পুকুরে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি ও চিংড়ি চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
প্রিয় পাঠক, আপনি কি পুকুরে কিভাবে চিংড়ি চাষ করতে হয় সে সম্পর্কে অবগত নন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে পুকুরে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি ও চিংড়ি চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি ধান এবং চিংড়ি একসাথে কিভাবে চাষ করা যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চিংড়ি চাষ অনেক লাভজনক হওয়ার কারণে ধান এবং চিংড়ি একসাথে চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়। অধিক লাভবান হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
চিংড়ি বাংলাদেশের একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের দেশে অসংখ্য নদ নদী, খাল বিল, পুকুর থাকার কারণে চিংড়ি চাষের জন্য রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। আমাদের দেশের জলাশয় প্রায় ৬৭ টি পদ্ধতির চিংড়ি রয়েছে। তবে প্রধানত গলদা ও বাগদা এই দুই ধরনের চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে। গলদা মিঠাপানির এবং বাগদা উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ শীতে ঠোঁট ফাটার কারণ ও প্রতিকার
পোশাক শিল্পের পরেই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বে চিংড়িরপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। চিংড়ি স্বল্প আয়ে চাষ করা সম্ভব এবং এর থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।
সাধারণত মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে চিংড়ির পোনা পাওয়া যায়। বর্তমানে হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে চিংড়ির পোনা ফোটানো হচ্ছে। চিংড়ি চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ার কারণে এখন মানুষ চিংড়ি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এর ফলে চিংড়ি বিদেশের রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলছে সমৃদ্ধ।
পুকুরে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশে বর্তমানে ছোট বড় অনেক পুকুর রয়েছে যেগুলোতে মাছ চাষ করা হয়। রুই, কাতলা ইত্যাদি বড় মাছের পাশাপাশি যদি চিংড়ি চাষ করা যায় তবে অধিক লাভবান হওয়া যায়। কেননা রুই কাতলা শুধু পুকুরের মাঝে এবং উপরের খাবার খেয়ে থাকে আর চিংড়ি পুকুরের তলদেশের খাবার খেয়ে থাকে। এতে করে কোন খাবার অপচয় হয় না। যার কারণে মাছ চাষে বিঘ্ন ঘটে না।
আরো পড়ুনঃ মাশরুমের উপকারিতা, পুষ্টিগুন ও চাষ পদ্ধতি
পুকুরে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন করতে হবে। এরপর ভালোভাবে চিংড়ি চাষ করার জন্য সেই পুকুরকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। তারপর চিংড়ির পোনা মজুদ করতে হবে এবং নিয়মিত সার ও খাবার দিতে হবে। চিংড়ি বড় হলে তা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে হবে।
চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
গলদা বা বাগদা যে ধরনের চিংড়ি চাষ করাই হোক না কেন তারপর পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হয়। এর জন্য সর্বপ্রথম পুকুর সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে নিতে হয়। পুকুরের পার কথা ভাঙ্গা থাকলে সেটি মেরামত করতে হবে। ভালো করে রোদে ৭-৮ দিন শুকানোর পর এতে চুন প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে চুন পানিতে গুলিয়ে পুকুরের পারসহ সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
এতে করে পুকুরে অবস্থিত সমস্ত ক্ষতিকর জীবাণু মারা যাবে। এছাড়াও পুকুর শুকানোর ফলে বেশ কয়েকটি উপকার পাওয়া যায় যেমন রাক্ষসী মাছ মারা যায়, দীর্ঘদিন তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস দূর হয়, মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, মাটির পিএইচ পুনর্গঠন হয়, প্রাকৃতিকভাবে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, তলদেশ শক্ত হওয়ার ফলে চিংড়ির বিচরণে সুবিধা হয় ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ মানবদেহের জন্য সুষমা খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
এরপর ৭২ ঘন্টার ব্যবধানে পুকুরে দুই থেকে তিনবার নাঙ্গল দিয়ে চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি গভীর করে চাষ দিতে হবে এবং পরবর্তীতে পুকুরের তলদেশ সমান করে দিতে হবে। এরপর পুকুরে পানি দিতে হবে এবং পানি শোধন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। পুকুরে উত্তম রূপে সার প্রয়োগ করতে হবে।
পােনা মজুদ ও মজুদ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
পুকুরের পানির রং হালকা সবুজ হলে পোনা মজুদ করতে হয়। তবে পোনা মজুদের পূর্বে চিংড়ির জন্য আশ্রয়স্থল স্থাপন করতে হবে। কেননা চিংড়ির একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর তার খোলস বদলানোর মধ্য দিয়ে বড় হয়। খোলস বদলানোর সময় চিংড়ি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য তাদের নিরাপদ আশ্রয় প্রয়োজন হয়।
চিংড়ির নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নারকেল, তাল বা খেজুর গাছের শুকনো পাতা ডালপালা ও বাঁশের টুকরো পুকুরের তলদেশে পরিকল্পনা মাফিক স্থাপন করতে হবে যা চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। চিংড়ির পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ইঞ্চি আকারের পোনা সাবধানে পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে ছাড়তে হবে।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও এর যত গুনাগুন
এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জায়গায় একক চাষের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১২০ টি চিংড়ির পোনা ছাড়তে হবে। তবে মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতকে ৫০টি চিংড়ি, ২-৩ টি রুই, ২ টি কাতলা ও একটি কার্ড জাতীয় মাছ ছাড়া যায়।
পোনার বেঁচে থাকা পর্যবেক্ষণঃ পোনা পরিবহনের সময় পীড়নের কারণে পোনা দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মারা যেতে পারে। পোনা মারা গেলে তা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভেসে উঠে এবং ধীরে ধাক্কায় পাড়ের কাছাকাছি চলে আসে। তাই পোনা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর পুকুরের চারিদিকে ঘুরে মৃতপনার পরিমাণ সনাক্ত করে পুনরায় সমান সংখ্যক পোনা মজুদের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণঃ পুকুরের পোনা মজুদের পর নিয়মিত পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পানের উপরিভাগ গারো সবুজ হলে প্রয়োজনে পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে। সেই সাথে যদি চিংড়ির অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় তবে প্রয়োজনে পানির দুই তৃতীয়াংশ তুলে নতুন পানি দিতে হবে।
চিংড়ির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণঃ প্রজাতিভেদে সাধারণত মাছের গড় দৈনিক বৃদ্ধির হার ২-৫ গ্রাম এবং গলদা চিংড়ির বৃদ্ধি ০.৫-১%। তাই অধিক লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত মাছ ও চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। মোট মজুদকৃত মাছ ও চিংড়ির ৮০% বেঁচে থাকার হার ধরে নমুনার জন্য সংগৃহীত মাছ ও চিংড়ির গড় ওজন দিয়ে গুণ করে মোট ওজন বের করতে হবে। এই গড় ওজনের ভিত্তিতে নিয়মিত সঠিক পরিমাণ খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়।
সার প্রয়োগঃ প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি উৎপাদনের জন্য পুকুরে নিয়মমাফিক সার করতে হবে। এ জন্য ১৫ দিন পর পর পুকুরে প্রতি শতকে গােবর ১৫ কেজি, ইউরিয়া ৫ কেজি, টিএসপি ২.৫ কেজি ও এমওপি ১ কেজি দেওয়া যেতে পারে। তবে কখনোই অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করা ঠিক নয় এতে মাছের ক্ষতি হবে। পানির রং অতিরিক্ত সবুজ হয়ে গেলে সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধঃ চিংড়ির রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করায় সহজ। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। পুকুরের পরিবেশ যেন কোন অবস্থাতেই দূষিত না হয় এবং পানির তাপমাত্রা যাতে খুব বেশি বৃদ্ধি না পায়। এছাড়াও পোনা মজুদ করার সময় যেন সেগুলো রোগ আক্রান্ত না হয়। এসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলে পোনা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিংড়ির খোলস, লেজ ও ফুলকায় কালো দাগ, বেশি সাদা ও হলদে হয়ে যাওয়া, খোলস নরম, গায়ে শেওলা জমা ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে খুব দ্রুত পুকুরের পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে এবং পুকুরে প্রতি শতকে এক কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।
চিংড়ি মাছের খাদ্য তালিকা
চিংড়ি চাষ করে লাভের মুখ দেখার জন্য এবং চিংড়ির ভালো উৎপাদন পাওয়ার জন্য শুধু প্রাকৃতিক খাবারের উপর নির্ভর হলে চলবে না। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি চিংড়িকে সম্পূরক আবারও দিতে হবে। সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরীর জন্য চালের কুড়া বা গমের ভুসি, খৈল, ফিশ মিল, লবণ, ভিটামিন ও শামুক বা ঝিনুকের গুড়া একসাথে মিশিয়ে একটি পিণ্ড তৈরি করে পুকুরে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও শামুক ও ঝিনুক মাংস ছোট ছোট করে কেটে পুকুরে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। পুকুরে প্রতিদিন চিংড়ির মত ওজনের ৩-৪ ভাগ হারে খাবার দিতে হবে। এসব খাবার প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় দুই ভাগে প্রয়োগ করতে হবে। খাবার অবশ্যই পুকুরের তলা থেকে ত্রিশ সেন্টিমিটার উপরে অবস্থিত খাদ্যদানিতে দিতে হবে।
চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তালিকা
ক্রমিক নং |
খাদ্য উপাদানের নাম |
পরিমাণ (গ্রাম) |
১. |
চালের কুড়া/গমের ভুসি |
৪০০-৬০০ |
২. |
খৈল
(সরিষা/সয়াবিন/তিল) |
১০০-২০০ |
৩. |
ফিশ মিল |
২০০-৩০০ |
৪. |
শামুক বা ঝিনুকের গুড়া |
৯৫ |
৫. |
লবণ |
২.৫ |
৬. |
ভিটামিন মিশ্রণ |
২.৫ |
চিংড়ি মাছ সংগ্রহ ও বাছাই
একই সাথে একই সাইজের চিংড়ির প্রণাম মজুদ করা হলেও এদের বৃদ্ধি একই রকম হয় না। চিংড়ির পোনা ছাড়ার ৩-৪ মাসের মধ্যে কিছু চিংড়ির ওজন ১০০-১৫০ গ্রামে পৌঁছায়। আবার কিছু চিংড়ির ওজন ৫০০ গ্রাম বা তার অধিক হয়ে থাকে। তাই পোনা ছাড়ার ৩-৪ মাস পর বড় সাইজের চিংড়ি মাছগুলো তুলে ফেলা লাভজনক।
এক্ষেত্রে ছোট সাইজের মাছগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পুকুরে কম খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়। মাছ যেহেতু দ্রুত পচনশীল দ্রব্য তাই চিংড়ি ধরার পর খুব দ্রুত এবং সতর্কতার সাথে তা ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে চিংড়ি ধরার পর সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে বাজারজাত করতে হবে। চিংড়ি ধরার পরপরই এদের সাহায্য স্থান রাখতে হবে।
চিংড়ির ভালো বাজার দর পাওয়ার জন্য স্বল্পপরিমাণ চিংড়ি আহরণ করে মাথাসহ চিংড়ি পরিবহন করতে হবে। চিংড়িকে দূরবর্তী স্থানে পাঠানোর ক্ষেত্রে বরফের ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি এক ভাগ মাসের জন্য দুই ভাগ বরফ দিতে হবে এবং এটি একটি বক্সে সংরক্ষণ করতে হবে।
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ
ধান খেতে গলদা চিংড়ি চাষ করার ফলে একই সময়ে একই জায়গায় ধান ও চিংড়ি একসাথে চাষ করা যায়। ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ধান হলো মুখ্য ফসল আর চিংড়ি হল গৌণ ফসল। সাধারণত এমন পর মৌসুমে ধান খেতে পানি থাকে। এ সময় ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যেতে পারে। তবে সব ধরনের জমিতে চিংড়ি চাষ সম্ভব নয়।
শুধু মাত্র যেসব জমিতে ৪-৬ মাস পানি থাকে সেইসব জমিতে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব। বিশেষ করে যেগুলো নিচু জমি সেগুলোতে চিংড়ি চাষ ভালো হয়। ধান চাষের সাথে চিংড়ি চাষ করতে হলে অবশ্যই জমিতে সবসময় ৫-৬ ইঞ্চি পানি থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও মোট জমির ৩-৪ ভাগ জমিতে গর্ত খনন করতে হবে যাতে যখন পানি কম থাকবে তখন চিংড়ি সেই গর্তে অবস্থান করতে পারে।
চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য চিংড়িকে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। ৫-৬ মাস পর চিংড়ি আহরণ করে বাজারজাতকরণ করতে হবে। ধানক্ষেতে চিংড়ি চাষ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপঃ
- একই জমিতে একই সাথে ধান এবং চিংড়ি পাওয়া যায়। এতে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
- কম পুজিতে ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যায়।
- যেসব পোকামাকড় ধানের জন্য ক্ষতিকর চিংড়ি সেগুলোকে খেয়ে ধানকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
- চিংড়ির চলাচলের জন্য পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ধানের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে।
- সার ব্যবহার করার কারণে জমিতে অতিরিক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হয় যার কারণে চিংড়িকে কম খাবার দেয়ার প্রয়োজন পরে।
- চিংড়ি যেসব খাবার খায় না সেসব খাদ্য ধানের সার হিসেবে কাজ করে।
- ধান ক্ষেতে পানির যথাপোযুক্ত ব্যবহার হয়।
- চিংড়ির বিষ্ঠা ধানের জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ধানের ফলন বেশি হয়। এতে করে কৃষক লাভবান হয়।
তবে ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে যে শুধু সুবিধা রয়েছে বিষয়টি এমন নয়। ধানক্ষেতে চিংড়ি চাষের কিছু অসুবিধাও পরিলক্ষিত হয়। অসুবিধা গুলো নিম্নরূপঃ
- ধানের জমির পানি শুকিয়ে গেলে চিংড়ি চাষে অসুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে ধানের পানি প্রয়োজন না হলেও সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এতে করে খরচ বেশি হয়।
- হঠাৎ বন্যা হলে জমির আইল ভেঙে চিংড়ি ভেসে যেতে পারে
- ধানের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক চিংড়ির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে করে চিংড়ি মারা যেতে পারে।
- বাতাসে ধান গাছ হেলে পড়লে তা চিংড়ি চাষের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
চিংড়িকে সন্ধ্যায় খাবার দিতে হয় কেন
চিংড়ি সাধারণত নিশাচর, নৈশভোজী ও পানির তলদেশের প্রাণী। এরা সচরাচর সূর্যের আলো এড়িয়ে রাতের বেলায় খাবার খেতে পছন্দ করে। সাধারণত শ্যাওলা, পোকামাকড়, ছোট ছোট শামুক, ঝিনুক, মাছ, মাছের ডিম, কেঁচো ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এছাড়াও হিসেবে চালের কুড়া বা গমের ভুসি, খৈল, ফিশ মিল, লবণ, ভিটামিন ও শামুক বা ঝিনুকের গুড়া খেয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
অনেক সময় দেখা যায় সবল চিংড়ি দুর্বল চিংড়িকে খেয়ে ফেলছে। চিংড়ি যেহেতু নিশাচর প্রাণী এবং দিনের বেলা থেকে রাতে বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে তাই খাবারের অপচয় কমানোর জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার করে চিংড়িকে খাবার দিতে হবে। তাহলে খাবার অপচয় রোধের পাশাপাশি চিংড়ির বৃদ্ধি ও দ্রুত হবে।
চিংড়ি চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
জাতীয় আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চিংড়ি বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি বর্তমানে এটি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। চিংড়ির বাজার মূল্য দিন দিন ঊর্ধ্বগতি হওয়ার কারণে অধিকাংশ চাষীরা চিংড়ি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে অধিক চিংড়ি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। যা আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সাহায্য করছে। প্রথমে হাওড়া অঞ্চলে চিংড়ি চাষ শুরু করা হয়। এক্ষেত্রে জোয়ারের পানি নালা কাটার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে তাতে চিংড়ি চাষ করা হতো। এতে তেমন কোনো উৎপাদন হতো না। তিন চার মাস পর হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ৫০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হতো।
আরো পড়ুনঃ চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার কারণ ও প্রতিকার
কিন্তু বর্তমানে চিংড়ি পরিকল্পিত হবে চাষ করার কারণে হেক্টর প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। অধিক লাভজনক শিল্প হিসেবে চিংড়ি সম্পদ মানুষের কাছে বিবেচিত হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে এটি চাষ করার প্রতি মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছে। রপ্তানি শিল্পে পোশাক শিল্পের পরেই চিংড়ির অবদান। বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের মধ্যে চিংড়ির অবদান প্রায় ৭০ শতাংশ।
আমাদের মোট জাতীয় আয়ের ৩.৫৭ শতাংশ এবং মোট কৃষিজ আয়ের ২৬ শতাংশ মৎস্য খার থেকে আসে। বাংলাদেশে থেকে রপ্তানিকৃত মোট চিংড়ির প্রায় ৯৫ শতাংশ চিংড়ি ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানে যায়। দিন দিন চিংড়ি রপ্তানি করে অর্জিত আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শেষ কথা
চিংড়ি উৎপাদন আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে দেশের বেকার জনসম্পদকে চিংড়ি চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে করে বাংলাদেশ আরও উন্নত এবং সমৃদ্ধ হবে। এর সাথে সাথে যেসব ধানি জমি চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত সেগুলোতে কৃষক যেন ধান চাষের পাশাপাশি চিংড়ি চাষ করে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ইন্টারনেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি যদি উপকৃত হন তবে এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url