OrdinaryITPostAd

ডালিম বা আনার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ডালিম ও বেদানার পার্থক্য কি

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডালিম ও বেদানা রাখলে আমাদের মানব দেহের অনেক উপকারে আসবে। আজকের আর্টিকেলে ডালিম বা আনার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ডালিম ও বেদানার পার্থক্য কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডালিম বা আনার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন, তাহলে ডালিম বা বেদানা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ডালিম ও বেদানার পার্থক্য কি, ডালিমের পুষ্টিগুণ এবং ডালিমের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

প্রাচীন যুগ থেকে ডালিম বা আনার সুস্বাদু একটি ফল। এই ফল যখন দেখতে লাল রঙের হয় অর্থাৎ খোসার ভেতরে এক ধরনের লাল রঙের দানা থাকে। উপরের খোসাকে ভালো হবে ছাড়িয়ে তারপর সেগুলোকে খাওয়া হয়। ডালিম বা আনারে রয়েছে রোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন ঔষধি গুণ। ডালিম এর দাম অনেকটা বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই খেতে চায় না।

আপনি যদি নিয়মিত ডালিম বা আনার খান তাহলে মানব দেহের জন্য অনেক উপকারে আসবে। তাই আজকের আর্টিকেলে ডালিমের পরিচিতি, ডালিমের পুষ্টি উপাদান, ডালিম ও বেদানার পার্থক্য, এর উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, ডালিম ও বেদানার পার্থক্য কি - ডালিম বা আনার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে আপনি উপকৃত হবেন।

ডালিমের পরিচিতি

ডালিম বা আনার হচ্ছে স্বর্গীয় ফল হিসেবে পরিচিত। এটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং উপকারী। ডালিম বা আনার ও বেদানা এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Pomegranate এবং বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Penica granatum । ডালিমের আদি নিবাস হচ্ছে ইরাক এবং ইরানে। সেখানে প্রাচীনকাল থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এরপরে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন মহাদেশে এর প্রচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্পেনীয়রা ১৯৬৯ সালের দিকে এই ফল ক্যালিফোর্নিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকাতে নিয়ে যায়। যেগুলো উত্তর গোলার্ধ রয়েছে সেগুলো সেখানে সেপ্টেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মে থাকে। অপরদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ হতে মে মাসে জন্মে থাকে। বর্তমানে ডালিম বা আনার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে ডালিম বা আনার উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে বর্তমানে এর চাষাবাদ ব্যাপকভাবে যেসব দেশে হয় সেসব দেশের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, মিশর, সৌদি আরব, ইসরাইল, আর্মেনিয়া,স্পেন, ইরান, তুরস্ক,সিরিয়া, ফিলিপাইন ইত্যাদি। সেই সাথে এর দাম বেশি হওয়ার কারণে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে।

ডালিমের পুষ্টি উপাদান

ডালিম ফল অনেক পরিচিত ফল। বাজারের প্রতিটা ফলের দোকানে ডালিম ফল দেখা যায়। এই ফল দেখতে যেমনটা সুন্দর খেতেও ততটাই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ডালিমে পানি, আমিষ, শর্করা, খনিজ, ফসফরাস, নায়াসিন, স্নেহ রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, অক্সালিক এসিড, ভিটামিন সি ইত্যাদি।

প্রতি ২০০ গ্রাম ডালিমে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেটি জেনে নিন। বিশেষজ্ঞরা বলেন প্রতি ২০০ গ্রাম ডালিমের রয়েছে-
  • পানি ৭৮%
  • স্নেহ ০.২%
  • আঁশ ১০.২%
  • শর্করা ১৯.৫%
  • খনিজ ০.১৪% এছাড়াও হতে রয়েছে
  • ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
  • ২৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
  • ০.৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস
  • ১৪০ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড
  • ০.৬ মিলিগ্রাম নায়াসিন
  • ২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
ডালিম সাধারণত ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি বিভিন্ন রোগ নিরামায়ক হিসেবে কাজে আসে।

ডালিম ও বেদানার পার্থক্য কি

ডালিম সাধারণত Punica গণের ও Lythraceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ফলের গাছ। আনার বা ডালিম ও বেদানার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Punica granatum । আমরা সাধারণত আকারে ছোট ফলকে ডালিম এবং আকারের বড় ফলকে বেদানা বলে থাকি কিন্তু দুটোই একই ফল।

ফারসি ভাষায় এই ফলকে আনার বলা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একটি বেদানা নামে পরিচিত। এছাড়াও কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে এই ফলকে বেদানা হিসেবে সবাই জানে। সুতরাং ডালিম বা আনার ও বেদনা এক রকমেরই ফল পার্থক্য শুধু বেদানা ডালিমের তুলনায় আকারে অনেক বড় এবং সাথে অনেক মিষ্টি।

ডালিম বা আনার খাওয়ার উপকারিতা

দাঁতের যত্নেঃ ডালিম দাঁতের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। কেননা এতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট যা দাঁতের মধ্যে প্লাক জমাত বাধতে বাধার সৃষ্টি করে। এছাড়াও দাঁতের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে ডালিমের ভূমিকা অনেক। এজন্য দাঁতের যত্নে প্রতিদিন অল্প পরিমাণ হলেও ডালিম খাওয়া দরকার। এতে আমাদের দাঁতের অনেক উপকারে আসবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। কেননা মানব দেহের রক্তচাপ বেশি বা কম হলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রতিনিয়ত ডালিম খেতে হবে। এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।

হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতেঃ হৃদরোগের বিভিন্ন আশঙ্কা থেকে সহায়তা পেতে প্রতিনিয়ত ডালিম খেতে পারেন। কেননা ডালিমে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ডালিম জুস বানিয়ে খেলে ধমনীর আবরণে জমাটবদ্ধ চর্বির স্তরকে গলিয়ে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এজন্য আপনি যদি প্রতিদিন একটি করে ডালিম খেতে পারেন তাহলে হৃদরোগের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

হাড়ের ব্যথা দূরীকরণেঃ যেসব ব্যক্তিরা হাড়ের ব্যথায় ভোগেন তারা যদি নিয়মিত ডালিম খায় তবে হাড়ের ব্যথা দূর করতে অনেক উপকারে আসবে। কেননা ডালিমের বিদ্যমান বিভিন্ন প্রদান হয়েছে যা হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা দূরীকরণে সহায়তা করে।

রক্তশূন্যতা দূরীকরণেঃ ডালিমের হয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যে রক্তশূন্যতা দূর করতে অনেক কার্যকরী। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য ও রুচি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিসীম। তাই নিয়মিত ডালিম খেলে আপনার রক্তশূন্যতা দূর হবে ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন।

ডায়াবেটিসে উপকারীঃ যদিও ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া বারণ রয়েছে কিন্তু ডালিম মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডাইবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী ফল। তাই ডায়াবেটিস হওয়া সত্বেও ডায়াবেটিস রোগী নির্দ্বিধায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতো ডালিম খেতে পারবে।

স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ডালিম বা আনার ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি বিশেষ গবেষণায় দেখা গেছে প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্কিন ক্যান্সার রোধ করতে বেদনার রস অনেক সহায়তা করে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আয়রন, ভিটামিন ও মিনারেল। এজন্য আমাদের সকলের প্রতিনিয়ত ডালিম বা আনার খাওয়া জরুরী।

ডালিম বা আনার খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটা ফল যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তেমন প্রতিটা ফলে কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বিশেষ করে যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা রয়েছে, তাদেরকে ডালিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ ডালিম হচ্ছে একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। এছাড়াও যাদের রক্তচাপ কম রয়েছে তারা ডালিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ডালিম খাওয়ার ফলে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে।

সুতরাং, যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা যদি ডালিম খাই তাহলে বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। আবার যারা অতিরিক্ত ধুলাবালি সঙ্গে কাজ করার ফলে এলার্জির সমস্যা হয় তাদের ডালিম খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ডালিম বা আনার খাওয়ার আগে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে উপরোক্ত সমস্যা যেসব ব্যক্তিদের রয়েছে সেসব ব্যক্তিরা ডালিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

লেখকের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, আমাদের সকলের প্রতিনিয়ত শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিনিয়ত ডালিম খাওয়া জরুরী। সঠিকভাবে ডালিম ও বেদানা খাওয়ার ফলে এর উপকারিতা সহজেই পাওয়া যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অল্প কিছু হলেও ডালিম বা আনার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ডালিম ও বেদানার পার্থক্য কি এই সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন।

যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। যদি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url