OrdinaryITPostAd

নাপাক অবস্থায় সেহরি করলে রোজা সহিহ হবে কি না সে সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আমরা অনেকেই মনে করি নাপাক অবস্থায় অথবা তাদের উপর গোসল ফরজ হয়েছে তারা ওই অবস্থায় যদি সেহেরি করে থাকে তবে তাদের রোজা সহিহ হবে না। আজকের এই আর্টিকেল সেটিকে কেন্দ্র করেই। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আমরা নাপাক অবস্থায় সেহরি করলে রোজা হবে কিনা সেই সম্পর্কে জানতে পারবো।
নাপাক অবস্থায় সেহরি করলে রোজা সহিহ হবে কি না
এছাড়াও আর্টিকেল পরের মাধ্যমে নাপাক অবস্থায় কোন কোন কাজ করা যাবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। তাই এসব তথ্য পেতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ফরজ গোসল ছাড়া কি রোজা হবে

আমরা অনেকেই চিন্তা করে থাকি গোসল ফরজ হলে কি রোজা রাখা যাবে? যারা এসব চিন্তা করে থাকি এই পর্বটি তাদের জন্য। এই পর্বে গোসল ফরজ হলে রোজা হবে কিনা সেই সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন এই সম্পর্কে জেনে নিই।

আমাদের জীবনে বিভিন্ন কারণে গোসল ফরজ হয়ে থাকে। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছায় হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে এই ফরজ গোসল করতে অনেক সময় তৈরি হয়ে যায়। রোজার সময় ফরজ গোসলের উপর রোজার কোন প্রভাব পড়ে না।

আপনার যদি গোসল ফরজ হয় তবুও আপনি রোজা রাখতে পারবেন। কিন্তু গোসল ফরজ হওয়ার কারণে আপনার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যাবে। যেটা কিনা কবিরা গুনাহর কারণ। ধরুন আপনি রাতের বেলা সহবাস করেছেন। এতে করে আপনার গোসল ফরজ হয়েছে। কিন্তু আপনি ফরজ গোসল না করে সেহরি করে রোজা রেখেছেন।

এতে আপনার রোজা ঠিকই হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যতক্ষণ না ফরজ গোসল করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নামাজ হবে না। সেই সাথে যদি দিনের বেলা আপনার স্বপ্নদোষ তবে আপনি শুধু ফরজ গোসল করলেই আপনি পবিত্র হতে পারবেন। এতে আপনার রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

নাপাক অবস্থায় সেহরি করলে রোজা সহিহ হবে কি

আমরা অনেকেই মনে করি নাপাক অবস্থায় যদি সেহেরি করা হয় তবে রোজা সহিহ হবে না। কিন্তু এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। না নাপাক অবস্থায় যদি কেউ রোজা রাখেন তবে তার রোজা অবশ্যই হয়ে যাবে কিন্তু নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে তাকে ফরজ গোসল করে নিতে হবে।

ফরজ গোসল না করা পর্যন্ত তার নামাজ হবে না। আর কেউ যদি সারাদিন রোজা রাখার পরেও নামাজ না পড়ে তবে তার রোজা মাখলুক হয়ে যায়। তাই আমাদের যখন গোসল ফরজ হবে তখন নামাজের কথা চিন্তা করে নামাজের সময়ের আগেই ফরজ গোসল করে নিতে হবে।

মোটকথা নাপাক অবস্থায় সেহেরী করলে রোজা হয়ে যাবে কিন্তু অবশ্যই নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বেই ফরজ গোসল করে নিতে হবে। নামাজ কাজা হবে না। আর ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ কাজা করলে আপনার কবিরা গুনাহ হবে।

নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না

বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীর অপবিত্র হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওযু করার মাধ্যমে পবিত্র হওয়া যায় আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পবিত্র হওয়ার জন্য ফরজ গোসল করতে হয়। যেমন স্বামী-স্ত্রী সহবাস, মেয়েদের হায়েজ-নেফাস, স্বপ্নদোষ ইত্যাদি হলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল ফরজ হয়।

কারো উপর গোসল ফরজ হলে সে কিছু কাজ বাদ দিয়ে প্রায় সব ধরনের কাজই করতে পারবে। তাহলে চলুন এবার জেনে নিই নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না-
  • নামাজ আদায় করা
  • কোরআন মাজীদ স্পর্শ করা
  • কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করা
  • কাবা ঘর তাওয়াফ করা
  • কাবা ঘর স্পর্শ করা
  • মসজিদে অবস্থান করা
আপনার যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে তবে আপনি উপরে উল্লেখিত কাজগুলো ছাড়া প্রায় সকল কাজেই করতে পারবেন। এমনকি আপনি চাইলে জিকির আজগারও করতে পারবেন।

গোসলের ফরজ কয়টি

আমরা সকলেই জানি গোসলের ফরজ তিনটি। যেগুলোর একটিও বাদ গেলে ফরজ গোসল আদায় হয় না। তাই গোসল ফরজ হলে গোসলের ফরজ তিনটি খুব সতর্কতার সাথে পালন করতে হয়। নিচে গোসলের তিনটি ফরজ আলোচনা করা হলো-
  • গড়গড়ার সাথে কুলি করা (কিন্তু রোজা রাখা অবস্থায় গড়গড়ার সাথে কুলি না করে সাধারণ কুলি করতে হবে। কেননা গড়গড়ার সাথে কুলি করতে গেলে গলায় পানি ঢুকে যেতে পারে। এতে রোজা ভেঙে যাবে।)
  • নাকে পানি দিয়ে নাকের নরম মাংস পর্যন্ত ভেজানো (কিন্তু রোজা থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে নাকে পানি দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন নাকের ভিতর দিয়ে পেটে চলে না যায়। এতে করে রোজা ভেঙে যাবে।)
  • পুরো শরীর ভালো হবে ধৌত করা। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরের একটি লোমও শুকনো না থাকে। যদি শরীরের কোন জায়গা এমনকি একটি লোমও শুকনো থাকে তবে তার ফরজ গোসল হবে না। এজন্য শরীরের চিপায় চাপায় ভালো ভাবে ধৌত করতে হবে। নারীদের লজ্জাস্থান সুন্দরভাবে ধৌত করতে হবে।

রোজা থাকা অবস্থায় ফরজ গোসলের নিয়ম

আমরা যারা মুসলিম তাদের বিভিন্ন কারণে গোসল ফরজ হয়ে থাকে। রোজার সময় স্বামী-স্ত্রীর মিলন থেকে আমরা বিরত থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আমাদের ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। এতে করে আমাদের গোসল ফরজ হয়। যদি আমাদের ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে তবে এর জন্য রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

যদি কারো রোজা থাকা অবস্থায় দিনের বেলা স্বপ্নদোষ হয় তাকে শুধুমাত্র ফরজ গোসল করে পাক-পবিত্র হয়ে নিতে হবে। তার রোজা ভাঙ্গার কোন প্রয়োজন নেই। এছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর দ্বারা গোসল ফরজ হয়। সে ক্ষেত্রে যদি রোজা ভাঙ্গার কোন কারণ সেখানে না থাকে তবে শুধুমাত্র ফরজ গোসল করে পবিত্র হলেই চলবে।

আমরা সাধারণত যেভাবে ফরজ গোসল করে থাকি রোজা থাকা অবস্থায়ও আমাদের ঠিক সেভাবেই ফরজ গোসল করতে হবে। শুধুমাত্র এখানে দুটি পার্থক্য রয়েছে। আমরা অন্যান্য সময় ফরজ গোসলের সময় গড়গড়াসহ কুলি করি এবং নাকের নরম মাংস পর্যন্ত পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করি।

কিন্তু রোজা থাকার কারণে গড়গড়া সহ কুলি না করে সাধারণ কুলি করতে হবে যেন গলার মধ্যে পানি ঢুকে না যায় সেই সাথে নাকের গভীরে পানি পৌঁছানোর দরকার নেই। কেননা এতে যদি পানি ভিতরে চলে যায় তবে রোজা ভেঙে যাবে।

সহবাসের পর গোসল না করে রান্না বা খাওয়া যাবে কি

আগেকার দিনের মানুষেরা স্বামী স্ত্রীর মিলনের পর গোসল না করা পর্যন্ত স্ত্রীকে কোন কিছু স্পর্শ করতে দিত না। এমনকি তারা যে দিক দিয়ে হাঁটতো সেই দিকে পানি ছিটিয়ে দিতো। কিন্তু তাদের এই ধারণাটি ছিল ভ্রান্ত। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের পর গোসল না করে রান্নাবান্না বা খাওয়া দাওয়া করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সহবাসের পর তাকে উত্তম রূপে ওজু করে নিতে হবে।

এর পূর্বে তাকে লজ্জাস্থান ও যেখানে নাপাকি লেগেছে সেসব জায়গায় ধুয়ে নিতে হবে। এরপর সে চাইলেই রান্নাবান্না ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে। তবে এটি না করাই উত্তম। কেননা প্রতিনিয়ত এমন করলে খাবারের বরকত চলে যায়।

এছাড়াও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে ঘরে জুনুবি ব্যক্তি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। তাই আমাদের কোন ওজর ছাড়া কখনোই ফরজ গোসলে বিলম্ব করা উচিত নয়। তবে কেউ চাইলেই সহবাসের পর গোসল না করে উত্তম রূপে অজু করে রান্না বান্না ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে।

শেষ কথা

সেহরি খাওয়া বা রোজা রাখা কখনো আপনার ফরজ গোসলের উপর নির্ভর করে না। আপনি নাপাক অবস্থায় সেহেরী করলেও রোজা ঠিকই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু নাপাক থাকার কারণে যে আপনার নামাজ কাজা হবে সেটার জন্য আপনার কবিরা গুনাহ হবে। সেই সাথে রোজা রেখে নামাজ আদায় না করলে রোজা মাকরূহ হয়ে যায়। তাই অবশ্যই নাপাক অবস্থায় সেহেরী করলেও ফজরের নামাজের পূর্বেই ফরজ গোসল করে নিতে হবে।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url