বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক? কিন্তু কোথায় যাবেন তা বুঝতে পারছেন না? তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের দশটি দর্শনীয় স্থানের কথা উল্লেখ করেছি। যেগুলোতে ভ্রমণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার মনের ভ্রমণ পিপাসা পূরণ করতে পারেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি করে এর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি বাছাই করে ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আমার এই দেশের কোথাও রয়েছে পাহাড় পর্বত আবার কোথাও রয়েছে নদ নদী, বন জঙ্গল। তবে সব জায়গায় সবুজের। যেগুলোর দৃশ্য খুবই মনমুগ্ধকর। যেগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসে বিভিন্ন পর্যটক। আমার দেশের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেন-
ধন ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।
এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ দশটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাহলে চলুন বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
সেন্টমার্টিন
বাংলাদেশের কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের কথা উল্লেখ করা হলে সবার প্রথমে যে নামটি আসবে সেটি হলো সেন্টমার্টিন। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যেটি কক্সবাজার শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর মোট আয়তন ১৭ বর্গ কিলোমিটার। একটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা পর্যটক সারা বছর ধরেই সেন্টমার্টিন এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। স্থানীয় ভাষায় একে নারকেল জিঞ্জিরা বলা হয়। এর মূল আকর্ষণ সমুদ্রের নীল জলরাশি এবং সারি সারি নারকেল গাছ। সেই সাথে রয়েছে প্রবাল প্রাচীর। সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম টেকনাফে যেতে হবে।
সেখান থেকে জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন। সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। যারা সেন্টমার্টিন যেতে চান তারা অবশ্যই হাতে একদিনের সময় নিয়ে সেন্টমার্টিন যাবেন। তাহলে আপনি ভালোভাবে পুরো সেন্টমার্টিন ঘুরে দেখতে পারবেন। সেন্টমার্টিন এ অবস্থিত ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়া যায়। যা দেখতে অপরূপ সুন্দর।
সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ খাবার হলো ডাব। যা খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তারা সেন্ট মার্টিনে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ যেমন কোরাল, রূপচাঁদা, লবস্টার ইত্যাদি খেতে পারেন। যেগুলো স্বাদে অনন্য।
সেন্টমার্টিনের রাত্রি যাপন করার জন্য বেশ কিছু হোটেল ও কটেজ রয়েছে। যেগুলো দেখতে অনেকটা বাড়ির মত। তবে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পূর্বে আপনি সেখানকার আবহাওয়া বার্তা সম্পর্কে জেনে নিবেন। নয়তো খারাব আবহাওয়া পড়লে তা আপনার জন্য ভয়ংকর হতে পারে।
কক্সবাজার
আপনি যদি সাগর পছন্দ করেন তবে আপনার জন্য বেড়ানোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে কক্সবাজার। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। দেশ-বিদেশ থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষ এখানে এসে ভিড় করে। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এখানে প্রচুর ভিড় থাকে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর মানুষের কাছে এক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
আপনি এখানে সমুদ্র নেমে আনন্দের সহিত গোসল করতে পারবেন। সেই সাথে সাগরের ঢেউ ও গর্জন উপভোগ করতে পারবেন। সেই সাথে আপনার সুখময় স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের ফটোগ্রাফার পেয়ে যাবেন। যারা টাকার বিনিময়ে আপনাকে ছবি তুলে দিবে। এছাড়াও বিচে বাইক ও ঘোড়া দেখতে পারবেন। যেখানে আপনি টাকার বিনিময়ে উঠতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
সেই সাথে এখানে স্পিডবোট পাওয়া যাবে। যেটাতে চলে আপনি মেইন বিচ থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে দেখতে পারবেন। এ ছাড়া আপনি যদি কক্সবাজার যেয়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই দূরে রাখার জন্য হিমছড়ি ও ইনানী বিচ ভ্রমণ করতে পারেন। যা মূল বিচ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। হিমছড়ি বিচে আপনি পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন ইনানী বিচে আপনি সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন।
যা খুবই চমৎকার ও মনমুগ্ধকর। এছাড়াও কক্সবাজারে আপনি বিভিন্ন ধরনের শামুকের অলংকার দেখতে পারবেন। যা খুবই সুন্দর। এখানে রাত্রি যাপন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে। সেই সাথে আপনি চাইলে এখানে রাতেও বিচে আড্ডা দিতে পারেন। মোটকথা আপনি যদি কক্সবাজার ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হন তবে এটি আপনার জীবনের সুখময় মুহূর্তের মধ্যে একটি হবে।
সুন্দরবন
সুন্দরবন হলো পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। পদ্মা মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় এই অপরুপ নয়াভিরাম বনটি অবস্থিত। এবনের বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও কিছু অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছে।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ সুন্দরবন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়। সুন্দরবনে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি ও প্রাণী। এ বনে প্রচুর পরিমাণ সুন্দরী ও গেওয়া গাছ রয়েছে। এখানে প্রায় ২৯০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বসবাস।
সুন্দরবনের সবচেয়ে প্রধান আকর্ষণ হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে অসংখ্য নদী হয়ে গেছে। যেগুলো দিয়ে নৌকা করে ভ্রমন করলে আপনি হরিণ, কুমির সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেখতে পাবেন। সেই সাথে যদি ভাগ্য ভালো হয় তবে আপনি রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও দেখতে পাবেন।
সুন্দরবন যেতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম খুলনা যেতে হবে। সেখান থেকে মংলা ঘাট এবং মগরাহাট থেকে করমজল যাওয়া যায়। আপনি সকালবেলা মংলা থেকে রওনা দিয়ে সারাদিন সুন্দরবন ঘুরে আবার সন্ধ্যায় মংলা ঘাটে ফিরে আসতে পারবেন।
সাজেক ভ্যালি
বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাবজেক্ট ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হলো সাজেক ভ্যালি। এটি রাঙ্গামাটি জেলার সর্বোত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। রাঙ্গামাটির প্রায় অনেকাংশ সাজেক ভ্যালি থেকে দেখতে পাওয়া যায়। তাই একে রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয়।
এখানে সর্বত্র মেঘ, পাহাড়, আর সবুজের সমারহ। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এখানে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প। এখানে আপনি পাহাড় আর মেঘের খেলা দেখতে পারবেন। আপনার মনে হবে এই বুঝি আপনি মেঘকে হাত দিয়ে শুতে পারছেন।
এখানে নানা ধরনের উপজাতির বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চাকমা, লুসাই, ত্রিপুরা ইত্যাদি। এখানে আপনি তাদের সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারবেন। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। এখানে প্রতিমুহূর্তে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়।
কখনো এখানে অনেক গরম, আবার কখনো বৃষ্টি, আবার কখনো সমস্ত এলাকা মেঘের চাদরে মোড়ানো। মনে হবে যেন আপনি মেঘের উপত্যকায় চলে এসেছেন। এখানে রয়েছে বড় বড় পাহাড় আর তুলার মত মেঘ। আর এরই মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অপরূপ সৌন্দর্যের সাজেক ভ্যালি।
নিঝুম দ্বীপ
এটি বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত একটি স্থান। বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর রয়েছে নয়াভিরাম সৌন্দর্য। এই দ্বীপে প্রচুর পরিমাণ চিংড়ি মাছ (স্থানীয় ভাষায় ইছা মাছ) পাওয়া যেতে বলে একে ইছামতির চর বলা হয়।
এই দ্বীপে হরিণ ও মহিষ ছাড়া অন্য কোন হিংস্র প্রাণী নেই। শীতের মৌসুমে এই দ্বীপ যেন পাখিদের স্বর্গে পরিণত হয়। এ সময় অসংখ্য প্রজাতির অতিথি পাখি এখানে এসে ভিড় করে। এই দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কমলার দ্বীপ, চুয়াখালী সমুদ্র সৈকত, চৌধুরী খাল, নামার বাজার সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।
এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ হলো কেওরা পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা চিত্র হরিণ। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। অনেকে এটিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে আখ্যায়িত করেন। এই দ্বীপে অবকাশ যাপনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হোটেল।
কুয়াকাটা
এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত পর্যটন কেন্দ্র। এটি পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা পর্যটকদের কাছে " সাগরকন্যা" হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থান।
এটি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটি খুব ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো সূর্যোদয় দেখা যায় গঙ্গামতির বাঁক থেকে এবং সূর্যাস্ত দেখা যায় পশ্চিম সমুদ্র সৈকত থেকে। শীতকালে এখানে বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখি দেখা যায়। এখানে রয়েছে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
এখানে ১০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ মন্দির ও দুটি পুরনো কুপ রয়েছে। কুয়াকাটার আশেপাশে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফাতরার বন যা দ্বিতীয় সুন্দরবন নামে পরিচিত, সীমা বৌদ্ধ বিহার, কুয়াকাটার কুয়া যা রাখাইন পল্লীতে অবস্থিত, গঙ্গামতীর জঙ্গল।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে 40 কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে বন্য পরিবেশে বিভিন্ন জীবজন্তুর খোলামেলা জীবন যাপন উপভোগ করা যায়। সাফারি পার্ক চিড়িয়াখানা থেকে ভিন্নরকম।
কেননা চিড়িয়াখানায় জীবজন্তু আবদ্ধ অবস্থায় থাকলেও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জীবজন্তু মুক্ত অবস্থায় থাকে। তাই এসব জীবজন্তুদের দেখতেও অনেক ভালো লাগে। সাফারি পার্কে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, চিতাবাঘ, হরিণ, বেজি, বন বিড়াল, খরগোশ, ভাল্লুক, হাতি, কুমির, জলহস্তিসহ বিভিন্ন ধরনের বিরল বিপন্ন প্রাণী।
সেই সাথে এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখি। সাফারি পার্কে পাঁচটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। যেগুলো হলো বঙ্গবন্ধু চত্বর, কোর সাফারি (যেখানে আপনি মুক্ত অবস্থায় বিভিন্ন প্রাণী দেখতে পারবেন। তাই এখানে বাসে করে আপনাকে জঙ্গল ঘুরে দেখানো হবে), সাফারি কিংডম (এখানে আপনি বিভিন্ন দর্শনীয় জিনিস টিকিটের বিনিময় দেখতে পাবেন), জীব বৈচিত্র্য পার্ক, বিস্তৃত এশীয় পার্ক।
এখানে প্রবেশের মূল্য বড়দের জন্য ৫০ টাকা ও ছোটদের জন্য ২০ টাকা। তবে কোন শিক্ষা সফরে আগত ব্যক্তিদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৪০ থেকে ১০০ জনের জন্য ৪০০ টাকা এবং ১০০ এর অধিক হলে ৮০০ টাকা। এছাড়া প্রতিটি জিনিস দেখার জন্য আলাদা আলাদা টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে। এটি কে থাইল্যান্ডের সাফারি পার্কের আদলে তৈরি করা হয়েছে।
জাফলং
ভ্রমন পিয়াসু মানুষের কাছে জাফলং খুবই আকর্ষণীয় জায়গা। এটি সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি সারাদেশে প্রকৃতি কন্যা নামে পরিচিত। এটি খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি।
এখানে রয়েছে ছোট-বড় অনেক পাহাড় যা পর্যটকদের গভীরভাবে আকর্ষণ করে থাকে। এর জন্য প্রতিদিনই এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় জমে। এর অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য কেউ যদি সিলেটে গিয়ে থাকেন তবে সে অবশ্যই জাফলং ভ্রমণ করে আসেন। এখানে পর্যটকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ও থাকার জন্য গেস্ট হাউস ও রেস্ট হাউস রয়েছে।
মূলত এটি পরিষ্কার পানি ও ঝর্ণা, সেই সাথে পানির নিচে অবস্থিত পাথরের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে দাঁড়ালে ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতু দেখতে পাওয়া যায় যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে। বর্ষাকালেও শীতকালে জাফলং যেন আলাদা সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়। তাছাড়াও এখানে পাহাড়ের মাথায় মেঘের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। যা খুবই মনমুগ্ধকর।
রাতারগুল জলাবন
রাতারগুল হাওর সিলেটের গোয়ালন্দঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন। পৃথিবীতে মিঠাপানের যে ২২ টি জলাবণ রয়েছে তার মধ্যে রাতারগুল জলাবন অন্যতম। এটি যেন জলজপ্রাণীর এক অভয়ারণ্য। এই বনে অসংখ্য পাটিগাছ রয়েছে। যা সিলেটি ভাষায় "রাতা গাছ" নামে পরিচিত। এই গাছের নাম অনুসারে এই বনের নাম রাখা হয় রাতারগুল।
এখানে পানিতে শরীরের নিম্নাঙ্গ ডুবিয়ে বন উপভোগ করতে পর্যটকরা ভিড় করে। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে এখানে পর্যটকের সংখ্যা বেশি হয়। তবে বনের ভিতর ঘুরে দেখতে প্রয়োজন হয় ডিঙি নৌকার। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই রাতারগুল বন বিট অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। এখানে বিভিন্ন জলজ প্রাণীর পাশাপাশি অনেক ধরনের পাখি দেখতে পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। মূলত পর্যটকরা এখানে চা বাগান দেখতে ভিড় করে। এখানে পাহাড়ের পর পাহাড় চা বাগান রয়েছে। এছাড়া এখানে রেইন ফরেস্ট ও হাওর রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে শীতলতম স্থান। এখানে বাংলাদেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউট অবস্থিত।
এছাড়াও এখানে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বধ্যভূমি-৭১, লেবু বাগান, আনারস বাগান, চা জাদুঘর, টি রিসোর্ট, নির্মাই শিববাড়ি, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল ইত্যাদি। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এখানে এসে ভিড় করে।
শেষ কথা
বাংলাদেশে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের কথা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলোতে ভ্রমণ করে আপনি আপনার মনের ভ্রমণ পিপাসা মিটাতে পারেন। এগুলোতে ভ্রমণ করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন বাংলাদেশ কত সুন্দর একটি দেশ। আমরা অনেকেই ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে বিদেশ গিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের দেশে যত সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি নেই।
প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা আপনার পরিবারের মাঝে শেয়ার করুন। এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। এতক্ষন মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url