গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়ার ৭টি টিপস - এই গরমে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখবেন যেভাবে
এই গরমে মানুষের জীবন আস্তে আস্তে হয়ে যাচ্ছে অতিষ্ঠ। গরমে তৈলাক্ত ত্বক অনেকের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়াটা অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন আমাদের ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখতে, তারুণ্যতা ধরে রাখতে এবং আমাদের ত্বককে শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারী পড়ুন।
এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। কেননা এই সময় আমাদের ত্বক অনেক বেশি তৈলাক্ত থাকে। যদি যত্ন না নেয়া হয় তবে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় ত্বকের যত্ন নেয়াটা অনেক বেশি জরুরী। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
গ্রীষ্মকালীন সময়ে তাপমাত্রার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে এজন্য ত্বকের মধ্যে তেলতেলে ভাবটা সামলানো কঠিন হয়ে যায়। সিরোসিয়াস গ্রন্থি এর জন্য দায়ী যা ত্বকের নিচে অবস্থান করে। এর প্রধান কাজ হচ্ছে এটি মানবদেহের চর্বি থেকে তেল উৎপন্ন করে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে আর্দ্র রাখে। সাধারণত যাদের তৈলাক্ত তাদেরকে এই সমস্যায় বেশি ভুগতে হয়।
গরমে এই তৈলাক্ত ভাব থেকে ধুলাবালির মাধ্যমে ত্বকে এসে এক ধরনের ছিদ্র বন্ধ করে দেয় যার ফলে ব্রণ দেখা দেয়। এই সমস্যাটা বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। মুখে সব সময় অনেক তেলতেলা ভাব থেকে যায়। যদি নিয়ম মেনে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় তবে গরমেও আপনি তৈলাক্ত ত্বক ভালো থাকতে সক্ষম হবেন।
গরমে ত্বকে যে ধরনের সমস্যা হয়
প্রচন্ড গরমে আমাদের ত্বক আদ্রতা হারিয়ে ফেল এবং শুষ্কতা দেখা দেয়। আমরা জানি, জন্মগতভাবে ত্বক হচ্ছে তিন প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথমত তৈলাক্ত ত্বক, দ্বিতীয়ত শুষ্ক ত্বক এবং তৃতীয়ত স্বাভাবিক ত্বক। সাধারণত, রোদ এবং ধুলাবালি ত্বকের প্রধান শত্রু।
বেশিরভাগ সময় রোদে থাকার কারণে ত্বকের মধ্যে পোড়া ভাবটা খুব তাড়াতাড়ি দেখা দেয়। লোমের মধ্যে ময়লা জমে মুখে ব্রণ সৃষ্টি হয় এবং সূর্যের আলোয় এক ধরনের দাগ সৃষ্টি হয়ে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। তাছাড়াও ঘাম থেকে ঘামাচি সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে ত্বকের মধ্যে নমনীয়তার ভাব কম হয়ে যায়, আর নমনীয়তার ভাব কমে গেলে ত্বকের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয় এবং চেহারার মধ্যে এক ধরনের ছাপ ফুটে ওঠে। কিছু কিছু সময় অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে হোয়াইটহেডস বাদামি বা কালো রং ধারণ করে যা ব্ল্যাকহেডস নামে পরিচিত।
গরমে ত্বকের ঘরোয়া যত্ন
গরমে তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে শরীরের এক ধরনের দূষিত পদার্থ জমা হয়। এজন্য গ্রীষ্মকালে উচিত বেশি বেশি পানি পান করা। কেননা পানি পান করলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে যা মানব দেহকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। যদি সম্ভব হয় বেশি বেশি পানি পান করার পাশাপাশি ডাবের পানিও খেতে পারেন।
- গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যত বেশি সম্ভব হবে ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে মানবদেহে অন্যান্য তরল ও পানির ভারসাম্যতা বজায় রাখবে। তাছাড়া ফলে থাকা পুষ্টি বা ভিটামিন মানব দেহকে সতেজ রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- গ্রীষ্মকালে রোদের তাপ প্রখর থাকে যার ফলে ত্বক পুড়ে কালচে ভাব চলে আসে। এই কালচে ভাব থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। বাইরে বের হওয়ার পূর্বে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে শরীরের খোলা অংশে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সেই ক্ষেত্রে সানস্ক্রিন বাছাই করবেন আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী।
- গরমে সকলেরই ঘাম হয়ে থাকে এজন্য একটু পর পর মুখে পানির ঝাপটা দিতে থাকুন। যার ফলে ত্বকের মধ্যে ঘাম বসবে না এবং ময়লাও ধরবে না। তাছাড়াও বারবার মুখে পানি দেওয়াটা শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- যে সাবান বা ফেসওয়াশ আমরা শীতকালে ব্যবহার করে থাকি সেগুলা গরমকালে একদমই চলবে না। কেননা গরমকালের নির্দিষ্ট গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব বের হয়। এজন্য গরমে আলাদা ফেসওয়াশ বা সাবান ব্যবহার করা উচিত।
গরমে শিশুদের ত্বকের যত্নে কী করবেন
- গরমে শিশুদের ত্বকের যত্নে প্রথমত খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। শিশুকে এমন খাবার দিতে হবে যাতে গরমেও শিশুর শরীর ঠান্ডা থাকে।
- এই সময়ে শিশুর ত্বকের যত্নের জন্য বেশি বেশি পানি পান করাতে হবে। যদি প্রচুর পরিমাণে ঘাম হয়,সেক্ষেত্রে পানির সঙ্গে লেবুর শরবতও পান করাতে হবে। কেননা আমরা জানি ঘামের সাথে যথেষ্ট পরিমাণে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়।
- এ সময় শিশুকে অবশ্যই ভাজাপোড়া বা তৈলাক তো খাবার থেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা গরমের সময় এসব খাবার খেলে শিশুর নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ধুলাবালি বা ঘাম থেকে ঘামাচির জন্ম হয়। এজন্য গরমে শিশুকে ঘামাচি থেকে বাঁচতে হলে প্রতিনিয়ত ঘাম মুছে দিতে হবে। শিশুদের ত্বক খুবই কোমল হয়ে থাকে যার ফলে শিশুদের ত্বকে অতি দ্রুত ঘামাচি দেখা যায়। এ সময় উচিত হবে শিশুকে নিয়মিত সকাল ও দুপুরে গোসল করানো। এতে করে ঘাম এবং ঘামাচি থেকে অনেকটাই স্বস্তি নিয়ে আসে।
- গরমে শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় বৃষ্টি হলে বা একটু ঠান্ডা আবহাওয়া হলে অভিভাবকরা মনে করে শিশুদেরকে গোসল করানো ঠিক হবে না। এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। কেননা গোসল না করলে ঘাম হওয়ার ফলে,ঘাম বসে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
- শিশু ঘেমে গেলে তার ঘাম সাথে সাথে মুছে দিতে হবে। সেই সাথে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে শিশু ঘামে ভিজে গেলে বা বাইরে থেকে আসলে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করানো যাবে না। কারণ ঘামের সাথে ঠান্ডা পানির মিশ্রণে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
- পরিশেষে, প্রচন্ড তাপদাহে ও গরমে অন্য সবার মত শিশুদেরও নাজেহাল অবস্থা তাই এ সময় ঘাম ত্বক ও ঘামাচি থেকে শিশুকে একটু স্বস্তি দিতে অভিভাবকদের বাড়তি যত্ন তো নিতেই হবে।
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেবেন কি করে
- বারবার হাত মুখ ধুয়ে নিন
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
- বাইরে যাওয়ার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
- বেশি বেশি পানি পান করুন
- ঠিক মেকআপ ব্যবহার করুন
- প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন
- তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন
- ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন
- বেশি বেশি তরল খাবার খান
- ব্লটিং পেপারের ব্যবহার করুন
গরমে ত্বকের যত্নে ৭টি টিপস
গরমের সময় আমাদের ত্বক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। গরমের সময় কিভাবে ত্বকের যত্ন করবেন তার ৭টি টিপস নিচে দেওয়া হলো-
গরমে বাতাসের উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এজন্য বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। শরীরে পানি শুধু আদ্র রাখে না বরং ত্বককে সতেজ এবং সজীব করে তোলে। সেজন্য ত্বককে সুন্দর বা সতেজ রাখতে গরমে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
এই গরমে ত্বকের যত্ন নিতে হলে রোদ থেকে এড়িয়ে চলতে হবে। প্রচন্ড তাপদাহের সময় যথাসম্ভব বাইরে বের হলে সাথে ছাতা রাখতে হবে, তবে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করলে বেশি সুবিধা হয়। যেহেতু রোদের কারণে ত্বকের বেশি ক্ষতি হয়, সেহেতু রোদকে এড়িয়ে চলাটা জরুরী।
গরমের সময়েও ওয়াটার বেজ মশ্চারাইজার ব্যবহারবিধি বন্ধ করবেন না। কেননা ময়েশ্চারাইজার ত্বককে আদ্রতা করার পাশাপাশি ত্বককে নরম রাখতেও সহায়তা করে।
দৈনন্দিন সকালে এবং রাতে ঘুমাইতে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ত্বককে পরিষ্কার রাখুন। এমনটা যদি কখনো হয় যে সারাদিন কোথাও বের হওয়া হয়নি, তারপরেও রুটিন অনুযায়ী ত্বককে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
ত্বককে শীতল রাখতে ও রোমকূপ খোলা রাখতে টোনার সাহায্য করে। এই সময় ভালো কোম্পানির টোনার ব্যবহার করুন। গোলাপজল টোনার হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে।
গরমের সময়ই ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা জরুরী। কেননা এ সময় ত্বকের মরা কোষ দূর করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর কাজে সহায়তা করে। তিন থেকে চার চামচ বেসনের সাথে এক চামচ হলুদ, গোলাপজল এবং দুধ মিশিয়ে পেস্ট আকৃতির মত করে ত্বককে লাগিয়ে রাখুন।
গরমে ত্বকের যত্ন নিতে হলে ত্বক শীতল রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এক চামচ শসার সাথে এক চামচ টক দই দিয়ে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এমতাবস্থায় শরীর খুবই সতেজ অনুভব হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুম, খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম ত্বক ভালো রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যেভাবে গরমেও ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখবেন
একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি এবং বাদাম ইত্যাদির সমন্বয়ে। আপনার ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার নিয়মিত খেতে হবে। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম আছে এমন জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। বাদাম হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী।
অ্যালোভেরা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গরমের সময় সূর্যের তাপদাহ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করতে অ্যালোভেরার খুবই উপযোগী। এজন্য প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে যেসব খাবার খাবেন
গরমের সময় জীবিকা নির্বাহের পরিবর্তন নিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরী। যেমন বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা বা ক্যাপ, রোদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এমত অবস্থায় রোদের প্রখর তাপের ক্ষতি হতে বেঁচে থাকবেন।
ত্বক ভালো রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে ভালো ঘুম। প্রতিদিন যদি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে না পারেন তাহলে ত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, এজন্য বেশি রাত জেগে থাকা ঠিক নয়। একটু সময়ই ধরে যোগ ব্যায়াম করতে হবে এতে করে ত্বক ও শরীর দুটোই ভালো থাকবে।
উপসংহার
গরমে তৈলাক্ত ত্বকে একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন পড়ে। ত্বককে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সাবান থেকে শুরু করে ফেসওয়াশ নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে হবে। এই গরমে সঠিকভাবে ত্বককে পরিষ্কার করলে এইসব সমস্যা আশা করছি এড়ানো যাবে।
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেবেন কিভাবে নিয়ে লেখা আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করুন। স্বাস্থ্য ও সেবা সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url