বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক? কিন্তু বুঝতে পারছেন না আপনার কথায় প্রমাণ করা উচিত? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কোথায় ঘুরতে যাওয়া উচিত। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়াও আর্টিকেল করার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। এইসব স্থানের ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশের অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থানও রয়েছে। যেগুলো থেকে পাওয়া নিদর্শন গুলো বলে দেয় মানুষের কাছে বাংলা কত পরিচিত ছিল। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ার কারণে বেশিভাগ বণিকেরই প্রধান আকর্ষণের জায়গা ছিল এই বাংলা।
এছাড়াও বিভিন্ন শাসকদের শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের ইমারত নির্মাণ করেছেন। যেগুলো বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও এই বাংলায় বিভিন্ন নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছে। যার প্রমাণ হিসাবে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, সোনারগাঁও ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এইসব স্থানগুলি অতীতকে মনে করিয়ে দেয়।
এগুলোতে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের নিদর্শনগুলো দেখে বোঝা যায় এগুলো কত বছরের পুরনো। এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি ঐতিহ্যবাহী স্থান নিয়ে আলোচনা করব। যেগুলোতে ভ্রমণ করার মাধ্যমে পর্যটকগণ তাদের ভ্রমণ পিপাসা মিটানোর পাশাপাশি বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে। তাহলে চলো আলোচনা শুরু করা যাক।
মহাস্থানগড়
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীন পুরাকীর্তি। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিমে মহাস্থানগরে ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। প্রাচীনকালে মহাস্থানগড় পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। একসময় এটি বাংলার রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
বহু শতাব্দী ধরে মহাস্থানগড় মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল সাম্রাজ্যের মতো বিভিন্ন সম্রাজ্যের নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত। ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সিস বুনকানন হ্যামিলটন সর্বপ্রথম মহাস্থানগড়ের অবস্থান চিহ্নিত করেন। এখানে খননকার্য চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিলাখণ্ড, রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, পোড়ামাটির মূর্তি, বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্য কাঠামো ইত্যাদি।
সমস্ত মহাস্থানগড় জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বৈরাগীর ভিটায় দুটি মন্দিরের অবশিষ্টাংশ, মাজার শরীফ, জাদুঘর, খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর ঢিবি, বৈরাগীর ভিটা, মঙ্গলকোট স্তুপ, গোকুল মেধ, বিহার ধাপ, কালীদহ সাগর, শীলাদেবীর ঘাট, বেহুলার বাসর ঘর, গোবিন্দ ভিটা, পরশুরামের প্রাসাদ ইত্যাদি।
বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ প্রতিদিন এটা দেখতে ভিড় করে। এখানে রাত্রি যাপন করার জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত নওগাঁ জেলার বদরগাছা উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি অষ্টম শতাব্দীতে পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্ম পালের শাসনামলে তৈরি করা হয়েছিল। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এটি আবিষ্কার করেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারকে সোমপুর মহাবিহার নামেও অভিহিত করা হয়। এখানে মোট ১৭৭ টি ভিক্ষুকক্ষ রয়েছে। যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস করতো। পাহাড়পুরের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া মূর্তিগুলো পাহাড়পুর সংলগ্ন জাদুঘরের সংরক্ষিত রয়েছে।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেলে পাথরের চামুন্ডা মূর্তি, লাল পাথরের দন্ডায়মান শীতলা মূর্তি, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খন্ডাংশ, বেলে পাথরের মনসা মূর্তি, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ, কৃষ্ণ পাথরের দন্ডায়মান গণেশ ইত্যাদি। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দির, সন্ধ্যাবতীর ঘাট, স্নানাগার ও শৌচাগার, সত্যপীরের ভিটা, গন্ধেশ্বরী মন্দির, উন্মুক্ত অঙ্গন। এটি বাংলা প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন বহন করে।
আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হলেও পূর্বে এটি ছিল নবাবদের প্রাসাদ। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহ এই ভবনটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ এটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন।
ফরাসি বণিকরা এটিকে দীর্ঘদিন বাণিজ্য কুঠি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এরপর ফরাসি বণিকদের কাছ থেকে খাজা আলিমুল্লাহ এটিকে পুনরায় ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। পরে তার পুত্র নবাব আব্দুল গনি এটিকে পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেন যা ১৮৭২ সালে শেষ হয়। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ নাম অনুসারে প্রধান ইমারতের নাম দেন আহসান মঞ্জিল।
১৮৯৭ সালে প্রবল ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে এটি বাংলাদেশ সরকার নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে সংস্কারের কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে এটি জাদুঘর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই প্রাসাদের ছাদের উপর একটি সুন্দর গম্বুজ রয়েছে। বর্তমানে তিনি ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি প্রাচীন অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। এটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৭৮ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র মুঘল সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহ-র শাসন আমলে। পরবর্তীতে তিনি দিল্লিতে চলে গেলে এই কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৬৮০ সালে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ পুনরায় এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ টি দর্শনীয় স্থান
কিন্তু তারপর না ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) মারা যাওয়ার কারণে তিনি এটাকে অপয়া ভেবে এর কাজ অসমাপ্ত রেখে দেন। লালবাগ কেল্লা মুঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন যেটিতে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর এবং রংবেরঙের টালি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে এই কেল্লার নাম দেয়া হয়েছিল আওরঙ্গবাদ।
পরে এই কেল্লাটি লালবাগে অবস্থিত হওয়ার কারণে সেই জায়গার নাম অনুসারে এর নাম লালবাগ কেল্লা রাখা হয়। এই কেল্লার তিনটি বিশাল দরজা রয়েছে। যার মধ্যে একটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এই কেল্লা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই সর্বপ্রথম চোখে পড়ে পরী বিবির মাজার। এছাড়াও এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে দরবার হল ও হাম্মাম খানা। এছাড়াও লালবাগ কেল্লার উত্তর-পশ্চিমাংশে রয়েছে শাহী মসজিদ।
এই মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। মুঘল সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহ দিল্লি যাওয়ার পূর্বে এই মসজিদটি নির্মাণ করে গিয়েছিলেন। লালবাগ কেল্লা সিপাহী বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার দেশ-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে ঢাকার এই প্রাচীন দুর্গ লালবাগ কেল্লা।
বড় কাটরা-ছোট কাটরা
বড় কাটরা ও ছোট কাটরা উভয়ে সরাইখানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বড় কাটরা মুঘল আমলের সম্রাট শাহজানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪৪ থেকে ১৬৪৬ সালের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ছোট কাটরা শায়েস্তা খানের আমলে ১৬৬৩ সালের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও তা ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল।
এটির অবস্থান ঠিক বড় কাটকার পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। বড় কাটরা ও ছোট কাটরা দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও ছোট কাটরা দেখতে বড় কাটরার চেয়ে ছোট বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ছোট কাটরা। বড় কাটরা ও ছোট কাটরার মূল স্থাপনা গুলো বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত হওয়ার কারণে বর্তমানে এগুলোর তেমন কিছু আর ক্ষয় হওয়ার বাকি নেই।
তবে বড় কাটরার ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকলেও ছোট কাটরার তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তবে একসময় এই ইমারতগুলো বাংলার প্রাচীন নিদর্শন বহন করতো।
সোনারগাঁও
সোনারগাঁও বর্তমানে ঢাকা থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এটি প্রাচীন বাংলার সুলতানদের রাজধানী ছিল এবং পূর্ব বাংলার একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। এটি নদী বন্দর হওয়ার কারণে তৎকালীন বাংলার মুসলিম বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। অনেকে মনে করেন সুবর্ণগ্রাম থেকে সোনারগাঁও নামটির উদ্ভব হয়েছে।
আবার অনেকের ধারণা ঈসা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় সোনারগাঁও। সোনারগাঁয়ের আরেক নাম ছিল পানামনগর। এখানে নির্মিত ভবন গুলো ছোট লাল ইটের তৈরি। দীর্ঘ একটি সড়কের উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ভবন স্থাপত্যের মাধ্যমে পানামনগর গড়ে উঠেছিল। এর মূল আকর্ষণ উভয় পাশে অবস্থিত মোট ৫২টি পুরোনো বাড়ী।
এখানে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর, লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, বাংলার তাজমহল, পানাম সিটি ইত্যাদি। লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে প্রায় চার হাজার প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার পর্যটক বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য ভিড় করে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ খুলনা এর বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। মসজিদের গায়ে কোন শিলালিপি না থাকার কারণে এটি কে বা কত সালে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থাপত্য শৈলী দেখে ধারণা করা যায় এটি পীর খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন।
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে বিরাটা আকারের খিলানযুক্ত ১১ টি দরজা রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের ৪ কোনে ৪ টি মিনার রয়েছে। এই মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও এখানে মূলত ৮১ টি গম্বুজ রয়েছে। যার মধ্যে ৭০ টি এর উপরিভাগে, ৭টি পূর্ব দেয়ালের মাঝে দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝে মেহরাবের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং মিনারে ৪টি গম্বুজ রয়েছে।
এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে একটি। ইউনেস্কো ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। এটিতে প্রবেশের মূল্য বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা এবং বিদেশি নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা।
ময়নামতি
অষ্টম শতাব্দীর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ময়নামতির অবস্থান বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে। ময়নামতি লালমাই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। বর্তমানে ময়নামতিতে যেসব ধ্বংসস্তূপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী ও বৌদ্ধ বিহারের অংশবিশেষ। এখানে খননকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে প্রধান হল শালবন বিহার।
একসময় এই বিহারের আশেপাশে সাল ও গজারির ঘন বন থাকার কারণে এর নামকরণ করা হয় শালবন বিহার। শালবন বিহারের প্রবেশ পথের পাশে একটি হল ঘর রয়েছে। ধারণা করা হয়ে থাকে এটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, তাম্রলিপি, সিলমোহর, মাটির মূর্তি ইত্যাদি।
বর্তমানে এটি ভ্রমণ পিয়াসু পর্যটকদের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে বিবেচিত। ময়নামতির উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হল শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, কুটিলা মুরা ও ময়নামতি জাদুঘর। জাদুঘরে রয়েছে এই অঞ্চল থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলো।
বাঘা মসজিদ
বাঘা মসজিদ রাজশাহী শহর হতে ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ নির্মাণ করেন। মসজিদটি তার জটিল কারুকার্য ও জ্যামিতিক নকশা খচিত পোড়ামাটির অলংকারের জন্য সুপরিচিত।
আরো পড়ুনঃ ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা
এটি ২৫৬ বিঘা জমির উপর নির্মিত। মসজিদের ভেতরের ও বাইরের দেয়ালে অসংখ্য পোড়া মাটির কারু কাজ খচিত রয়েছে। যার ভিতর রয়েছে আমগাছ, শাপলা ফুল, ফার্সি ভাষা ইত্যাদি হাজার রকমের কারুকাজ। এই মুর্শিদের সামনে রয়েছে একটি বিশাল দিঘী। যার চারিপাশে রয়েছে সারিবদ্ধ নারকেল গাছ।
এই মসজিদের রয়েছে ১০টি গম্বুজ, ৪টি মিনার ও ৫টি দরজা। মসজিদটি ৫০০ বছরের বেশি পুরনো হওয়া সত্ত্বেও এখনো তা টিকে রয়েছে। এই মসজিদটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শণার্থী ভিড় করে।
কান্তজির মন্দির
কান্তজির মন্দির দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার দক্ষিণ পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে ঢেঁপা নদীর তীরবর্তী কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা যায় তৎকালীন মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় এই মন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন।
তবে তিনি ১৭২২ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। কিন্তু ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে এর উচ্চতা ৫০ ফুট।
এই মন্দিরে সবচেয়ে ভালো টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই মন্দিরে প্রায় ১৫ হাজার পোড়া মাটির ফলক রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী দ্বারা লিপিবদ্ধ আছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে এই মন্দির প্রাঙ্গনে মাসব্যাপী রাস মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা চলাকালে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শরণার্থীরা মন্দিরে তীর্থযাত্রা করেন।
শেষ কথা
ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আমাদেরকে এই চির সবুজ বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও বিভিন্ন শাসক এ দেশকে শাসন করার সময় বিভিন্ন নগর সভ্যতা, প্রাসাদ, মন্দির, মসজিদ তৈরি করেছেন। যেগুলো বর্তমানে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করার পাশাপাশি এটি পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত এগুলোকে রক্ষা করা।
আরো পড়ুনঃ আখ চাষ পদ্ধতি - আখের সাথে সাথী ফসল চাষ
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেল পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই তা আপনার আত্মীয় স্বজনের শেয়ার করুন এবং এই আর্টিকেল আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। এই আর্টিকেল পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url