OrdinaryITPostAd

গুলঞ্চ/পদ্ম গুলঞ্চ গাছের উপকারিতা - পদ্ম গুলঞ্চ খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি গুলঞ্চ গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না এবং এটি কিভাবে খেতে হয় সেই সম্পর্কে অবগত নন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি এই গাছের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গুলঞ্চ গাছের ঔষধি গুনাগুন ও খাওয়ার নিয়ম
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি এই গাছ চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো হয়ে থাকে। এই গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই সমস্ত কিছু সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভূমিকা

গুলঞ্চ একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এটি একটি লতানো উদ্ভিদ। এর পাতা দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো হার্ট আকৃতির। প্রাচীনকাল থেকেই এটি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ব্যবহার করা হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এই গাছের সাথে তেমন পরিচিত না থাকার কারণে এবং এর গুনাগুন না জানার কারণে এই উদ্ভিদের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছে।

এটি শুধুমাত্র রোগ নিরাময়ের একটি উচ্চ নয় বরং এটি রাসায়নিকভাবে মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতে সঠিকভাবে ও সম্পূর্ণ শক্তি সহকারে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করে থাকে। এতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

এই গাছের ফুল সাধারণত গ্রীষ্মকালে ফোটে এবং শীতকালে এর ফল পাকে। এই গাছ সাধারণত গ্রাম বাংলার বন জঙ্গলে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা মতে এই গাছ ওজন কমাতে, জ্বর নিরাময়ে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, সর্দি কাশি নিরাময়ে, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এছাড়াও এই গাছের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা গুলঞ্চ গাছের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

গুলঞ্চ গাছের উপকারিতা - গিলয়ের ঔষধি গুনাগুণ

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে গুলঞ্চ একটি পরিচিত নাম। এই গাছের নানা রকম উপকারিতা রয়েছে। এর উপকারীর দিকের কথা চিন্তা করে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে একে রসায়ন নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই গাছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ।

এই গাছের শুধুমাত্র পাতায় নয় কান্ড ও শিকড় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই আয়ুর্বেদিক মহাঔষধে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। সেগুলো হলো-
  • সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত সমস্যা সমাধানে গুলঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সর্দি কাশি নিরাময়ে এই গাছের রস অনেক বেশি উপকারী। এছাড়াও এই গাছের রস হাঁপানি বা অ্যাজমা কমাতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে গুলঞ্চ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই উদ্ভিদটি উৎকৃষ্ট হাইপোলিপিডেমিক এবং হেপাটোপ্রটেক্টিভ হওয়ার কারণে এটি শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন হ্রাস পায়। সেই সাথে এটি পরিপাক ক্রিয়াকে ঠিক রাখে এবং যকৃত ভালো থাকে।
  • দীর্ঘদিনের জ্বর নিরাময় করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে থাকা অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান জ্বরের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। এমনকি এসব অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধেও কাজ করে থাকে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুলঞ্চ একটি আশীর্বাদ। কেননা এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি হতে ব্যাহত করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
  • মুখের রুচি ফেরাতে গুলন্ত খুবই উপকারী। যাদের খাওয়ার প্রতি রুচি নেই তারা নিয়মিত এর পাতা ভাজি করে খাওয়ার ফলে মুখের রুচি ফিরে আসতে পারে।
  • গুলঞ্চ হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি হার্টের বিভিন্ন সমস্যায় ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি সেবন করতে পারেন। এতে করে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
  • গুলঞ্চে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রাচীনকাল থেকে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য গুলঞ্চ ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এটি নিয়মিত সেবন করার ফলে শরীর বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং সুস্থ থাকে।
  • গুলঞ্চ ক্যান্সার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে এতে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। সেই সাথে এসব এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
  • মানসিক শান্তি বজায় রাখতে এটি অনেক বেশি কার্যকরী। এটি শরীরের ক্লান্তি দূর করে মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি উদ্বেগজনিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধিতে গুলঞ্চ কাজ করে থাকে। নিয়মিত এটি সেবন করার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • এটি হাড়ের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম হাড় ক্ষয় রোধ করে হাড়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
  • নিয়মিত গুলঞ্চ ব্যবহারে পুরুষের বীর্য ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যৌন ক্ষমতা ও বৃদ্ধি পায়। প্রাণীদের উপর চালানো একটি গবেষণায় দেখা যায় গুলঞ্চ সেবনে তাদের যৌন ক্ষমতা, বীর্যপাতের ক্ষমতার উন্নতি হয়েছে।
  • গুলঞ্চ গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে এটি পাকস্থলীর pH মান বৃদ্ধি করে পাকস্থলীর অম্লতা কমাতে সাহায্য করে।
  • মহিলাদের মেনোপজের পর বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে গুলঞ্চ সাহায্য করে থাকে। কেননা এ সময় গুলঞ্চ মহিলাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে থাকে। যার কারণে এ সময় মহিলারা সুস্থ থাকে।
  • বিভিন্ন ধরনের ক্ষত নিরাময়ে গুলঞ্চ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধুমাত্র এটি ক্ষত নিরাময় করে বিষয়টি তেমন নয়। ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি এটি টিস্যুর পুনর্গঠনে সাহায্য করে থাকে।

পদ্ম গুলঞ্চ খাওয়ার নিয়ম

গুলঞ্চ বা পদ্ম গুলঞ্চ একটি লতানো উদ্ভিদ। এর কাণ্ড ও পাতা উভয়ই খুব নরম। এটি ঔষধি গুণাগুনে ভরপুর। এর উপকারিতা সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এর কান্ড ও পাতা বিভিন্ন রোগের সমাধানে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এটি বিভিন্ন পায়ে খাওয়া যায়। অনেকেই এর পাতা ও কাণ্ডে রস করলে সেই রস সেবন করেন।

আবার অনেকে এটিকে পাউডার করে এবং ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে খেয়ে থাকেন। তবে এটি বিভিন্ন অসুখের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে খেতে হয়। যে সমস্যায় সেভাবে খেতে হয় আপনাকে সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে। তাহলে এর থেকে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কোন অসুখের ক্ষেত্রে পদ্মগুলোর চোখ কিভাবে খেতে হবে-
  • জ্বর নিরাময়েঃ পদ্ম গুলঞ্চ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য ১০ থেকে ১৫ টি পদ্ম গুলঞ্চের পাতা ভালোভাবে মুচলিয়ে নিতে হবে। এবার সেই রস এবং পাতা এক কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২/৩ ঘন্টা পর পাতাগুলো ফেলে দিয়ে ওই পানি দিনে ৩/৪ বার খেলেই ধীরে ধীরে জ্বর ভালো হয়ে যাবে।
  • হাত পায়ে জ্বালা যন্ত্রণা নিরাময়েঃ বসন্ত রোগ হলে হাত-পা অনেক জ্বালা যন্ত্রণা করে। এই সময় গুলঞ্চ পাতার রস হাতে পায়ে লাগালে হাত পায়ের জ্বালা যন্ত্রণা অনেকটাই কমে যায়।
  • চর্মরোগ ভালো করতেঃ চর্মরোগ ভালো করার জন্য পদ্ম গুলঞ্চ/গিলয়ের কান্ড ৮/১০ গ্রাম এক কাপ গরম পানিতে ৫/৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর কান্ডগুলো ফেলে দিয়ে অল্প অল্প করে দিনে দুই থেকে তিনবার সেবন করলে কিছুদিনের মধ্যে চর্মরোগ ভালো হয়ে যাবে।
  • খাবারের রুচি ফেরাতেঃ খাবারের রুচি ফেরানোর জন্য গুলঞ্চের পাতা তুলে আনতে হবে। এরপর এটি ভালো ভাবে ধুয়ে নিয়ে এই পাতার ভাজি করতে হবে। এবার এই ভাজিকে গরম ভাতের সাথে কিছুদিন গ্রহণ করলে খাবারের রুচি ফিরে আসবে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে একদিনে যেন অতিরিক্ত পরিমাণ ভাজি না খাওয়া হয়।
  • ন্যাবা রোগ ভালো করতেঃ এক্ষেত্রে কয়েকটি গুলঞ্চ পাতা ছোট ছোট করে কেটে তা এক কাপ গরম পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি সেবন করলে ন্যাবা রোগ ভালো হয়। এক্ষেত্রে পানির স্বাদ বাড়ানোর জন্য পানিতে চিনি দেওয়া যেতে পারে।
  • কৃমি দূর করতেঃ পদ্ম গুলঞ্চের রস কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য ৮-১০ টি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে এরপর এটি থেঁতো করে এর থেকে রস বের করতে হবে। এবার ২/৩ চামচ পরিমাণ রস দিনে ৩/৪ করে সাত দিন খেতে হবে। তাহলেই কৃমি দূর হয়ে যাবে। আপনি চাইলে মুখের স্বাদের জন্য এই রসের সাথে সামান্য চিনি বা মধু মিশ্রিত করতে পারেন। এতে করে এটি খেতে ভালো লাগবে।
  • পিপাসা নিবারণেঃ আমাদের যখন অনেক তৃষ্ণা লাগবে তখন যদি গুলঞ্চের পাতা ও কান্ড আগে থেকেই গরম পানিতে ভিজানো থাকে তবে সেই পানি খেলে তৃষ্ণা নিবারণ হয়।
  • বাতের যন্ত্রণা ভালো করতেঃ আমাদের অনেকেরই বাতের ব্যথা রয়েছে। তারা এই গাছের পাতা ভালো করে থেঁতো করে রস বের করে নিয়ে তা কিছুদিন দুধের সাথে সেবন করলে বাতের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।
  • মাথার ফুসকুড়ি ভালো করতেঃ মাথার ফুসকুড়ি ভালো করার জন্য গুলঞ্চ/গিলয়ের রস ভালোভাবে জ্বাল করে তেল বানিয়ে সেই তেল মাথায় ব্যবহার করতে হবে। এতে করে মাথার ফুসকুড়ি ভালো করার পাশাপাশি মাথার অন্যান্য এলার্জি জাতীয় সমস্যা ভালো করবে।

গুলঞ্চের পুষ্টি উপাদান

ঔষধি গুণে ভরপুর এই গুলঞ্চে নানারকম পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এর ফলে নিয়মিত গুলঞ্চ খাওয়ার কারণে শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। গুলঞ্চে/পদ্ম গুলঞ্চে যেসব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান সেগুলো হলো-
  • প্রোটিন
  • ফাইবার
  • পটাশিয়াম
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • জিংক
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • ব্রোমিন
  • ফ্লোরিন
  • ক্রোমিয়াম
  • কপার
  • নিকেল
  • কোবাল্ট
  • টাইটানিয়াম
  • ষ্ট্রোনশিয়াম
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
  • অ্যান্টি অ্যালার্জিক
  • অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি
  • অ্যান্টি হাইপার গ্লাইসেমিক
  • অ্যান্টি নিওপ্লাসটিক
  • অ্যান্টি ডোট
  • অ্যান্টি প্লাসমোডিক
  • আন্টি এস্ট্রেস
এছাড়াও আরো রয়েছে লকালয়েড, ডিটারপিনয়ড, ল্যাকটোনস, ষ্টেরয়েডস, গ্লাইকোসাইডস, এলিফ্যাটিক যৌগ এবং পলিসাকারাইড। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।

পদ্ম গুলঞ্চ কোথায় পাওয়া যায় - গুলঞ্চ কোথায় পাওয়া যায়

গুলঞ্চ বা পদ্ম গুলঞ্চ একটি লতানো উদ্ভিদ। এটি সাধারণত অন্য গাছের উপরে আগাছা হিসেবে উঠে যায়। এর পাতা দেখতে কিছুটা পান পাতার মতো। এটি এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে দেখতে পাওয়া গেলেও এর আদি নিবাস ভারত উপমহাদেশে। এই গাছ ভারত সহ বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মায়ানমার, চীন সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই এই গাছে দেখা মিলে। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় এই গাছ বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই গাছ আগাছা হওয়ার কারণে এবং বেশিরভাগ মানুষ এই গাছের গুনাগুন সম্পর্কে না জানার কারণে এই গাছটি অবহেলিত হয়ে থাকে। এই গাছ বন জঙ্গলে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

গুলঞ্চ গাছ চেনার উপায়

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন উপকারী এই গুলন্ত কাজ চিনবো কি করে? তাদের জন্য এই পর্বটি। এই পর্বটি পড়ার মাধ্যমে আপনি গুলঞ্চ গাছ কিভাবে চেনা যায় সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক-

গুলন্ত একটি লতানো উদ্ভিদ। এটি সাধারণত বৃক্ষ জাতীয় গাছের উপরে বেয়ে ওঠে। এই গাছের কান্ডের উপরিভাগ সাধারণত খসখসে হয়ে থাকে। এই গাছের চামড়ার রঙ ধূসর বর্ণের। এর পাতা দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো এবং লম্বা বোটা যুক্ত। এই গাছের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই গাছের কান্ড থেকে অসংখ্য মূল বের হয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে এবং তা মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

এই গাছের কান্ড দুর্বল ও রসালো হয়ে থাকে। এই গাছে সাধারণত গ্রীষ্মকালে হলুদ রঙের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এবং তবে ফল পাকতে শীতকাল পর্যন্ত সময় লাগে। এই গাছের ফুলের পুংকেশর ও স্ত্রীকেশর আলাদা আলাদা ফুলে দেখা যায়। এই গাছের ফল সাধারণত ঝোপাযুক্ত হয়ে থাকে অর্থাৎ একসাথে অনেকগুলো ফল আঁটিযুক্ত হয়ে থাকে।

কাঁচা অবস্থায় ফলের রং সাধারণত সবুজ থাকলেও পাকলে এই ফলের রং লাল বর্ণ ধারণ করে। এই গাছের অনেক গুনাগুন থাকার কারণে সঠিকভাবে এই গাছ চিনা জরুরী। কেননা সঠিকভাবে গাছ চিনতে না পারলে এর থেকে উপকার পাওয়া সম্ভব নয়। উপকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই সঠিক গাছ নির্বাচন করতে হবে।

গিলয় বা গুলঞ্চ খেলে কি হয়

গিলয় বা গুলঞ্চ একটি ঔষধি গাছ। এ গাছের নানা পুষ্টিগুণ থাকার কারণে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এবং ঘরোয়া চিকিৎসায় এ গাছের অনেক কদর রয়েছে। এই গাছের পুষ্টিগুণ বিবেচনায় এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এর কার্যকারী ভূমিকা থাকার কারণে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে একে রসায়ন নামে অভিহিত করা হয়েছে।

এছাড়াও সংস্কৃতে একে অমৃত নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই গিলয় বা গুলঞ্চ বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ। এটি সর্দি কাশি থেকে শুরু করে ফুসফুসের সুস্বাস্থ্যের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অনেক বেশি উপকারী।

এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, মুখের রুচি ফিরাতে, চর্মরোগ সারাতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে থাকে। তাই এই গাছ সঠিকভাবে চিনে এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে এটি সেবন করলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়।

গুলঞ্চ গাছের অপকারিতা

গুলঞ্চ অনেক উপকারী গাছ হলেও এর বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে গুলঞ্চ সেবন করে থাকেন তাদের জন্য এই গাছ ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। গুলঞ্চ সেবনের অপকারিতা গুলো হলো-
  • দীর্ঘদিন গুলঞ্চ সেবন করার কারণে লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং এর থেকে হতে পারে বড় কোন ধরনের সমস্যা।
  • নিয়মিত গুলঞ্চ সেবন করার কারণে একজন ব্যক্তি জন্ডিসের আক্রান্ত হতে পারেন।
  • দীর্ঘদিন গুলঞ্চ খাওয়ার কারণে হজম শক্তি কমে যাওয়া, প্রস্রাব হলুদ হওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • গিলয় বা গুলঞ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমিয়ে দেয়। যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
  • গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী মহিলাদের গুলঞ্চ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তাদের এটি খাওয়া উচিত। নয়তো নানা ধরনের বিপদ হতে পারে।
  • সপ্তাহে দুইদিন করে একটানা এক মাসের বেশি গুলঞ্চ খাওয়া উচিত নয়। কেননা এর বেশি সময় একটানা গুলঞ্চ খেলে লিভার অকেজো হয়ে যেতে পারে। এমনকি একটানা তিন মাস গুলঞ্চ খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
  • যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। এটি অনেক পুষ্টিকর হওয়া সত্বেও নিয়মমাফিক খেতে হবে। নয়তো এই পুষ্টিকর গাছটিই বিপদ ডেকে আনতে পারে। এটি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

গুলঞ্চ বা গিলয় একটি ঔষধি গাছ। এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। ওই আলোচনা থেকে আপনি এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তবে যে শুধু এই গাছের উপকারিতায় রয়েছে তা নয়। অতিরিক্ত ব্যবহারে এই গাছ মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। তাই এটি ব্যবহারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। সেই সাথে একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই গাছের রস বা পাতা সেবন করা উচিত।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই তা আপনার আপনজনদের মাঝে শেয়ার করুন। এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url