OrdinaryITPostAd

রোজা থাকা অবস্থায় ফরজ গোসলের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি রোজা থাকা অবস্থায় ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে জানেন না? তবে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা রোজা থাকা অবস্থায় কিভাবে ফরজ গোসল করতে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
রোজা থাকা অবস্থায় ফরজ গোসলের নিয়ম
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি গোসল ফরজ হলে রোজা হবে কিনা সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই এসব জানতে মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভূমিকা

আমরা যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী রয়েছি তাদের উপর রমজান মাসের রোজাকে ফরজ করে দেয়া হয়েছে। যদি আমরা এসব রোজা পালন না করে থাকি তবে আমাদের কবিরা গুনাহ হয়ে থাকে। এজন্য আমাদের রমজান মাসের এক মাস রোজা পালন করতে হয়।

রোজা থাকা অবস্থায় আমাদের ফরজ গোসলের নিয়ম জানা অতীব জরুরী। কেননা এ সময় অনেকেরই স্বপ্নদোষ বা বিভিন্ন কারণে গোসল ফরজ হয়ে থাকে। তাই তারা যদি না জানে রোজা থাকা অবস্থায় কিভাবে ফরজ গোসল আদায় করতে হয় তবে তাদের রোজা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সাথে অনেকেই চিন্তিত থাকেন গোসল ফরজ হলে রোজা হবে কিনা।

এই আর্টিকেলে আমরা রোজা থাকা অবস্থায় গোসল ফরজের নিয়ম ও গোসল খরচ হলে রোজা হবে কিনা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

আমরা সাধারণত পাক পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করে থাকি। বিভিন্ন কারণে আমাদের গোসল ফরজ হয়ে থাকে। আর কারো উপর গোসল ফরজ হলে সে যতক্ষণ না পর্যন্ত ফরজ গোসল আদায় করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি নাপাক থাকবে। স্বামী স্ত্রী সহবাস করলে গোসল ফরজ হয়।

সেই সাথে জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে যদি বীর্যপাত হয় তবে তার গোসল ফরজ হয়। তবে এক্ষেত্রে উত্তেজনা কোন বিষয় নয়। যদি বীর্যপাত হয় তবে তার গোসল ফরজ হয়। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে তার জন্য গোসল ফরজ হয়ে থাকে।

এছাড়াও নারীদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে পবিত্র হওয়ার জন্য তাদের ফরজ গোসল করতে হয়। এছাড়াও ফরজ গোসল হওয়ার আরো অনেক কারণ রয়েছে। আমাদের কারো উপর গোসল ফরজ হলে তাকে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব ফরজ গোসল আদায় করতে হবে।

রোজা থাকা অবস্থায় ফরজ গোসলের নিয়ম

আমরা যারা মুসলিম তাদের বিভিন্ন কারণে গোসল ফরজ হয়ে থাকে। রোজার সময় স্বামী-স্ত্রীর মিলন থেকে আমরা বিরত থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আমাদের ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। এতে করে আমাদের গোসল ফরজ হয়। যদি আমাদের ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে তবে এর জন্য রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

যদি কারো রোজা থাকা অবস্থায় দিনের বেলা স্বপ্নদোষ হয় তাকে শুধুমাত্র ফরজ গোসল করে পাক-পবিত্র হয়ে নিতে হবে। তার রোজা ভাঙ্গার কোন প্রয়োজন নেই। এছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর দ্বারা গোসল ফরজ হয়। সে ক্ষেত্রে যদি রোজা ভাঙ্গার কোন কারণ সেখানে না থাকে তবে শুধুমাত্র ফরজ গোসল করে পবিত্র হলেই চলবে।

আমরা সাধারণত যেভাবে ফরজ গোসল করে থাকি রোজা থাকা অবস্থায়ও আমাদের ঠিক সেভাবেই ফরজ গোসল করতে হবে। শুধুমাত্র এখানে দুটি পার্থক্য রয়েছে। আমরা অন্যান্য সময় ফরজ গোসলের সময় গড়গড়াসহ কুলি করি এবং নাকের নরম মাংস পর্যন্ত পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করি।

কিন্তু রোজা থাকার কারণে গড়গড়া সহ কুলি না করে সাধারণ কুলি করতে হবে যেন গলার মধ্যে পানি ঢুকে না যায় সেই সাথে নাকের গভীরে পানি পৌঁছানোর দরকার নেই। কেননা এতে যদি পানি ভিতরে চলে যায় তবে রোজা ভেঙে যাবে।

গোসল ফরজ হলে রোজা রাখা যাবে কি না

আমরা অনেকেই চিন্তা করে থাকি গোসল ফরজ হলে কি রোজা রাখা যাবে? যারা এসব চিন্তা করে থাকি এই পর্বটি তাদের জন্য। এই পর্বে গোসল ফরজ হলে রোজা রাখা যাবে কিনা সেই সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন এই সম্পর্কে জেনে নিই।

আপনার যদি গোসল ফরজ হয় তবুও আপনি রোজা রাখতে পারবেন। কিন্তু গোসল ফরজ হওয়ার কারণে আপনার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যাবে। যেটা কিনা কবিরা গুনাহর কারণ। ধরুন আপনি রাতের বেলা সহবাস করেছেন। এতে করে আপনার গোসল ফরজ হয়েছে। কিন্তু আপনি ফরজ গোসল না করে সেহরি করে রোজা রেখেছেন।

এতে আপনার রোজা ঠিকই হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যতক্ষণ না ফরজ গোসল করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নামাজ হবে না। সেই সাথে যদি দিনের বেলা আপনার স্বপ্নদোষ তবে আপনি শুধু ফরজ গোসল করলেই আপনি পবিত্র হতে পারবেন। এতে আপনার রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

রমজান মাস অনেক বরকতময় মাস। এই মাসে কোন ভালো কাজে যেমন অনেক বেশি নেকি রয়েছে তেমনি যদি কোন পাপ কাজ করেন তার জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। তাই যদি কারো গোসল ফরজ হয়ে থাকে তবে তার অবশ্যই খুব দ্রুত ফরজ গোসল করে নিতে হবে। ফরজ গোসলের দোহায় দিয়ে কোন নামাজ কাজা করা যাবে না।

ফরজ গোসলের ফরজ গুলো কি কি

আমরা সকলেই জানি গোসলের ফরজ মোট তিনটি। এই তিনটির মধ্যে যদি একটিও বাদ পড়ে যায় তাহলে ফরজ গোসল আদায় হয় না। তাই ফরজ গোসল করার সময় এই তিনটি কাজ খুবই সতর্কতার সাথে করতে হবে। গোসলের ফরজ তিনটি হলো-
  • গড়গড়ার সাথে কুলি করা (কিন্তু রোজা রাখা অবস্থায় গড়গড়ার সাথে কুলি না করে সাধারণ কুলি করতে হবে। কেননা গড়গড়ার সাথে কুলি করতে গেলে গলায় পানি ঢুকে যেতে পারে। এতে রোজা ভেঙে যাবে।)
  • নাকে পানি দিয়ে নাকের নরম মাংস পর্যন্ত ভেজানো (কিন্তু রোজা থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে নাকে পানি দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন নাকের ভিতর দিয়ে পেটে চলে না যায়। এতে করে রোজা ভেঙে যাবে।)
  • পুরো শরীর ভালো হবে ধৌত করা। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরের একটি লোমও শুকনো না থাকে। যদি শরীরের কোন জায়গা এমনকি একটি লোমও শুকনো থাকে তবে তার ফরজ গোসল হবে না। এজন্য শরীরের চিপায় চাপায় ভালো ভাবে ধৌত করতে হবে। নারীদের লজ্জাস্থান সুন্দরভাবে ধৌত করতে হবে।

ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম কি

আমাদের যখন গোসল ফরজ হয় তখন আমাদের উত্তমরূপে ফরজ গোসল করা উচিত। গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি আমরা ফরজ গোসল না করি তবে আমাদের নামাজ কবুল হবে না। সেইসাথে আমরা কোরআন তেলাওয়াত ও স্পর্শ করতে পারবোনা। এর জন্য খুব সাবধানতার সহিত ফরজ গোসল করতে হবে। নিচে ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম দেয়া হলো-
  • সর্বপ্রথম নিয়্যাত করতে হবে। নিয়্যাত সব সময় মনে মনে করতে হয় মুখে নয়।
  • এরপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে।
  • এবার ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ও তার আশেপাশে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়াও যদি শরীরের অন্য কোন জায়গায় নাপাক লেগে থাকে সেটি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • এরপর বাম হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • এবার বিসমিল্লাহর সহিত উত্তমরূপে ওজু করে নিতে হবে। কিন্তু দুই পা ধোয়া যাবেনা।
  • ওজু শেষ করে প্রথমে ডান কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে এরপর বাম কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে।
  • এরপর মাথায় পানি ঢালতে হবে এবং উত্তমরূপে সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শরীরের কোন অংশ যেন শুকনো না থাকে। এমনকি শরীরের একটি লোম যেন শুকনো না থাকে। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে আগে মাথায় পানি ঢেলে নিয়ে এরপর দুই কাঁধে পানি ঢালতে পারেন। দুই নিয়মেই ফরজ গোসল হয়ে যাবে।
  • সবশেষে দুই পা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ডান পা তিন বার ধুতে হবে এরপর বাম পা তিনবার ধুতে হবে।
এভাবে উত্তম রূপে যদি কেউ গোসল করে থাকে তবে তার ফরজ গোসল আদায় হয়ে যাবে। এরপর যদি তার ওজু না ভাঙ্গে তবে সে চাইলেই এই ওজুতেই নামাজ পড়তে পারবে।

শেষ কথা

যদি কারো উপর গোসল ফরজ হয় এবং সে যদি ফরজ গোসল করতে অযথা কোন কারণ ছাড়া দেরি করে তবে তার রিজিকে বরকত চলে যায়। তাই আমাদের যদি কারো উপর গোসল ফরজ হয় তবে এটিকে অবহেলা না করে সঙ্গে সঙ্গে ফরজ গোসল আদায় করা উচিত।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url