গলা ব্যথায় আদা চায়ের জুরি মেলা ভার।
আরো পড়ুনঃ মানবদেহের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
আদা চা মনের অবসর দূর করে মনকে চাঙ্গা করে। খুসখুসে কাশি নিরাময়ে আদা চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এতে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে পরিমিত পরিমাণে আদা চা পান করলে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। তাই শরীর সুস্থ রাখতে আমরা আদা চা খেতে পারি।
গাছের যত্নে কিভাবে চা পাতা ব্যবহার কাজে লাগে
চা পান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি চা পাতা ও আমাদের অনেক উপকারে আসে। গাছের জন্য চা পাতা খুব ভালো জৈব সার। কেননা চায়ে আছে ট্যানিক এসিড। চা পাতা যখন গাছের গোড়ায় দেয়া হয় তখন এটি পচতে শুরু করলে মাটিতে এটি ট্যানিক এসিড ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ছাড়ে। এতে মাটির পুষ্টি গুনাগুন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অম্লতাও বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও পোকামাকড়ের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করতে চা পাতা ভিজিয়ে রাখা পানি গাছে ছিটিয়ে দিলে পোকামাকড় আর আক্রমণ করে না। এছাড়াও চা পাতা গাছে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে যা গাছের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুলের যত্নে চা পাতার ব্যবহার
চা শুধুমাত্র শরীরের উপকার করে থাকে এমন নয়। চা পাতা চুলের জন্য অনেক উপকার। চুলের কোষ গুলো প্রতিদিন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়। এই আক্রমণ রোধ করতে চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
এমনকি চা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে। এছাড়াও চা পাতা ফুটানো পানি প্রতিদিন চুলে ব্যবহার করে ১৫ মিনিট মেসেজ করার পর ধুয়ে ফেললে তা চুল পড়া কমাবে এবং চুলের গোড়া শক্ত করবে। এছাড়াও চা পাতা চুলের রং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পরিশেষে
চা খাওয়ার উপকারিতা এর ক্ষতির তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে লাল চা, আদা চা শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাছাড়াও লাল চা ও আদা চা সহজলভ্য হওয়ায় মানুষের হাতের নাগালেই এটি পাওয়া যায়। আমাদের প্রতিদিন অন্তত এক কাপ করে চা খাওয়া প্রয়োজন। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মনও সতেজ থাকে।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে আপনি এটি আপনার পরিবারের লোকদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url