নারকেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - নারকেলের শাঁসের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আমরা কম বেশি সকলেই নারকেল খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই ধারণা রাখি নারকেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে গ্রামের বয়স্ক লোকেরা এই কথা বেশি বলে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো নারকেল আমাদের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নারকেল শ্বাসের উপকারিতা সম্পর্কে। নারকেল শাঁস আমাদের অনেকেরই খুব বেশি প্রিয়। এটি যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি এর উপকারিতা অনেক। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
নারিকেল বহু পরিচিত নাম। আমরা সকলে যেমন ডাব খেতে পছন্দ করি তেমনি নারিকেল খেতে পছন্দ করি। ডাব ধীরে ধীরে বড় হয়ে নারিকেলে পরিণত হয়। ডাবের পানি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি নারিকেলের পানিও খেতে অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়। নারিকেলের সুস্বাদু শাঁস দিয়ে তৈরি হয় নানারকম মজাদার পিঠা যেগুলো আমাদের সকলেরই খুবই প্রিয়।
নারিকেলের শাঁস দিয়ে যে পিঠাগুলো তৈরি হয় সেগুলো হলো নারিকেলের নাড়ু, নারিকেলের সন্দেশ, নারিকেলের পায়েস, নারিকেলের হালুয়া, নারিকেলের আইসক্রিম। এছাড়াও চুলের যত্নে নারিকেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেজন্য প্রত্যেকটা নারী ও পুরুষের শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নারকেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত।
নারিকেলের শাঁস খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক। নারিকেলের শাঁস ঔষধ হিসেবে ও কাজ করে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দূর করতে সাহায্য করেন নারিকেলের শাঁস। পুষ্টিগুণ ভরপুর নারিকেল আমাদের শরীর স্বাস্থ্য রক্ষার্থে কতটা ভূমিকা পালন করে তা আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের জন্য তুলে ধরব।
চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক নারিকেলের উপকারিতা ও অপকারিতা - নারিকেল শাঁসের উপকারিতা সম্পর্কে।
নারিকেল এর উপকারিতা
প্রত্যেকটি মানুষকে স্বাস্থ্যকর ফল খাওয়া ভালো। স্বাস্থ্যকর ফল খাওয়ার মাধ্যমে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন অসুখ থাকে দূরে থাকা যায়। নারিকেল একটি স্বাস্থ্যকর ফল। নারিকেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা আমাদের জন্য অনেক উপকারি।
সেজন্য আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নারিকেল যুক্ত করুন। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক নারিকেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
ত্বকের যত্নে
নারিকেলের শাঁস ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের বালি রেখা দূর করে। নিয়মিত নারিকেলের শাঁস খেলে ত্বক ও সুন্দর এবং কোমল হয়। সেই সাথে নারকেলের পানি ত্বকের রুক্ষতার হাত থেকে রক্ষা করে।
কোলন ক্যান্সার ঝুকি কমায়
নারকেলে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আপনি যদি নিয়মিত নারিকেল খেতে পারেন তবে আপনার স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার এবং আরো অন্যান্য ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত নারিকেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে
হাড়ের গঠন মজবুত করতে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। যা আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায় এবং হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এজন্য আপনি যদি নিয়মিত নারিকেল খেতে পারেন তবে আপনার দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে এটি সাহায্য করবে। নারিকেলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে। যার ফলে দাঁত ও হাড় মজবুত থাকে। এছাড়াও হাড় সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় নারিকেলের শ্বাস।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে নারিকেলের শ্বাস। নারিকেলে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও এমিনো অ্যাসিড হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং আপনার শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ওজন কমায়
অন্যান্য ফলের তুলনায় নারিকেলের ক্যালরির মাত্রা অনেকটাই কম। যা আপনার শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। নারিকেলে খুব অল্প ক্যালোরিতেই মোটাবলিযম বৃদ্ধি করে শরীরের শক্তি যোগায়। নারকেলে কম ক্যালরি থাকার কারণে এটি অধিক পরিমাণ খাওয়া হলেও তা ওজন বৃদ্ধি করে না। তবে কখনোই অধিক পরিমাণ নারকেল খাওয়া উচিত নয়। সেই সাথে এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে এটি খাওয়ার ফলে ক্ষুধা কম লাগে।
হার্ট ভালো রাখে
নারিকেল রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্টের সমস্যা দূর করে। নারিকেলের রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায় না। এর ফলে হার্ট ভালো থাকে। এছাড়াও নারকেল আথোরোসক্লেরোসিসের ঝুকি কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা উচিত। এই কাজে সাহায্য করে নারিকেল। লিভারের অসুখের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস সি ও অন্যান্য লিভারের অসুখে বেশ ভালো কাজ করে নারিকেলের দুধ। আপনি যদি নিয়মিত নারিকেল খেতে পারেন তবে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে শরীরের বিভিন্নভাবে হাত থেকে রক্ষা পাবে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে
নারকেল স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান এমসিটি গ্লুকোজের একটি বিকল্প উৎস হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে এটি মস্তিষ্কের খাবার হিসেবেও কাজ করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
নারিকেল পানির পুষ্টি
আপনি যদি নিয়মিত নারিকেলের পানি পান করতে পারেন তবে আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশন এর অভাব দূর হবে। এর সঙ্গে নারিকেল পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও আপনার শরীরকে শক্তিশালী করে। নারিকেল পানি কেবল শরীরের জন্য নয় চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী । এতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি জাতীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
তবে এটির খনিজ গুলোতে উচ্চ ফ্যাট, চিনি এবং কোলেস্টেরল কম। তাই নারিকেল খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নারিকেলের দুধ লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। একই সঙ্গে হেপাটাইটি সি, জন্ডিস ও লিভারের বিভিন্ন অসুখ সারাতে নারিকেলের দুধ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
নারিকেল খাওয়ার নিয়ম
নারিকেল আমরা সাধারণত পিঠাপুলি খাওয়ার সময় গ্রামাঞ্চলে বেশি ব্যবহার করে থাকি। এবং বিভিন্ন খাবার তৈরিতে নারিকেলের ব্যবহার করা হয়। নারিকেল আমাদের স্বাস্থ্য উপকারিতায় অনেক ভূমিকা পালন করে। প্রতি ১০০ গ্রাম নারিকেলের পুষ্টিগুণ হিসাব করলে দেখা যায় এতে আছে ৩৫৪ ক্যালোরি, ৩৩গ্রাম ফ্যাট, ২০ মিঃ সোডিয়াম, ৩৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম।
এছাড়াও এতে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের পরিমাণ যথাক্রমে ১৫ গ্রাম ও ৩.৩ গ্রাম। এছাড়াও নারকেলে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২ আছে। নারিকেল শাঁস বের করার জন্য নারিকেলের ওপরের থাকা খোসা ভেঙে ভেতরের অংশ বের করতে হয়।
এরপর নারিকেল খুব সহজে ফাটিয়ে ভিতরে থাকা পানি ও শ্বাস খাওয়া যায়। নারিকেলের শাঁস খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করেন। শাঁস অনেকটাই মিষ্টি হওয়ার কারণে অনেকের কাছে এটি অনেক প্রিয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শরীরের জন্য যতটুকু ক্যালরির দরকার এর ১০ ভাগের এক ভাগ নারিকেল খেয়ে পূরণ করতে পারেন।
যেহেতু প্রতি ১০০ গ্রাম নারিকেলে ৩৫৪ ক্যালোরি থাকে তাই নারিকেলে আবার খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। সে অনুযায়ী কারো যদি এক হাজার ৫০০ ক্যালোরির দরকার হয় তবে ১৫০ ক্যালোরি নারকেল থেকে নিতে পারেন।
নারিকেল শাঁসের উপকারিতা
আমাদের আর্টিকেলের আজকের এই পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো নারিকেল শাঁসের উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন নিম্নে জেনে নেওয়া যাক নারিকেল শাঁসের উপকারিতা গুলো-
- ফাইবারের উৎসের খনি বলা চলে নারিকেলের শাঁসকে। ১০ গ্রাম শাঁসে গমের চেয়েও বেশি ফাইবার থাকে। ফাইবার আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। সেই সাথে একটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কেননা এতে খুব অল্প পরিমাণ ক্যালরি বিদ্যমান এবং এই অল্প ক্যালোরি শরীরে শক্তি জাগাতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি খাওয়ার ফলে ক্ষুধা কম লাগে।
- শাঁসে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমায়। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নারিকেলের পানীয় ও শাঁস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া পটাশিয়াম আমাদের দেহে পানি ও সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই অনেকেই ব্যায়াম করার আগে ও পরে এটি খেয়ে থাকেন।
- নারকেলের শাঁসে প্রচুর পরিমাণ আয়রন বিদ্যমান। তাই কেউ যদি নিয়মিত নারকেলের শাঁস খেয়ে থাকেন তবে তার শরীরে আয়রনের অভাব পূরণ হবে। আর আয়রন শরীরের রক্তস্বল্পতা রোধ করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত শাঁস খাওয়ার কারণে রক্তস্বল্পতা দূর হবে।
- নারকেলের শাঁসে বিদ্যমান ভিটামিন রক্তের লোহিত কণিকা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য এটি খাবার ফলে শরীরে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
নারিকেল এর অপকারিতা
নারিকেল খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন নিম্নে নারিকেল এর অপকারিতা গুলো জেনে নিই-
- মাত্রা অতিরিক্ত নারিকেলের পানি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না।
- নারকেল খেলে অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা দেখা যায়। তাই যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের নারকেল না খাওয়াই ভালো।
- অধিক পরিমাণে নারকেলের পানি পান করার ফলে হাইপারকালাইমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- নারকেলের পানিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের নারকেলের পানি না খাওয়াই উত্তম।
- নারিকেলের পানিতে বেশি পটাশিয়াম থাকে। তাই যাদের কিডনির সমস্যা আছে তারা নারিকেলের পানি খাওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো।
লেখকের মন্তব্যㅣনারিকেলের উপকারিতা ও অপকারিতা - নারিকেল শাঁসের যত উপকারিতা
নারকেল ও এর পানি আমাদের কম বেশি সকলের প্রিয় হলেও এটি খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এর প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও অধিক পরিমাণ এটি খাওয়ার ফলে নানা রকম ক্ষতি হতে পারে। তবে এর থেকে উপকার পাওয়ার জন্য নিয়মিত অল্প পরিমাণ নারকেল খেতে হবে। নিয়মমাফিক নারকেল খাওয়ার কারণে শরীর নানাভাবে উপকৃত হবে।
প্রিয় বন্ধুরা এতক্ষণে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ নিশ্চয় আপনি পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দৈনন্দিন জীবনে ফিটনেস ভালো রাখার উপায় এবং শরীর ও মন সুস্থ রাখার উপায় সম্পর্কে খুব সুন্দরভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাই এই আর্টকেল আপনার অনেকে উপকারে আসবে।
এমন আরো অনেক আপডেট পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং শেয়ার করুন যাতে করে অন্য কেউ পড়ে উপকৃত হতে পারেন। তো বন্ধুরা আজ এই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। "আল্লাহ হাফেজ"
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url