সকালে খালি পেটে ডিম খেলে যেসব উপকার পাবেন - প্রতিদিন ২টা করে ডিম খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে ডিম খাচ্ছেন। কিন্তু আপনি জানেন না কখন কিভাবে ডিম খেলে তা আপনার শরীরের উপকারে আসবে। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্নভাবে ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ডিম খুবই পুষ্টিকর একটি খাদ্য। একজন মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে এই ডিম। তাই ডিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা জেনে রাখা প্রয়োজন। আর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
আমরা সকলেই জানি ডিম একটি সুষম খাবার। অর্থাৎ ডিমের খাদ্য উপাদানের ছয়টি উপাদানই বিদ্যমান। ডিমে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, আমিষ বা প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং পানি রয়েছে। তাই একজন মানুষ যদি নিয়মিত সকাল এবং সন্ধ্যায় একটি করে ডিম খায় তবে তার শরীরের অধিকাংশ পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
আমরা কমবেশি সকলের ডিম খেতে পছন্দ করি। অনেকেই আছেন যারা শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশ খেতে পছন্দ করেন। ডিমের এই সাদা অংশ প্রোটিনে ভরপুর। একজন সুস্থ মানুষ হার্টের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত না করে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারেন। এতে এক দিকে যেমন তার শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে অন্যদিকে তার হার্টের কোন ক্ষতি হবে না।
তবে একবারে অনেকগুলো ডিম খাওয়া উচিত নয়। এতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি কেউ নিয়ম করে দিনে সর্বোচ্চ দুইটি ডিম খেয়ে থাকে তবে তার কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ডিমের পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত নিয়ম করে অন্তত দিনে একটি ডিম খাওয়া।
ডিমের পুষ্টিগুণ
ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার যা প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমের পুষ্টি উপাদান নিচে দেয়া হলো-
- শক্তিঃ ১৫৫ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিনঃ ১২.৬ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেটঃ ১.১২ গ্রাম
- ফ্যাটঃ ১০.৬ গ্রাম
- জিংকঃ ১.২৯ মিলিগ্রাম
- ফসফরাসঃ ২০০ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়ামঃ ১৫০ মিলিগ্রাম
- লৌহঃ ১.২ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়ামঃ ৫০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়ামঃ ১০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এঃ ১৪০ μg
- রিবোফ্লাভিনঃ ০.৫ মিলিগ্রাম
- থায়ামিনঃ ০.০৬৬ মিলিগ্রাম
- ফোলেটঃ ৪৪ μg
- পানিঃ ৭৫ গ্রাম
- কোলেস্টেরলঃ ৪২৪ মিলিগ্রাম
এছাড়াও ডিমে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে। যেমনঃ ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই ইত্যাদি।
সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম এমন একটি খাবার যা ছোট বড় উভয়ই পছন্দ করে থাকে এবং বিভিন্ন রূপে পরিবেশন করা যায় এই ডিম। কিন্তু আপনি কি জানেন সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে? যদি না জেনে থাকেন তাহলে কোন সমস্যা নেই। কারণ এখন থেকে আপনিও জানতে পারবেন সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়ার উপকারিতাগুলো হলো-
কাজের শক্তি বাড়ায়ঃ সকালে খালি পেটে একটি করে ডিম খেলে দেহে অ্যানার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা শরীরের শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং সারাদিন শরীর চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ ডিমের কুসুমে প্রায় ২১০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। তবে, ডিমের মধ্যে থাকা কোলেস্টেরল ভালো কোলেস্টেরল বা HDL-এর মাত্রা বাড়ায়। HDL-এর মাত্রা বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক অংশ কমে যায়। যা একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণের মাত্রা প্রায় ৭০% হয়ে থাকে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করেঃ ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ডিম খেলে দৃষ্টিশক্তির উন্নত হয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ডিম একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার যা পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এটি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে, ফলে খুব দ্রুত ওজন কমে যায়।
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা আপনার চুলের পুষ্টি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এর ফলে চুল পড়া রোধ হবে। চুল ঘন কালো হবে।
আপনি যদি সকালে খালি পেটে একটি করে ডিম খেতে পারেন তাহলে উপরে দেওয়া সমস্ত উপকারিতা গুলো পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে আপনাকে একটি পরামর্শ দেবো সেটি হলো ডিমের কুসুম বেশি খাবেন না কারণ ডিমের কুসুমে কোলেস্টরেলের পরিমাণ বেশি থাকে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
আপনি যদি প্রতিদিন সকালে একটি করে ডিম খান তাহলে কোন সমস্যা হবে না। যদি বেশি ডিম খেতে চান তাহলে কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশ খেতে পারেন।
খালি পেটে ডিম খাওয়ার অপকারিতা
খালি পেটে ডিম খাওয়ার উপকারিতা নাই বললেই চলে কিন্তু কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কিছু কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে যেগুলো নিচে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই অপকারিতা গুলো সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এই অপকারিতা গুলো কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারেঃ ডিমে আছে কোলেস্টেরল যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তাদের খালি পেটে ডিম খাওয়া উচিত হবে না।
হজমের সমস্যা হতে পারেঃ ডিমে থাকা প্রোটিন হজম হতে একটু সময় লাগে। তাই খালি পেটে ডিম খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বদহজম হতে পারেঃ ডিমে রয়েছে ফ্যাট এটি হজম করতে সময় নেয়। তাই খালি পেটে ডিম খেলে বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পেটে গ্যাস হতে পারেঃ ডিমে ফ্যাট এবং প্রোটিন রয়েছে যা হজম হতে সময় লাগে। তাই খালি পেটে ডিম খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে।
আপনি যদি নিয়মিত একটি করে ডিম খান তাহলে এই সমস্ত অপকারিতা গুলো আপনার দেখা দিতে নাও পারে। কিন্তু আপনি যখন অতিরিক্ত পরিমাণে ডিম খেতে যাবেন তখন এই সমস্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য অবশ্যই পরিমাণ মতো ডিম খাওয়ার চেষ্টা করবেন এতে আপনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন।
রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ডিম খেতে পছন্দ করি। কিন্তু এর ভেতরে অনেকে আছেন যারা প্রশ্ন করেন যে, রাতে ডিম খাওয়া যাবে কিনা এবং রাতে ডিম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা কেমন। স্বাস্থ্যকর ওয়েবসাইটে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জানতে পারলাম যে, রাতেও ডিম খাওয়া যাবে এবং এর অনেকগুলো উপকারিতাও রয়েছে। সেগুলো হলো-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ডিমে থাকা ভিটামিন ডি, সেলেনিয়াম, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রাতে ডিম খেলে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ঘুম ভালো হয়ঃ ডিমে থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড মেলাটোনিন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। মেলাটোনিন হরমোন ঘুমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাতে ডিম খেলে ঘুম তুলনামূলক অনেক ভালো হয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ডিমে থাকা প্রোটিন শরীরকে দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ রাখে। তাই রাতে ডিম খেলে রাতের বেলা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য হয়।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ডিমে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান হার্টের স্বাস্থ্য ভালো করে। তাই রাতে ডিম খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ভালো কোলেস্টেরল জমা হয়ঃ প্রতিদিন রাতে একটি করে ডিম খেলে হাড় এবং মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে। আবার রাতে ডিম খেলে ভালো কোলেস্টেরল জমা হয় এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগেই ভিটামিন ডি তৈরি করতে শুরু করে।
মন শান্ত রাখেঃ ডিমে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফেন দেখা যায়, যা মানসিক চাপ রক্ষা করে। ট্রিপটোফেন মন শান্ত করে এবং শরীরে থাকা হরমোনের ব্যাঘাত কমাতে সাহায্য করে।
আপনাদের যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তারা রাতে ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। যদি খেতে চান তাহলে প্রতিদিন ১টি ডিমের বেশি না খাওয়াই ভালো। যদি একটির বেশি ডিম খেতে মন চায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন এতে আপনার স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে।
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি ভাবে অপকারিতাও রয়েছে যা আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন কারণ কোন জিনিস খাওয়ার আগে অবশ্যই তার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত। সিদ্ধ ডিম খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে যা নিচে তুলে ধরা হয়েছে।
উপকারিতা
ওজন কমাতেঃ সিদ্ধ ডিমে তুলনামূলকভাবে ক্যালরি অনেক কম থাকে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। এতে খুব দ্রুত ওজন কমে যাবে। সেই সাথে শরীরে প্রতি চাহিদার ঘাটতি দেখা দিবে না।
মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেঃ সিদ্ধ ডিমের কোলিন উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে।
দাঁত ও হাড় শক্তিশালী করেঃ শিশুদের নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খাওয়ানোর ফলে তাদের দাঁত ও হাড় শক্তিশালী ও মজবুত হয়।
প্রস্তুত করতে ঝামেলা নেইঃ ডিম সিদ্ধ করতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। অল্প সময়ের ভিতর ডিম সিদ্ধ করে খাওয়ার উপযোগী করে তোলা যায়।
খরচ কমঃ প্রোটিনের অন্যান্য উৎসের তুলনায় ডিম তুলনামূলক দাম কম এবং বিভিন্ন বসত বাড়িতে এই ডিম দেখা যায় কিন্তু দামে সস্তা হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডিম।
অধিক রান্নায় ব্যবহারঃ সিদ্ধ ডিম আপনি বিভিন্ন খাবার রেসিপির সাথে ব্যবহার করতে পারেন। যেমনঃ স্যান্ডউইচ, সালাদ, রামেন বা নুডুলস, স্যুপের টপিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন খুব সহজে।
এছাড়াও সিদ্ধ ডিম খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। কেউ যদি নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খায় তবে তার চোখের সানি পড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। সেই সাথে চুল ও নখ ভালো রাখতে সিদ্ধ ডিমের বিকল্প নেই। এছাড়াও নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খাওয়ার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
অপকারিতা
ডিমের পরিমাণঃ প্রথমেই আসে ডিমের পরিমাণের কথা আপনি যদি প্রতিদিন তিন থেকে চারটি করে ডিম খান তাহলে আপনার শরীর অতি দ্রুত বাড়তে শুরু করবে এবং বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেজন্য ডিমের পরিমাণ নির্ধারণ করে ডিম খাওয়া উচিত।
উচ্চ কোলেস্টেরলঃ ডিমে কোলেস্টরেলের পরিমাণ প্রায় প্রায় 200 এর অধিক হয়ে থাকে হোক সেটা সিদ্ধ কিংবা অন্য কিছু। তাই আপনার রক্তে যদি কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে হৃদরোগের সম্ভাবনা হতে পারে।
পুষ্টি উপাদানঃ সিদ্ধ ডিমের তুলনামূলক ভাবে পুষ্টিগুণ অনেকাংশে কম থাকে কম থাকে বলে এই নয় যে সব পুষ্টিগুণ শেষ হয়ে যায়। তাই অধিক পরিমাণে ডিম খাওয়া উচিত নয়।
দূষণের ঝুঁকিঃ সিদ্ধ ডিম কিংবা কাঁচা ডিম সালমোনেলা দূষণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যা খাদ্যের বিষক্রিয়া হতে পারে। সেজন্য ডিম সিদ্ধ বা রান্না করার সময় নজর দিতে হবে।
স্বাদ কম লাগাঃ আমাদের অনেকের কাছে সিদ্ধ ডিম খেতে ভালো লাগে না। তাদের মুখের রুচি বাড়াতে তাদের খাবার তালিকায় ডিম পরিবেশন করতে পারেন।
উপরে উল্লেখিত অপকারিতা গুলো যে কোন ভাবে ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই এই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে ডিম খাওয়ার আর কোন অপকারিতা নেই। বরং ডিম আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত একটি করে ডিম খাওয়া।
ভাজা ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এই ডিম বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল যে ভাজা ডিম খেলে কি উপকার মিলবে? এর সহজ উত্তর হল হ্যাঁ। ডিম আপনি যেভাবেই খান না কেন তার উপকার আপনার মিলবেই তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভাজা ডিম খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে।
একটি ভাজা ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদার প্রায় ১০% পূরণ করে। প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রোটিন পেশী, হাড়, ত্বক এবং অন্যান্য টিস্যু গঠনে সাহায্য করে। আবার ভাজা ডিমে ভিটামিন ডি, বি৬, বি১২, লুটিন, জেক্সানথিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও দেখা যায়।
ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে, বি৬ স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী, বি১২ রক্তের কোষ সুস্থ রাখেন, এবং লুটিন এবং জেক্সানথিন চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। ভাজা ডিম একটি পুষ্টিকর এবং কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার। একটি ভাজা ডিমে প্রায় ৯০ ক্যালোরি থাকে। তাই, আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে ভাজা ডিম খেতে পারেন।
কারন, ভাজা ডিমে থাকা লুটিন এবং জেক্সানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, ভাজা ডিমে রয়েছে কোলিন যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। কিন্তু, ভাজা ডিম স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত হবে না। কারণ ভাজা ডিমে তেল ব্যবহার করা হয়, তাই আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলেন তাহলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
আবার আপনার যদি হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি থাকে তাহলে ভাজা ডিম আপনার জন্য উপকার বয়ে আনতে পারবে না বরঞ্চ এটি আপনার বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। ভাজা ডিম খাওয়ার চাইতে ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া উত্তম হবে এতে আপনার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতা মিলবে।
ডিম কিভাবে খেলে উপকার বেশি
অল্প খরচের তুলনায় ডিমে অনেক পুষ্টিগুন পাওয়া যায়। এরপরেও আমাদের মাঝে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে ডিম কিভাবে খেলে উপকার বেশি মিলবে? এর উত্তর হলো সিদ্ধ করে। ডিম বিভিন্ন পদ্ধতি খাওয়া যেতে পারে, যেমন সেদ্ধ, ভাজা, পোচ, ওমলেট ইত্যাদি। এদের মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি হলো সিদ্ধ করে খাওয়া।
কারন সিদ্ধ ডিমে, ডিমের সমস্ত পুষ্টিগুন অক্ষত থাকে। অন্যদিকে, ভাজা ডিম রান্নার জন্য তেল ব্যবহার করা হয়, যা নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যেরক বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। পোচ ডিম এবং ওমলেটের ক্ষেত্রেও তেল ব্যবহার করা হয়, কিন্তু আপনি সপ্তাহে দুই তিন দিন ভাজা, পোচ কিংবা ওমলেট খেতে পারেন মুখের স্বাদ পরিবর্তনের জন্য।
কিন্তু চিকিৎসকেরা বলে থাকেন যে আপনি যদি নিয়মিত ডিম খেতে চান এবং বেশি উপকার পেতে চান তাহলে ডিম সিদ্ধ করে খেতে পারেন। এতে আপনার কোন ধরনের ক্ষতি হবে না। কিন্তু আপনার যদি ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরলের থাকে তাহলে ডিম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আশা করি ডিম কিভাবে খেলে উপকার বেশি এই উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন।
সিদ্ধ ডিম কখন খেতে হয়
সিদ্ধ ডিম কখন খেতে হয় এটি নির্ভর করছে আপনার স্বাস্থ্য এবং রুচির উপর। কারন সিদ্ধ ডিম আপনি যখন তখন খেতে পারেন। সকালে নাস্তার সাথে আপনি সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। আবার দুপুরের খাবারের সাথেও খেতে পারে। আবার অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে সিদ্ধ ডিম খেয়ে থাকেন। এখন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন যে কোন সময় সিদ্ধ ডিম খেতে আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।
আপনি যদি সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে চান তাহলে সকালের নাস্তার সাথে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। এতে করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। সিদ্ধ ডিম কখন খেতে হয় এই বিষয়ে চিকিৎসকরা কি পরামর্শ দিয়ে থাকে চলুন এখন সেটি জানা যাক। চিকিৎসকেরা সকালে কিংবা রাতে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনি যদি সারাদিন পরিশ্রমের কাজ করে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সকালে একটি করে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন।
হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই হাফ বয়েল ডিম খেতে ভীষণ পছন্দ করি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে হাফ বয়েল ডিম খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। ডিম মানেই পুষ্টিগুনে ভরা, সেটি আপনি যেভাবেই খান না কেন। হাফ বয়েল ডিম প্রোটিনের একটি ভালো উৎস বলা যেতে পারে।
কারন হাফ বয়েল ডিমে পেশী গঠন, ক্ষত নিরাময়, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হাফ বয়েল ডিমে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, এবং সেলেনিয়াম থাকে। আবার হাফ বয়েল ডিম হৃদ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এবং হাফ বয়েল ডিম মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী।
এছাড়াও হাফ বয়েল ডিমের আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে আপনি যদি নিয়মিত জিম করে থাকেন তাহলে আপনার ডায়েটে নিয়মিত একটি করে হাফ বয়েল ডিম রাখতে পারেন। এটি আপনাকে খুব দ্রুত সুঠাম দেহের অধিকারী করে গড়ে তুলবে।
ডিম হাফ বয়েল করার নিয়ম
প্রথমে একটি পাত্রে পানি নিন। ডিম ডুবে যাওয়ার মতো পরিমাণে পানি নিতে হবে। এরপর পাত্রটি চুলায় বসিয়ে জ্বাল দিন পানি ফুটে উঠলে ডিম দিয়ে দিন। পানি ফুটতে শুরু করার পর থেকে ডিম সিদ্ধ হতে সময় লাগবে পাঁচ মিনিট। পাঁচ মিনিট পর ডিম গরম থেকে নামিয়ে নিন এবং কলের ঠান্ডা পানিতে ১ মিনিট রেখে দিন।
এরপর ঠান্ডা হয়ে গেলে সাবধানে ডিমের খোসা ছাড়িয়ে নিন তারপর দেখুন সুন্দর হাফ বয়েল ডিম হয়ে গেছে এরপর খেয়ে ফেলুন। এটাই হলো ডিম হাফ বয়েল করার নিয়ম সঠিক নিয়ম।
প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন একটি করে ডিম খান আর আপনার শরীরের ম্যাজিক দেখুন। প্রতিদিন ডিম খাওয়ার বিভিন্ন রকমের উপকারিতা রয়েছে যা উপরে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আপনি যদি নিয়মিত প্রতিদিন ডিম খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পেতে থাকবেন নিয়মিত ডিম খাওয়ার ফলে।
যা দেখলে আপনি নিজেই চমকে যাবেন। আপনি যদি প্রতিদিন ডিম খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে, স্বাস্থ্য সুন্দর হবে এবং চোখের দৃষ্টির উন্নতি হবে। এছাড়াও আপনার শরীরে যদি জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা হয়ে থাকে সে সমস্ত ব্যথা আস্তে আস্তে ভালো হতে শুরু করবে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা আপনি পেয়ে যাবেন যা বলে শেষ করার মত নয়।
প্রতিদিন ২টা করে ডিম খেলে কি হয়
আমরা অনেকেই নিয়মিত একটি করে ডিম খেয়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে দিনে দুটি ডিম খেলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এই কথাটা কতটুকু সত্য চলুন চিকিৎসকের আলোকে জেনে নেওয়া যাক। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে দুটি ডিম খাওয়া ক্ষতিকর নয় বরং আপনি যদি নিয়মিত প্রতিদিন দুটি করে ডিম খেতে পারেন তাহলে মিলবে অনেক উপকার।
গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ছয় সপ্তাহ দুইটি করে ডিম খেলে মিলবে নানা উপকার। যেমনঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, চোখ ভালো রাখা, হাড় শক্ত, বিষণ্ণতা, রক্তশূন্যতা, হৃদপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি কমায়, চুল, ত্বক ও নখ ভালো রাখা এবং মানসিক চাপ থেকে রক্ষা পাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা মিলবে যদি টানা ৬ সপ্তাহ দুইটি করে ডিম খেতে পারেন। যারা এতদিন জেনে এসেছেন যে নিয়মিত দুইটি করে ডিম খেলে ক্ষতি হয় তারা নিশ্চিন্তে এখন থেকে নিয়মিত দুইটি করে ডিম খেতে পারেন।
কাঁচা ডিম খেলে কি হয়
কাঁচা ডিম খেলে কি হয় এই বিষয়ে আমরা অনেকেই সঠিক তথ্য জানিনা। আমরা অনেক সময় শখের বসে কিংবা বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে কাঁচা ডিম খেয়ে থাকি এবং আমরা মনে করি যে কাঁচা ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু এর কোন বৈজ্ঞানিক দলিল পাওয়া যায়নি। এ থেকে বোঝা যায় যে কাঁচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।
ঢাকা মেডিকেলের ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন যে কাঁচা ডিম খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এমনকি মারাও যেতে পারে কিন্তু এটি সচরাচর দেখা যায় না কাঁচা ডিম খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হল।
হজমজনিত সমস্যাঃ কাঁচা ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিন থাকে, যা কাঁচা অবস্থায় হজম করা কঠিন। কাঁচা ডিম খেলে হজমজনিত সমস্যা যেমন বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
সালমোনেলোসিসঃ কাঁচা ডিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা খাদ্যজনিত অসুস্থতার একটি সাধারণ কারণ। সালমোনেলোসিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, জ্বর, বমি, এবং পেটে ব্যথা।
বায়োটিনের অভাবঃ কাঁচা ডিমের সাদা অংশে অ্যাভিডিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা বায়োটিন নামক ভিটামিনের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। বায়োটিন ভিটামিন চুল, ত্বক এবং নখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত কাচা ডিম খেতে থাকেন তাহলে চুল পড়া, তখন নষ্ট হওয়া, নখ ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অ্যালার্জিঃ কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ডিমের প্রোটিনে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে এবং কাঁচা ডিম খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই আমরা সবাই আশা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকবো।
আপনি যদি নিয়মিত কাচা ডিম খেতে থাকেন তাহলে এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ আপনাকে আক্রমণ করতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
ডিম একটি সস্তা ও সহজলভ্য খাবার হওয়া সত্ত্বেও এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। একজন মানুষের পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশই পূরণ করে থাকে একটি ডিম। তাই কেউ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চায় তাহলে তার উচিত নিয়মিত একটি করে ডিম খাওয়া। তবে কখনোই অধিক পরিমাণে ডিম খাওয়া উচিত নয়। এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি তো আপনার আপনজনের মধ্যে শেয়ার করবেন। এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url