শিশুদের সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম - সাপোজিটরি দেওয়ার কতক্ষণ পর জ্বর কমে
প্রিয় পাঠক, আপনি কি জ্বর হলেই সাপোজিটরি ব্যবহার করে থাকেন? কিন্তু আপনি জানেন না এটি আপনার জন্য ভালো নাকি খারাপ? তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম এবং সাপোজিটরি দেওয়ার কতক্ষণ পর জ্বর কমে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি কত ঘন্টা পর পর সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। জ্বর হলে দুশ্চিন্তা না করে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন এবং বেশি বেশি পানি পান করুন। সেই সাথে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ ও সাপোজিটরি ব্যবহার করুন।
ভূমিকা
একটি বাচ্চা যখন জন্মগ্রহণ করে এবং বড় হয় তখন তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমন থাকে না। এই সময় শিশু বিভিন্ন রোগে বিশেষ করে জ্বরে আক্রান্ত বেশি হয়। শিশু ছাড়া আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিশেষ করে মায়ের চিন্তার কোন শেষ থাকে না। তিনি সবসময় ভাবতে থাকেন কি করলে তার সন্তান জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এজন্য বেশিরভাগ মা তাড়াতাড়ি জ্বর ভালো করার জন্য শিশুকে ঔষধ খাওয়ানোর পরিবর্তে সাপোজিটরি দিয়ে থাকেন। এতে করে শিশুর জ্বর কমে যায়। তবে সাপোজিটরি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
এই আর্টিকেলে আমরা শিশুদের সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম ও সাপোজিটরি দেওয়ার কতক্ষণ পর জ্বর কমে সেই বিষয় সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
শিশুদের গ্লিসারিন সাপোজিটরি - জ্বর কত হলে সাপোজিটরি দিতে হবে
গ্লিসারিন সাপোজিটরি সাধারণত শুষ্ক ত্বক, ঠান্ডা প্রদাহ ও সোরিয়াসিসের মতো সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা সাধারণত তৈলাক্ত ও আর্দ্র করতে ব্যবহার করা হয়। গ্লিসারিনের বহুল ব্যবহার দেখা যায় অনিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে।
এটি একটি হাইপারওসমােটিক ল্যাক্সাটিভ যা পায় পথে ব্যবহার করার ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে অন্ত্রের গতি সৃষ্টি করে। কেননা হাইপারওসমােটিক ল্যাক্সাটিভ পার্শ্ববর্তী টিস্যু থেকে পানি শোষণ করে যার ফলে অন্তরের গতি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মল নরম হয়। সাধারণত এটি ছোট শিশুদের মল ধারণ করতে বেশি ব্যবহার করা হয়। গ্লিসারিন সাপোজিটরি ব্যবহার করা নিরাপদ।
কেননা এটি ব্যবহারে শিশুর কোন ক্ষতি হয় না। তবে অবশ্যই নিয়মিত এটি ব্যবহার করা যাবে না। আবার দিনে সর্বোচ্চ একটির বেশি ব্যবহার করা যাবে না। সেই সাথে যাদের এটিতে এলার্জি রয়েছে তারা এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। এটি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
শিশুদের বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। সাধারণত ঠান্ডা জনিত কারণে শিশুদের জ্বর বেশি হয়। এছাড়াও শিশুর একটুও যত্ন হলে, আবহাওয়া পরিবর্তন হলে শিশুর জ্বর হতে পারে। কেননা শিশুরা খুব সহজেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। কারণ তাদের শরীরে এগুলো প্রতিরোধ করার মত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেনি।
তাই জ্বর হলে শিশুর বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এ সময় শিশুকে তরল খাবারের পাশাপাশি গরম কাপড় পরিধান করাতে হয়। যাতে করে জ্বর থেকে সেটি নিউমোনিয়ার দিকে না যায়। যখন জ্বর কম থাকে তখন ডাক্তারগণ সাধারণত প্যারাসিটামল জাতীয় সিরাপ খাওয়াতে বলেন। তবে জ্বর যদি ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট অতিক্রম করে তবে ডাক্তারগণ সাপোজিটরি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এতে করে খুব দ্রুত শিশুর জ্বর কমে যায়। বড়দের বেলায় জ্বর ১০৩ ডিগ্রি অতিক্রম করার পর সাপোজিটরি ব্যবহার করতে বলা হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপোজিটরি ব্যবহার করা উচিত। কেননা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাপোজিটরি ব্যবহারে ক্ষতি হতে পারে। বয়স অনুযায়ী শিশুকে ১২৫ বা ২৫০ মি.গ্রা. সাপোজিটরি পায়ু পথে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কত ঘন্টা পর পর সাপোজিটরি দেয়া যায় - শিশুদের জ্বরের সাপোজিটরি
সাপোজিটরি সাধারণত মলকে নরম করতে, জ্বর কমাতে ও ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বয়স অনুযায়ী সাপোজিটরি ডোজ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সব সময় সাপোজিটরি দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ হয় গ্রহণ করতে হবে। তবে ডাক্তারগণ সাধারনত গ্লিসারিন সাপোজিটরির ক্ষেত্রে দিনে একবার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সেই সাথে ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য যেসব সাপোটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন মাত্রার দেয়া হয়ে থাকে। তবে ৩ থেকে ৬ মাস শিশুর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে না। ছয় থেকে দুই বছর বয়সে শিশুর ক্ষেত্রে ১২৫ মি.গ্রা. প্যারাসিটামল সাপোজিটরি পায়ু পথে দেওয়া যেতে পারে।
২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এইমাত্র হবে ২৫০ মি.গ্রা.। আবার ৫ বছরের অধিক বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে এর ডোজ হবে ২৫০-৫০০ মি.গ্রা.। তবে বড়দের ক্ষেত্রে এই ডোজের মাত্রা হবে ৫০০ মি.গ্রা.। সকল বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে সাপোজিটরি দিনে ২ থেকে ৩ বারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
শিশুদের সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম
শিশুদের বিভিন্ন কারণে জ্বর আসে এবং শরীর ব্যথা হয়। শিশুর জ্বর আসলেই যে তাকে সাপোজিটরি দিতে হবে এমন চিন্তা করাও ভুল। প্রথমে তাকে মুখে খাওয়ানোর ঔষুধ খাইয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি সে কোন কারণে ঔষধ খেতে না পারে অথবা ঔষধ খাওয়ার পর জ্বর না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে।
শিশুদের সাপোজিটরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে। নয়তো এটি শুধু শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। তাহলে চলুন সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই-
- শিশুদের ক্ষেত্রে সর্বদা সাপোজিটরির সাইজ ছোট নির্বাচন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই বড় সাপোজিটরি শিশুর পায়ুপথে দেয়া যাবে না।
- সাপোজিটরি দেয়ার পূর্বে অবশ্যই দেখে নিতে হবে এটি ঠিক আছে কিনা। ভাঙ্গা সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে না।
- সাপোজিটরি সর্বদা ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। ঠান্ডা জায়গায় না থাকলে সেই সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে না।
- উন্নত মানের সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। যেমন তেমন সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে না।
- শিশুকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে সাপোজিটরি দেওয়া যাবে না। এতে করে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাকে ভালোমতো বুঝিয়ে এরপর সাপোজিটরি দিতে হবে।
- পায়ুপথে বারবার সাপোজিটরি ব্যবহারের কারণে সেখানে ইনফেকশনের সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রতিবার সাপোজিটরি ব্যবহারের পরে সেই জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
- দিনে তিন থেকে চারটির বেশি সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে না।
- সাপোজিটরি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
সাপোজিটরি দেওয়ার কতক্ষণ পর জ্বর কমে
আমরা অনেকেই মনে করি ওর সাথে তুলনায় সাপোজিটরি ব্যবহার করলে অনেক তাড়াতাড়ি জ্বর কমে যায়। কিন্তু আমাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা সাপোজিটরি ঔষধের তুলনায় অনেক ধীরে কাজ করে।সাপোজিটরি তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন একটি শিশুকে ঔষধ খাওয়ানো যায় না। যদি শিশুটি ঔষধ খেতে আগ্রহী হয় তবে তাকে কোন অবস্থাতেই সাপোজিটরি দেওয়া উচিত নয়।
শিশুর জ্বর কমাতে ৩০ মিনিটের মধ্যে ঔষধ কাজ শুরু করলেও সাপোজিটরি কাজ শুরু করে ৬০ মিনিটের মধ্যে। এ কারণে সাপোজিটরি ঔষধ জ্বর কমাতে অনেক দ্রুত কাজ করে। তাই সাপোজিটরি তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন শিশুকে ঔষধ খাওয়ানো যায় না।
সাপোজিটরি দেওয়ার পর জ্বর না কমলে করণীয়
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সাপোজিটরি ব্যবহার করে তাদের অজ্ঞতার কারণে। তারা মনে করে ঔষধের তুলনায় সাপোজিটরি অনেক দ্রুত কাজ করে। তাই দ্রুত জ্বর কমাতে তারা সাপোজিটরি ব্যবহার করে থাকে। তবে সাপোজিটরি ওষুধের তুলনায় অনেক ধীরে কাজ করে।
এজন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করার পর যদি জ্বর না কমে তবে তাকে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ চার থেকে ছয় ঘন্টা পর পর ১০ থেকে ১৫ মি.গ্রা./কেজি খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে দিনে যেন ৬০ মি.গ্রা./কেজির বেশি ঔষধ খাওয়ানো না হয়। এতে করে শিশুর জ্বর দ্রুত কমে যাবে। তবে অবশ্যই ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
সাপোজিটরি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আমাদের জ্বর হলে সাপোজিটরি না নেওয়াই ভালো। এর পরিবর্তে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। যদি জ্বর ১০২ ডিগ্রীর উপরে চলে যায় তবে সে গোসল করতে পারে, ঠান্ডা পানিতে গা মুছতে পারে। এতে করে তার জ্বর কমে যাবে। এ সময় শরীরে তরলের ঘাটতি দেখা দেয়। এ কারণে তরল কেন্দ্রীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
প্যারাসিটামল সাপোজিটরি শরীরের পক্ষে তেমন ক্ষতিকর না হলেও অনেকে জ্বর কমাতে Suppol 250 MG সাপোজিটরি ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এর অনেকগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এগুলো হলো-
- বমি বমি ভাব হয়।
- ত্বকে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে।
- পেটের সমস্যা দেখা দেয়।
- অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা হতে পারে।
- গায়ে নানারকম র্যাশ বের হতে পারে।
- শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে।
এ কারণে জ্বর হলে সবচেয়ে ভালো প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করা। এতে করে তেমন কেন সমস্যা সৃষ্টি হয় না।
জ্বরের সাপোজিটরি নাম
বাজারে জ্বরের বিভিন্ন ধরনের সাপোজিটরি পাওয়া যায়। তবে ডাক্তারগণ সাপোজিটরির পরিবর্তে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে যদি কোনো কারণে ঔষধ খেতে না চায় তবে এর পরিবর্তে প্যারাসিটামল জাতীয় সাপোজিটরি দেয়ার পরামর্শ দেন।
প্যারাসিটামল জাতীয় সাপোজিটরির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নাপা ও এইস্। এছাড়াও জ্বরের অন্যান্য সাপোজিটরির নাম হলো-
- সুপ্পল ২৫০ এম জি
- জিকা ৫০০ এম জি
- এ-ফেনাক ৫০ এম জি
শেষ কথা ॥ শিশুদের সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম - সাপোজিটরি দেওয়ার কতক্ষণ পর জ্বর কমে
আমাদের এবং আমাদের শিশুদের অনেক সময় বিভিন্ন কারণে জ্বর হয়ে থাকে। তাই এ সময় বিচলিত না হয়ে খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। সেই সাথে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো কারণে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করতে না পারে তবে তাকে সাপোসিটরি দেওয়া যাবে। তবে কোন অবস্থাতেই ঔষধ না খাইয়ে প্রথমেই সাপোসিটরি দেওয়া উচিত নয়।
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্ট বক্সে জানান। এরকম আরো ইনফরমেটিভ আর্টিকেল পড়তে আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পুরো আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url