OrdinaryITPostAd

অনলাইনে ও কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। নতুন নিয়মে কিভাবে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে হয় সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা অনলাইনে ও কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অনলাইনে ও কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
এছাড়া আপনি এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে ট্রেনের টিকিটের মূল্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

ব্রিটিশ আমলেই আমাদের দেশে স্থলপথের সবচেয়ে সাশ্রয় মাধ্যম ছিল রেলপথ। দিন দিন সড়ক পথের উন্নয়ন হওয়ার ফলে বর্তমানে রেলের উপর কিছুটা চাপ কমেছে। তবুও সুষ্ঠু ও অধিকতর নিরাপদ যাতায়াতের জন্য মানুষ সাধারণত রেলপথকেই বেছে নেয়। কেননা এতে চলাচল করা যেমন সহজ তেমনি নিরাপদ।

সেই সাথে গ্রামীণ পরিবেশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সকলকে আকৃষ্ট করে। তবে বর্তমানে ট্রেনে ভ্রমণ করার জন্য টিকিট ক্রয় করা একটু ঝামেলা হয়ে গেছে। টিকিট ক্রয় করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম eticket.railway.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হচ্ছে।

এরপর রেজিস্ট্রেশনে উল্লেখিত মোবাইল নাম্বারের সাহায্যে টিকিট ক্রয় করা যাচ্ছে। এতে করে মানুষ নানারকম বিভ্রান্তির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই যাতে করে আর বিভ্রান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য এই আর্টিকেলে আমরা ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাহলে চলুন আর দেরি না করে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য আমাদের সর্বপ্রথম eticket.railway.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে মোবাইল নম্বর, ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম তারিখ ও ইমেইল ঠিকানা দিয়ে একটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে যাত্রা শুরু ও শেষের স্টেশন, তারিখ ও সিটের ধরন সিলেক্ট করে সার্চ করতে হবে। সবশেষে সিট বাছাই করে অনলাইনে পেমেন্টের মাধ্যমে টিকিট বুকিং দেওয়া যাবে। নিচে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার প্রক্রিয়াটি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

ভোটার আইডি কার্ড ভেরিফাই

এক্ষেত্রে আপনাকে সর্বপ্রথম eticket.railway.gov.bd বা Google Pay Store থেকে Rail Sheba App ডাউনলোড দিয়ে নিতে হবে। এরপর Register বাটনে ক্লিক করতে হবে। সেখানে কাঙ্খিত তথ্য পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। এরপর সেখানে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। তাহলেই আপনার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে।

মোবাইল নম্বর ভেরিফাই

রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনি যে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করেছেন তা ভেরিফাই করার জন্য তাতে একটি ছয় ডিজিটের Verification Code পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট ঐ কোডটি সঠিকভাবে পূরণ করে সাবমিট করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার একাউন্টে লগইন হবে। এরপর I Agree তে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টটি ট্রেন সার্চ করার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।

ট্রেন সার্চ

একাউন্টে প্রবেশ করার পর কোন স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবেন এবং কোন স্টেশনে গিয়ে নামবেন তা সিলেক্ট করতে হবে। কত তারিখে আপনি যাত্রা করবেন সেটি সঠিকভাবে দিতে হবে। এবার আপনাকে কোন শ্রেণীর সিট কাটবেন তা নির্বাচন করতে হবে। এরপর Search Train অপশনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপনি আপনার পছন্দ মত ট্রেন থেকে টিকিট কাটার জন্য টিকিট সিলেক্ট করতে পারবেন।

ট্রেন ও সিট নির্বাচন

আপনার ভ্রমণের সময় ও সিটের ধারণ অনুসারে পছন্দ মত ট্রেন ও সিট নির্বাচন করুন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আপনার নির্বাচিত ট্রেনের সিট খালি আছে কিনা। যেসব সিট খালি থাকবে সেগুলো সাদা হয়ে থাকবে। এর মধ্যে থেকে সিট নির্বাচন করে Continue Purchase অপশনে ক্লিক করতে হবে।

ভ্রমণকারীর ডাটা প্রদান করুন

আপনি যদি শুধুমাত্র নিজের ভ্রমণ করেন সেক্ষেত্রে কোন কিছু পূরণ করার প্রয়োজন হবে না। তবে আপনার সাথে যদি অন্য কেউ ভ্রমণ করে তবে তার নাম এবং সে বড় নাকি ছোট তা নির্বাচন করতে হবে। তিন থেকে বারো বছর বয়সী ভ্রমণকারী শিশু হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে Passanger Type এ Child নির্বাচন করে সাবমিট করতে হবে।

টিকিটের মূল্য পরিশোধ

এখানে টিকিটের মোট ভাড়া, ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ ও মোট খরচের পরিমাণ দেখানো হবে। এরপর টিকিটের মূল্য পরিষদের জন্য Debit/Credit Card অথবা বিকাশ/নগদ/রকেটের মাধ্যমে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে।

টিকিট ডাউনলোড

পেমেন্ট সফলভাবে করা হলে সাথে সাথেই একটি টিকিট ডাউনলোড করতে বলা হবে। সেখান থেকে টিকিট ডাউনলোড করে নির্দিষ্ট তারিখে ট্রেনে ভ্রমণের সময় ডাউনলোড করা ওই টিকিট প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়াও Purchase History অথবা রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত ইমেইল থেকেও টিকিট ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।

কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম

কাউন্টারে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনার ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা থাকতে হবে। এবার রেজিস্ট্রেশন করার সময় যেই নম্বর ব্যবহার করেছেন সেই নম্বর টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দিতে হবে। এরপর যাত্রার স্টেশন এবং গন্তব্য স্টেশন ও তারিখ কাউন্টারে কর্মরত ব্যক্তিকে বলতে হবে।

তিনি সেখানে থাকা কম্পিউটারে সেসব তথ্য দিয়ে আপনার জন্য একটি টিকিট ক্রয় করে দেবেন। এরপর তাকে টিকিটে উল্লেখিত টাকা প্রদান করে সেই টিকিটটি আপনি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোন অবস্থাতেই টিকিট ক্রয় করা সম্ভব নয়। তাই টিকিট ক্রয় করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।

মোবাইলে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম

মোবাইলের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম Google Pay Store থেকে Rail Sheba App ডাউনলোড করে নিতে হবে এরপর সেখানে লগইন করে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে টিকিট ক্রয় করতে হবে। এছাড়াও আপনি যে কোন ইন্টারনেট ব্রাউজার ইউজ করে eticket.railway.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে নির্দিষ্ট তথ্যের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করতে পারেন।

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার সময়

ট্রেন জার্নি আমাদের সবারই কম বেশি ভালো লেগে থাকে। একটি ভালোলাগার মূল কারণ এর যাত্রা পথ। এটি মূলত গ্রামীণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে ছুটে চলে। বাস, লঞ্চ, ট্রাক ইত্যাদির তুলনায় নিরাপদ ভ্রমণ হওয়ার কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ ট্রেন জার্নিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ট্রেনে সিট পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।

এর জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে হয়। মূলত যাত্রার তারিখ হতে ১০ দিন পূর্বেও ঐ নির্দিষ্ট দিনের টিকিট ক্রয় করা যায়। এটি অনলাইনের মাধ্যমে বা কাউন্টার এগিয়ে কাটা সম্ভব। তাই ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার সময় হলো যাত্রা তারিখ হতে ১০ দিন পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময়।

ট্রেনের টিকিটের মূল্য কত টাকা?

কোথায় থেকে কোথায় যেতে ট্রেনের টিকিটের মূল্য কত তা নিচে পিডিএফ ফাইল আকারে দেখানো হলোঃ
ট্রেনের টিকিটের মূল্য - পূর্বাঞ্চল

ট্রেনের টিকিটের মূল্য - পশ্চিমাঞ্চল

ট্রেনের টিকিট কাটার শর্তাবলী

অনলাইনে হোক বা অফলাইনে হোক ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্তাবলী যুক্ত থাকে। এর মধ্যে থেকে কিছু শর্তাবলী নীতি আলোচনা করা হলোঃ
  • অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্রমণের সময় প্রত্যেক যাত্রীর ভোটার আইডি কার্ড সাথে রাখতে হবে।
  • এছাড়াও ট্রেনে ভ্রমণে আপনার ই টিকিটের প্রিন্টেড কপি অথবা অনলাইন কপি সাথে রাখতে হবে।
  • যিনি টিকিট ক্রয় করবেন অবশ্যই যাত্রার সময় তাকে সাথে থাকতে হবে
  • কাউন্টারে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে যদি কেউ টিকিট ফেরত দিতে চায় তবে যাত্রীকে অবশ্যই নিজ নিজ স্টেশনে যেতে হবে এবং কাউন্টারে যোগাযোগ করতে হবে।
  • অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে যাত্রার সময় সিট নম্বর পরিবর্তন হতে পারে
  • তিন থেকে বারো বছর বয়সী শিশুদের জন্য হাফ টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। অন্যথায় জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।

শেষ কথা

রেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই আমাদের সবারই উচিত এই সম্পদের প্রতি যথাযথ যত্নবান হওয়া। তাই কেউ বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করব না। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন করার পর টিকিট ক্রয় করে একখান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করব। যেহেতু এটি আমাদেরই সম্পদ তাই এর কোন ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করব না।

এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা আপনার আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এরকম আরো ইনফরমেটিভ পোস্ট পেতে আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url