OrdinaryITPostAd

চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মেছতার দাগ নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত? কিভাবে এটি দূর করতে হয় সে সম্পর্কে জানেন না? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
এছাড়াও আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। অ্যালোভেরার সাহায্যে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

বর্তমানে মেছতার সমস্যায় ভুগছেন অনেক নারী পুরুষ। মেছতা একজন মানুষের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিয়ে থাকে। যার কারণে তিনি যতই ফর্সা হন না কেন যদি তার মেছতা থাকে তবে তাকে দেখতে সুন্দর লাগে না। আমরা সকলেই সুন্দর ও লাবণ্যময় চেহারা পছন্দ করে থাকি। আর দাগ হীন ত্বক ত্বককে সুন্দর ও লাবণ্যময় করে তুলে।

যারা ত্বকের প্রতি যত্নশীল না এবং ত্বক অপরিষ্কার থাকে তাদের মেছতা বেশি দেখা দেয়। এছাড়াও যারা কোন প্রটেকশন ছাড়া দীর্ঘক্ষণ রোদে অবস্থান করেন তাদের মেছতা হতে পারে। তাই রোদে যাওয়ার পূর্বে ত্বকে সানস্ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। মেছতা দূর করতে ঘরোয়া পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর।

কেননা এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকার কারণে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বনে কোন সমস্যা ছাড়াই মেছতার দাগ দূর করার সম্ভব হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা মেছতা হওয়ার কারণ ও মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।

মেছতা হওয়ার কারণ

আমাদের সবারই ত্বকের নিচে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ বিদ্যমান। কোন কারনে যদি ত্বকের কোন অংশে এর পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তবে সেই অংশটি পার্শ্ববর্তী অংশের চেয়ে বেশি কালো বা বাদামে দেখায়। এটিকেই আমরা মেছতা বলে থাকি।

মেছতা শরীরের সকল জায়গায় হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখে মেছতা করতে দেখা যায়। মেছতা ত্বকের উপরের স্তরে এবং নিচের স্তরে হতে পারে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এই দুই স্তরেই মেছতা হয়ে থাকে। নিচে মেছতা হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হলো-
  • মেছতার প্রধান কারণ হলো সূর্যের আলো। দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রখর সূর্যের আলো নিচে কোন প্রোটেকশন ছাড়া অবস্থান করলে মেছতা হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের জন্য মেছতা হতে পারে।
  • ত্বক নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে এটি হতে পারে।
  • নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করলে মেছতা হতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের নন-ব্র্যান্ড কসমেটিক ব্যবহার করার কারণে মেছতা হতে পারে।
  • বর্তমানে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে থাইরয়েডের সমস্যা হলে দেখা যেতে পারে।
  • বংশগত কারণে মেছতা হতে পারে।
  • অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেশি হলে শরীরে মেলানিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর কারণে মেছতা হতে পারে।
  • দীর্ঘক্ষণ ধরে চুলার আগুনে রান্না বান্না করলে বা চুলার আগুনের সংস্পর্শে থাকলে মেছতা দেখা দিতে পারে।

চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়

বর্তমানে প্রায় সবাই ত্বক নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। সুস্থ সুন্দর তাদের জন্য নানা রকম পন্থা অবলম্বন করে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ত্বকের মেছতার আবির্ভাব ঘটেছে। যদিও এটি তেমন কোন ক্ষতিকর নয় তবুও এটি নিয়ে অনেকে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন।

বিশেষ করে যদি এটি মুখের ওপর হয়ে থাকে তবে তা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। কেননা একটি ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। চিরতরে মেছতা দূর করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

সানস্ক্রিম এর ব্যবহার
বিশেষজ্ঞরা মেছতা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে সূর্যের আলোকে উল্লেখ করেছেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রখর সূর্যের আলো নিচে অবস্থান করলে মেছতা দেখা দিতে পারে। তাই সূর্যের আলোর নিচে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এটি ব্যবহারের ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের কোন ক্ষতি করতে পারে না। সেই সাথে মেছতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। তাই মেছতা থেকে রক্ষা পেতে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

হাইড্রোকুইননের ব্যবহার
মেছতা হওয়ার জন্য দায়ী ট্রাইরোসিন এনজাইম। নিয়মিত হাইড্রোকুইনন ব্যবহারের ফলে এই এনজাইমের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। রাতে ঘুমানোর পূর্বে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে হাইড্রোকুইনন ব্যবহার করলে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মেছতা অনেকাংশে কমে যাবে।

ভিটামিন ই ব্যবহার
গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ই খেলে শরীর ও ত্বকের জন্য যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি বাহ্যিকভাবে ভিটামিন ই ব্যবহারেও উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে ব্রনের ও মেছতার দাগ দূর করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য মেছতার দাগ দূর করতে নিয়মিত সেই স্থানে ভিটামিন ই লাগাতে হবে।

কেমিক্যাল পিল ব্যবহার
মেছতা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার আরো একটি উপায় হলো কেমিক্যাল পিলের ব্যবহার। আপনি আপনার ত্বকের মেছতা দূর করার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল পিল ব্যবহার করতে পারেন।

লেজার ট্রিটমেন্ট
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় লেজার পদ্ধতি ব্যবহার করে চিরতরে মেছতা দূর করা সম্ভব। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার ত্বক থেকে মেছতা দূর করতে পারেন। এই পদ্ধতি একটু ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে সবার পক্ষে এটি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মেছতা চিরতরে নির্মূল করা যায়।

ক্লিগমেজ ব্যবহার
ক্লিগমেজ মেছতার জন্য অনেক বেশি উপকারী একটি ফর্মুলা। এটি এক ধরনের স্টেরয়েড যা হাইড্রোকুইনন এর সাথে মিশ্রিত করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে মেছতা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যদি কারো ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরেও মেছতা ভালো না হয় তবে এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

ক্রিমের ব্যবহার
আপনার যেসব স্থানে মেছতা দেখা দিয়েছে সেসব স্থানে ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কেননা ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা ক্রিম ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। তাই চিরতরে দূর করার জন্য ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

মেছতা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি

আমাদের ত্বকে যে সকল সমস্যা সাধারণত দেখা দিয়ে থাকে তার মধ্যে মেছতা একটি। সাধারণত ৩০-৩৫ বছর বয়সী মানুষের মেছতা বেশি দেখা যায়। মেছতা আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় এবং দেখতে অনেক খারাপ লাগে। বাজারে সাধারণত মেছতা দূর করার বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো ঘরোয়া উপায়ে মেছতা দূর করা। ঘরোয়া উপায়ে মেছতা দূর করলে সেটা অনেক দীর্ঘস্থায়ী এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত হয়। তাহলে চলুন ঘরোয়া পদ্ধতিতে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

মধুঃ মধু হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং সকল রোগের মহা ঔষধ। নিয়মিত ত্বকে মধু ব্যবহারের ফলে মেছতা খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যায়। এর জন্য ত্বকের যেসব স্থানে মেছতার দাগ রয়েছে সেসব স্থানে মধু কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে মেছতা থেকে চিরতরে মুক্তি মিলবে।

আলুঃ আলুতে বিদ্যমান স্টার্চ ত্বকের মৃত কোষ সারিয়ে তুলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও এটি মেছতার দাগ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর জন্য আলু গ্রেট করে নিয়ে এর রস মুখে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একদিন পরপর এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করুন। অচিরেই মেছতা দূর হয়ে যাবে।

টক দইঃ মেছতা দূর করতে টক দই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য টক দই ২০-২৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর এটি ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

লেবুঃ লেবুর রসে রয়েছে ত্বক ব্লিচিং করার উপাদান যা ত্বকের যেকোনো প্রকার দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তাই ত্বকের যে স্থানে মেছতার দাগ রয়েছে সেসব জায়গায় লেবুর রস দিয়ে দিন। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যে আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন। তবে লেবুর রস সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। এর জন্য লেবুর রস, মধু ও গোলাপজলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

টমেটোঃ এক চামচ টমেটোর রসের সাথে সমপরিমাণ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে তা মেছতাই আক্রান্ত জায়গায় হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আস্তে আস্তে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

অলিভ অয়েলঃ মেছতার দাগ নিরাময়ে আরেকটি কার্যকারী উপায় হলো অলিভ অয়েল তেলের ব্যবহার। এর জন্য এটি উষ্ণ গরম করে মেছতাই আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত তেল ত্বকের সাথে মিশে না যায়। এরপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। কিছুদিনের মধ্যে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

চন্দনঃ চন্দনে অবস্থিত অ্যান্টি এইজিং এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা ত্বকের হাইপারপিগমেনশন কমিয়ে মেছতার দাগ দূর করে থাকে। এক্ষেত্রে ২ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়ার সাথে এক টেবিল চামচ গ্লিসারিন ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। সেটি মেছতার দাগের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে কিছুদিন পর মেছতার দাগ দূর হবে।

কাঁচা হলুদ ও দুধঃ কাঁচা হলুদ ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে তাতে দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এটি মেছতা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনি চাইলে এতে বেসনও মিশ্রিত করতে পারেন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মেছতার দাগ দূর করবে।

পেঁপেঃ পাকা পেঁপে ভালো ভাবে চটকে বা ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর সেটি ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে করে মেছতার দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল হবে।

ডিমের সাদা অংশঃ রাতে ঘুমানোর পূর্বে একটি ডিমের সাদা অংশ হালকা করে মুখে ম্যাসাজ করুন। একদিন পরপর এই নিয়মটি মেনে চলুন। তাহলে কিছুদিনের মধ্যে মুখে অবস্থিত মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

কমলার খোসাঃ কমলার খোসাতে অবস্থিত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান মুখের কালো দাগ ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। তাই এটি ভালো করে পেস্ট করে এর সাথে মধু মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। কিছু দিনের মধ্যে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

আপেল সিডার ভিনেগারঃ মেছতার দাগ দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন ব্যবহারে উপকার আপনি নিজেই দেখতে পাবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপেল সিডার ভিনেগারের সাথে পেঁয়াজের রস যুক্ত করতে পারেন।

গরুর দুধঃ গরুর দুধে অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। তা এটি শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। সেই সাথে এটি ত্বকের জন্যও ভালো। পাঁচ চামচ গরুর দুধের সাথে এক চামচ আটা ভালোভাবে মিশিয়ে তাকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

মুলতানি মাটিঃ অনেকে মুলতানি মাটিকে ফেসপ্যাক বলে থাকে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি এটি মেছতার দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এর জন্য একটা চামচ মুলতানি মাটির সাথে হাফ চামচ মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে ১০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে মেছতার দাগ চিরতরে দূর হয়ে যাবে।

চিয়া সিডঃ চিয়া সিড ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী। ২ চামচ চিয়া সিড পানিতে ৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর এর সাথে হাফ চামচ লেবুর রস ও এক চামচ আটা ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

শসাঃ দুই চামচ গ্রেট করা শসা, এক চামচ বেসন ও এক চামচ গোলাপ জল ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর মুখ ভালো হবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে তিন চার দিন এভাবে ব্যবহার করার ফলে আস্তে আস্তে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

অ্যালোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়

প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে অ্যালোভেরার ব্যবহার হয়ে আসছে। শরীরে নানা প্রয়োজনে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে এই অ্যালোভেরা। সেইসাথে এটি বাহ্যিকভাবেও ব্যবহার করা যায়। যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে অ্যালোভেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

অ্যালোভেরা নিয়মিত তাকে ব্যবহার করার ফলে ত্বকের জ্বালাপোড়া, বিভিন্ন দাগ যেমন ব্রণের দাগ, মেছতার দাগ দূর হয়। মেছতা শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর না হলেও এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। আমরা সকলেই কমবেশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য অনেক রকম উপায় অবলম্বন করে থাকি।

কিন্তু কারো যদি ত্বকে বা মুখে মেছতা থাকে তাহলে তার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য মেছতা দূর করা জরুরী। আর অ্যালোভেরার মাধ্যমে খুব সহজে মেছতা দূর করা যায়। এজন্য ত্বকের যে স্থানে মেছতার দাগ রয়েছে সেখানে সরাসরি অ্যালোভেরা দিয়ে কিছুক্ষণ মালিশ করলে এই দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।

তবে আরো ভালো ফলাফল পেতে অ্যালোভেরার জেল তৈরি করে সেখানে অল্প পরিমাণ লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি মেছতাই আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। ২০-৩০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে চিরতরে মেছতার দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

তৈলাক্ত ত্বকের মেছতা দূর করার উপায়

তৈলাক্ত ত্বক উজ্জ্বলতা প্রকাশে বাধা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও এ ধরনের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার মধ্যে ব্রণের সমস্যা অন্যতম। এছাড়াও তৈলাক্ত ত্বকে খুব সহজে ময়লা আটকে যাওয়ার কারণে ত্বক অপরিষ্কার হয়ে থাকে। আর এই কারণেই এসব ত্বকে মেছতাও বেশি দেখা যায়। কেননা আমরা আগেই জেনেছি মেছতা পড়ার একটি কারণ হলো ত্বক অপরিষ্কার থাকা।

তাই তৈলাক্ত ত্বকের মেছতার দাগ দূর করার পূর্বে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে হবে। নিচে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব ও তৈলাক্ত ত্বকের মেছতার দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
  • নিয়মিত লেবুর রস ও মধু ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি মেছতাও দূর হয়ে যাবে।
  • ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার আরো একটি উপায় হলো ত্বকে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা। এটি ভেষজ গুণসম্পন্ন হওয়ার কারণে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার পাশাপাশি মেছতা দূর করবে।
  • কাঁচা হলুদ ও দুধ দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে তার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়। সপ্তাহে এটি ৩-৪ দিন করলে কিছুদিনের মধ্যে ত্বকে থাকা মেছতার দাগও দূর হয়ে যায়।
  • পাকা পেঁপে ভালো ভাবে চটকে বা ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর সেটি ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে করে মেছতার দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
  • কমলার খোসাতে অবস্থিত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান মুখের কালো দাগ ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। তাই এটি ভালো করে পেস্ট করে এর সাথে মধু মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হবে ও মেছতার দাগ দূর হবে।
  • এক চামচ টমেটোর রসের সাথে সমপরিমাণ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে তা মেছতাই আক্রান্ত জায়গায় হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আস্তে আস্তে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে। সেই সাথে ত্বকের তৈলাক্ত ভাবও দূর হবে।

মেয়েদের মুখের মেছতা দূর করার উপায়

সাধারণত মেয়েদের ত্বক অনেক বেশি নরম ও কোমল হয়। সেই সাথে মেয়েরা ত্বকের প্রতি অধিক যত্নশীল। তারা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নানারকম উপায় অবলম্বন করে থাকে। তবে অনেক মেয়েদের ত্বকের মেছতা থাকার কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ত্বকে বেশি মেছতা পরে। মেয়েদের মেছতা দূর করার উপায় গুলো নিম্নরূপ-
  • মেছতা হওয়ার প্রধান কারণ সূর্যের আলো। তাই বাইরে বের হওয়ার পূর্বে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এতে করে মেছতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
  • অপরিষ্কার ত্বকে মেছতা বেশি হয়ে থাকে। তাই ত্বকের প্রতি যত্নবান হতে হবে এবং ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে মেছতার দাগ উঠে যাবে।
  • মেছতার দাগ দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • দুই চামচ গ্রেট করা শসা, এক চামচ বেসন ও এক চামচ গোলাপ জল ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে তারপর মুখ ভালো হবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এভাবে ব্যবহার করার ফলে আস্তে আস্তে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • রাতে ঘুমানোর পূর্বে একটি ডিমের সাদা অংশ হালকা করে মুখে ম্যাসাজ করুন। একদিন পরপর এই নিয়মটি মেনে চলুন। তাহলে কিছুদিনের মধ্যে মুখে অবস্থিত মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • মেছতা দূর করতে টক দই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য টক দই ২০-২৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর এটি ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে মেছতার দাগ দূর হয়ে যাবে।

মেছতা দূর করার ক্রিম/ঔষধের নাম

আপনি যদি মেছতা দূর করার ক্রিম/ঔষধের নাম জানতে চান তবে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে করুন। এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে করার মাধ্যমে আপনি মেছতা দূর করার ক্রিম/ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আমরা এতক্ষন মেছতা দূর করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম/ঔষধ পাওয়া যায় যার মাধ্যমে খুব সহজে মেছতা দূর করা যায়। তাহলে চলুন মেছতা দূর করার ক্রিম/ঔষধের নাম জেনে নেওয়া যাক-
  • Betavet-N
  • Betaval-N
  • Betno-N
  • Betameson-N
  • Neocort
  • Hydroquinone Cream
  • Melanyc
  • Melatrin
  • Nospot
  • Hydroo 2% Cream
  • Triclean
  • Trimela
  • Mela care Cream

ছেলেদের মেছতা দূর করার উপায়

মেছতা ছেলে-মেয়ে উভয়ের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয়। এজন্য এটি ছেলে-মেয়ে সকলের কাছেই একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্বকে মেছতা হলে বিশেষ করে মুখমন্ডলে মেছতা থাকলে দেখতে অনেক বেশি খারাপ লাগে। তাই উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য মেছতা দূর করা আবশ্যক। তাহলে চলুন ছেলেদের মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

কলার খোসাঃ কলার খোসায় বিদ্যমান পুষ্টিগুণ মেছতা দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে মেছতা দূর করতে চান তাহলে মেছতা আক্রান্ত স্থানে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত কিছুদিন কলার খোসা ব্যবহার করলে অল্প সময়ের মধ্যেই মেছতার দূর হয়ে যাবে।

অ্যালোভেরাঃ ছেলেদের ত্বকের মেছতা দূর করতে আরেকটি প্রাকৃতিক উপাদান হলো অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে মেছতা ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়।

চন্দনঃ চন্দনে অবস্থিত অ্যান্টি এইজিং এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা ত্বকের হাইপারপিগমেনশন কমিয়ে মেছতার দাগ দূর করে থাকে। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যে মেছতার দাগ দূর হবে।

আলুর রসঃ আলুতে বিদ্যমান স্টার্চ ত্বকের মৃত কোষ সারিয়ে তুলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও এটি মেছতার দাগ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য আলু গ্রেট করে নিয়ে এর রস মুখে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একদিন পরপর এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করুন। অচিরেই মেছতা দূর হয়ে যাবে।

মধুঃ মধু হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। নিয়মিত ত্বকে মধু ব্যবহারের ফলে মেছতা খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যায়। এর জন্য ত্বকের যেসব স্থানে মেছতার দাগ রয়েছে সেসব স্থানে মধু কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে মেছতা থেকে চিরতরে মুক্তি মিলবে।

পরিশেষে

মেছতা যেহেতু ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় তাই মেছতা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম প্রন্থা। কেননা একবার মেছতা হলে তা নিরাময় করতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই ত্বকে যাতে মেছতা না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তবে কোন কারনে যদি মেছতা হয়ে যায় তবে তা প্রাকৃতিক উপায়ে দূর করার চেষ্টা করতে হবে।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url