রুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি প্রতিনিয়ত রুটি খাচ্ছেন? কিন্তু রুটি খাওয়ার উপকারিতা বা অপকারিতা নিয়ে আপনি কি চিন্তিত? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা রুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়া এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি রুটিতে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। রুটির গঠনের যাবতীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকে। তাই রুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো রুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা -রুটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। শরীর গঠনে যে সকল ভিটামিন ও খনিজের দরকার হয় তা সবাই থাকে রুটিতে। তাই রুটি খেলে আমাদের ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ হয়। সেই সাথে রুটিতে থাকা প্রোটিন দেহ গঠনে সাহায্য করে।
রুটি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী, রুটি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।রুটিতে থাকা ফাইবার ও সেলেনিয়াম ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রুটি খেলে যে আপনার শরীরে কোন সমস্যা তৈরি হয় না বিষয়টি এমন নয়। রুটি খেলে যেমন উপকার আছে তেমনি এর অপকারও আছে।
গমের তৈরি রুটি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। সেই সাথে এটি রক্তে শর্করা মাত্র বৃদ্ধি করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাহলে চলুন দেরি না করে রুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রুটি খাওয়ার উপকারিতা
রুটি আমাদের নিকট খুবই পরিচিত একটি খাদ্য। রুটি খেলে আমাদের দেহের নানা রকম উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই পর্বে আমরা রুটি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন রুটি খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে
নিয়মিত রুটি খাওয়ার অভ্যাস করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে না। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিয়মিত রুটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পেশির গঠনে সহায়তা করে
পেশি গঠনের রুটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রুটিতে থাকা প্রোটিন পেশি গঠনে সাহায্য করে। তাই যারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান তারা নিয়মিত দুই থেকে তিনটি করে রুটি খাওয়া অভ্যাস তৈরি করুন।
ওজন কমাতে
ওজন কমাতে রুটি যেন ঔষধের মতো কাজ করে। রুটিতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় রুটি খেলে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। সেইসাথে পেট ভর্তি থাকার কারণে অতিরিক্ত কোন কিছু খেতে ইচ্ছা করে না। এ কারণে যাদের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা নিয়মিত রুটি খান।
অতিরিক্ত চর্বি কমায়
রুটিতে যেহেতু চর্বি অনুপস্থিত থাকে তাই রুটি খেলে শরীরের চর্বি জমার সম্ভাবনা থাকে না। সেইসাথে রুটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রাতে রুটি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক কিংবা ব্রেন স্ট্রোকের মত ভয়াবহ রোগের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
রুটিতে বিদ্যমান থাক্স ফাইবার আমাদের শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে গ্যাস, বদহজম, বুক জ্বালার মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
রুটিতে বিদ্যমান ফাইবার ও সেলেনিয়াম ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের নিয়মিত রুটি খাওয়া উচিত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রুটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পরোক্ষ ভূমিকা রাখে। রুটি তে থাকা উপকারী উপাদান গুলো শরীরের প্রবেশ করে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। সেই সাথে এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে
রুটিতে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স নামক এক ধরনের উপাদান কম থাকার কারণে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের সকাল সন্ধ্যার রুটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ভিটামিন ও খনিজ চাহিদা পূরণ
শরীর গঠনে যে সকল ভিটামিন ও খনিজের দরকার হয় তা সবই রুটিতে বিদ্যমান থাকে। তাই রুটি খেলে আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।
রুটির পুষ্টিগুণ
রুটিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের সমস্ত ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রুটির মধ্যে পাওয়া যায়। কেউ যদি শুধুমাত্র রুটি খেয়ে থাকে তবে তার শরীরের সকল ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।
এই পর্বে আমরা প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) -রুটিতে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ বিদ্যমান তা আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
- শর্করা ৪৬.৩৬ গ্রাম
- প্রোটিন ১১.২৫ গ্রাম
- স্নেহ পদার্থ ৭.৪৫ গ্রাম
- চিনি ২.৭২
- খাদ্য আঁশ ৪.৯ গ্রাম
- থায়ামিন(বি ১) ০.৫৫ মিগ্রা
- রিবোফ্লাভিন(বি ২) ০.২মিগ্রা
- ভিটামিন বি৬ ০.২৭০ মিগ্রা
- ফোলেট (বি৯) ৬১মিগ্রা
- ভিটামিন ই ০.৮৮ মিগ্রা
- ভিটামিন কে ০মিগ্রা
- নায়াসিন (বি৩) ৬.৭৮ মিগ্রা
- প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.৫৮ মিগ্রা
- ক্যালসিয়াম ৯৩মিগ্রা
- ম্যাগনেসিয়াম ৬২মিগ্রা
- ম্যাঙ্গানিজ ১.২৫মিগ্রা
- লৌহ ৩মিগ্রা
- ফসফরাস ১৮৪মিগ্রা
- সোডিয়াম ৪০৯মিগ্রা
- পটাশিয়াম ২৬৬মিগ্রা
- জিংক ১.৫৭মিগ্রা
- সেলিনিয়াম ৫৩.৭
- পানি ৩৩গ্রাম
রুটি খাওয়ার নিয়ম
আমাদের প্রতিদিন ২-৩ টির বেশি রুটির খাওয়া উচিত নয়। কেননা অতিরিক্ত রুটি খেলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সকলের হজম শক্তি এক নয়। রুটি হজম করার ক্ষমতা সকলের থাকে না।
তাই যাদের এক ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা রুটি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। রোজ রুটি খেলে অনেকের মানসিক সমস্যার অবনতি হতে পারে। তাই প্রতিদিন রাতে রুটি না খেয়ে মাঝে মাঝে অন্য কিছু খাওয়া উচিত।
রুটি খাওয়ার অপকারিতাঃ
প্রতিটি খাবারে যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি তার কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। সব জিনিস সব সময় খাওয়ার জন্য ভালো নয়। গমের তৈরি খাবার খেলে কোলেস্টেরলের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই গমের রুটি খেলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে গমের তৈরি খাদ্য উপাদান ত্বকের বয়স বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়া এটি খেলে ত্বক কুঁচকে যায় ও বলিরেখা দেখা দেখা দেয়। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় গমের রুটি খাওয়া যাবেনা। এছাড়াও গমের রুটি খাওয়ার ফলে শরীরে হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। এতে করে মানসিক সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়াও অতিরিক্ত গরমের রুটি খেলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে গমে উপস্থিত ব্লুটেইন হজম হতে অনেক বেশি সময় নেয়। এতে করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গমের তৈরি রুটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এছাড়াও গমের তৈরি রুটি খাওয়ার ফলে ইন্সুলিন এর ক্ষরণ অনেক বেড়ে যায়। যা ডায়াবেটিস রোগের প্রধান লক্ষণ।
তাই যাদের পরিবারের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের গমের তৈরি রুটি খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও অতিরিক্ত রুটি খাওয়ার ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সাথে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে।
তাই সকলের উচিত পরিমিত পরিমাণ রুটি খাওয়া। কখনোই একবারে অতিরিক্ত রুটি খাওয়া উচিত নয়। সেইসাথে প্রতিদিন একই নিয়মে রুটি না খেয়ে মাঝে মাঝে অন্য কিছু খাওয়া উচিত।
উপসংহারঃ রুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ
রুটি খাওয়ার বেশ কিছু অপকারিতা থাকলেও এর উপকারিতা অনেক বেশি। এজন্য আমরা ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়ার চেষ্টা করব। বিশেষ করে যাদের ওজনের সমস্যা রয়েছে এবং ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা দুই তিনটি করে রুটি খাব। কখনোই একবারে অনেক বেশি রুটি খাওয়া উচিত নয়। এতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেল পরে যদি আপনি উপকৃত হন তবে অবশ্যই তা আপনার আত্মীয় স্বজনের শেয়ার করুন এবং এই আর্টিকেল আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। এই আর্টিকেল পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url