বিছুটি পাতার উপকারিতা বা ঔষধি গুনাগুন - বিছুটি পাতা গায়ে লাগলে চুলকায় কেন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি বিচুটি গাছ থেকে ভয় পান? আজ থেকে ভয় পাওয়ার আর কোনো কারণ নেই। এই গাছের ঔষধি গুনাগুন জানলে আপনিও অবাক হবেন। এই আর্টিকেলে আমরা বিছুটি পাতার উপকারিতা এবং এই পাতা গায়ে লাগলে চুলকায় কেন সে বিষয়ে আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেল করার মাধ্যমে আপনি বিছুটি গাছ কোথায় পাওয়া যায় এবং এর পাতায় কোন এসিড থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিছুটি পাতার চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এই সমস্ত কিছু জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বিছুটি হলো উদ্ভিদ জগতের ইউফোরবিয়াসেই পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এই গাছের কোন অংশ যদি মানুষের শরীরে সংস্পর্শে আসে তবে যে জায়গায় চুলকানির সৃষ্টি হয়। এ কারণে অধিকাংশ মানুষের ধারণা এই গাছ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে মানব শরীরের জন্য বিছুটি পাতার রস এক মহাঔষধ।
এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই বাতের ব্যথা নিরাময়ে এই পাতার রস ব্যবহার করা হয়ে আসছে। অঞ্চল ভেদে এই গাছের নাম একেক রকম। বিছুটি পাতা কে ছোতরা পাতা, চুলচুইল্লা গাছ, বেশোতক্তা, চোতরা ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
এই গাছের পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কাজে লাগে। এই আর্টিকেলে আমরা বিছুটি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
বিছুটি পাতার উপকারিতা - বিছুটি পাতার ঔষধি গুনাগুন
বিছুটি পাতা, এই নামটা শুনলেই আমাদের সর্বপ্রথম যে কথা মনে পড়ে তাহলে এর পাতা যদি একবার গায়ে লাগে তবে প্রচুর পরিমাণ চুলকানি শুরু হবে। এর থেকে রক্ষা পাওয়া মুশকিল। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই ঠান্ডা জানি তো সমস্যা, এলার্জি সমস্যা, আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসা সহ বিভিন্ন কাজে তে এই পাতা ব্যবহার করা হতো।
এটি একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর পাতায় নানা রকম পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রোটিন, ফ্যাট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন। এছাড়াও এর মধ্যে আরো অনেক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান। যার কারণে এই পাতার রস বিভিন্ন অসুখ ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই পর্বে আমরা বিছুটি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। তাহলে চলুন এবার বিছুটি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই-
- এলার্জি মানুষের একটি কমন সমস্যা। বিভিন্ন কারণে মানুষের শরীরে এলার্জির সৃষ্টি হয়। তবে এলার্জির সৃষ্টির মূল কারণ ময়লা ধুলাবালি ও বিভিন্ন ধরনের খাবার। এলার্জি অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জন্য খুব বিপদজনক হতে পারে। এর থেকে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত শুরু হতে পারে। এই এলার্জির সমস্যা সমাধানে বিছুটি পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এর মধ্যে এন্টিইনফ্লামেটরি ও এন্টিঅ্যালার্জিক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যা আমাদের শরীরের এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে।
- বিছুটি পাতা এমন এক আশ্চর্যজনক পাতা যা বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নাশক ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাতের ব্যথা ভালো করতে এই পাতার জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে কেউ যদি নিয়মিত এই পাতার চা খায় তবে সে বাতের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকবে।
- প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগের ঔষধ হিসেবে বিছুটি পাতা তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই পাতার রস একজিমা, পোকার কামড়, পক্স কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- চুল পড়া রোধ করতে বিছুটি পাতার কার্যকারিতা অনস্বীকার্য। তেলের সাথে এই পাতা ভালো করে ভেজে সেই তেল মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া রোধ সম্ভব হয়। এছাড়াও এই পাতায় বিদ্যমান সিলিকন ও সালফার বিদ্যমান থাকার কারণে এটি চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও চুল সিল্কি করার জন্য শ্যাম্পু করার পর বিছুটি পাতা ফুটানো পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
- আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের র্যাশ বা ঘামাচি বের হয়। বিশেষ করে গরমের দিনে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এই র্যাশ বা ঘামাচি দূর করতে বিছুটি পাতা কাজে আসতে পারে। এই পাতার রস বা চা খেলে র্যাশ বা ঘামাচি দূর হয়।
- ডায়াবেটিসের সমস্যা বর্তমান সমাজের একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে শতকরা ৩০% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। বিষয়টি পাতা আপনাকে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে পারে। এই পাতার রস শরীরে ইনসুলিন হরমোন ক্ষরণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
- বিছুটি পাতার রস হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে অবস্থিত বোরন নামক এক ধরনের খনিজ পদার্থ হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কেননা বোরন হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়ামের উপাদান বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি আপনার হাড়ের স্বাস্থ্যের উপর নজরদারি করতে সাহায্য করে।
- বিছুটি পাতার শরীরকে ডিটক্সিফাই করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বাহিরে বের হয়ে যায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি অন্ত্রের পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- বিছুটি পাতার রস কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কেউ যদি কিডনি পাথরে আক্রান্ত হন তবে নিয়মিত এই পাতার চা খেলে কিডনি পাথর অপসারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বিছুটি পাতাতে বিদ্যমান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। সেই সাথে এটি শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তাদেরকে বিছুটি পাতা দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে এই পাতা ভালো করে শুকিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। এবার এই গুড়া কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে ব্রণের স্থানে লাগালে খুব দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। সেই সাথে নিয়মিত এটি ব্যবহারে ব্রণের প্রকোপ কমে যায়। এছাড়াও এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
- অনেক মহিলায় মূত্রনালীতে ইনফেকশন বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাদেরকে এই বিছুটি পাতা দারুন ভাবে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত এই পাতার রস বা চা খেলে এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলোকে বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা এই পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান বিদ্যমান।
- এই পাতার রস পেটের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। নিয়মিত এই পাতার রস খেলে আলসারের মতো সমস্যাও ভালো হয়ে যায়।
- বিছুটি পাতার রস বা তেল হালকা গরম করে নিয়ে তা হাড়ের জয়েন্টে ভালোভাবে মালিশ করলে হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা দূর হয়।
- বিছুটি পাতাতে অবস্থিত ভিটামিন সি ও আয়রন রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। সেই সাথে এটি লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে। এ কারণে কেউ যদি নিয়মিত বিছুটি পাতার রস সেবন করে তবে তার রক্তে RBS এর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এই পাতার রস রক্তে অক্সিজেন পরিবহনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- বিছুটি পাতার রস শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রাবৃত্তি করে। সেই সাথে এটি সেক্স হরমোনকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
- বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রোস্টেটের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। বিছুটি পাতা এই সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের প্রোস্টেটের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এই পাতার রস খেতে পারেন। এতে দারুন উপকার পাবেন।
- বিছুটি পাতাতে বিদ্যমান আয়রন রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পাতার রস নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে এটি রক্ত পরিষ্কার হিসেবেও কাজ করে।
- আমরা খাবার গ্রহণ করার সময় যে চর্বিগুলো খেয়ে থাকি সেসব চর্বি শোষণ করার ক্ষমতা এই পাতার রয়েছে। এর ফলে এটি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট ভালো থাকে এবং হৃদরোগের আশঙ্কা কমে।
- লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। বিছুটি পাতার রস লিভার কে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- আমরা অনেক সময় হাইপার টেনশনে ভুগি। নিয়মিত বিছুটি পাতার রস খেলে আমাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
- বিছুটি পাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এমনকি এই পাতা মরণঘাতি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সক্ষম। নিয়মিত এই পাতার রস খাওয়ার ফলে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সেই সাথে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়।
- মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের রোগে এই গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। বিছুটি গাছ মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক, গর্ভধারণের সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যায় আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
- বিছুটি পাতার রস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কেননা এর পাতায় অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও ফ্যাটি এসিড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও বিছুটি পাতা খাবারের প্রতি রুচি ফিরাতে, সর্দি-কাশি ভালো করতে, সর্দি-কাশি-জ্বরে মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে, খিচুনি সমস্যায়, পেটব্যথা ভালো করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিছুটি পাতা কোথায় পাওয়া যায়
বিছুটি গাছ এমন এক প্রকার উদ্ভিদ যার পাতা বা রস শরীরের কোথাও লাগলে সেই স্থানে চুলকানির সৃষ্টি হয়। এই গাছের অনেকগুলো নাম রয়েছে। কেউ একে বলে ছোতরা পাতা, কেউ বলে বেশোতক্তা আবার কেউ একে চোতরা নামে ডাকে। এছাড়াও এটি নেটল নামেও পরিচিত।
এই গাছ সাধারণত গ্রামে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। মানুষের কাছে এই গাছ আগাছা হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে ও স্যাঁতসাঁতে জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ মানুষই এই গাছের কাছ থেকে দূরে থাকে।
বিছুটি পাতা গায়ে লাগলে চুলকায় কেন - বিছুটি পাতায় কোন অ্যাসিড থাকে
বিছুটি হলো এক ধরনের বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত ঝোপঝাড়ে ও বন জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। বিছুটি পাতায় মিথাননিক এসিড বা ফর্মিক এসিড থাকে। বিছুটি গাছে ও পাতায় ছোট ছোট যন্ত্রণাদায়ক রুম থাকে। যার কারনে ত্বকের সংস্পর্শে আসলে সেই জায়গায় চুলকানির সৃষ্টি হয় এবং জ্বালাপোড়া করে।
এসব কিছু হয় মূলত মিথাননিক এসিড বা ফর্মিক এসিডের কারণে। এছাড়াও এতে হিষ্টামিন, সেরোটোনিন, আ্যসিটাইল, কোলিন সহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে যা শরীরে চুলকানি সৃষ্টি হওয়ার জন্য দায়ী। এই গাছের সংস্পর্শে আসলে চুলকানির সৃষ্টি হয় বলে মানুষ এই গাছকে অনেক বেশি ভয় পায়।
বিছুটি পাতার চায়ের উপকারিতা
বিছুটি পাতার রসের পাশাপাশি এই পাতার চা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। নিচে বিছুটি পাতার চায়ের উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
- আমরা খাবার গ্রহণ করার সময় যে চর্বিগুলো খেয়ে থাকি সেসব চর্বি শোষণ করার ক্ষমতা এই পাতার রয়েছে। তাই এই পাতার চা নিয়মিত খেলে এটি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের র্যাশ বা ঘামাচি বের হয়। বিশেষ করে গরমের দিনে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এই র্যাশ বা ঘামাচি দূর করতে বিছুটি পাতার চা কাজে আসতে পারে। এই পাতার চা খেলে র্যাশ বা ঘামাচি দূর হয়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এই পাতার চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এটি খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- বিছুটি পাতার চা কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কেউ যদি কিডনি পাথরে আক্রান্ত হন তবে নিয়মিত এই পাতার চা খেলে কিডনি পাথর অপসারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গরমের কারণে অনেক সময় আমাদের সর্দি কাশি হয়ে থাকে। এই সর্দি কাশি ভালো করতে বিছুটি পাতার চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কীভাবে বানাবেন বিছুটি চা
বিছুটি পাতার চা বানানোর জন্য প্রথমে একটি পাত্রে বিচুটি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এবার এটি ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন। এরপর এই পাতা ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। এবার একটি পাত্রে সামান্য পানি নিয়ে তাতে এক চামচ বিছুটি পাতার গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও এর যত গুনাগুন
এরপর এটি ছেঁকে নিন। তাহলেই তৈরি হয়ে গেল বিছুটি পাতার চা। আপনি চাইলে চায়ের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য এতে চিনি বা মধু যোগ করতে পারেন। এই চা নিয়মিত খেলে নানা রকম উপকার পাওয়া যায়।
বিছুটি পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
বিছুটি পাতার অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেগুলো হলো-
- বিছুটি পাতায় বিদ্যমান সেরোটোনিন, আ্যসিটাইল, কোলিন ইত্যাদি রাসায়নিক উপাদান বিভিন্ন ধরনের বিক্রিয়া করে। যার ফলে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়।
- বিছুটি পাতায় ছোট ছোট রোম থাকে। এ কারণে এটি শরীরের সংস্পর্শে আসলে চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে।
- বিছুটি পাতার সংস্পর্শে আসলে অনেকের জিআই ট্র্যাকের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলশ্রুতিতে তার প্রচুর পরিমাণে ঘাম ও এলার্জি হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের এই পাতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা এতে তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
শেষ কথা
বিছুটি পাতার অনেকগুলো উপকার থাকা সত্বেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই এটি ব্যবহারে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। বিছুটি পাতার সংস্পর্শে শরীরে চুলকানি সৃষ্টি হয় বলে অনেকে ধারণা এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আশা করি আপনি বিছুটি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url