OrdinaryITPostAd

নিম পাতার উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আমরা সকলেই নিম গাছের সাথে পরিচিত থাকলেও আমরা অনেকেই এর উপকারিতা সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখি না। আপনি যদি নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
নিম পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
এছাড়াও আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন প্রচুর। তাই এ সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তাই নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভূমিকা

নিম একটি ঔষধি বৃক্ষ। নিমের পাতা থেকে শুরু করে এর শিকড় পর্যন্ত সবকিছুই আমাদের উপকারে আসে। খ্রিস্ট জন্মের ৫০০০ বছর পূর্ব থেকেই ভারত উপমহাদেশে নিম গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নিমের গুনাগুনের কথা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে " একুশ শতকের বৃক্ষ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

নিম পাতার মধ্যে এমন সব ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। নিয়মিত নিম পাতা রস খাওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শরীর বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও এটি প্রাকৃতিক হওয়ার কারণে এটি খাওয়ার ফলে তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। এর স্বাদ তিতা ধরনের।

সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে শরীরের অর্ধেক রোগ সেরে যায় বলে জানিয়েছেন আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্যবিদরা। এই আর্টিকেলে আমরা নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সেই সাথে নিম পাতা খাওয়ার যেসব ক্ষতিকর দিক রয়েছে সেই সম্পর্কেও আলোকপাত করা হবে। তাই চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম

নিম গাছ একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এই গাছের পাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আমাদের প্রত্যেকের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। আর এই কাজ আপনাকে সাহায্য করতে পারেন নিমপাতা। নিমপাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা মতে, নিম পাতা চিনি বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।

এর ফলে খুশখুসে কাশি দূর হয়। এছাড়া আপনি চাইলে নিমপাতা দুই থেকে তিনটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে পারেন। এর সাহায্যে যেহেতু তিতা ধরনের তাই চাইলে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে এর তিতা স্বাদ চলে যাবে। যদি প্রতিদিন নিমপাতা পাওয়া আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যায় তবে আপনি এটি সংরক্ষণ করতে পারেন।

এর জন্য আপনাকে নিম পাতা ডাল থেকে ছাড়িয়ে ভালো করে বেটে নিতে হবে। এরপর ছোট ছোট বড়ি করে তার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর বইগুলো কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করলে তা অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে এবং নিম পাতার গুনাগুন ও নষ্ট হয় না। আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেই বড়ি খেতে পারেন।

এছাড়াও নিম পাতা বেটে তার রস প্রতিদিন খালি পেটে খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মোটকথা নিম পাতা আপনি যেভাবেই খান না কেন আপনি এর উপকারিতা গুলো পেয়ে যাবেন। তবে খালি পেটে নিম পাতা খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি চাইলে গোলমরিচের সাথে নিম পাতা পেতে খেতে পারেন।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম আমাদের জন্য এক বিশেষ উপকারী বৃক্ষ। এর উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নিমের পাতা থেকে শুরু করে এর বাকল, শিকড, ফুল এমন কি ফল থেকেও আমরাও উপকার পেয়ে থাকি।

এটি একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন বৃক্ষ। এ উপকারের কথা চিন্তা করে একে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি গাছ বলা হয়। এর গুনাগুনের কথা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে " একুশ শতকের বৃক্ষ" বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এই পর্বে নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই-

খোস পাঁচড়া নিরাময়ে
খোস পাঁচড়া নিরাময়ে নিম পাতার ব্যবহার অনস্বীকার্য। নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে খোস পাঁচড়ায় আক্রান্ত স্থানে সাত থেকে দশ দিন ব্যবহার করলে খোস পাঁচড়া ভালো হয়। সেই সাথে এটি যদি কোন পুরনো ক্ষত/ঘায়ে লাগানো হয় তবে সেটিও কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে
নিম পাতার রস রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। এই রস রক্তে থাকা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিয়ে রক্তকে পরিষ্কার করে। এর জন্য নিম পাতা ভালো করে পেটে সেই রস খেতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
নিমপাতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই যাতে ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার ফলে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও নিম পাতার রস নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কৃমি নিরসনে
কৃমি দূর করার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেতে পারেন। নিয়মিত এটি এক সপ্তাহ খেলে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে বাচ্চাদের নিম পাতার রস খাওয়ানোর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। একদিনে অধিক পরিমাণ রস খাওয়ানো যাবে না। এতে করে বাচ্চাদের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।

মুখের রুচি ফেরাতে
মুখের রুচি ফেরাতে নিম পাতার গুড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য সুজির হালুয়ার সাথে অল্প কিছুদিন নিম পাতার গুড়া মিশিয়ে খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
নিম পাতার রস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউনো সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এর ফলে সহজে কোন রোগ আক্রমণ করতে পারে না। নিয়মিত নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ সবল থাকে।

চুলকানি ভালো করতে
নিম পাতা চুলকানি ভালো করতে দারুন ভাবে কাজ করে। আপনি নিমপাতা দিয়ে পানি গরম করে সেই পানিতে গোসল করলে চুলকানি অনেক কমে যায়। সেইসাথে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে পিষে চুলকানির স্থানে লাগালে চুলকানি ভালো হয়ে যায়।

ওজন কমাতে
যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদেরকে নিম পাতা সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গুলো ঝরে যায়। এছাড়াও নিম পাতার রস শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হওয়া থেকে বিরত রাখে।

বাত ব্যথা নিরাময়ে
নিমের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে তা বাতের ব্যথা অনেক উপকারী। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা মতে বাতের ব্যথা কমাতে নিমপাতা, নিমের ফল ব্যবহার করা হতো। এখনো বাতের ব্যথার ওষুধ হিসেবে এসবের ব্যবহার রয়েছে।

খুশকি দূর করতে
খুশকি দূর করতে নিম পাতা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এর জন্য নিম পাতা ভালোভাবে বেটে মাথায় লাগাতে হবে। সেই সাথে নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে মাথা ধুতে হবে। তাহলেই খুশকির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

ভাইরাস প্রতিরোধে
ভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাস রোগ নিরাময়ের জন্য নিম পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে পক্স, হাম ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগে নিম পাতা বাটা লাগানো হচ্ছে। সেই সাথে নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করলে এসব ভাইরাস জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কাশি ভালো করতে
যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যায় কাশি হয়ে থাকে তারা ঘরোয়া উপায়ে কাশি ভালো করার জন্য নিম পাতার রস খেতে পারেন। নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কাশি ভালো হয়।

ব্যথা দূর করতে
নিম পাতা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। নিম পাতা সরিষার তেলে ভালো করে ভেজে সেই তেল শরীরে ভালোভাবে মালিশ করলে শরীরের বিষ ব্যথা দূর হয়ে যায়। সেই সাথে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।

জন্ডিস ভালো করতে
নিম পাতার রস জন্ডিস ভালো করতে সাহায্য করে। তাই আপনার যদি জন্ডিস হয়ে থাকে তবে আপনি নিয়মিত নিম পাতার রস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার জন্ডিস দূর হবে।

এলার্জির সমস্যা সমাধানে
এলার্জির সমস্যার সমাধানে নিমপাতা একটি মহা ঔষধের নাম। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে করে আপনার এলার্জির সমস্যা দূর হবে। এছাড়াও নিয়মিত নিম পাতা রস হওয়ার ফলে চিরতরে এলার্জির সমস্যা নিরাময় করা সম্ভব।

রক্ত নালীকে প্রসারিত করে
নিমপাতা রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। নিয়মিত নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে রক্তনালী প্রসারিত হয়। আরো ভালো ফল পেতে নিয়মিত খালি পেটে কচি নিম পাতার রস খাওয়া যেতে পারে। এতে করে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।

মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে
নিম পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়ার উপাদান। নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার ফলে মুখের ভিতরে অবস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি মুখের দুর্গন্ধ ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। এর জন্য প্রতিদিন নিম পাতার রস খাওয়ার পাশাপাশি নিমের নির্যাস দিয়ে তৈরিকৃত টুথপেস্ট, মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

উকুনের সমস্যার সমাধানে
নিমপাতা কার্যকর ভাবে চুলের গুণ নিরাময়ের সাহায্য করতে পারে। এর জন্য নিম পাতা ভালোভাবে বেটে তার মাথায় ব্যবহার করে ৩০ মিনিট রেখে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহারে উকুন চলে যাবে।

ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে
আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর টক্সিন এর প্রবেশ ঘটে। এইসব টক্সিন যদি শরীর থেকে বের না করা হয় তবে নানা ধরনের রোগের সম্ভাবনা থাকে। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন গুলো বের করতে নিম পাতা সাহায্য করতে পারে। নিম পাতায় অবস্থিত কিছু উপকারী উপাদান এইসব টক্সিন শরীর থেকে বের করে দেয়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা মতে নিয়মিত খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের রোগের সম্ভাবনা অনেকগুন কমে যায়। ত্বক অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়।

পেটের সমস্যার দূর করতে
পেটের সমস্যা দূর করতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। কেউ যদি সকালে খালি পেটে নিয়মিত নিম পাতার রস খেয়ে থাকেন তবে তার পেটের সকল সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। নিম পাতার রসে অবস্থিত এক ধরনের উপাদান যা পাকস্থলীতে উপস্থিত খারাপ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। এতে করে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেই সাথে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা ও কমে যায়।

বসন্ত রোগীদের জীবাণুনাশক হিসেবে
নিমপাতা বসন্ত রোগীদের জন্য জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। বসন্ত রোগীকে যদি নিম পাতার বিছানায় শোয়ানো যায় তবে তার বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে মুক্তি মিলে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফোড়া, একজিমা, চুলকানি ইত্যাদি চর্ম রোগে নিম পাতা ফেটে এর প্রলেপ লাগালে খুব তাড়াতাড়ি তা ভালো হয়ে যায়।

পোকামাকড় দমনে
পোকামাকর বর্তমানে নিমপাতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শুকনো নিম পাতা চাল, ডাল, গম ইত্যাদি বিভিন্ন পাত্রে রাখলে সেসব পাত্রে পোকামাকর আক্রমণ করতে পারে না। এছাড়া নিম পাতা বেটে তাতে ১ঃ১০ অনুপাতে পানি মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করলে ফসল পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পায়। এবার বর্ষাকালে আলমারিতে রাখা কাপড়-চোপড়ের বাজে গন্ধ হয়। এসব জায়গায় নিমপাতা রেখে দিলে তা পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি বাজে গন্ধ দূর হয়।

ফোঁড়া ভালো করতে
যদি কারো ফোড়া হয়ে থাকে তবে আপনি নিমপাতা পেটে ফোড়ার উপর প্রলেপ দিতে পারেন। এতে করে ফোড়া দ্রুত পেকে ফেটে গিয়ে পড়ে তা শুকিয়ে যাবে এবং ব্যথাও অনেক কম হবে।

ম্যালেরিয়া ভালো করতে
গ্যাডোনিন উপাদান সমৃদ্ধ নিম পাতা ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি বোতলে রেখে নিয়মিত ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব কমে যায়।

ব্রণের সমস্যা সমাধানে
নিয়মিত নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে ত্বক সুন্দর থাকে। এতে করে ব্রণের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও নিয়মিত নিম পাতার গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে সেই পানিতে মুখ ধুলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়। সেই সাথে ব্রণ হওয়ার ফলে যে জ্বালাপোড়া হয় কমে যায়।

এছাড়াও নিম গাছের বাকোল, শিকড়, ফুল ও ফল বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এক কথায় বলা যায় নিম গাছ পুরোটাই একটি উপকারী গাছ। এ গাছের বিভিন্ন অংশ মানুষের বিভিন্ন উপকারে আসে। তাই আমাদের সকলের উচিত আমাদের বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা জায়গায় অন্তত একটি নিম গাছ রোপন করা ও তার পরিচর্যা করা।

নিম পাতা দিয়ে রূপচর্চা-ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার/চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার/এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

আমরা এতক্ষন নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা এই পর্বে ত্বকের যত্নে নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তাহলে চলুন ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করে থাকে। তাই ত্বকের সুরক্ষায় নিমপাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিম পাতা ব্যবহার করা হয়। এর জন্য নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ভালোভাবে বেটে ত্বকে লাগাতে হবে। নিয়মিত এটি করার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
  • নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করার ফলে ত্বকের এনার্জি সমস্যা দূর হয়।
  • নিম পাতা রোদে শুকিয়ে গুড়া করে রাখা যেতে পারে। পরে সেটা ফেইস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে মুখের ত্বক ভালো থাকবে।
  • নিম পাতা দিয়ে ক্লিনজার তৈরি করতে পারেন। পরবর্তীতে এটি টোনার হিসেবে মুখে গলায় লাগাতে পারেন। এতে করে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
  • নিমপাতা রুক্ষ ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিম পাতা দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এর জন্য নিম পাতার গুড়োর সাথে চন্দন গুঁড়ো, পানি ও গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখে ব্যবহার করুন এবং শুকিয়ে গেলে তা পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে।
  • এক মুঠো নিম পাতা পেটে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে ভালোভাবে ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহারে ত্বকের টানটান ভাব বজায় থাকবে।
  • ব্রণের সমস্যা দূর করতে নিম পাতা ভালোভাবে ফেটে তা ত্বকে লাগান। এতে করে ত্বকে আর ব্রণ উঠবে না।
  • নিমপাতা যেহেতু ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী এ জন্য আপনি চাইলে নিমপাতা দিয়ে সাবান বানিয়ে নিতে পারেন এবং প্রতিদিন এটি গোসলের সময় ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ত্বক বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।

চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা

  • অনেকের মাথায় চুলকানি দেখা দেয়। নিয়মিত নিম পাতার রস মাথায় লাগানো ফলে মাথার চুলকানি ভালো হয়ে যায়। সেই সাথে চুলের শুষ্কতা কমে যায় এবং নতুন চুল গজায়।
  • নিমপাতা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করলে খুশকি চলে যায়। এছাড়াও নিম পাতা বেটে তার মাথায় দিয়ে শুকিয়ে গেলে তা পরিষ্কার করে ফেললে মাথা থেকে খুশকি চলে যায়।
  • নিমের তেলে প্রচুর ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান থাকে। এর জন্য এটি চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। নিয়মিত এটি ব্যবহারের ফলে চুল ঘন ও কালো হয়।
  • উকুনের সমস্যার সমাধানে নিম পাতা কাজ করে থাকে। টক দই ও নিম পাতার গুড়া মাথায় ব্যবহার করলে মাথার উপর দূর হয়ে যায়। সেই সাথে এটি মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
  • নিম পাতার রস ও নারকেল তেল একসাথে মাথায় ব্যবহার করলে মাথার ত্বকের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

প্রতিটা জিনিসের যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তেমনিভাবে নিম পাতার যেমন অনেক উপকারী দিক রয়েছে তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এ পর্বে আমরা নিম পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব।
  • কোন কিছুই অতিরিক্ত হওয়া ভালো নয়। নিমপাতা অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়া ফলে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • নিম পাতার স্বাদ তিতা ধরনের। এ কারণে এটি খাওয়ার ফলে বমি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, মাথাব্যথার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের এসব সমস্যা দেখা দেয় তাদের তৎক্ষণাৎ নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
  • যেকোনো ধরনের অপারেশনের ১৫ দিন পূর্বে নিম নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করাই ভালো।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা নিম পাতা খাওয়ার ফলে তাদের রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে। এতে করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
  • কারো কারো ক্ষেত্রে নিম পাতা খাওয়ার ফলে ত্বকে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-শেষ কথা

নিম পাতার সামান্য কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও এর উপকারী দিকে তুলনায় তা অতি নগণ্য। তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত পরিমাণমতো নিম পাতার রস সেবন করা। এতে করে শরীর বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও নিম গাছ পরিবেশের উপকার করে থাকে। তাই আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে অন্তত একটি করে নিম গাছ লাগানো উচিত।

প্রিয় পাঠক, আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে এটি শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url