মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও আর্টিকেল করার মাধ্যমে আপনি ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। মেথিতে বিদ্যমান ফাইবার শরীরের অতিরিক্ত কমাতে সাহায্য করে। তার মেথি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
মেথি একটি মসলা জাতীয় খাবার যা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এর স্বাদ কিছুটা তিতা ধরনের। এটি মূলত পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। যা খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর।
মেথিতে রয়েছে ভিটামিন কে, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, ফলিক এসিড, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, বি৬, কপার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম। এত সকল পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে এটি শরীরের নানা ধরনের রোগ নিরাময়ের সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মেথিতে রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে। নিয়মিত এক গ্লাস মেথি ভিজানো পানি খেলে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। শরীরের রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়, কৃমি মরে যায়, রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়, শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে গিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে।
এছাড়াও মেথি বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তার অন্যকে ধরে রাখে। মেথি খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মেথি খাওয়ার নিয়ম
মেথির সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। এটি আমরা সাধারণত খাবারকে সুস্বাদু করতে এবং রান্নাই সুন্দর গন্ধের জন্য ব্যবহার করে থাকি। তবে এর অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। যা শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় সাহায্য করে থাকে। এজন্য অনেকে মেথি খেয়ে থাকেন। তবে মেথি খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে।
নিয়মিত মেথি খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। মেথি খাওয়ার সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় নিয়ম হলো এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খালি পেটে সেই পানি পান করা। এতে করে শরীর অনেক উপকৃত হয়। আবার সকালে খালি পেটে শুধু মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে করে ও উপকার পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুনঃ ক্যাপসিকাম খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
এছাড়াও চাইলে পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এর স্বাদ কিছুটা বৃদ্ধি করে খেতে পারেন। তাছাড়া ও আপনি মেথি কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তা তৎক্ষণাত খেতে পারেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন তরকারি, ডাল, আচার ইত্যাদিতে মেথি ব্যবহার করে খেতে পারেন।
অনেকে আবার মেথি পেস্ট করে নিয়ে তাতে আদা ও লেবু মিশিয়ে পানি সহ চায়ের মত গরম করে খান। এভাবে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। অনেকে আবার মেথির গুঁড়ো পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। মেথির ভালো উপকার পাওয়ার জন্য এটি দিনে দুইবার খাওয়া উচিত।
রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এবং সকালে ভিজিয়ে রেখে রাতে ঘুমানোর পূর্বে খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত মেথি খেলে শরীরের ভিতরে যেগুলো সমস্যা তৈরি হয় সেগুলো ধীরে ধীরে দূর হয়ে শরীর সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়।
মেথি খাওয়ার উপকারিতা
মেথি একটি মসলা জাতীয় খাবার যা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি রান্নাকে সুস্বাদু করার পাশাপাশি এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মেথির মধ্যে ভিটামিন কে, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, ফলিক এসিড, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, বি৬ বিদ্যমান। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে কপার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম।
এজন্য মেথি খেলে শরীরের নানা ধরনের উপকার হয়ে থাকে। এই পর্বে মেথি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
মেথি শরীরের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে দারুন ভাবে কাজ করে থাকে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হজমে অনেক সাহায্য করে থাকে। তাই হজম শক্তি বৃদ্ধিতে নিয়মিত সকালে খালি পেটে পানি পাওয়া যেতে পারে।
ওজন কমাতে
মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা একজন মানুষের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কেউ যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তবে তার শরীরের ওজন ধীরে ধীরে কমে যাবে। কেননা প্রতিদিন মেথি খাওয়ার ফলে শরীরে ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এতে করে ক্ষুধা কম লাগে। এর কারণে শরীরের ওজন আস্তে আস্তে কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খেলে শরীরে গ্লেকটোমেনানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে এটি দেহের শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনে। এতে করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও মেথিতে থাকা অ্যামিনো এসিড ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব বেশি উপকারী।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে
নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। কারণ মেথিতে স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক উপাদান বিদ্যমান। যা শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখতে
হার্ট ভালো রাখতে মেথি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। মেথিতে গ্লেকটোম্যানান নামক এক ধরনের উপাদান বিদ্যমান যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুলের যত্নে
প্রাচীনকাল থেকেই চুল পড়া রোধে মেথির ব্যবহার হয়ে আসছে। নিয়মিত মেথি খাওয়ার পাশাপাশি চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মেথি বেটে মাথায় দেয়া যেতে পারে। মেথি বেটে মাথা দেওয়ার ঘন্টা খানেক পর গোসল করলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। এতে করে চুল পড়া রোধ হয় এবং চুল ঘন ও লম্বা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মেথি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। মেথিতে বিদ্যমান পটাশিয়াম শরীরের অতিরিক্ত লবণ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ত্বকের যত্নে
ত্বকের যত্নে মেথি খুব উপকারী। নিয়মিত মেথি ব্যবহার করার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হয়। এছাড়াও চেহারায় বলিরেখা দেওয়ার জন্য দায় নানা রকম ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে মেথি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই সাথে মেথি চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
খুশকি দূর করতে
খুশকি দূর করতে মেথি কাজ করে থাকে। এজন্য মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে তা ভালো করে পেটে পেস্ট করে নিতে হবে। এবার সেই পেস্ট মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। ঘন্টাখানেক পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে দ্রুত খুশকি চলে যাবে।
শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে
শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে মেথি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে এটি ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার আশঙ্কাও কমায়। মেথিতে অবস্থিত ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রক্তে ভেসে থাকা টক্সিন গুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে করে শরীরে ক্যান্সার কোষ জন্ম নিতে পারেনা।
জ্বর-সর্দি-কাশি সারাতে
অনেক সময় আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় জ্বর-সর্দি-কাশি হয়ে থাকে। এ অবস্থায় যদি কেউ মেথি ভেজানো এক গ্লাস পানি পান করেন তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যেতে পারে। মেথিতে বিদ্যমান নানারকম উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে এবং দ্রুত জ্বরের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি সর্দি-কাশিতে ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
মহিলাদের ঋতুকালীন ও প্রসবজনিত সমস্যার সমাধানে
মেথিতে অবস্থিত সাইট্রো ইস্ট্রোজেন নামক উপাদান নারী দেহে প্রোলাক্টিন নামক হরমোনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই হরমোন নারী দেহকে সুগঠিত করে সেই সাথে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারনের যন্ত্রণা কমাতে মেথি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কৃমি দূর করে
অনেকেই কৃমির সমস্যায় ভুগছেন। মেথি কৃমির সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে কৃমি দূর হয়।
পেটের সমস্যার সমাধানে
নিয়মিত মেথি খাবার ফলে বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মেথিতে বিদ্যমান ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা রকম পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
কিডনি পাথরের ঝুঁকি কমাতে
নিয়মিত মেথি চা পান করলে কিডনি পরিষ্কার থাকে। সেই সাথে মেথির প্রভাবে প্রস্রাব পরিষ্কার থাকে। এতে করে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ও নবজাতকের ওজন বৃদ্ধিতে
মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ঔষধের বিকল্প হিসেবে মেথি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিয়মিত এটি খাওয়ার ফলে সদ্য মা হওয়া নারীর মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও নিয়মিত মেথি খেলে নবজাতকের ওজন বৃদ্ধির হার বাড়তে পারে।
খালি পেটে মেথি খাওয়ার উপকারিতা
ছোট্ট দানাদার বিশিষ্ট মেথিতে রয়েছে অনেক উপকার। এটি নানাভাবে খাওয়া হয়ে থাকলেও সকালে খালি পেটে মেথি খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি খেলে শরীর সুস্থ ও সতেজ লাগে। রাতে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে তা খেলে পেটে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
সেই সাথে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে সাহায্য করে। যারা অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে সুঠাম দেহের অধিকারী হতে চান তারা প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও প্রতিদিন খালি পেটে মেথি খেলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যাবে।
এছাড়াও সকালে খালি পেটে মেথি খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি। তাই শরীর সুস্থ সবল রাখার জন্য এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের নিয়মিত খালি পেটে মেথি ভিজানো পানি খাওয়া উচিত।
ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম
আমরা আমাদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত। অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজন কমাতে মেথি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পর্বে আমরা ওজন কমাতে কিভাবে মেথি খেতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করব। ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ-
- রাতে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব দ্রুত শরীরের ওজন কমে গিয়ে শরীর অনেক হালকা হয়।
- একটি কড়াইয়ে মেথি হালকা করে ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে সে গুঁড়ো এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- দ্রুত ওজন কমানোর জন্য সকাল ও সন্ধ্যায় দুইবার মেথি ভিজানো পানি খেতে হবে। তাহলে দ্রুত ওজন কমে যাবে।
- মেথি পেস্ট করে নিয়ে তাতে আদা ও লেবু মিশিয়ে পানি সহ চায়ের মত গরম করে নিয়মিত খান। এটি ওজন কমাতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
- কুসুম গরম পানির সাথে মেথি ভিজিয়ে রেখে এরপরে তে লেবু বা মধু মিশিয়ে খেলে দ্রুত ওজন কমে যায়।
- নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খেলে শরীরে গ্লেকটোমেনানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে এটি দেহের শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনে। এতে করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে করে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় না।
- মেথি ভালো করে পিষে একটি পেস্ট তৈরি করে নিয়ে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খান। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা
মেথি হলো তিতা স্বাদযুক্ত মসলা জাতীয় খাদ্য। এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে নানা ধরনের উপকার পাওয়ার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পুরুষের জন্য মেথিকার উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো-
- মেথি তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করে। তাই কেউ যদি নিয়মিত মেথি খায় তবে তার ত্বক অনেকদিন পর্যন্ত সুন্দর থাকবে।
- মেথিতে আয়রন বিদ্যমান থাকার কারণে এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এটি অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
- মেথির রসে সাপোনিস বা ডাইওসজেনিন নামে এক ধরনের যৌগ পদার্থ বিদ্যমান যা মানবদেহের হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- মেথি পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- পুরুষদের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মেথি এক মহা ঔষধ। নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে পুরুষের যৌনক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
এছাড়াও নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে উপরে উল্লেখিত "মেথি খাওয়ার উপকারিতা" পর্বটিতে যে সকল উপকারের কথা বলা হয়েছে সে সকল উপকার পাওয়া যায়। তার শরীর সুস্থ সবল ও রোগ মুক্ত রাখতে আমাদের উচিত প্রতিদিন নিয়ম করে মেথি খাওয়া।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কে নতুন করে পরিচয় দেওয়ার কিছু নাই। কেননা আমরা সবাই কমবেশি গ্যাস্ট্রিকের সাথে পরিচিত। কারণ জীবনে কখনো না কখনো আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়েছে। আমরা গ্যাস্ট্রিক কে হালকাভাবে নিলেও গ্যাস্ট্রিক থেকে অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুনঃ মাশরুমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
মূলত অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও ভাজাপোড়া গ্যাস্ট্রিকের জন্য দায়ী। গ্যাস্ট্রিক চিরতরে নির্মূল করার জন্য ঘরোয়া উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান গুলোর মধ্যে মেথি একটি যা গ্যাস্ট্রিকের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেহকে সুস্থ ও সুন্দর রাখে।
নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। এর জন্য এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকাল বেলা খালি পেটে মেথি যেন সেই পানি খেতে হবে। নিয়মিত এটি খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে।
এছাড়াও ওই পানির স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য এতে লেবুর রস ও মধু মিশ্রিত করতে পারেন। হঠাৎ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ মেথি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সেটি খেয়ে ফেলুন। তাহলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
মেথি খাওয়ার অপকারিতা
মেথি খুবই উপকারী একটি মসলা। এর অনেক উপকারী দিক থাকা সত্ত্বেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। নিচে মেথি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারনের যন্ত্রণা কমাতে মেথি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অতিরিক্ত মেথি খেলে তাতে গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
- পেটের সমস্যা থাকলে মেথি খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে করে পেটের সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
- মেথি যেহেতু রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় তাই অতিরিক্ত মেথি খেলে রক্তে শর্করা মাত্রা অনেক কমে গিয়ে তার শরীরের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
- মেথি ভিজানো পানি শিশুদের না খাওয়া নয় ভালো। কেননা এতে তাদের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- মেথির স্বাদ তিতা ধরনের হওয়ার কারণে এটি খেলে মাথা ঘোরাসহ বমি বমি ভাব হতে পারে।
- মেথি ভিজানো পানি খেলে অনেকের ত্বকে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। যাদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় তাদের মেথি বিজানো পানি না খাওয়ায় উত্তম।
- মেথি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে। তাই যাদের রক্ত পাতলা তাদের জন্য এটি না খাওয়াই ভালো।
- যাদের হাঁপানের সমস্যা আছে তাদের মেথি এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা এতে সমস্যা বাড়তে পারে।
পরিশেষে
মেথির অল্প কিছু অপকারিতা থাকলেও নিয়ম করে এবং স্বল্প পরিমাণে প্রতিদিন মেথি খেলে এর থেকে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। যেহেতু মেথি পুষ্টিগুনে ভরপুর তাই আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি খাওয়া উচিত। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শরীর নানা ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পায়।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url