শুশনি শাকের উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি শুশুনি শাক চিনেন কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেল আমরা শুশনি শাকের উপকারিতা ও গুনাগুন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি এ সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি এই শাক কিভাবে খাওয়া হয় সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই শাকের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
আমাদের চারপাশে অনেক ধরনের লতা পাতা রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। কিন্তু তা আমাদের অধিকাংশের কাছেই অজানা। তেমনি একটি শাক হলো শুশনি শাক। এই শাক মানব শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এই শাক সাধারণত বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়।
শুশনি শাক সাধারণত মাটি থেকে ২ ইঞ্চি উঁচু হয়। এটি আর্দ্র ও স্যাতস্যাঁতে পরিবেশে জন্মে। এই শাগে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকে। অনেক মানুষ তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য এই শাক খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হিন্দু পরিবারের লোকেরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই শাক বেশি খেয়ে থাকে।
এই শাক এক জায়গায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় না বলে সাধারণত এটি অন্য শাকের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এই আর্টিকেলে আমরা শুশুনি শাকের উপকারিতা ও গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
শুশনি শাক কি জাতীয় উদ্ভিদ
শুশনি শাক একটি ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ। কেননা এই শাকের বৈশিষ্ট্য ফার্ন উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল পাওয়া যায়। যেমন এটি একটি অপুষ্পক সবুজ উদ্ভিদ, এটি স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে বংশবিস্তার করে, এটি আর্দ্র ও স্যাতস্যাঁতে পরিবেশে জন্মে। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি একটি ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ।
এটি একটি লতানো উদ্ভিদ। এই শাক সাধারণত জলাশয়ের আশেপাশে, স্যাতস্যাঁতে জমির আইলে, পতিত জমিতে জন্মে থাকে। এই শাকের কাণ্ডের মাথায় চারটি পাতা থাকে। প্রতিটি পাতা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও ৪টি পাতা একসাথে দেখতে গোলাকার মনে হয়।
গ্রামের মানুষের কাছে এই শাক শুশনি শাক বা শুনশুনি শাক নামে পরিচিত। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা মতে এই শাকের নানা রকম ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। এই শাক একটু মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। এই শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, বি১২, ভিটামিন সি ইত্যাদি।
শুশনি শাক কিভাবে খাওয়া হয়
গ্রাম বাংলায় যেসব শাক কুড়িয়ে পাওয়া যায় তার মধ্যে শুশনি শাক অন্যতম। এ শাক সাধারণত বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়। এই শাকের পাতা অত্যন্ত নরম হওয়ার কারণে খুব সাবধানতার সাথে এটি তুলতে হয়। এই শাক খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। অন্যান্য শাকের মতো প্রথমে এই শাক তুলে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
এরপর তেল, মরিচ, পেঁয়াজ, লবণ দিয়ে ভালো করে ভেজে খাওয়া হয়। তবে এলাকা ভেদে এই শাক ভাজিতে বিভিন্ন ধরনের মসলা মেশানো হয়ে থাকে। এই শাক সাধারণত একটি জায়গায় খুব বেশি জন্মায় না বলে একে অন্য শাকের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এই শাকের স্বাদ কিছুটা মিষ্টি ধরনের।
শুশনি শাকের উপকারিতা
শুশনি শাককে অনেক মানুষ আগাছা মনে করলেও এই শাকের নানারকম উপকারিতা রয়েছে। এই শাক সাধারণত স্যাতস্যাঁতে পরিবেশে জন্মে। এই শাকের নানা ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় শুশনি শাকের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এই পর্বে আমরা শুশনি শাকের উপকারিতা আলোচনা করব। সেগুলো হলো-
- এই শাক খেলে খুব ভালো ঘুম হয়। তাই যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এই শাক খেতে পারেন। এতে করে আপনার ঘুমের সমস্যা দূর হবে।
- শুশুনি শাকে প্রচুর পরিমাণ নিউট্রিশন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। যার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- শুশনি শাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের অনেক সময় কোন জিনিস মনে রাখতে অনেক কষ্ট হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের বেলায় এটি বেশি হয়। যাদের এই সমস্যা হয় তারা নিয়মিত শুশনি শাক খেতে পারেন। এতে করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
- আমাদের অনেকেরই খাবারের প্রতি রুচি নেই। শুশনি শাক খেলে এটি খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
- পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে এই শাক সাহায্য করে। শুশনি শাকে উপস্থিত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শুশনি শাক ত্বকের জন্য উপকারী। নিয়মিত এই শাক খাওয়ার ফলে বয়সজনিত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- শুশনি শাকে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জন্ডিস ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এই শাক খাওয়ার ফলে যকৃতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ভালো হয়।
- শুশনি শাক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শাকে যেসব উপাদান রয়েছে তা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- শুশনি শাক রক্তের কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে নিয়মিত এই শাক খাওয়া হলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- বিষাক্ত পোকামাকড় বা কীট পতঙ্গের কামড়ে যে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয় এই পাতার রস সেই জ্বালাপোড়া ভালো করে। এর জন্য যে স্থানে কামড় দিয়েছে সেই স্থানে এই পাতার রস বা এই পাতা বেটে লাগাতে হবে। এতে উপকার পাওয়া যাবে।
- চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে এই শাক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত এই শাক খাওয়ার ফলে চুল পড়া রোধ হয় এবং চুল মজবুত ও শক্তিশালী হয়।
এছাড়াও যাদের হাঁপানের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এই শাক খাওয়ার ফলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। আবার যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয় তারা এই শাক খেলে দারুণ উপকার পাবেন। এছাড়াও বাতের ব্যথা নিরাময়ে এই শাক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিয়মিত শুশনি শাক খাওয়ার ফলে মাথাব্যথা ভালো হয়।
শুশনি শাকের রেসিপি
শুশনি শাক ভালো করে ভাজা হলে তা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এই শাকের প্রচুর উপকারিতা ও রয়েছে। শুশনি শাক ভাজা রেসিপি নিচে দেয়া হলো-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ শুশনি শাক, পরিমাণ মতো সরিষার তেল, ১/২ টি শুকনো মরিচ, স্বাদ মতো লবণ, পেঁয়াজ, হাফ চামচ পাঁচফোড়ন, হাফ চামচ হলুদ, পাঁচ কোয়া রসুন কুচি, সামান্য চিনি।
কার্যপ্রণালীঃ
- প্রথমে শুশনি শাক ভালো করে বেঁচে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এবার একটি ডালায় শাকটি ছাকনি দিয়ে রেখে পানি ঝরতে দিতে হবে।
- এবার একটি কড়াইয়ে তেল দিয়ে ভালো করে গরম করে এর মধ্যে পাঁচফোড়ন, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, সামান্য চিনি দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে এর মধ্যে শুশুনি শাক দিতে হবে। এ সময় চুলার আগুন কমিয়ে রাখতে হবে।
- এবার এর মধ্যে স্বাদমতো লবণ ও পরিমান মত হলুদ গুঁড়া দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- শাক সিদ্ধ হয়ে আসলে ঢাকনা খুলে ভালো করে নেড়ে দিতে হবে।
- এবার শাকটি ততক্ষণ পর্যন্ত নাড়াচাড়া করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এর ভিতর সব পানি শুকিয়ে না যায়।
- এভাবে ভালো করে নেড়েচেড়ে শাক নামিয়ে নিতে হবে। তাহলেই তৈরি হয়ে গেল শুশনি শাক ভাজি। এবার একে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করা যাবে।
শুশনি শাকের অপকারিতা
শুশনি শাকের অনেক উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। এগুলো হলো-
- এই শাক খেলে সাধারনের তুলনায় একটু বেশি ঘুম হয়।
- এই শাক অনেক নরম হওয়ার কারণে খুব সাবধানতার সহিত তুলতে হয়।
- শুশনি শাক যখন স্পোর সৃষ্টি করে তখন এই শাক খেতে ভালো লাগে না। অনেক সময় এই স্পোর্ গুলো এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- এই শাক তুলে বেশিক্ষণ রাখা যায় না।
- অধিক পরিমাণে এই শাক খাওয়া হলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
শুশনি শাক যেখানে সেখানে হওয়ার পরও এই শাক তেমন বেশি চোখে পড়ে না। তাই এই শাকের উপকারিতার কথা চিন্তা করে এই শাক তোলার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন এর বংশবিস্তার একেবারেই শেষ না হয়ে যায়। এই শাক অধিক পরিমাণে না খাওয়াই উত্তম।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url