টমেটো খাওয়ার নিয়ম এবং এর ২৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি প্রতিনিয়ত টমেটো খাচ্ছেন? কিন্তু বুঝতে পারছেন না এটি আপনার শরীরের জন্য উপকারী না অপকারী। তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি টমেটো খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও আর্টিকেল করার মাধ্যমে আপনি টমেটোতে কি কি পুষ্টিগুণ বিদ্যমান রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। টমেটো খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই এর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
টমেটো একটি খুবই সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এসব পুষ্টি উপাদানের কারণে টমেটো কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে। সেই সাথে টমেটো খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ফলিক এসিড, লাইকোপেন সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমাদের দেশে টমেটো সাধারণত শীতকালে চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে সারা বছরই এটি পাওয়া যায়। সবজি এবং সালাদ হিসেবে সারা দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য এটি একটি বিশেষ অর্থকারী সবজি হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর টমেটো উৎপাদন হচ্ছে। যার ফলে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে এটি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বের নামিদামি অনেক কোম্পানি টমেটো সস তৈরির জন্য বাংলাদেশ থেকে টমেটো ক্রয় করছে। এর ফলে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
রান্নার উপকরণ হিসেবে এবং খাবারের সাথে টমেটো সস বেশ পরিচিত হয়ে আসছে। এই আর্টিকেলে আমরা টমেটো খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
টমেটো খাওয়ার নিয়ম
টমেটো খেতে পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এটিকে সবজি এবং ফল দুই ভাবেই খাওয়া যায়। অনেকে একই সবজি হিসেবে বিভিন্ন তরকারির সাথে খেয়ে থাকে আবার অনেকে এটিকে ফলের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করে। তবে বেশিরভাগ মানুষ এটাকে বিভিন্ন শক্তির সাথে রান্না করে খেয়ে থা থাকে।
এটি যেমন একদিকে তরকারির স্বাদকে আরো বেশি মজাদার করে অন্যদিকে তরকারি হয়ে উঠে পুষ্টিগুণে ভরপুর। আবার অনেকে টমেটো সালাদ হিসেবে সে থাকে। শীতকালে টমেটো বেশি পাওয়া যায় বলে এ সময় মানুষ এটি বেশি খেয়ে থাকে। আবার অনেকে অন্য সময় খাওয়ার জন্য এটিকে স্টোর করে রাখে।
বর্তমানে বাজারে টমেটোর বিকল্প হিসেবে টমেটো সস পাওয়া যায়। টমেটো খাওয়ার একটি সহজ পদ্ধতি হলো সরাসরি গাছ থেকে তুলে ভালোভাবে ধুয়ে কেটে টমেটো খাওয়া। এতে করে এর সকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি গাছটি নিজের হাতে লাগানো থাকে।
কেননা এতে কোন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। বাজারে বা মাঠে যেসব টমেটো পাওয়া যায় সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার কারণে এগুলো খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
টমেটো এমন একটি ফল বা সবজি যা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। একটি শীতকালীন সবজি না সত্বেও প্রায় সারা বছরই কমবেশি টমেটো পাওয়া যায়। টমেটোতে বিদ্যমান ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এই পর্বে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা আলোচনা করা হলো-
ওজন কমাতে
আপনি যদি আপনার বাদ দিয়ে ওজন কমানোর কথা চিন্তা করেন তবে টমেটো হতে পারে একটি সমাধান। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে টমেটো খেলে শরীরের বাদ্দি ওজন কমে যায়। সেইসাথে এটি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিদ্যমান। যার কারণে এটি খাওয়ার ফলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। এতে করে শরীর অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। এর ফলে ওজন কমে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
আমাদের অনেকেরই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে টমেটোতে অবস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। তাই যাদের এ সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন এক থেকে দুইটি টমেটো খেতে পারেন। এতে করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ত্বকের স্বাস্থ্যে ভালো রাখতে
টমেটো ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এতে থাকা লাইকোপেন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বককে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। শুধু তাই নয় লাইক অপেন লাইকোপেন সমৃদ্ধ টমেটো একটি দুর্দান্ত ক্লিনিজার হিসেবেও কাজ করে। যা ত্বকের ময়লা তুলে ফেলতে সাহায্য করে। সেই সাথে নিয়মিত টমেটো খাওয়ার ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা যায় না।
মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে
আমাদের অনেকেরই মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। এর প্রধান কারণ হলো ভিটামিন সি এর অভাব। ভিটামিন সি এর অভাব হলে মাড়ি দিয়ে রক্ত পরতে দেখা যায়। আর টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকার কারণে টমেটো খাওয়ার ফলে এই সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব। তাই যাদের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে তারা প্রতিদিন টমেটো খেতে পারেন।
মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
টমেটো মুখে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি মুখের ত্বক উজ্জ্বল করতে মুখে লাগানো হয়। টমেটো বিদ্যমান লাইকোপেন সূর্যের আলোর হাত থেকে মুখকে রক্ষা করে মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখে। এছাড়াও আপনি টমেটোর রস ও চিনির একটি মিশ্রণ তৈরি করে সেটি স্ক্রাব হিসেবে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল হবে। সেই সাথে বয়সের ছাপ লুকাতে সাহায্য করবে।
সর্দি কাশি প্রতিরোধে
টমেটো সর্দি কাশি প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারো যদি সত্যি কাশি হয়ে থাকে তবে সে টমেটোর স্যুপ খেতে পারেন। এর জন্য একটি বা দুটি টমেটো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে তা স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। এতে দারুন উপকার পাওয়া যাবে।
মস্তিষ্কের জন্য
টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন এবং বিটা ক্যারোটিন উপাদান মস্তিষ্কের কোষগুলোকে রক্ষা করতে এবং কোষগুলোকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকারী একটি সবজি বা ফল। তাই মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়া যেতে পারে।
অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে
টমেটো অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ এতে অবস্থিত লাইকোপেন ও ভিটামিন এ অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। তাই যাদের অ্যাজমা সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত টমেটো খেলে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
লিভারের জন্য
গবেষণা অনুসারে টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপেন লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সেই সাথে অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে টমেটো খাওয়ার ফলে লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। টমেটো এবং টমেটোর রসে উপস্থিত লিউটিন এবং জিয়াজ্যানথিনের মতো একাধিক উপকারী উপাদান লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
হার্ট ভালো রাখে
বর্তমানে হার্টের সমস্যা একটি কমন রোগ। যুবক থেকে বয়স্ক সকলেরই রোগ হয়ে থাকে। আপনার হার্টকে ভালো রাখার জন্য খাবার তালিকায় নিয়মিত টমেটো রাখতে পারেন। কেননা টমেটোতে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে যার ফলে হার্ট ভালো থাকে। সেই সাথে লাইকোপেন সহ অন্যান্য আন্টি-অক্সিডেন্ট রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে যা হার্টের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই হার্ট ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত টমেটো খান।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে টমেটো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে বিদ্যমান লাইকোপেন কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। কেউ যদি সপ্তাহে এক কেজি বা তার বেশি টমেটো খায় তবে তার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
টমেটো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টমেটো বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও টমেটোর রসে উপস্থিত লাইকোপেন, বিটা ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকের অগ্রগতি রোধ করতে সাহায্য করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে ডায়াবেটিসের খাবারে টমেটোর রসের উপকারিতা অনেক।
জ্বর নিরাময়ে
আমাদের অনেকের বিভিন্ন কারণে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে জ্বর সৃষ্টি হয়। আপনার যদি সামান্য জ্বর হয়ে থাকে তবে আপনি টমেটো খেলে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে যদি অতিরিক্ত জ্বর হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
ক্ষত নিরাময়ে
অনেক সময় আমাদের মুখের ভিতরে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। এই ঘা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করতে পারে টমেটোর রস। প্রতিদিন নিয়ম করে দুইবার টমেটোর রস খেলে মুখের ঘা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান। আর এই ভিটামিন সি ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করতে
যারা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগে ভুগছেন তাদের জন্য টমেটো হতে পারে আল্লাহ তা'লার আশীর্বাদ। আপনি প্রতিদিন যদি একটি টমেটো এবং একটি ১৫ গ্রাম তিল একসাথে এক বা দুইবার খেতে পারেন তবে এতে রক্তের স্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি শুধুমাত্র টমেটোও খান তাও এটি আপনার রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
চর্মরোগ নিরাময়ে
চর্ম রোগের জন্য টমেটো ঔষধের মত কাজ করে। আপনার ত্বকে যদি কোন ধরনের চর্মরোগ হয়ে থাকে তবে সেখানে টমেটো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। টমেটোর রস আপনার ওই চর্ম রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করবে। এর জন্য একটি টমেটো কেটে তার থেকে রস বের করে নিন। এবার সেই রস ক্ষতস্থানে লাগান। কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনি উপকার পাবেন।
চুলের জন্য
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত তুলে টমেটো রস লাগানো যেতে পারে। টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন চুলের রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে। সেইসাথে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। যা চুলকে মজবুদ ও সিল্কি করে। তাই চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নিয়মিত টমেটোর রস চুলে লাগাতে পারেন।
পেশি তৈরিতে সহায়ক
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। আর পটাশিয়াম একজন মানুষের পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই পেশি গঠনের জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়া শুরু করুন।
রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে
টমেটো রক্ত জমাট বাড়তে বাধা প্রদান করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপেন উপাদান রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে থাকে। এতে করে পুরো শরীরের খুব সহজে রক্ত সঞ্চালন হয়ে থাকে।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
টমেটো হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে তবে আপনি অবশ্যই প্রতিদিন টমেটো খেতে পারেন। এতে আপনার হজমের সমস্যা দূর হবে। কেননা টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও টমেটো লাইকোপেন আছে যা পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য টমেটোর গুরুত্ব অপরিসীম। টমেটোতে বিদ্যমান লিউটিন এবং জিয়াজ্যানথিন চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সাথে এতে বিদ্যমান ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে ও ভিটামিন সি চোখের বিভিন্ন রোগের হাত থেকে চোখকে রক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
টমেটো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত লাইকোপেন শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে সক্রিয় করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও টমেটো ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকার কারণে তা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে খুব সহজে শরীর যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয় না।
প্রদাহ দূর করে
প্রদাহ জনিত সমস্যায় টমেটো হতে পারে তার সমাধান। কেননা টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি সহ অনেক জৈব যোগ রয়েছে যা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে পারে। প্রদাহ জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তাই টমেটোর উপকারিতা অনেক বেশি।
ব্যথা উপশমকারী
টমেটোর অনেক গুণের মধ্যে এটি একটি। টমেটো ব্যথা উপশমকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে টমেটো ফেলাবনয়েড নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা ব্যাথা নাশক হিসেবে কাজ করে। এই কারণেই ব্যথা জনিত বিভিন্ন সমস্যায় টমেটো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দাঁত এবং হাড়ের জন্য উপকারী
দাঁত ও হাড়ের জন্য টমেটো অনেক বেশি উপকারী। টমেটোতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে দাঁত ও হাড়ের গঠন ঠিক রাখে, দাঁত ও হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই দাঁত ও হাড়ের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়া প্রয়োজন।
এছাড়াও টমেটো খেলে আরো অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে টমেটো খাওয়া। এতে করে শরীর বিভিন্ন ধরনের উপকার পাবে।
টমেটো মুখে মাখার উপকারিতা
টমেটো খেলেই যে কেবল এর থেকে উপকার পাওয়া যাবে বিষয়টি আসলে তেমন নয়। এটি মুখে মাখার ফলেও নানা ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। সেগুলো হলো-
- টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপেন ও অন্যান্য আন্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে সাহায্য করে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বকের বলিরেখা বা শুষ্ক ভাব দূর করে।
- ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে টমেটোর রস পাঁচ মিনিট লাগিয়ে এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক পরিষ্কার ও মসৃণ হবে।
- ব্ল্যাক হেডস দূর করতে টমেটো মুখে ঘষে লাগান। এরপর কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখের ব্ল্যাক হেডস দূর হয়ে গিয়েছে।
- টমেটো রস মুখের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এর জন্য টমেটোর রসের সাথে দুধ মিশিয়ে তা ত্বকে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। এতে করে ত্বকের পোড়া ভাব দূর হয়ে যাবে।
টমেটো খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটা জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দুই দিকে রয়েছে। টমেটোর ও তেমনি উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটি রয়েছে। উপরে আমরা টমেটোর উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এই পর্বে আমরা টমেটোর অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। টমেটোর অপকারিতা গুলো হলো -
- টমেটোতে হিস্টামিন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যাদের টমেটোতে এলার্জি রয়েছে তারা টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- কেউ হৃদরোগের ওষুধ সেবন করে থাকেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া টমেটো খাওয়া উচিত নয়। কেননা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম বিদ্যমান। যা শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়াতে পারে। এর ফলে কার্ডেওভাস্কুলার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- শুনতে অবাক লাগলেও টমেটো খেলে অনেক ক্ষেত্রে কিডনি পাথর হতে পারে। টমেটোতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম এবং অক্সালেট শরীর সহজে হজম করতে পারে না আবার তা শরীর থেকে বেরও হয় না। এসব খনিজ পদার্থ জমে জমে ধীরে ধীরে পাথরে রূপান্তরিত হয়। এ কারণে অতিরিক্ত টমেটো খেলে কিডনি পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- টমেটোতে ম্যালিক অ্যাসিড ও সাইট্রিক অ্যাসিড দুই ধরনের অ্যাসিড বিদ্যমান থাকায় টমেটো খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অম্লতার সৃষ্টি হবে। এই কারণে অতিরিক্ত টমেটো খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুই দিকে রয়েছে। তবে উপকারী দিকে তুলনায় অপকারী দিক খুবই নগণ্য। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় টমেটো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তবে এটি খাওয়ার ব্যাপারে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সাথে এটি ত্বক ও চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
টমেটোর পুষ্টিগুণ
টমেটোকে মৌসুমী ফল বা সবজি যেই যাই বলুক না কেন এর গুনাগুন নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা না। এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। পাকা টমেটোতে পুষ্টির পরিমাণ আরো বেশি। টমেটোর প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পানি। ফলে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট তুলনামূলক কম থাকে।
আরো পড়ুনঃ মাশরুমের ২৩ উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও চাষ পদ্ধতি
প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে রয়েছে ৩৫১ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন। ক্যারোটিন মানবদেহে ভিটামিনের কাজ করে অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও রেটিনা সুস্থ রাখে। পাকা টমেটোতে আছে ভিটামিন সি যা দাঁত ও হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা টমেটোতে ০.০৬ মিলিগ্রাম রিবোফ্লোবিন, সামান্য পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা টমেটোতে০.৪০ মিলিগ্রাম লৌহ থাকে। এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা টমেটোতে ৪৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২০ মিলিগ্রাম ফসফরাস বিদ্যমান থাকে। এছাড়াও টমেটোতে আরো অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। সেগুলো হলো-
- পানি
- প্রোটিন
- স্নেহ
- কার্বোহাইড্রেট
- চিনি
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- আয়রন
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- তামা
- থায়ামিন
- রিবোফ্লাভিন
- নিয়াসিন
- ফোলেট
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন সি
- বিটা ক্যারোটিন
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- ফ্যাটি অ্যাসিড মনোসেচুরেটেড
- ফ্যাটি অ্যাসিড মোটস্যাচুরেটেড
উপসংহারঃ টমেটো খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, টমেটো খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যদি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন টমেটো খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা যেমন আছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। সেই সাথেপুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় টমেটো যোগ করা উচিত। এটি বহু রোগ নিরাময় করে থাকে।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url