শীতকালে ও গরমকালে নবজাতক শিশুর যত্নে যা করণীয়
প্রিয় পাঠক, আপনি কি নবজাতক শিশুর যত্ন নিয়ে চিন্তিত? তার কিভাবে যত্ন নিতে হবে সে সম্পর্কে জানেন না? তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি নবজাতক শিশুর শীতকালে ও গরমকালে কি ধরনের যত্নের প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি শিশুদের খাওয়ানোর কৌশল সম্পর্কে জানতে পারবেন। একজন শিশু একটি পরিবারের কাছে অনেক বেশি আদরের হয়ে থাকে। তাই আপনাকে শিশুর জন্য কিভাবে নিতে হয় সে সম্পর্কে অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন। আর এই কাজে আপনাকে এই আর্টিকেলটি সাহায্য করতে পারে।
ভূমিকা
মহান আল্লাহ তা'আলা একটি শিশুকে তার মাতৃগর্ভে এমনভাবে রাখে যেখানে তার কোন রকম অযত্ন বা ক্ষতি হয় না। যখন সে ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে একটি সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়। সেখানে তার খাপ খাইয়ে নিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এই সমস্যা থেকে শিশুকে রক্ষা করতে তার অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন।
শীতকালে ও গরমকালে শিশুর আলাদা আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়াও তার পরিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। শিশু যেন ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সেই সাথে শিশুর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও নিশ্চিত করতে হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা নবজাতক শিশুর যত্নে করণীয় কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
নবজাতককে রোদে রাখার নিয়ম
আমাদের দেশে যখন কোন নবজাতক শিশুর জন্ম হয় তখন পরিবারের লোকজন তাকে রোদ মাখান। প্রতিদিন সকাল করে তাকে রোদের সংস্পর্শে আনা হয়। এতে করে নবজাতকের শাস্তির অনেক উপকার হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন নবজাতককে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট রোদে রাখার।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুর শুধুমাত্র মুখে রোদ না লেগে পুরো শরীরে রোদটা লাগে। এতে করে শিশুর দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হবে। শিশুর জন্য সকাল আটটা থেকে দশটার রোদ অনেক বেশি উপকারী। তবে কোন অবস্থাতেই শিশুকে দুপুরে বা বিকালের রোদে রাখা যাবে না। শিশুকে সকালের রোদে রাখার কারণে শিশুর যেসব উপকার হয়ে থাকে তা হলো-
- প্রতিদিন শিশুকে রোদে রাখলে শিশু দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হয়। আর ভিটামিন ডি শিশুর হাড় গঠনে সাহায্য করে ও হাড়কে মজবুত করে।
- শিশুকে প্রতিদিন রোদে রাখার ফলে শিশুর ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত হয়। এতে করে শিশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে নানা ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পায়।
- নিয়মিত নবজাতককে রোদে রাখার ফলে তার ঘুম ভালো হয়। কেননা শিশুদের রোজা রাখলে তাদের সেরোটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়। এতে করে শিশুর বৃদ্ধি ভালো হয়।
- অনেক সময় নবজাতকের জন্ডিস দেখা দেয়। নিয়মিত রোদে রাখার কারণে শিশুর এই জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। তবে যদি জন্ডিসের মাত্রা অনেক বেশি হয় তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- শিশুদের নিয়মিত রোদে রাখার কারণে শিশুদের শরীরে মেলাটোনিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে শিশুদের ঘুম ভালো হয়। ঘুম নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা আর থাকে না।
নিয়মিত রোদে রাখার কারণে শিশুর নানারকম উপকার হয়ে থাকে। তবে বেশি উপকারের আশায় শিশুকে কখনোই অতিরিক্ত সময় রোদে রাখা ঠিক নয়। এতে করে শিশুর অনেক ক্ষতি হতে পারে। আবার তীব্র রোদের সময় শিশুকে রোদে রাখা যাবে না বিশেষ করে সকাল দশটার পর থেকে শিশুকে আর রোদে রাখা যাবে না।
শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয়
একটি পরিবারে যখন নতুন শিশুর আগমন হয় তখন সে আগমনকে কেন্দ্র করে সকলে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। সেই সাথে সকলের মধ্যে চিন্তা বিরাজ করে কিভাবে নবজাতক শিশুর যত্ন নিব, কি করলে শিশুর ভালো হবে ইত্যাদি হাজার রকমের প্রশ্ন।
আরো পড়ুনঃ শীতে ঠোঁট ফাটার কারণ ও প্রতিকার
এই পর্বে আমরা সেই সম্পর্কেই আলোচনা করব। জন্মের পর একজন নবজাতক শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয় সেই সম্পর্কে নিজে আলোচনা করা হলো-
- নবজাতক শিশু সংস্পর্শে সবচেয়ে বেশি তার বাবা-মাই আসে। তাই নবজাতক শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে অবশ্যই নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে আসতে হবে। সব সময় নবজাতকের কোলে নেওয়ার পূর্বে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সেই সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও একই প্রন্থা অবলম্বন করতে হবে।
- নবজাতককে সঠিক সময় খাওয়ানো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা খাওয়ানোর উপরেই শিশুর বৃদ্ধি ও সুস্থ থাকা নির্ভর করে। এজন্য শিশুকে ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। প্রথম ছয় মাস শিশুকে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো যাবে না। যদি কোন কারনে মায়ের বুকের দুধ না পায় তবে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে গুড়া দুধ খাওয়াতে হবে।
- শিশুকে সবসময় নরম পোশাক পরাতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই উলের পোশাক করানো যাবে না। কেননা অনেক সময় এতে শিশুর এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুকে পোশাক পরানো ক্ষেত্রে এমন পোশাক নির্বাচন করতে হবে যাতে শিশু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং পোশাকটি যেন কিছু শরীরে শক্ত ভাবে আঘাত না করে।
- শিশুকে গোসল করানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে গোসল করানোর পানি যেন খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম না হয়। শিশুকে সবসময় কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো উচিত। এতে করে শিশুর বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি হওয়া থেকে বিরত থাকে। সেই সাথে অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করালে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
- শিশুর জন্য সব সময় গরম জায়গা নিশ্চিত করুন। এতে করে তারা সেখানে আরামদায়কভাবে থাকতে পারবে।
- প্রতিবার খাওয়ানোর পর চেষ্টা করতে হবে শিশুকে ঢেকুর তোলানোর। এতে করে শিশুর পেটে গ্যাস সৃষ্টি হবে না। এর জন্য আপনি শিশুকে আস্তে আস্তে আপনার বুকের কাছে এক হাত দিয়ে ধরুন। এরপর শিশুর থুতনি আপনার কাঁধের কাছে রাখুন এবং আপনার অন্য হাত দিয়ে খুবই সাবধানতার সহিত আস্তে আস্তে পিঠে টোকা দিন। এই কাজটি ততক্ষণ করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত শিশুর ঢেকুর তুলছে।
- নবজাতকের চোখে প্রায় সময়ে ময়লা দেখতে পাওয়া যায়। তাই নবজাতকের চোখ সব সময় পরিষ্কার রাখুন। তবে পরিষ্কার করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনোই খালি হাত ব্যবহার করা যাবে না। একটি পাতলা নরম কাপড় উষ্ণ গরম পানিতে ভিজিয়ে চোখ ভালোভাবে মুছে দিন।
- নবজাতক শিশুর জন্মের পর পরই নাভিটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে কেটে দিন এবং জীবাণুমুক্ত সুতা দিয়ে নাভি বেঁধে দিন। এরপর একবার ঘন স্পিরিট লাগিয়ে দিতে হবে। বাসায় আনার পর শিশুর নাভিতে কোন ধরনের তেল বা মলম এমনকি কোনো রকম সেক দেওয়ার দরকার নেই। নাভি সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে।
- শিশুকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট রোদে রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে শিশুর দেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি তৈরি হবে। যা শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে, হাড়কে মজবুত করে। রোদে রাখার ক্ষেত্রে শিশুকে সকাল ৮ টা থেকে ১০ টার মধ্যে রোদে রাখুন। শিশুকে কখনোই দুপুরে বা বিকালে রোদে রাখবেন না।
- শিশুর জিহ্বা সব সময় পরিষ্কার করে দিন। কেননা শিশু প্রতিনিয়ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার কারণে তার জিহ্বায় সাদা আস্তরণ পড়ে। এটি নিয়মিত পরীক্ষার করে না দিলে শিশুর জিহ্বায় ঘা তৈরি হতে পারে।
- শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে শিশু বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। প্রয়োজন এর প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে শিশুর পুরো শরীর মুছে দিন। চাইলে এই পানিতে আপনি স্যাভলন ব্যবহার করতে পারেন।
- নিয়মিত ছোট শিশুদের নাম সুন্দর করে কেটে দিন। কেননা শিশুদের নখ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আর এই নখের আচরেই শিশুদের নিজের শরীরে ক্ষত হতে পারে। যা থেকে পরবর্তীতে ঘায়ের সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়মিত শিশুদের নখ কেটে দিন।
- শিশুকে নিয়মিত সঠিক সময়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এতে করে শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যা পরবর্তীতে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের থেকে রক্ষা করবে।
- শিশুর সম্পূর্ণ শরীর ভালোভাবে মালিশ করুন। এতে করে শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং শিশুর ভালো ঘুম নিশ্চিত করবে।
- আপনার শিশুকে ডায়াপার পরিয়ে রাখলে তা ঘন ঘন চেক করুন। কখনোই অধিক সময় ধরে একটি ডায়াপার শিশুকে পড়িয়ে রাখা উচিত নয়। এতে করে শিশুর শরীরে বিভিন্ন ধরনের র্যাশ দেখা দিতে পারে।
শীতে নবজাতকের ত্বকের যত্ন
শীতকালে সকলেরই কম বেশি আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়। নবজাতকের বেলায় এটি আরো বেশি প্রয়োজন। কেননা শীতকালে নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এই সময় নবজাতকের সঠিক যত্ন নেয়া না হলে সে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই শীতে নবজাতকের ত্বকের যত্নে করণীয়গুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
- গর্ভাবস্থায় একটি শিশু উষ্ণ পরিবেশে অবস্থান করে। তাই শিশুর জন্মের সাথে সাথে শিশুর শরীরে যে সাদা আস্তরণ দেখা যায় তা নোংরা ভেবে পরিষ্কার করা উচিত নয়। এটি শিশু শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে বাইরের তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
- শিশুর জন্মের পরপরই মাথার চুল কেটে ফেলা উচিত নয়। কেননা চুল নবজাতকের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- শিশুকে প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট রোদে রাখতে হবে। এতে করে শিশুর দেহের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে। সেই সাথে শিশুর দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হবে।
- শিশুকে সবসময় ঘরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা যেন ২৫-২৬ ডিগ্রির আশেপাশে থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে রুম হিটার ব্যবহার করে ঘর গরম করতে হবে।
- ঘরের দরজা জানলা বন্ধ রেখে ঘর উষ্ণ রাখার চেষ্টা করতে হবে। তবে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো বাতাসের জন্য ঘরের জানালা খোলা রাখা যেতে পারে।
- শীতকালে শিশুকে গরম কাপড় পড়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর কান ও পুরো শরীর যেন ভালোভাবে থেকে থাকে। প্রয়োজনে কান ও মাথা নরম কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে কান টুপি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- শিশুকে সবসময় আরামদায়ক গরম কাপড় পরাতে হবে। কখনো শিশুকে উলের কাপড় পরানো উচিত নয়। কেননা এতে অনেক সময় এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং গোসলের পর তোকে ভালোভাবে বেবি লোশন লাগিয়ে দিতে হবে। এতে করে শীতে শিশু ত্বক শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
- ৬ মাসের অধিক বয়সি শিশুকে এ সময় ঠান্ডা জাতীয় খাবার একেবারে খাওয়ানো উচিত নয়। এ সময় শিশুকে পুষ্টিকর ও গরম খাবার খাওয়ানো উচিত। এর পাশাপাশি শিশুকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে।
- অল্প শীতে শিশুকে মোটা গরম কাপড় পড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা অল্প শীতে মোটা গরম কাপড় পড়ালে শিশু ঘেমে গিয়ে নানারকম রোগ হতে পারে।
- শীতকালে শিশুকে যত সম্ভব মায়ের কোলে ঘেঁষে রাখতে হবে। এতে করে শিশু উষ্ণ থাকবে এবং মায়ের সাথে আন্তরিকতা বাড়বে।
- শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কেননা এতে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায় এবং ঠান্ডা কাশি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
গরমে শিশুদের যত্ন নিবেন যেভাবে
গরমের সময় শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত গরমে ঘাম বসে শিশুদের নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া এ সময় শিশুদের একটি সাধারণ সমস্যা হলো ডায়রিয়া হওয়া। তাই গরমে শিশুদের যত্ন যেভাবে নিতে হবে তা এই পর্বে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন গরমে শিশুদের যত্ন যেভাবে নিতে হবে তা জেনে নিই-
- গরমে শিশুদের সবার প্রথমে খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। এই সময় শিশুকে ভারী খাবার দেওয়া থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। এ সময় শিশুদের সহজপাচ্য খাবার নিশ্চিত করতে হবে। যেগুলো সে সহজে হজম করতে পারে।
- শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাদ্য খাওয়াতে হবে। সেইসাথে শিশুর শরীরে যেন পানির ঘাটতি না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
- শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় ভালোভাবে পুরো শরীর পরিষ্কার করে দিতে হবে। গোসলের পর শিশুর মাথা ও শরীর ভালো হবে মুছে দিতে হবে। যাতে করে শিশুর ঠান্ডা লেগে না যায়।
- শিশুকে সরাসরি ফ্যানের নিচে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। সরাসরি ফ্যানের নিচে রাখলে শিশুর ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
- শিশুর শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হলে ঘন ঘন গা মুছে দিতে হবে সেই সাথে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।
- এ সময় শিশুকে পাতলা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করাতে হবে। সেই সাথে গরমে বিভিন্ন ধরনের র্যাশ এড়াতে শিশুকে সুতি কাপড় পড়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর কাপড়ের মধ্যে দিয়ে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে।
নবজাতকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহার
ছোট্ট শিশুদের শরীরে তেল মালিশের প্রচলন বহু আগে থেকেই। সঠিকভাবে তেল মালিশ করলে নবজাতকের ত্বক ময়েশ্চারাইজ থাকে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, হাড় মজবুত হওয়ার মতো নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। সেই সাথে ভালো করে তেল মালিশ করলে শিশুর ঘুম ভালো হয়।
বর্তমানে বাজারে শিশুদের ত্বকের যত্নে বিভিন্ন ধরনের তেল পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ ডাক্তারগন শিশুর শরীরে অলিভ অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই তেল শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে থাকে। এছাড়াও এক বালতিতে পাঁচ চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করালে ত্বক নরম হয়।
তবে শিশুর ত্বক যদি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয় তাহলে এই তেল ব্যবহার করা করবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন এই তেল ব্যবহার করার কারণে শিশুর দেহে র্যাশের সৃষ্টি হয়েছে।
শিশুদের খাওয়ানোর কৌশল
শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি যত্নশীল হতে হবে। কেননা একজন শিশুর খাওয়ার উপরই নির্ভর করে তার সঠিক বুদ্ধি ও বিকাশ। অনেক সময় দেখা যায় শিশু খেতে চায় না। এক্ষেত্রে অনেক বাবা-মা তাদের জড়াজড়ি করে খাওয়ান যা তাদের জন্য ক্ষতিকর।
আরো পড়ুনঃ সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব
এই পর্বে আমরা শিশুদের খাওয়ানোর কিছু কৌশল আলোচনা করব। যেগুলো করলে আপনি সহজেই শিশুকে খাওয়াতে পারবেন। তাহলে চলুন শিশুদের খাওয়ানোর কৌশল জেনে নেওয়া যাক-
- শিশুদের কখনো একই রকম খাবার বারবার খাওয়ানো উচিত নয়। প্রতিনিয়ত খাবারের রদবদল আনা প্রয়োজন। এতে করে তারা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে। কখনোই তাদের খাওয়ার প্রতি অরুচি আসবেনা।
- শিশুদের সামনে প্রতিদিন নতুন নতুন খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে তারা নতুন খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং খুব সহজেই খাবার খাবে।
- শিশুরা খেলাধুলা করতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে বিস্কুট দৌড় স্টাইলে বিভিন্ন ধরনের ঘরে তৈরি খাবারের খেলার আয়োজন করুন। এতে করে শিশু খেলার মধ্য দিয়ে খাবার গ্রহণ করবে।
- শিশুদের খাওয়ানোর সময় তাদের সাথে গল্প করুন। এতে করে তারা গল্প শুনতে শুনতে সমস্ত খাবার খেয়ে নেবে।
- শিশুদের নিজের হাত দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে প্রথমদিকে হয়তো খাবার নষ্ট করবে কিন্তু আস্তে আস্তে সে নিজের হাত দিয়ে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখাবে এবং খুব সহজে খাবার খাবে।
- অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা বাইরের জুস খেতে অনেক বেশি পছন্দ করে কিন্তু দুধ খেতে চায় না। আপনি চাইলে তাকে জুসের প্যাকেটে দুধ ভরে খেতে দিতে পারেন। এতে সে দুধকে জুস মনে করে খুব সহজে খেয়ে নিবে।
- শিশুকে ক্ষুধা লাগা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ক্ষুধা লাগার পরই শিশুর সামনে খাবার নিয়ে আসুন। দেখবেন খুব সহজেই শিশুটি খাবার খেয়ে নেবে।
- শিশুকে প্রতিবার খাবার শেষ করার জন্য অভিনন্দন জানাতে হবে। এতে করে শিশু সম্পূর্ণ খাবার খেতে আগ্রহী হবে।
শীতে শিশুর প্রসাধনী সামগ্রী
ছোট শিশুদের ত্বক অনেক বেশি নরম ও কোমল হয়। তাই শীতকালে শিশুদের ত্বকের আলাদা যত্ন নিতে হয়। আর এর জন্য অবশ্যই ভালো মানের প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে শিশুদের প্রসাধনী সামগির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- বডি অয়েল
- হেয়ার অয়েল
- বডি লোশন
- বেবি ক্রিম
- বেবি শ্যাম্পু
- বেবি সোপ বা বডি ওয়াশ
- বেবি পাউডার
শেষ কথা
একটি শিশুর জন্ম নেওয়ার পর পরিবারের সকলের কাছে অনেক আদরের হয়ে থাকে। এজন্য তাদের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। জন্ম নেয়ার পর তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
এই আর্টিকেল যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে তা শেয়ার করবেন। এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url