গরম ভাতে ঘি খাওয়া ভালো নাকি খারাপ?ঘি খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেল করার মাধ্যমে আপনি ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর এই সমস্ত কিছু জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাই দেরি না করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন গিয়ে পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। ঘিয়ে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। যার ফলে নিয়মিত ঘি খাওয়ার কারণে আমাদের শরীর নানাভাবে উপকৃত হয়। ঘি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলেই জানি। দুগ্ধজাত খাবার গুলোর মধ্যে ঘি সবচেয়ে দামি এবং অভিজাত্যপূর্ণ খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। পুষ্টিবিদরা খাবারের গুণাগুণ বিবেচনা করে একে তরল সোনার সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে ঘি এর কোন তুলনা হয় না।
নিরামিষ হোক বা আমিষ যে কোন পদেই সেরা এই উপকরণটি। স্বাদ বৃদ্ধি ছাড়াও ঘি এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। আমাদের শরীরের জন্য ঘি কতটা উপকারী সে সম্পর্কে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
ঘি খাওয়ার নিয়ম
ঘি যেহেতু আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। তাই ঘি খাওয়ার সঠিক নিয়ম যা সকলেরই জানা প্রয়োজন। কারণ প্রতিটি জিনিসেরই উপকারের পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। একটি শক্তি বর্ধক ও উপকারী খাদ্য উপাদান হিসেবে ঘি আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। তবে ঘি খাওয়ার তেমন কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই।
শুধুমাত্র পরিমাণ মতো ঘি খাওয়া উচিত। আপনি যদি পরিমাণের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খেয়ে ফেলেন তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনি যে কোন খাবারের স্বাদ ও সুঘ্রাণ বৃদ্ধিতে ঘি ব্যবহার করতে পারেন। এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার তৈরি করতেও ঘি ব্যবহার করা যায়।
এছাড়াও বাঙালিরা গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সাথে ঘি খেতে খুবই পছন্দ করে। বিভিন্ন ভর্তা তে ঘি ব্যবহার করা হয়। যা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। তবে ঘি খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো আপনি প্রতিদিন এক চামচ ঘি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। সেটা আপনি ভাতের সাথেও খেতে পারেন অথবা যেকোনো খাবার রান্নার ক্ষেত্রেও ঘি ব্যবহার করে আপনি খেতে পারেন।
সে ক্ষেত্রে তেলের পরিবর্তে আপনি ঘি ব্যবহার করতে পারেন। যেকোনো তরকারি কিংবা খাবার ঘি দিয়ে রান্না করলে সেই খাবার থেকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল উৎপন্ন করে না। সেইসাথে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য গুণাগুণ বজায় থাকে খাবারের। তবে মাথায় রাখতে হবে অবশ্যই যেন পরিমাণ মত হয়। পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এছাড়াও সকালে নাস্তার ক্ষেত্রে কিংবা বিকেলে স্ন্যাকস আইটেম এর ক্ষেত্রে রুটি কিংবা চাপাতির উপর সামান্য গেম মিশিয়ে দিলে খাবারে যেমন বাড়তি স্বাদযুক্ত হয় তেমনি খাবার বেশ সুস্বাদু হয়। আপনি যদি একগ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য উপাদান বজায় থাকবে।
এছাড়াও কখনো যদি ঠান্ডা জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এক চামচ ঘি এর সাথে সামান্য গোল মরিচ মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে বেশ উপকার পাবেন। লেখাটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনি এতক্ষণ জানতে পেরেছেন ঘি খাওয়ার তেমন কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। আপনার সুবিধামতো আপনি ঘি খেতে পারেন তবে অবশ্যই পরিমাণমতো।
ঘি এর পুষ্টি উপাদান
ঘি এর পুষ্টি উপাদান জানার আগে আপনাকে জানতে হবে দুধ সম্পর্কে। আমাদের শরীরের জন্য দুধ খুবই উপকারী একটি উপাদান। দুধ আমাদের শরীরের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মেধাবিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনি যদি সরাসরি দুধ খেতে না পারেন তাহলে দুধের তৈরি বিভিন্ন উপাদান খেতে পারেন যা আমাদের শরীরের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকার করে থাকে।
এর মধ্যে তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ঘি। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ঘি কে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ঘি আমাদের শরীরের জন্য খুবই পুষ্টিকর একটি উপাদান। তবে সেটা হতে হবে খাঁটি ঘি। খাঁটি ঘি এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘিতে থাকা পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। ঘিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো হলোঃ
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন ডি
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
- ব্রেন টনিক
- ব্যাটাইরিক অ্যাসিড
- কনজুগেটেড লিলোনেক অ্যাসিড
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- ফ্যাটি অ্যাসিড
এগুলো ছাড়াও ঘিতে আরো অনেক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।
ঘি এর ব্যবহার ও উপকারিতা
ঘি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। ঘিকে মূলত আয়ুর্বেদ ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ শরীরকে সুস্থ রাখতে ও মেধাবিকাশের ক্ষেত্রে ঘি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ঘি তে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের রান্নার কাজে ঘি ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ করে রান্নার স্বাদ ও সুঘ্রাণ বৃদ্ধির জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না যেমন বিরিয়ানি, তেহারি, পোলাও ও খিচুড়ির স্বাদ বৃদ্ধি করতে ঘি ব্যবহার করা হয় পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন খাবারের ঘি ব্যবহার করা হয় । যার কারণে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ দুটোই বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও অনেকে গরম ভাতের সাথে ঘি খেতে পছন্দ করে থাকে। বিভিন্ন ভর্তার স্বাদ বৃদ্ধিতে ঘি ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি নিয়মিত গরুর দুধের তৈরি ঘি খেতে পারেন তাহলে তা আপনার কোলেস্টরেলের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক খাঁটি ঘি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখলে যে সব উপকার পাবেন তা হলো-
- ঘি গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করে
- বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ফর্মুলেশনে ব্যবহৃত হয় ঘি।
- প্রদাহ বিরোধী হিসেবে ঘি খুবই উপকারী।
- আপনার ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে ঘি।
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমিয়ে ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ঘি।
- চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে ঘি।
- নিয়মিত ঘি খেলে মিনারেল ও ফ্যাটি অ্যাসিড ভালোভাবে শোষিত হয়।
- গর্ভকালীন ঘি খাওয়া অনেক উপকারী। তবে ঘি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- ঘি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও মুখের ঘা সহ যেকোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ঘি।
ঘি হলো পুষ্টিকর একটি উপাদান এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ীকারি হিসেবে পরিচিত। অনেকে আছেন ওজন কমানোর জন্য ঘি খান আবার অনেকে আছেন ওজন বৃদ্ধি করার জন্য ঘি খান। আপনার হার্টের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ঘি খুবই উপকারী একটি উপাদান। এজন্য আপনার শরীর সুস্থ রাখতে হলে আপনি নিয়মিত আপনার পাতে ঘি রাখতে পারেন।
প্রতিদিন ঘি খাওয়ার উপকারিতা
ঘি শুধুমাত্র স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে না। বরং ঘির অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করতে ঘি যেমন খুবই উপকারী। তেমনি শরীরের বিভিন্ন কঠিন রোগ থেকে ঘি খুব সহজেই সুস্থ রাখতে পারে। ঘিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও শরীরের পেশিকে শক্তিশালী করতে ও মেদ মেদ ঝরাতে ঘি সাহায্য করে থাকে। হাড় মজবুত করতে শরীরের প্রতিটি কোষ সচল রাখতে ঘীর ঝুড়ি মেলা ভার। তবে অনেকের ধারণা রয়েছে ঘি খেলেই ওজন বৃদ্ধি পাবে। তবে বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খেয়ে থাকেন তাহলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কিন্তু পরিমাণ মতো যদি প্রতিদিন আপনি ঘি সেবন করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আপনি যদি নিয়ম করে পরিমাণ মতো ঘি খেতে পারেন তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকার করবে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেই প্রতিদিন ঘি খেলে কি উপকারিতা পাবেন-
- বিভিন্ন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে, ঘি শরীরকে ভেতর থেকে গরম রাখতে সাহায্য করে এবং ঠান্ডার জন্য খুবই উপকারী। নাকের ছিদ্রে কিছু ঘি লাগালে সংক্রমণ দ্রুত উপশম হবে।
- এছাড়াও ঘি হজম শক্তির উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফোলা ভাব কমে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আপনার পেটের অনেক সমস্যায় কমে যাবে এর কারণে
- আপনি যদি বাতের ব্যথায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত ঘি খেতে পারেন। বাত ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে ঘি সহায়তা করে।
- ঘিতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
- ঘিতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে এটি বদহজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
- চুল , ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ঘি খুবই উপকারী একটি উপাদান। তবে ঘি পরিমিত খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন প্রতিদিন এক চামচের বেশি ঘি না খাওয়ার।
গরম ভাতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা
অনেক বাঙালি রয়েছেন যারা গরম ভাতের সাথে এক চামচ ঘি খেতে খুবই পছন্দ করেন। এই অভ্যাসটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে অনেকে আছেন যারা ভাবেন ঘি খেলে ওজন বেড়ে যাবে। তবে এই কথাটি বিশেষজ্ঞরা মানতে একদমই নারাজ। তাদের মতে যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খান তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
তবে আপনি যদি নিয়ম মেনে প্রতিদিন আপনার খাবারের সাথে এক চামচ ঘি খেতে পারেন তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে যদি আপনি এক চামচ ঘি খেতে পারেন তাহলে মিলবে অনেক উপকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
আপনি যদি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে চান তাহলে প্রতিদিন এক চামচ ঘি খেতে পারেন। কারণ ঘি শরীরে পুষ্টি পৌঁছে দেয়। গরম ভাতের সঙ্গে এক চামচ ঘি খেতে পারেন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে ঘি তে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। তাই ওজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘি খাওয়া উচিত।
আপনার যদি প্রতিদিন গরম ভাতের সাথে ঘি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। নিয়মিত ঘি খেলে নানা ধরনের সংক্রমণ ও অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
শরীরে আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে থাকে ঘি। ঘি এর ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য শরীরকে ভেতর থেকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। আপনার শরীরের যদি কোন কারনে পানির ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে পর্যাপ্ত পানি পানির পাশাপাশি ঘি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এক্ষেত্রে আপনি গরম ভাতের সাথে প্রতিদিন ঘি খেতে পারেন।
আপনার যদি হজম জনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন ভাতের সাথে ঘি খেতে পারেন। হজমে উন্নতি এবং পুষ্টির মান শোষণে কাজ করে থাকে। ঘিতে থাকা প্রচুর পরিমাণ বিউটারিক অ্যাসিড যা ইন্টেস্টাইনর কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
ঘি খেলে মনে এবং শরীরে এক ধরনের শীতলতা অনুভব হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঘি প্রদাহ হ্রাস করে। সেই সঙ্গে ঘি শরীরকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে থাকে।
ঘি এর ছবি
ঘি আমরা কম-বেশি সকলেই চিনি। তবে ভেজাল ঘি এবং খাঁটি ঘির মধ্যে পার্থক্য অনেকেই করতে জানি না। আপনারা যারা খাঁটি ঘি চেনেন না তাদের কে খাঁটি ঘি চেনানোর জন্য নিচে একটা ছবি দিচ্ছি। যা আপনাদের খাঁটি ঘি চেনার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। তবে শুধুমাত্র ছবি দেখে খাঁটি ঘি যাচাই করবেন না।
খাঁটি ঘি চেনার অনেক মাধ্যম রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে আপনারা খাঁটি ঘি এবং ভেজাল ঘির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। চলুন তাহলে এবার নিচের ছবিটি দেখে নেওয়া যাক।
ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রত্যেকটা খাবারেরই কিছু নির্দিষ্ট উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। যদিও উপকারিতার পরিমাণ বেশি থাকে তবুও এর অপকারিতা গুলো মাথায় রাখতে হয়। কারণ উপকারিতা পাওয়ার আশায় আমরা উপাদানগুলো সেবন করে থাকি অথবা খেয়ে থাকি।
সে ক্ষেত্রে যদি উপকারের জায়গায় অপকারিতা বেশি হয় তাহলে তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তেমনি ঘি খাওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। আজ আমরা জানবো ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
ঘি খাওয়ার উপকারিতা
খাঁটি ঘি শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং শরীরের হাড় মজবুত করতে পাশাপাশি শারীরিক বিকাশ ও মেধাবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ঘি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাচনতন্ত্রের উন্নতি করতে, হারের সুস্থতা বৃদ্ধি, করতে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ঘি খুবই উপকারী।
বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে, নিয়মিত যদি আপনি ১ চামচ ঘি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে সুস্বাস্থ্যের শতভাগ দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা রাখে ঘি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘিয়ের কিছু উপকারিতা-
কোষের বৃদ্ধি করতে
ঘিতে রয়েছে ওমেগা থ্রি এর একটি দারুন উৎস। এছাড়াও এদের রয়েছে ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন এ, ই, ডি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট । তাই আপনি যদি নিয়মিত এক চামচ ঘি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তাহলে তা আপনার শরীরের সব কোষের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
চুলের জন্য উপকারী
চুলের যত্নে ঘি খুবই উপকারী একটি উপাদান। ঘি তে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড আপনার চুলের শুধুমাত্র পুষ্টি যোগাবে না বরং এটিকে নরম, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর করে তুলবে। তাই ঘি খাওয়া বা চুলে লাগানো উভয় খুবই উপকারী। এছাড়াও ঘিতে থাকা উপাদান চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে এবং চুলকে কন্ডিশন করার পাশাপাশি ত্বককে হাইড্রেট করে এবং পুষ্টি যোগায়। এছাড়াও আপনার চুলে যদি খুশকি জনিত সমস্যা থেকে থাকে তা থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন নিয়মিত ঘি খাওয়ার মাধ্যমে।
ত্বকের সমস্যা দূর করতে
আকর্ষণীয় ত্বকের অধিকারী হতে রূপচর্চায় ব্যবহার করতে পারেন ঘি। বিভিন্ন প্যাক তৈরি করে আপনি ঘি মুখে মাখতে পারেন অথবা খাওয়ার মাধ্যমেও ঘি এর উপকারিতা পেতে পারেন আপনার ত্বকের জন্য।
সর্দি কাশি সারাতে
হঠাৎ সর্দি কাশি বা কফ থেকে মুক্তি পেতে আপনি ঘি খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এক চামচ ঘি এর সাথে কিছু পরিমাণ গোলমরিচের গুড়া মিশিয়ে আপনি খেলে ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তবে ঘি থেকে সব থেকে বেশি উপকারিতা পেতে হলে রান্নার কাজে ব্যবহার না করে গরম ভাতের সঙ্গে ঘি খাওয়ার অভ্যাস করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
এছাড়াও ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে, স্ট্রেস কমাতে, কোষকে পুনর্জীবিত করতে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ঘি খুবই উপকারি। এছারাও পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা বাড়াতে ঘি এর জুরি মেলা ভার।
ভিটামিন ডি এর উৎস এই ঘি হাড়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হার্ট ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। রোগা ও যারা শারীরিক কসরত করে এমন মানুষ নিয়মিত ঘি খাওয়ার মাধ্যমে বেশি উপকার পাবেন বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা।
ঘি এর ক্ষতিকর দিক
ঘি একটি পুষ্টিকর প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ একটি খাবার। ঘি দ্রুত হজম যোগ্য চর্বি যা শরীরের তাপ উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে। তবে ঘি শরীরের জন্য উপকারী উপাদান হলেও অনেক ক্ষেত্রে শরীরের ক্ষতি করে থাকে। এবার আমরা ঘি এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানব-
সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত ঘির অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় এর ক্ষতির দিকগুলো। যদি আপনি সীমিত পরিমানের পরিবর্তে অধিক ঘি খান তাহলে তা আপনার শরীরের উপকারিতা নয় বরং দেখা দেবে এ খাবারের অপকারিতা। বমি বমি ভাবের সাথে দেখা দিতে পারে অস্থিরতাও।
এছাড়াও আপনারা যারা দৈনিক অফিসে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বসে কাজ করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে ঘি মোটেও খাওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যদি আপনারা ঘি খেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাদের ব্যায়ামের অভ্যাস থাকতে হবে।
এছাড়াও আপনারা যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা ঘি এড়িয়ে চলুন। কারণ ঘি ডায়াবেটিকস রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে।
আশা করছি উপরে উল্লেখিত ক্ষতিকর দিক গুলো আপনারা মাথায় রেখে ঘি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন। তবে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ১ চামচের বেশি না খাওয়ার।
ঘি এর দাম
খাবারের স্বাদ ও সুঘ্রাণ বৃদ্ধি করার জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়। ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলেরই ঘি খুবই পছন্দের একটি খাবার। খাঁটি দুধ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাঁটি ঘি তৈরি করা হয়। বাঙ্গালীদের বিভিন্ন খাবারকে সুস্বাদু করার জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে নিয়ে এসেছে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের খাঁটি ঘি।
আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের শরীরকে করবে শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম। তবে ঘি কেনার আগে অবশ্যই আপনি যাচাই করে নিবেন সেটা খাঁটি ঘি কি না। বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের ঘি রয়েছে তবে খাঁটি ঘির দাম একটু বেশি।
আপনি যখন বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘি কিনতে যাবেন তখন দেখতে পাবেন এক এক ব্র্যান্ডের ঘি এর দাম এক এক রকম। চলো তাহলে এবার আমরা কয়েকটি ব্র্যান্ডের ঘি এর দাম সম্পর্কে জেনে নেই।
খাঁটি ঘি এর মধ্যে খুবই পরিচিত একটি ঘি হল প্রান কোম্পানির ঘি। কারন গ্রাহকদের চাহিদার উপর নির্ভর করে প্রাণ কোম্পানি নিয়ে এসেছে খাঁটি গাওয়া ঘি। এক্ষেত্রে প্রাণ কোম্পানির তিন ধরনের প্যাকেজিং ঘি পাওয়া যায়। সেগুলো হলো-
- ১০০ গ্রাম ঘি - ১৮০ টাকা
- ২০০ গ্রাম ঘি - ৩৩০ টাকা
- ৪০০ গ্রাম ঘি - ৬২০ টাকা
এছাড়াও ঘরের বাজার নামের একটি ওয়েবসাইট আমাদের খাঁটি গাওয়া ঘি প্রদান করে থাকেন। আপনি চাইলে সেগুলো ক্রয় করতে পারেন। তারা সাধারণত দুই ধরনের প্যাকেজিং করে থাকেন। সেগুলো হলো-
- ৫০০ গ্রাম গাওয়া ঘি - ৯০০ টাকা
- ১০০০ গ্রাম গাওয়া ঘি - ১৮০০ টাকা
এছাড়াও আড়ং কোম্পানি বাজারে তিন ধরনের খাঁটি ঘি এর প্যাকেজিং পাওয়া যায়। সেগুলো হলো-
- ২০০ গ্রাম ঘি - ২২০ টাকা
- ৪০০ গ্রাম কি - ৪৫০ টাকা
- ৯০০ গ্রাম ঘি - ৯৫০ টাকা
এছাড়াও খাঁটি ঘি এর মধ্যে খুবই পরিচিত একটি ঘি হল বাঘাবাড়ির মিল্কভিটা ঘি। মিল্ক ভিটার ঘি তিন ধরনের প্যাকেজিং এ আপনি পাবেন। তা হলো-
- ২০০ গ্রাম ঘি - ৩০০ টাকা
- ৪০০ গ্রাম ঘি - ৫৫০ টাকা
- ৯০০ গ্রাম ঘি - ১১৮০ টাকা
এছাড়াও আপনি যদি ফার্ম ফ্রেশ কি কিনতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি তিন ধরনের প্যাকেজিং পাবেন। সেগুলো হলো-
- ২০০ গ্রাম ঘি - ৩৩০ টাকা
- ৪০০ গ্রাম ঘি - ৫৫০ টাকা
- ৯০০ গ্রাম ঘি - ১৩৫০ টাকা
এছাড়াও বাজারে আপনি আরো অনেক ধরনের বা অনেক কোম্পানির ঘি পাবেন। তবে ঘি কেনার পূর্বে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন তা খাঁটি কিনা। তাই আপনার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী আপনি আপনার খাঁটি ঘি বেছে নিতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
ঘি সত্যিই একটি আশ্চর্যকর খাদ্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকেন। এর অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু অপকারিতা রয়েছে। যেগুলো মাথায় রেখে আমাদের ঘি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই আমরা এর থেকে সঠিক উপকারিতা লাভ করব।
প্রিয় পাঠক, আপনার যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে এটি আপনার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে এই আর্টিকেল থেকে তারাও উপকৃত হতে পারে। এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। এরকম আরো আর্টিকেল করতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url