করলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা যা আপনার জীবন বদলে যেতে পারে - করলার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা করেলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে করলার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে পারবেন। করলার অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যদিও এর তেতো স্বাদের জন্য অনেকেই পছন্দ করেন না। এই সবজিটির ঔষধি গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আপনারা অবাক হবেন। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
করলা তেতো স্বাদ যুক্ত হলেও অনেকের কাছে এই সবজিটি খুবই প্রিয়। করলা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন ভাজি, ভর্তা ও রান্না করে। তবে গরম ভাতের সাথে করলা ও আলু ভাজির জুড়ি মেলা ভার। অনেকের কাছে খাবারটি খুবই পছন্দের। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে করলা বেশ কার্যকরী।
করলা উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমাতে সাহায্য করে। করলাতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও বার্ধক্য ঠেকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে করলার জুড়ি মেলা ভার। যারা কৃমি জনিত সমস্যায় ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে ভাইরাস ও কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে এই করলা।
যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম তাদের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তের উপাদান বাড়াতে সহায়তা করে করলা। তাই যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য করলা হতে পারে উত্তম পথ্য। এছাড়াও করলার অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলার জুস হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। যা ডাইবেটিস রোগীকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে।
করলার পুষ্টি উপাদান
বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে তেতো খাবারের জুড়ী মেলা ভার। তেতো খাবারের মধ্যে অন্যতম খাবার হলো করলা। করলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। তো চলুন আজ আমরা এই তেতো সবজিটির গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেই।
যেকোনো খাবারের স্বাস্থ্য গুণ নিয়ে যখন আলোচনা করি সর্বপ্রথম আমাদের জানা উচিত খাবারটির কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই পর্বে আমরা জানবো করলার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেই ১০০ গ্রাম করলার মধ্যে কি পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান।
- শক্তি ১৯ ক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেট ৩.৭ গ্রাম
- ফাইবার ২.৮ গ্রাম
- ফ্যাট ০.১৭ গ্রাম
- প্রোটিন ১ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৮৪ মিগ্রা
- ভিটামিন এ ৪৭১ আই ইউ
- নায়াসিন ০.৪০০ মিগ্রা
- আয়রন ০.৪৩ মিগ্রা
- পটাশিয়াম ২৯৬ মিগ্রা
- ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিগ্রা
- কপার ০.০৩৪ মিগ্রা
- জিংক ০.৮০ মিগ্রা
- সোডিয়াম ৫ মিগ্রা
- ম্যাঙ্গানিজ ০.০৮৯ মিগ্রা
একজন মানুষের সারাদিনে যতটুকু ভিটামিন সি দরকার তার ৯৩% করলা থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ আপনি যদি ১০০ গ্রাম করলা খেতে পারেন তাহলে এর মধ্যে থাকা ৯৩% ভিটামিন সি আপনি গ্রহণ করতে পারবেন। যা আপনার সারাদিনের ভিটামিন সি চাহিদা অনেকাংশে মেটাতে পারে।
এছাড়াও করলায় বিটা ক্যারোটিন, থায়ামিন বি,প্যান্টোথেনিক এসিড,লুটিন জিয়াক্সানথিন সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যামান রয়েছে। যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
করলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেইই করলাম পছন্দ করি। আবার অনেকে এটিকে দুচোখে দেখতে পারিনা। তবে বিভিন্ন সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই সবজি। করলা সাধারণত ভর্তা, ভাজি ও তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই সবজিটি অনেক বেশি উপকারী ।
তাই খাদ্য তালিকায় নিয়মিত করোলা রাখা উচিত। বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে করলার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা অনেক। চলুন জেনে নিই করলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন। করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন ব্যক্তি যদি সপ্তাহে চার দিন এক গ্লাস করে সকালে এবং বিকালে করলার জুস খায় তবে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কেননা এতে চিনির পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে। এর সাথে এটি রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। তাই করলার জুস ডাইবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
কৃমির সমস্যা দূর করেঃ অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন ভাইরাস ও কৃমির সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন বিশেষ করে বাচ্চারা এ ধরনের সমস্যায় বেশি ভোগে। তাই যারা ভাইরাস ও কৃমির সমস্যায় ভুগেন তারা চাইলে করলা রস খেতে পারেন। যা আপনাদের এই ধরনের সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি দেবে। করলার স্বাদ তিতা হওয়ার কারণে বাচ্চাদের খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই এতে মধু মিশিয়ে নিতে হবে।
শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ করলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজম প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে সাহায্য করে। করলা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহ জনিত সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
ওজন কমাতেঃ আপনি যদি বাড়তি ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় আজ থেকে যোগ করুন করলা। কারণ করলাতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এছাড়াও আপনার অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে এই সবজি দারুন উপকারি। তাই অতিরিক্ত ওজন থেকে মুক্তি পেতে আজ থেকে নিয়মিত করলা খাওয়া শুরু করুন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ করলা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি। উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার সমাধান এবং চর্বি কমাতে বেশ কার্যকর এই করলা। করলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
লিভার ভালো রাখতেঃ আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত করলা খাওয়া উচিত। নিয়মিত করলা খাওয়ার ফলে লিভার সুস্থ থাকে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত করলার রস খেলে লিভারের ভেতর জমে থাকা টক্সিন থেকে বের করতে সাহায্য করে। করলায় থাকা পুষ্টিগুন লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই লিভারের যেকোনো অসুখ দূরে রাখতে নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
হজমের সমস্যা দূর করেঃ হজম প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা কমাতে নিয়মিত করলা খাওয়া উচিত। বিভিন্ন সময় আমরা হজম জনিত সমস্যায় ভুগে থাকি। হজম জনিত এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত করলার রস খেতে পারেন। আপনি যদি নিয়মিত করলা রস খান তাহলে আপনার হজম ক্ষমতা অনেক উন্নত হবে। আপনি যদি নিয়মিত করলা জুস খেতে পারেন তাহলে হজমসহ নানা ধরনের জটিল সমস্যা খুব সহজেই সমাধান হয়ে যাবে।
সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে হলে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরী। না হলে ডায়াবেটিকসহ নানান সমস্যা আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এছাড়াও আপনি যদি ডায়াবেটিক সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার জন্য অনেক খাবার খাওয়া বারণ থাকবে। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত করোলা রস খেতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ আপনি যদি নিয়মিত করলা খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়ায় করতে সাহায্য করবে এই করলা।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ নিয়মিত করলা খেলে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি ক্যান্সারের মত মরণব্যাধিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। করলাতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন নামক উপাদান। যা শরীরে ক্যান্সারের কোষ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে থাকে।
করলা খাওয়ার অপকারিতা
করলা স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এই কারণে করলা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত করলা খেলে যে সব ক্ষতি হতে পারে সেগুলো হলো-
- করলার স্বাদ তিতা হওয়ার ফলে এর রস খাওয়ার ফলে বমি হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে করোলা খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে। যাদের শর্করার পরিমাণ কম রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করলা গ্রহণ করবেন।
- শিশুদের জন্য করলা নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা ও বমি হতে পারে। তাই শিশুদের জন্য করলার রস দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
- অত্যাধিক পরিমাণে তিতা করলা খেলে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। অত্যাধিক তিতা করলা খাওয়ার ফলে মাসিকের প্রদাহ বৃদ্ধি এবং গর্ভনিরোধক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে করলা না খাওয়াই ভালো।
- যদিও করলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তবে আপনি যদি নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে করলা খেয়ে থাকেন তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই চেষ্টা করবেন সপ্তাহে চার দিন করে করলা খেতে এবং একবারে একটি করলার চার ভাগের এক ভাগ খেতে। এতে করে এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার শরীরে দেখা দিবে না।
লেখকের মন্তব্য
করলার কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও এর অনেক উপকারী দিক রয়েছে। এর পুষ্টি উপাদানের কথা চিন্তা করে আমাদের সকলকেই সপ্তাহে অন্তত দুইদিন করলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে করে এর ক্ষতিকর দিক থেকে কেমন বেঁচে থাকবো তেমনি এর উপকারিতাও উপভোগ করতে পারবো। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই অভ্যাসটি করে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজন।
প্রিয় পাঠক, আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে এসেছে। করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং করলার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। আপনার যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই এটি আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের মাঝে শেয়ার করুন। আপনার কোন মতামত থাকলে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url