তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম - তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও এর প্রতি গুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম ও তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। তেঁতুল খাওয়া নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু কুসংস্কার রয়েছে। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে সেই সব কিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
তেঁতুল একটি টক মিষ্টি জাতীয় ফল। এটি সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। তেঁতুলে রয়েছে নানারকম ঔষুধি গুনাগুণ। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় তেঁতুল ব্যবহার করা হয়ে আসছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন রোগে এবং স্কার্ভি রোগের চিকিৎসায় তেঁতুলের ব্যবহার অনন্য।
এছাড়াও তেঁতুল রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তেঁতুল ঔষধ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি এটি পুষ্টিগুনেও ভরপুর। এতে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। কাঁচা তেঁতুলের তুলনায় পাকাতে তেঁতুলে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তেঁতুল ছেলেমেয়ে উভয় খেতে পারেন।
এর উপকারী দিকের সাথে সাথে এর কিছু ক্ষতি করেছে। অনেকে মনে করেন তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। কিন্তু এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এই আর্টিকেলে আমরা তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম
তেঁতুল সাধারণত টক মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। এটি আপনি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন। এটি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তবে কখনো এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া উচিত নয়। তেঁতুল কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। অনেকেই কাঁচা তেঁতুল খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকেই পাকা তেঁতুল খেতে পছন্দ করেন।
এছাড়াও তেঁতুল আরো অন্যান্য উপায়ে খাওয়া যায়। যেমন তেঁতুলের বল, তেঁতুলের টক, তেঁতুলের জুস, তেঁতুল-তরকারি ইত্যাদি হবে তেঁতুল খাওয়া যেতে পারে। তেঁতুলের বলকে আরো মুখরোচক করতে আপনি চাইলে তেঁতুলের মধ্যে লবণ, চিনি ও মরিচ যোগ করে ছোট ছোট বলের সাইজ করতে পারেন। এতে তেঁতুলের বল খেতে অনেক মজাদার হবে।
এছাড়াও আপনি চাইলে তেঁতুল দিয়ে জুস ও টক বানাতে পারেন। যা খেতে অনেক সুস্বাদু এবং শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আবার অনেকেই পছন্দের তরকারির সাথে তেঁতুল ব্যবহার করে থাকেন। যা তরকারির স্বাদকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
আবার অনেকেই ওজন কমানোর জন্য তেঁতুল খেয়ে থাকেন। এর জন্য প্রথমে আপনাকে তেঁতুল ভালোভাবে ধুয়ে তা কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর তেঁতুলের পেস্ট তৈরি করে তাতে পুদিনা পাতার রস যোগ করতে হবে। এবার সেই মিশ্রণটি খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা - তেঁতুল খেলে যেসব উপকার পাবেন
আমরা কমবেশি সবাই তেঁতুল পছন্দ করি। বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য তেঁতুল অনন্য। এ ধরনের ফুচকা বা চটপটির কথা বলা যেতে পারে। ফুচকা খাওয়ার ক্ষেত্রে তেঁতুলের টক ছাড়া চলেই না। সেইসাথে তেঁতুল গোলা পানি চটপটির স্বাদ বাড়িয়ে তুলে বহুগুনে। তেঁতুলকে শুধু খাবারের স্বাদই বৃদ্ধি করে বিষয়টি তেমন নয়। এর রয়েছে বিশেষ স্বাস্থ্য গুণ।
প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ এই তেঁতুল বিভিন্ন চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। যদি কেউ প্রতিদিন পরিমাণমতো তেঁতুল খেতে পারে তবে সে নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা লাভ করবে। নিচে তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ওজন নিয়ন্ত্রণে
তেঁতুল সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে। কেউ যদি ওজন কমাতে চান তবে তিনি প্রতিদিন তেঁতুলের শরবত বা তেঁতুল গোলা পানি খেতে পারেন। তেঁতুলে বিদ্যমান হাইড্রক্সিসাইট্রিক অ্যাসিড শরীরে চর্বি জমতে বাধা প্রদান করে। এর ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা থেকে রক্ষা পায়। সেইসাথে এই অ্যাসিড সেরোটোনিন নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যার কারণে ক্ষুধা কম লাগে। এতেও শরীরের ওজন কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
তেঁতুলে থাকা বিভিন্ন উপাদান রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তেঁতুলে উপস্থিত আলফা অ্যামাইলেজ এনজাইম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন তারা প্রতিদিন ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি অল্প পরিমাণ তেঁতুল খেতে পারেন। এতে দারুন উপকার পাবেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে
যাদের হজম শক্তির সমস্যা রয়েছে তারা তা সমাধানের জন্য নিয়মিত তেঁতুল খেতে পারেন। এতে ফাইবার থাকার কারণে এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যালিক অ্যাসিড এবং টারটারিক অ্যাসিড থাকার কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসায় এবং পেটব্যথা দূর করতে তেঁতুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
হার্ট ভালো রাখতে
তেঁতুল হার্ট ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তেঁতুলে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড ব্যাড রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড জমতে বাধা প্রদান করে। এর ফলে দীর্ঘদিন হার্ট ভালো থাকে। তাই যারা হার্টের রোগী রয়েছেন তারা নিয়মিত তেঁতুল খেতে পারেন।
পেপটিক আলসার রোধে
শুধু তেঁতুল নয় তেঁতুলের বীজ থেকেও উপকার পাওয়া যায়। তেঁতুল বীজের গুঁড়া নিয়মিত খেলে পেপটিক আলসার ভালো করা সম্ভব। এতে উপস্থিত পলিফেনলিক কম্পাউন্ড ক্ষত সারিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
তেঁতুলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তেঁতুলের অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি দেহকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
লিভার ভালো রাখে
একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত তেঁতুল খেয়ে থাকেন তাদের লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে যায়। এতে বিদ্যমান প্রোকিয়ানিডিনগুলো লিভারের ফ্রি র্যাডিকাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও তেঁতুলে থাকা ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম লিভারের লিপিড সামগ্রী গুলোকে ফ্রি র্যাডিকাল হাত থেকে বাঁচায়।
চোখ ভালো রাখতে
প্রাচীনকাল থেকেই তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি কনজেক্টিভাইটিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই এটি চোখে যে কোন সমস্যায় একটি সমাধান হিসেবে কাজ করে।
ক্ষত সারিয়ে তুলতে
তেঁতুল গাছের ছাল ও পাতায় রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি ক্ষতস্থানে লাগালে খুব দ্রুত ক্ষত ভালো হয়ে যায়।
ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে
তেঁতুলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে
তেঁতুলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে আফ্রিকান উপজাতিরা এটিকে ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত জ্বরের বিরুদ্ধে এর রস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে
তেঁতুলে বিদ্যমান সক্সলেট মিথেনলিক এক্সট্রাক্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতেও ভূমিকা পালন করে।
ত্বক উজ্জ্বল করতে
ত্বক উজ্জল করতে তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার। প্রাচীনকাল থেকেই তেঁতুলের পাল্প ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয় আসছে। তেঁতুলে বিদ্যমান হাইড্রোক্সি এসিড ত্বকের মরা কোষ তুলে ত্বকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তেঁতুল সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে থাকে। এর পাশাপাশি তেঁতুলে চিনি ও পেকটিন থাকার কারণে এটি ত্বককে শুষ্ক হতে দেয় না। ফলে ত্বক আরো বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
চুলের যত্নে
ত্বকের পাশাপাশি তেঁতুল চুলের যত্নেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। মাথার ত্বকে তেঁতুলের রস লাগানোর ফলে এটি মাথার তাকে ফলিকলের বৃদ্ধি ঘটায়। যার ফলে চুল মজবুত হয়। সেই সাথে তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
দাঁত ও হাড় গঠনে
তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকার কারণে এটি দাঁত ও হার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সর্দি কাশি সারাতে
গরমের দিনে সর্দি-কাশির হাত থেকে রক্ষা করতে পাকা তেঁতুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সময় পাকা তেঁতুল খেলে সর্দি কাশি ভালো হয়।
মস্তিষ্কের উন্নতিতে
তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে। যা মস্তিষ্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ভিটামিন মানুষের বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কাজ করে। সেই সাথে এটি নার্ভ সেলকে শক্তিশালী করে।
তেঁতুলের পুষ্টিগুণ
তেঁতুল হলো এক ধরনের টক জাতীয় ফল। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি একটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। পুষ্টিগুণের বিচারে এটি অন্যান্য ফলে তুলনায় অনন্য। তেঁতুলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, বিভিন্ন ধরনের ফাইবার ইত্যাদি। এছাড়াও এর পাশাপাশি তেঁতুলে টারটারিক অ্যাসিড, হাইড্রক্সিসাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি। কাঁচা এবং পাকা তেঁতুলের পুষ্টিগুণ বিচার করলে বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রনের পরিমাণ ১০.৯ মিলিগ্রাম। শর্করা আমিষ ও চর্বির পরিমাণ যথাক্রমে ৬৪.৪, ৩.১, ০.১ গ্রাম। এছাড়াও এতে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, নিয়াসিন, থায়ামিন, পাইরিডক্সিন, কপার ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান।
প্রতিদিন তেঁতুল খেলে কি হয়
তেঁতুল দেখলে এমন কি তেঁতুলের নাম শুনলে আমাদের জিভে পানি চলে আসে। এমন একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না যার তেঁতুলের কথা শুনলে জিভে পানি আসে না। আমরা সাধারণত তেঁতুল বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকি।
কিন্তু কেউ যদি নিয়মিত পরিমান মতো তেঁতুল খায় তবে সে নানারকম উপকার পেয়ে থাকে। তেঁতুলে ভিটামিন সি ও বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে বাহিরের জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
এছাড়াও তেঁতুলে বিদ্যমান হাইড্রক্সিসাইট্রিক অ্যাসিড ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই টক ফলটি পরিমাণ মতো প্রতিদিন খেলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তাই রোগমুক্ত শরীর পেতে হলে সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন তেঁতুল খাওয়া শুরু করুন।
তেঁতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়
আপনারা অনেকেই জানতে চান তেঁতুল খেলে বীর্য পাতলা হয় কিনা? আজকের এই পর্বে সে বিষয়ে আলোচনা করব। তেঁতুল খেলে যে ছেলেদের বীর্য পাতলা হয় তা জোড় দিয়ে বলার কোন উপায় নেই। কেননা আজ পর্যন্ত কোন গবেষকরা এটা প্রমাণ করতে পারেনি যে তেঁতুল খাওয়ার ফলে বীর্য পাতলা হয়। তেঁতুল খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার।
আরো পড়ুনঃ ক্যাপসিকাম খাওয়ার নিয়ম এবং ২০ টি উপকারিতা
তেঁতুল খেলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। তেঁতুলে বিদ্যমান বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অনেক উপকার সাধন করে থাকে। তবে তেঁতুলে বিদ্যমান অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বীর্য পাতলা হওয়ার উপর পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। তেঁতুলে থাকা ট্যানিন ও এসিড বীর্যপাতের সময় বীর্যকে জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে।
এ কারণে মনে হতে পারে বীর্য পাতলা হয়ে গিয়েছে। তবে এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। তবে যদি সত্যি সত্যি বীর্য পাতলা হয়ে যায় তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কখনোই মনে করা যাবে না তেঁতুল খাওয়ার কারণে বীর্য পাতলা হয়েছে। কেননা এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয়
তেঁতুলে রয়েছে ভিটামিন সি ও বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মহিলাদেরও যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এতে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান থাকার কারণে এটি মহিলাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী মহিলারা টক খেতে বেশি পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে তাকে পরিমাণ মতো তেঁতুল খাওয়ানো যেতে পারে। এতে করে তার যেমন রুচি বৃদ্ধি পাবে সেইসাথে তেঁতুল থেকে নানা রকম উপকার পাবে। এছাড়াও নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যাবে।
আরো পড়ুনঃ মাশরুমের ২৩ উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও চাষ পদ্ধতি
অনেকেই মনে করেন মেয়েরা তেঁতুল খেলে তাদের মাসিক এবং সন্তান জন্মদানে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এর কোন রূপ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি। বরং তেঁতুল খেলে নানারকম উপকার পাওয়া যায় যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
তেঁতুল খাওয়ার অপকারিতা
সবকিছুই ভালো এবং খারাপ দুইটি দিকই রয়েছে। তেমনি তেঁতুল খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। নিচে তেঁতুল খাওয়ার অপকারিতা গুলো দেওয়া হলো-
- তেঁতুল যেহেতু রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তাই অতিরিক্ত তেঁতুল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে তাদের রক্তের সুগারের পরিমাণ শূন্য হয়ে যেতে পারে যা খুবই বিপদজনক।
- অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে দ্রুত ওজন কমে গিয়ে স্বাস্থ্যহানি করতে পারে। এর ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
- তেঁতুলের মধ্যে টারটারিক অ্যাসিড থাকার কারণে এটি দাঁতের ক্ষয় করতে পারে।
- অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- অনেকের তেঁতুলে এলার্জি থাকতে পারে। যাদের তেঁতুলে এলার্জি রয়েছে তাদের জন্য এটি বিপদজনক হতে পারে।
- তেঁতুলে বিভিন্ন ধরনের এসিড থাকার কারণে অতিরিক্ত তে তেঁতুল খাওয়ার ফলে এসিডিটির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে শরীরের রক্তপাত বৃদ্ধি পায়।
- তেঁতুল খাওয়ার ফলে পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
তেঁতুল খুবই উপকারী একটি টক মিষ্টি খাবার হওয়ার সত্বেও আমাদের এটি খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এটি কখনোই অধিক পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে করে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধে তেঁতুল খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে আমাদের সকলেরই পরিমাণ মতো তেঁতুল খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও এই আর্টিকেল থেকে উপকৃত হতে পারে।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url