OrdinaryITPostAd

ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা - ধূমপান ছাড়ার পরীক্ষিত ২০ টি উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন? কিন্তু কিভাবে ছাড়বেন তা বুঝতে পারছেন না। আগেও ছাড়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে ধূমপান ছাড়া পরীক্ষিত ২০ টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। যেগুলো মেনে চলে আপনি খুব সহজে ধূমপান থাকতে পারেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ধূমপান ছাড়ার পরীক্ষিত উপায়
এছাড়া আপনি আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ধূমপান ছাড়ার পর আমাদের দেহে তৎক্ষণাৎ যেসব পরিবর্তন ঘটে তা জানলে আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। তাই এসব কিছু জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

"ধূমপান মৃত্যুর কারণ, এতে ক্যান্সার হয়" এমন ক্ষতিকর বার্তা প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটেই লেখা থাকে। মানুষজন এর ক্ষতির কারণ জানা সত্ত্বেও নির্দ্বিধায় এটি গ্রহণ করে। ধূমপান করার সাথে সাথে শরীর নানা ধরনের ক্ষতি সম্মুখীন হতে শুরু করে।

ধূমপান করার কারণে হার্ট অ্যাটাক থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। সেইসাথে ধূমপানকারীকে লোকজন কখনো ভালো নজরে দেখেনা। সবাই তাকে ঘৃণা করে। ধূমপান করার কারণে নানা জায়গায় ছোট হতে হয়। সেই সাথে এর জন্য পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। এছাড়াও ধূমপানকারীকে আল্লাহ তা'লা পছন্দ করেন না।

আপনারা যারা ধূমপন্থের অ্যাড্রেসটা করছেন কিন্তু বুঝতে পারছেন না এটি কিভাবে ছাড়তে হয়, তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল। এই আর্টিকেলে ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা ও ধূমপান ছাড়ার পরীক্ষিত ২০ টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। যেগুলো মেনে চললে আপনি খুব সহজেই ধূমপান ছাড়তে পারবেন। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।

ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা

ধূমপানে এমন একটি বিষয় যেটিতে আমরা সবাই জেনে শুনে বিষ পান করে থাকি। কেননা ধূমপানের জন্য আমরা যেসব সিগারেট খেয়ে থাকি সেগুলোর প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এতে ক্যান্সার হয়। এই সতর্কীকরণ লেখা থাকা সত্ত্বেও আমরা অনায়াসে ধূমপান করে থাকি।

তবে যদি কেউ ধূমপান করতে করতে ধূমপান ছেড়ে দেয় তবে তার শরীরে অনেক রকম উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। এই পর্বে আমরা ধূমপান ছাড়ার কারণে শরীরে কি কি উপকার হয় সে সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই ধূমপান ছাড়ার কারণে আমাদের শরীরে কি কি উপকার সংঘটিত হয়।
  • শেষবার ধূমপান করার ঠিক ২০ মিনিট পরে রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ধূমপান করার কারণে কখনো রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় আবার কখনো রক্তচাপ কমে যায়। এর ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু যখন আপনি ধূমপান করা ছেড়ে দিবেন তা ঠিক ২০ মিনিট পরে আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।
  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৩-৮ পরে রক্তে অক্সিজেন মাত্রা স্বাভাবিক হয়। এতে করে রক্ত চলাচলের উন্নতি হতে শুরু করে। সেই সাথে চিন্তাশক্তি ও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া মন-মানসিকতা আগের থেকে অনেক ভালো হয়। এ সময় রক্তে নিকোটিন ও কার্বন-মনোক্সাইড এর পরিমাণ কমতে শুরু করে।
  • শেষবার ধূমপান গ্রহণ করার ৯-৪৮ ঘন্টা পরে শরীর থেকে কার্বন মনোক্সাইড দূর হয়ে যায়। এতে করে রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ কমতে শুরু করে। সেই সাথে এ সময় ঘন ঘন কাশি হওয়ার ফলে ফুসফুস মিউকাস ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ কফের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়।
  • এ সময় ঘ্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৯-৪৮ ঘন্টা পরে খাবারের রুচি ফিরে আসে এবং খাবার আগের তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাদু মনে হয়। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার কারণে এ সময় খাবারের সঠিক টেস্ট পাওয়া যায়।
  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৭২ ঘন্টা পর শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক হতে শুরু করে। ধূমপান করার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে বুকের মধ্যে শান্তি অনুভূত হয়। সেই সাথে শরীর সুস্থ লাগে ও কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • শেষ বার ধূমপান করার ২ থেকে ১২ সপ্তাহ পরে শরীরের সার্বিক রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে। এ সময় রক্তে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন বিদ্যমান থাকে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কম থাকে।
  • গবেষণায় দেখা গিয়েছে ধূমপান ছেড়ে দিলে শরীরের বিভিন্ন কোষের প্রায় দশ হাজার পর্যন্ত জিনগত পরিবর্তন হয়ে থাকে।
  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৩ থেকে ৯ মাস পর যকৃতের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিষ্কার ও সুস্থ থাকে। এর ফলে কাশি ও মাথা ঘোরানোর সমস্যা অনেক কমে যায়। সেই সাথে ফুসফুস ক্যান্সারের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।
  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এক বছর পর হৃদরোগের বিভিন্ন সমস্যা, স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকে নেমে আসে। এই সময় হৃদপিণ্ড অনেক বেশি সুস্থ থাকে এবং এর কার্যকারিতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
  • শেষবার ধূমপান করার নয় থেকে দশ বছর পরে হৃদপিণ্ড একজন স্বাভাবিক মানুষের মত হয়ে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এ সময় ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকে একজন ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধকে নেমে আসে।
  • ধূমপান করার কারণে নার্ভের অনেক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। কিন্তু ধূমপান একেবারে ছেড়ে দিলে নার্ভের কার্যকারিতা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • ধূমপান করার কারণে শরীরে নিকোটিন প্রবেশ করে। এর ফলে ঠিকমতো ঘুম হয় না। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে শরীরের নিকোটিনের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে ঘুম ভালো হয়।
ধূমপান সবসময় আমাদের শরীরের ক্ষতি করে থাকে। এটি কখনোই শরীরের উপকার করে না। তাই আমাদের সকলেরই উচিত নিজের জীবনের কথা চিন্তা করে ধূমপান একেবারে ছেড়ে দেওয়া।

ধূমপান ছাড়ার পরীক্ষিত ২০ টি উপায়

যারা ধূমপানের প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত কিন্তু মনে মনে চাচ্ছেন ধূমপান ছেড়ে দিতে। আজকের এই পর্ব তাদের জন্য। এই পর্বে আমরা ধূমপান ছাড়ার পরীক্ষিত ২০টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। যেগুলো মেনে চললে খুব সহজেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারবেন। ধূমপান ছাড়ার উপায় গুলো হলো-
  1. ধূমপান ছাড়তে হলে সর্বপ্রথম এটি ছাড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য আপনি টি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করুন এবং মনে মনে সংকল্প করুন ওই তারিখের পর আমি আর একটিও সিগারেট জ্বালাবো না। একবার যে তারিখ ঠিক করবেন ওই তারিখ আর ভালোভাবেই পেছানো যাবে না।
  2. আপনি কেন ধূমপান ছাড়তে চান সে বিষয়টি নির্ধারণ করুন। কেননা অনেক সময় দেখা যায় ধূমপান ছাড়া আর কিছুদিনের মধ্যেই আবার ধূমপান গ্রহণ শুরু করেন অনেকে। যদি আপনার কাছে ধূমপান ছাড়া কারণ থাকে তবে তা আপনাকে সাহায্য করবে।
  3. আপনি যে সময় ধূমপান করতে মন চাইবে সে সময় মুখে মৌরি, মিছরির দানা বা লবঙ্গ দিন। দেখবেন ধূমপান করার ইচ্ছাটা অনেকটাই চলে গিয়েছে।
  4. ধূমপান করার অন্যতম কারণ হলো নিকোটিনের প্রতি আসক্তি। আর এই আসক্তি কমিয়ে দেয় মিন্ট জাতীয় টুইংগাম। তাই যখন আপনার ধূমপান করতে ইচ্ছা হয় তখন ধূমপানের পরিবর্তে চুইংগাম চাবান। এতে করে ধূমপানের প্রতি আসক্তি কমে যাবে।
  5. ধূমপান ছাড়ার সময় যত সম্ভব চা কফি কম পান করুন। কেননা অধিক পরিমাণ চা কফি ধূমপানের প্রতি আকর্ষিত করে।
  6. আপনি ধূমপান ছাড়ার কথা চিন্তা করলে সে সময় বেশি বেশি পানি পান করুন। কেননা ধূমপান ছাড়ার ফলে আপনার শরীরে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করবে। বেশি বেশি পানি পান করার কারণে সেই অস্থিরতা ভাব চলে যাবে।
  7. ধূমপান ছাড়া আরেকটি উপায় হলো ধূমপানের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানো। আগে যদি দিনে দশটি সিগারেট খেতেন তবে এখন তা অর্ধেক করে ফেলুন। অথবা আপনি চাইলে পুরো সিগারেট না খেয়ে অর্ধেক ফেলে দেওয়ার অভ্যাস করুন। এরপর আস্তে আস্তে তাড়িয়ে তিন চতুর্থাংশ ফেলে দিন। এভাবে ধীরে ধীরে ধূমপান কমাতে থাকুন।
  8. বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল বা কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা অ্যালকোহলের সাথে সিগারেটের একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। যখন অ্যালকোহল পান করা হয় তখন আপনাআপনি সিগারেটের উপর টান চলে আসে। তাই এ সময় অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন।
  9. আপনি দিনের যে সময় সিগারেট খেয়ে থাকেন সে সময় শনাক্ত করুন এবং নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখুন। এতে করে ধূমপানের প্রতি আসক্তি কমে যাবে।
  10. নিজের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনুন। মাংস খাওয়ার পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে ফলমূলক শাকসবজি খান। কেননা মাংস খাওয়ার কারণে ধূমপানের প্রতি একটি আকর্ষণ জন্মে। আর ফলমূল খাওয়ার কারণে ধূমপানের প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে।
  11. ধূমপান ছাড়ার ব্যাপারে ইতিবাচক থাকুন। আপনি হয়তো এর আগেও ধূমপান ছাড়ার পরিকল্পনা করে বাধ্য হয়েছেন। সেগুলো ভাবা যাবেনা। বরং এবারে আপনি সফল হবেন এমন মনোভাব রাখুন।
  12. ধূমপান ছাড়ার জন্য আশেপাশের মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। তাই এ সময় অধূমপায়ী বন্ধুর সংখ্যা বাড়ান এবং তাদের সাথে বেশি সময় কাটান। সেই সাথে যারা ধূমপান করে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করুন।
  13. এ সময় যত সম্ভব মুখ খালি না রাখার চেষ্টা করুন। কেননা মুখ খালি থাকলে ধূমপান করার ইচ্ছা জাগবে। তাই পকেটের সব সময় সিগারেটের পরিবর্তে চকলেট বা চুইংগাম রাখুন।
  14. আপনি ধূমপান করা ছেড়ে দিচ্ছেন এটা আশেপাশের মানুষদের জানান। এতে করে আপনি তাদের সামনে ধূমপান করতে পারবেন না সেইসাথে যারা ধূমপান করে তারা কেউ আপনাকে ধূমপানের প্রস্তাব দেবে না। যদি কেউ ধূমপান করার প্রস্তাব দেয় তবে তাকে শুধুমাত্র না বলুন।
  15. নিয়মিত শরীরচর্চায় মনোযোগী হন। নিয়মিত করলে ধূমপানের প্রতি চাহিদা কমে যায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার জন্য ধূমপান ছাড়া সহজ হবে।
  16. যেসব কাজ করলে আপনার ধূমপান করার ইচ্ছা জাগে সেসব কাজ থেকে দূরে থাকুন। ধূমপান ছাড়ার কিছুদিন আপনার অনেক কষ্ট হবে। সেই সময় হতাশ বা নিরাশ হওয়া যাবে না।
  17. আপনি যদি ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তবে সেই সময় হাতের কাছে নোনতা খাবার রাখুন। যখন ধূমপান করতে ইচ্ছা করবে তখন নোনতা খাবার খান। এতে করে ধূমপান করার ইচ্ছা অনেকটা চলে যাবে।
  18. রুটিন মাফিক জীবন পরিচালনা করুন। যেমন সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠা, খাবার খাওয়া ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজ সঠিক সময় করুন। সব সময় ভালো চিন্তা ভাবনা করুন। যদি কোথাও সিগারেট লুকিয়ে রাখেন তাহলে সেটি প্যাকেট সমেত ফেলে দিন।
  19. যেসব জায়গায় সিগারেট পাওয়া যায় সেসব জায়গা এড়িয়ে চলুন। টংয়ের দোকানে চা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা সেখানে চা খাওয়ার পাশাপাশি সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তাই এ সময় এসব জায়গা একেবারে এড়িয়ে চলুন।
  20. ধূমপান ছেড়েছে এমন কাউকে চেনা থাকলে তার কাছে পরামর্শ নিন। তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কাউন্সিলিংয়ের সহায়তা নিন।
আপনি যদি এসব উপায় অবলম্বন করতে পারেন তাহলে আপনি খুব সহজেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারবেন। তবে ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে কখনোই এমন চিন্তা করা যাবে না যে এই বারই শেষ খাওয়া বা এই টানই শেষ টান। যদি এমন চিন্তা ভাবনা করে থাকেন তবে আপনি কখনোই ধূমপান ছাড়তে পারবেন না।

ধূমপান ছাড়ার পর করণীয়

মানুষ মূলত যে কারণে ধূমপান করে তার একটি হচ্ছে মানসিক চাপ কমানো আর অন্যটি হলো শখের বসে অন্যের দেখা দেখি। যখন আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারবেন ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আপনার ধূমপানের প্রতি আসক্তি চলে আসবে। যদি তখন আপনি ধূমপান ছেড়ে দিতে চান তাহলে আপনার মধ্যে একটি অস্থিরতা কাজ করবে, পুনরায় ধূমপান করতে ইচ্ছা করবে।

এ সময়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা এ সময়েও ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে পারে তারাই দিনশেষে সফল হয়। আর যারা এ সময় একবার চিন্তা করে যে এটাই শেষ সিগারেট আর একটিও খাব না বলে আরেকটা সিগারেট জ্বালায় তারা কখনো ধূমপান ছাড়তে পারে না। আর এজন্য এ সময় অনেক কষ্ট হওয়ার পরেও কোনমতেই ধূমপান করা যাবে না।

অনেক ক্ষেত্রে রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে ধূমপানের প্রতি আসক্ত প্রবল হয়। তাই যখন আপনি ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন তখন তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। এই সময় আপনাকে প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং আপনি যে সব জায়গায় ধূমপান করতেন সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

সেই সাথে যেসব কাজ করলে ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট বাড়ে বা ধূমপানের কথা মনে করে দেয় সে সব কাজ করা থেকে কিছুদিন বিরত থাকতে হবে। ধূমপান ছাড়ার পর ১০-১৫ দিন, এই সময়ে যদি কেউ ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে পারে তবে সে ধূমপানকে চিরদিনের জন্য না বলতে পারে।

আপনি যদি ধূমপান ছাড়ার পর নিয়মিত এই কাজগুলো করতে পারেন তবে আপনি আর কখনো ধূমপানের প্রতি আসক্ত হবেন না।

ধূমপান ছাড়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

দীর্ঘদিন ধূমপান করার পর কেউ যদি ধূমপান করা বাদ দিয়ে দেয় তবে তার নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু তার এই সমস্যা সাময়িক। কিছুদিন একটু কষ্ট করে চললেই তার এই সমস্যা ভালো হয়ে যাবে। ধূমপান ছাড়ার পর যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা নিম্নরূপ-
  • কাশিঃ ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর আপনের অনেক বেশি কাশি হতে পারে। কেননা এর সময় ফুসফুস তার ভেতরে জমে থাকা কফ কাশির মাধ্যমে বাহিরে বের করে দেয়। যদি আপনি সেই কফ বাইরে বের করে ফেলে দেন তবে কিছুদিনের মধ্যে আপনার অনেক আরাম বোধ হবে।
  • মাথা ঘোরাঃ ধূমপান ছাড়ার ফলে হঠাৎ করে শরীরে নিকোটিন যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এর কারণে আপনার মাথা ঘোরার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে ভয় না পেয়ে কিছুদিন সহ্য করলে এবং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।
  • মাথাব্যথাঃ হঠাৎ করে ধূমপান ছেড়ে দিলে প্রচন্ড মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। পরিস্থিতি অতিরিক্ত খারাপ হলে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমণ করতে হবে।
  • ক্লান্তি ভাবঃ ধূমপানের দেওয়ার কারণে আপনাকে অনেক বেশি ক্লান্ত মনে হতে পারে। তাই এ সময় সঠিকভাবে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন সেই সাথে ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। এতে করে ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যাবে।
  • ঘুম কম হওয়াঃ সেই সময় আপনার ঘুম কম হতে পারে। তাই এ সময় অযথা দুশ্চিন্তা না করে সব সময় হাসিখুশি থাকতে হবে। প্রয়োজনে ঘুমানোর পূর্বে ১০-১৫ মিনিট হাটাহাটি করতে হবে। এতে করে ঘুম ভালো হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যঃ ধূমপান ছাড়ার কারণে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা হতে পারে। তাই এ সময় বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার, তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। প্রয়োজনে ইসপগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
ধূমপান একেবারে ছেড়ে দেওয়ার এক থেকে দেড় মাস এ ধরনের কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যায় বিচলিত হওয়া একদম চলবে না। কেননা এটি কোন রোগের কারণ নয় বরং এটি ধূমপান ছাড়ার কারণে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। তাই ধূমপান ছাড়ার পর এসব সমস্যা হতে পারে তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

ধূমপানের ক্ষতিকর দিক

ধূমপানে এমন একটি জিনিস যেটিতে মানুষ এর ক্ষতিকর দিক জানার পরেও এতে আসক্ত হয়ে থাকে। প্রথম দুটি সিগারেট শরীরের জন্য কোন ক্ষতি না করলেও তৃতীয় সিগারেট থেকেই শরীরের ক্ষতি হতে শুরু করে। এই পর্বে আমরা ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

ফুসফুসের ক্ষতি সাধনঃ নিয়মিত ধূমপান করার ফলে ফুসফুসের নানা ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। এমনকি এর ফলে ফুসফুস অকেজ হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে ধূমপান করার কারণে ফুসফুস ক্যান্সারও হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকঃ দীর্ঘদিন ধূমপান করার কারণে হার্ট তার কার্যক্ষমতা অনেকগুণ হারিয়ে ফেলে। এতে করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুন বেড়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপানের ফলে রক্তনালিতে ব্লকের সৃষ্টি হয়। যার ফলে হৃৎপিণ্ডের সঠিকভাবে অক্সিজেন পৌঁছায় না। যা পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ক্যান্সারঃ ধূমপান করার কারণে শরীরের যেকোনো জায়গায় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। ধূমপান আপনার ইমিউন সিস্টেমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার ফলে ধূমপান করার কারণে মূত্রাশয় ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, অগ্নাশয় ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার সহ শরীরের যেকোনো জায়গায় ক্যান্সার হতে পারে।

বন্ধ্যাত্বের সমস্যাঃ ধূমপান করার কারণে আপনার সন্তান জন্ম ধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি বন্ধ্যার সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও ধূমপান করার কারণে পুরুষের শুক্রাণ সংখ্যা ও পরিমাণ কমে যেতে পারে।

পরিবেশ দূষণঃ ধূমপান করার কারণে এর ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সেই সাথে যদি কোন অধূমপায়ী লোক ধূমপানকারীর আশেপাশে থাকে তবে তার ধূমপান করার কারণে সেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

দৃষ্টিশক্তি দুর্বলঃ দীর্ঘদিন ধূমপান করার ফলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। এমনকি ডেকে আনতে পারে অন্ধত্ব। এছাড়াও ধূমপান চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও আমাকে ধরে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলো চোখের সূক্ষ্ম টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার কারণে দৃষ্টিশক্তির অবনতি হয়।

চুল পড়ার সমস্যাঃ অতিরিক্ত ধূমপান করার কারণে মাথার চুল আস্তে আস্তে পড়ে যেতে পারে। সেই সাথে চুল তাড়াতাড়ি পেকে যেতে পারে।

যৌন দুর্বলতাঃ ধূমপান আপনার দাম্পত্য জীবনকে বিষাদময় করে তুলতে পারে। ধূমপান করার কারণে আপনার যৌন ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। সেই সাথে ধূমপান করার কারণে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। যার কারণে দাম্পত্য জীবনে কোলাহলের সৃষ্টি হতে পারে।

অর্থের অপচয়ঃ ধূমপান করার ফলে আমাদের অর্থের অপচয় হয়। যা আমাদের সংসার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেই সাথে এর টাকা জোগাড় করার জন্য নানা রকম অনৈতিক কাজ করার প্রয়োজন করতে পারে। যা পরবর্তীতে নানা ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপঃ ধূমপান করার কারণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। এর ফলে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

শেষ কথা

ধূমপান কখনোই আমাদের জন্য উপকার বয়ে আনতে পারে না। এটি সব সময় আমাদের ক্ষতিক কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপান করার কারণে একদিকে যেমন শরীরের ক্ষতি হয় অন্যদিকে অর্থও নষ্ট হয়। এছাড়াও ধূমপান করার কারণে পরিবারের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত ধূমপান ত্যাগ করা।

প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url