পহেলা বৈশাখ ২০২৪ সম্পর্কে ১০টি বাক্য - বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস
আমরা অনেকেই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে জানি না। আবার অনেকেই পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য গুগলে সার্চ করে। তাই তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস ও পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে দশটি বাক্য জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়াও আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর সাথে জীবনে এক সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পরিচিত। এই দিনটি বাঙালি জাতি নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। এই দিনটির মূল আকর্ষণ পান্তা ইলিশ খাওয়া। এই দিনটিতে বিভিন্ন জায়গায় পান্তা ইলিশ খাওয়ার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট কর্তৃক একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। যা পৃথিবীবাসীর নিকট পরিচিত। এই মঙ্গল শোভাযাত্রার মুল আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। এই দিনটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলা আয়োজন করা হয়। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর জীবনে নতুন আশার উদ্রেক ঘটায়।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক পেজ থেকে টাকা ইনকামের পদ্ধতি
পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে উৎসাহ প্রদান করে। এই দিনটি ধনী গরিব সকলকে একই সুতায় গাঁথে। এই আর্টিকেল আমরা পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে দশটি বাক্য ও বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
বাংলা নববর্ষ ও বাঙালির সংস্কৃতি
পুরনো কে বিদায় জানিয়ে নতুনকে গ্রহণ করা মানুষের সহজাত স্বভাব। বাঙালিরাও এর ব্যতিক্রম নয়। পুরানোকে বিদায় জানিয়ে নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ আমাদের জীবনে আসে। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে বাঙালী হৃদয়ে আবর্তিত হয় পহেলা বৈশাখ। এই দিনে আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি আমরা শপথ গ্রহণ করি নতুন বছরে নতুন ভাবে চলার জন্য।
পুরানো বছরের সমস্ত পাওয়া না পাওয়া, ভুল ত্রুটি, গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন করে, নতুন উদ্যমে বাঁচার শপথ করি। ব্যস্ত নগর কিংবা গ্রামীণ জীবন যেটাই বলা হোক না কেন বাংলা নববর্ষ সবাইকে এক সূত্রে গাঁথে। এটি পরিণত হয় প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে শিকড়ের মিলনমেলায়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই এই দিনটিকে সদরে গ্রহণ করি।
এই দিনটিতে সব জায়গায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাঙালির একদিনের ঐতিহ্য নয়। এই দিনটি বাঙালির সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এই দিনটিতে খুব সকালে বাঙালিরা পান্তাইলিশ খেয়ে থাকে। এটাই যেন তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস
নতুন বছরের নতুন দিন আসে। আমরা উজ্জীবিত হই, উল্লাসে ফেটে পারি। কিন্তু আমরা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখি না। এই পর্বে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। তাই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আরো পড়ুনঃ ক্যাপসিকাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
সৌরপঞ্জি মতে, বাংলায় অনেক আগে থেকে বারোটি মাস পালন করা হয়ে থাকতো। আবার গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় দেখা যায়, সৌর বছর গণনা করা শুরু হতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থাকে। ভারতবর্ষে যখন মোঘল সাম্রাজ্য শাসন করতে শুরু করলো তারপর থেকে হিজরী পঞ্জিকা অনুযায়ী তারা কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতো। এতে করে কৃষকদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
কেননা হিজরি পঞ্জিকা চাঁদের উপর নির্ভরশীল হলেও কৃষি ফলন তাদের উপর নির্ভরশীল ছিল না। তাই সঠিক সময়ে কৃষি ফলন পাওয়া যেত না। তখন সম্রাট আকবর এর সমাধানের জন্য বাংলায় বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি তখনকার সময় বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফাতেহউল্লাহ সিরাজীর উপর বাংলা সালের নিয়ম তৈরির দায়িত্ব দেন।
বিভিন্ন সূত্র মতে ১৫৫৬ সালের প্রাচীন নভেম্বর থেকে বাংলা সন গণনা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলা মাসের নাম গুলো বিভিন্ন তারকারাজির নাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
যেমন বিশাখা থেকে বৈশাখ, জেষ্ঠ্যা থেকে জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, অগ্রইহনী থেকে অগ্রহায়ণ, পূষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফল্গুনি থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা থেকে চৈত্র।
সম্রাট আকবরের শাসন আমল থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। এ সময় চৈত্র মাসের শেষ দিন সকল প্রজা তাদের খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পরের দিন তথা পহেলা বৈশাখ ভূমির মালিকরা তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের লোকদের মিষ্টি দ্বারা আপ্যায়ন করতেন।
সেই থেকেই এই দিনটি পহেলা বৈশাখ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে বহির্বিশ্বের সাথে বাঙ্গালীদের যোগাযোগ রক্ষার সুবিধার্থে বাংলা একাডেমী প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
বাংলা নববর্ষ কে চালু করেন কত সালে
বাঙ্গালীদের জীবনে বাংলা নববর্ষ একটি আবেগের নাম। এই দিনটি বাঙালিরা নানাভাবে উদযাপন করে থাকে। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে বাংলা নববর্ষ চালু হয়। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এর পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৬ সালের ১৪ ই এপ্রিল।
প্রথমে এটি ফসলেশন নামে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীতে এটি বাংলা সন নামে পরিচিত হয়।এই সময় চৈত্র মাসের শেষ দিনে প্রজারা তাদের খাজনা পরিশোধ করে পরের দিন পহেলা বৈশাখ পালন করতেন। তবে আধুনিক বাংলা নববর্ষ উদযাপনের খবর পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে।
এ সময় প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের জয় কামনা করে পহেলা বৈশাখে কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর একই ঘটনা ঘটে ১৯৩৮ সালে। তবে বাংলা নববর্ষে উৎসবের শুরু হয় ১৯৬৭ সালে ঢাকার রমনা বটমূলে। এর আগে এই দিনটি তেমন করে পালন করা হতো না।
বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে ১০টি বাক্য
বাংলা বারটি মাসের প্রথম মাসের নামই হল বৈশাখ। আর এই বৈশাখ মাসের প্রথম তারিখ আমরা বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকি। বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। তাই এই দিনটি প্রতিবছর অনেক উদযাপনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়ে থাকে।
আমাদের অনেক সময় পরীক্ষাতে পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে দশটি বাক্য লিখতে বলা হয়ে থাকে। যদি আমরা এইগুলো জেনে থাকি তাহলে খুব সহজে তার উত্তর দিতে পারব। তাহলে চলুন পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে দশটি বাক্য জেনে নেওয়া যাক-
- বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন হলো পহেলা বৈশাখ। এই দিনটি প্রতিবছর ইংরেজি সনের এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে পালন করা হয়।
- বাঙালি জাতি ও বাঙালির সংস্কৃতির একটি জনপ্রিয় উৎসব হল পহেলা বৈশাখ। যা শুধুমাত্র বাঙালি জাতিরাই পালন করে থাকে। এই দিনটি বাংলা নববর্ষের আগমনী গান " এসো হে বৈশাখ এসো এসো" এর মধ্য দিয়ে নববর্ষকে বরণ করা হয়।
- পহেলা বৈশাখ যেন পান্তা ইলিশ ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই দিনটি পান্তা ইলিশ খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু করা হয়।
- পহেলা বৈশাখের দিন খুব সকাল থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় যা মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অনেক লোকের সমাগম হয়।
- এই দিনটিতে পুরুষেরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাদা পাঞ্জাবি পরিধান করে এবং মহিলারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক লাল শাড়ি পরিধান করে।
- গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী পহেলা বৈশাখে হালখাতা করে থাকে। এর মধ্য দিয়ে পুরনো হিসাব-নিকাশ বাতিল করে দিয়ে নতুন ভাবে শুরু করে।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এসব মেলাকে আমরা বৈশাখী মেলা বলে আখ্যায়িত করি।
- পহেলা বৈশাখ সাধারণত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি জাতির উৎসব। এই দিনটিতে আমরা সকলেই একত্রিত হই। এখানে কোন ধরনের ভেদাভেদ থাকে না।
- বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমী , বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ললিত কলা একাডেমী, ছায়ানট, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউ সহ বিভিন্ন জায়গাতে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করা হয়।
- পহেলা বৈশাখ সম্পূর্ণ বাঙালি জাতির জীবনে একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটিতে সকলেই পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহবান করে।
বাংলা নববর্ষ কিভাবে উদযাপন করা হয়
বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ হলো পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। এই দিনটি বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। এই দিনটি বাংলাদেশ সহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন উৎসবের সাথে পালিত হয়ে থাকে। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই দিনটি আনন্দের সহিত পালন করে থাকে। সেই হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন লোক উৎসব হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে এই উৎসবটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়ে থাকে। গ্রামে মানুষ ভরে ঘুম থেকে উঠে নতুন জামা কাপড় পড়ে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়।
এই দিনটিতে ঘরবাড়ি অনেক সুন্দর করে সাজানো থাকে। কোন কোন গ্রামে এই তিনটিতে মেলার আয়োজন করা হয় যা বৈশাখী মেলা নামে পরিচিত। মেলায় নানা ধরনের কুটির শিল্প সামগ্রী দেখা যায়। সেই সাথে কোথাও কোথাও আয়োজন করা হয় পান্তা ইলিশের।
এছাড়াও এই দিনটিতে নানা রকম পিঠাপুলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও এই দিনটিতে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নৌকা বাইচ, কুস্তি খেলা, লাঠি খেলা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে এই দিনটি আরও জাঁকজমক ভাবে পালন করা হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে এই দিনটিকে খুব সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। যা শহরের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে গিয়ে আবার পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তলে।
এই শোভাযাত্রায় সকল বর্ণ ধর্ম শ্রেণী পেশার ও বিভিন্ন বয়সের মানুষের আগমন হয়ে থাকে। এই শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট কর্তৃক তৈরি কৃত বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থান ইউনেস্কো এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করেছে।
এছাড়াও ঢাকার রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটি মূলত আয়োজন করে থাকে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের শিল্পীরা। এই দিন সূর্যোদয়ের পরপরই ছায়ানটের শিল্পীরা গান গেয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।
এছাড়াও বাংলা নববর্ষ কে কেন্দ্র করে ঈশা খাঁর সোনারগাঁওয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। যা বইমেলা নামে পরিচিত। এই মেলা সাধারণত ৫ দিনব্যাপী হয়ে থাকে। মূলত এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য এই মেলায় এসে পূজা করে থাকে।
এছাড়াও এই দিনটির আরেকটি মূল আকর্ষণ হল হালখাতা। গত বছরের সমস্ত হিসাব নিকাশ শেষ করে নতুন খাতা খোলা হয় এই দিনটিতে। এই দিনটি বাংলাদেশের সকল জায়গায় খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়।
এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি ক্ষুদ্র জাতি ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা। তারা এই দিনটি উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করে। ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব এই দিনে পালন করা হয়। তবে বর্তমানে এই তিনটি ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে বৈসাবি উৎসব নামে একটি যৌথ উৎসব পালন করে থাকে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এই উৎসব খুবই জাঁকজমক ভাবে পালন করা হয়। গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের বিভিন্ন মন্দিরে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। যে মেলা পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়।
২০২৪ সালে বাংলা নববর্ষ কি বার
উপরের আলোচনায় আমরা বাংলা নববর্ষ কিভাবে উদযাপন করা হয় সেই সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো এই বছর বাংলা নববর্ষ কি বারে হবে সেই সম্পর্কে। আপনারা যারা এই আর্টিকেলটি করছেন তারা হয়তো জানতে চেয়েছেন এই বছর পহেলা বৈশাখ কি বারে পালন করা হবে? এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আরো পড়ুনঃ মধুময় বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
আমরা সকলেই জানি বাংলা একাডেমি ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সাথে মিল রেখে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালন করার বিষয়টি ঠিক করে দিয়েছে। এই বছরেও এর বিপরীত কোন কিছু হবে না। এই বছরও এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে পহেলা বৈশাখ পালন করা হবে। এই বছর বাংলা ও ইংরেজি ক্যালেন্ডার হিসাব অনুযায়ী এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ দিনটি হবে রবিবার।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম এই বছর বাংলা নববর্ষ রবিবারে পালন করা হবে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন এই বছর বাংলা নববর্ষ কিভাবে পালন করা হবে। আমি আবারো বলছি এই বছর বাংলা নববর্ষ রবিবারে পালন করা হবে।
বাংলা নববর্ষ নিয়ে বক্তব্য
আমাদের অনেকেরই পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। স্কুল কলেজ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে কিছু কথা বলতে হয়। এই পর্বে আমরা পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য আলোচনা করব। আশা করি এই পর্বটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালির জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এক সময় এই দিনটি শুধুমাত্র গ্রামীণ জীবনের অংশ হয়ে থাকলেও বর্তমানে এটি গ্রামের পাশাপাশি শহরেও উদযাপন হয়ে থাকে। এই দিনটিতে ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে আমরা সকলেই মেতে উঠি। এই দিনটি পালন করা শুরু হয় সম্রাট আকবরের শাসন আমল থেকে।
তবে আধুনিক পহেলা বৈশাখের উদযাপন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে ঢাকার রমনা বটমূলে। এই দিনটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেন। যা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই দিনটির সাথে বাঙালির নানা ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। এই দিনটিতে অনেক জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয় যা বৈশাখী মেলা নামে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ আখ চাষ পদ্ধতি - আখের সাথে সাথী ফসল চাষ
স্কুল কলেজে এই দিনটি খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করা হয়। এই দিনটিতে কোথাও কোথাও পান্তা ইলিশ খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় যা বাংলা নববর্ষের প্রধান আকর্ষণ। পান্তা ইলিশ হলো নববর্ষের ঐতিহ্য। এই দিনটিতে ধনী গরিব সকলে পান্তা ইলিশ খেয়ে থাকে।
এছাড়াও ব্যবসায়ীগণ এই দিনটিতে হালখাতার ব্যবস্থা করে থাকেন। মূলত পুরাতনকে বাদ দিয়ে নতুন ভাবে লেনদেন শুরু করার জন্য এই দিনটিকে তারা বেছে নেয়। মূলত এ দিনটিতে সকলেই পুরাতনকে ভুলে গিয়ে নতুন বছরের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে।
শেষ কথাঃ পহেলা বৈশাখ ২০২৪ সম্পর্কে ১০টি বাক্য - বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস
পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে আনন্দ বয়ে আনে। এই দিনটি বাঙালি জাতি উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করে থাকে। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আনন্দ করতে গিয়ে যেন নিজের বা অন্যের কোন ক্ষতি না হয়ে যায়। এই দিনটি বাঙালির সংস্কৃতিকে বহন করে।
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url