OrdinaryITPostAd

ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি ব্ল্যাক কফির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ব্ল্যাক কফি আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত একটি পানীয়। এটির অনেক উপকারিতা রয়েছে। ব্ল্যাক কফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভূমিকা

কফি হলো একটি বহুল প্রচলিত পানীয় যার খ্যাতি সারা পৃথিবী জুড়ে রয়েছে। এটি পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কফি তৈরি হয় কফি বীজ নামের এক ধরনের বীজকে পুড়িয়ে গুড়া করে। এটি মূলত কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ।

বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধর পর্যবেক্ষণ করলেনের কফি পাওয়া গেলেও অনেকের কাছে ব্ল্যাক কফি বেশি জনপ্রিয়। আমাদের দেহের ক্লান্তি কাটিয়ে মন মেজাজ ফুরফুরে রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে থাকে কফি। আর তাই আমাদের মধ্যে অনেকেরই সারাদিনের সঙ্গী এক কাপ কফি। এমন অনেক লোক রয়েছে যাদের এক কাপ কফি ছাড়া চলে না।

আমরা অনেকেই কফিতে দুধ, ক্রিম, চিনি ইত্যাদি মিশ্রিত করি। এতে কফির স্বাদ অনেক বেড়ে গেলেও এর উপকারিতা অনেকাংশে কমে যায়। কফি শুধু আমাদের ক্লান্তি দূর করে বিষয়টি এমন নয় বরং এটি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এছাড়াও যাদের ওজন জনিত সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কফি খেতে পারেন। এটি শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।

কফির ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ইথিওপিয়া নামক শহরের সর্বপ্রথম কফির প্রচলন শুরু হয়। তবে কফি সর্বপ্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে আরব দেশে। এর পর এটি ধীরে ধীরে ইউরোপ হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের কফি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে আলাদা আলাদা গুরুত্ব বহন করে থাকে।

যেমন-তুর্কি কফি বিখ্যাত তার ঐতিহ্যবাহী প্রস্তুত প্রণালী ও পরিবেশনার জন্য। অন্যদিকে ইতালীয় এসপ্রেসো বিখ্যাত তার তীব্র স্বাদ ও কম সময়ে প্রস্তুতির জন্য। এছাড়াও আরবিকা নামের কফি তার স্বাদে ও সুগন্ধে বিখ্যাত। অন্যদিকে রোবাস্টা বিখ্যাত তার তিক্ত স্বাদ ও অতিরিক্ত ক্যাফেইনের জন্য। আবার ব্ল্যাক কফি তার উপকারিতার জন্য বিখ্যাত।

অর্থনৈতিক দিক বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অর্থনীতিতে কফি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেহেতু সারা পৃথিবীব্যাপী কফির কদর রয়েছে তাই কফির রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করা সম্ভব। যা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাহায্য করবে। যদিও কফির অনেক উপকারিতা রয়েছে তবুও অধিক পরিমাণে কফি সেবন করলে তার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এই আর্টিকেলে আমরা ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

ব্ল্যাক কফির উপকারিতা

ব্ল্যাক কফি মূলত তৈরি করা হয় দুধ, চিনি ছাড়া শুধুমাত্র কফি দানার গুড়া ও পানি মিশিয়ে। এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে ব্ল্যাক কফির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর উপকারিতার জন্য। কেউ যদি নিয়মিত ব্ল্যাক কফি সেবন করেন তবে তার শরীরের জন্য এটি অনেক বেশি উপকার বয়ে আনবে। ব্ল্যাক কফির উপকারিতা গুলো হলো-

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ ব্ল্যাক কফিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। এতে ফলের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। আরে এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য কতখানি উপকারী তা আমরা সকলেই কমবেশি জানি। নিয়মিত কফি খাওয়ার ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পূরণ হয়ে যায়।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেঃ ব্ল্যাক কফিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। সেই সাথে এটি আমাদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ ব্ল্যাক কফি সাধারণত দুধ চিনি ছাড়া তৈরি করা হয় বলে এতে ক্যালরি অনেক কম থাকে। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্লোরোজেনিক এসিড যা আমাদের শরীর থেকে খুব দ্রুত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। সেই সাথে শরীরে যেন পুনরায় মেদ জমে না যায় সেই আশঙ্কা দূর করে। এর ফলে খুব দ্রুত ওজন কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পেটের মেদ কমাতেঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই পেটের মেদ কমানোর জন্য শরীরচর্চা করে থাকি। কিন্তু শরীরচর্চার কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য শরীরচর্চা করার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে ব্লাক কফি পান করা উচিত। কেননা এতে করে আমাদের বিপাক ৫০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।

হার্টকে শক্তিশালী করতেঃ কফিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্টকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণা অনুযায়ী দেখা যায় যদি কেউ নিয়মিত দুই কাপ কফি সেবন করে তবে তার হৃদপিণ্ড অনেক বেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ ব্ল্যাক কফি পাকস্থলীর বিপাকীয় হার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কেউ যদি নিয়মিত ব্ল্যাক কফি সেবন করতে পারেন তবে এটি তার হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

চোখ সুস্থ রাখতেঃ ব্ল্যাক কফিতে বিদ্যমান ক্লোরোজেনিল অ্যাসিড চোখ সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কফি খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে সঠিক পরিমাণে ব্ল্যাক কফি সেবন করে থাকে তবে তার প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল গুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। আর এই প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল গুলোর প্রধান কাজ শরীরে ইনসুলিন হরমোন তৈরি করা এবং ইনসুলিন হরমোন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর এই ইনসুলিন হরমোন আমাদের ব্লাড সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাই কেউ যদি নিয়মিত সঠিক পরিমাণে ব্ল্যাক কফি সেবন করতে পারেন তবে আপনি টাইপ টু ডায়াবেটিস এর হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

লিভারকে সুস্থ রাখতেঃ ব্ল্যাক কফি আমাদের লিভারের জন্য অনেক বেশি উপকারী। বিশেষ করে এটি লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ব্ল্যাক কফি খাওয়ার পর এটি আমাদের পাচনতন্ত্রের মধ্যে গিয়ে হজম হওয়ার পর সেখান থেকে পেরাজেনথিন নামক এক ধরনের পাচক রস মিশ্রিত হয় যা লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি লিভারের বিভিন্ন রোগ যেমনঃ লিভার টিউমার, লিভার ফাইপ্রোসিস, অ্যালকোহলিক/নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্ল্যাক কফির মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা যকৃতের ক্ষতিকারক এনজাইনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

শরীরকে চাঙ্গা করতেঃ কোন কাজ একটানা অনেকক্ষণ করার ফলে আমাদের শরীরে ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। এই ক্লান্তি দূর করে শরীরকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে এক কাপ কফি। কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি আমাদের অ্যাড্রেনালিন লেভেল বাড়াতে সাহায্য করে। তাই এক কাপ কফি সেবন করলে তা শরীরকে চাঙ্গা করে পুনরায় নতুন উদ্যমে কাজ করতে সাহায্য করে।

মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতেঃ আমরা অনেক সময় হতাশাগ্রস্থ হয়ে কোমল পানীয় সেবন করে থাকি যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু যদি আমরা কোমল পানির পরিবর্তে ব্ল্যাক কফি খেতে পারি তবে তা আমাদের হতাশা কমাতে সাহায্য করবে। কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে। সেই সাথে মেজাজ খিটখিটে ভাব দূর করে।

পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতেঃ কফি মূত্রবধক তাই আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শরীর থেকে ক্ষতিকারক উপাদান ও ব্যাকটেরিয়া বের করে দিয়ে পাকস্থলী পরিষ্কার করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে ব্ল্যাক কফি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।

ত্বক ভালো রাখতেঃ ব্ল্যাক কফি ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কফি দিয়ে তৈরি স্ক্র্যাব ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। সেই সাথে নিয়মিত ব্ল্যাক কফি খাওয়ার ফলে এটি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

পারকিনসনস ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের নিউরোলজিক্যাল ডিজেনারেটিভ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পারকিনসনস ও আলঝেইমার রোগ। নিয়মিত কফি খাওয়ার ফলে এসব রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্ষতিকারক টক্সিন অপসারণেঃ কফি আমাদের শরীরের মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে মূত্রের সাহায্যে আমাদের শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া ব্ল্যাক কফির মধ্যে রয়েছে আরো বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ব্ল্যাক কফির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি টু, বি থ্রি এবং রয়েছে পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এর মত উপাদান। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও চাঞ্চল্য রাখতে সাহায্য করে।

ব্ল্যাক কফি খাওয়ার নিয়ম

আমরা কমবেশি সকলেই কফি পছন্দ করি। ব্ল্যাক কফির এর বেশ কিছু উপকারিতার কথা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। তবে এই উপকারগুলি তখনই পাওয়া সম্ভব যখন এটি সঠিক নিয়মে গ্রহণ করা হয়। তবে আমাদের অনেকেই হয়তো এই নিয়মটি না জানার কারণে এর থেকে উপকার পাওয়ার পরিবর্তে এটি আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কফি খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যেগুলো হলো-

সকাল দশটার আগে কফিকে না বলুন
গবেষণায় জানা গেছে বেশিরভাগ মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর পরই কফির কাপ হাতে নেন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠার দুই এক ঘন্টা পর্যন্ত কর্টিসন নামক এক ধরনের হরমোনের মাত্রা আমাদের শরীরে বেশি থাকে। এজন্য ঐ টাইম আমাদের কফি পান করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং একটু সময় বাড়ার সাথে সাথে বা আমরা যখন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন আমাদের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে। যখন ঐ হরমোন কমতে শুরু করে তখন কফি পান করা উচিত।

দুপুর এবং রাতের খাবারের সঙ্গে কফি নয়
আমরা অনেকেই দুপুরে এবং রাতে খাওয়ার পর কফি খেয়ে থাকি। যা একেবারেই উচিত নয়। কমপক্ষে দুপুরের খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা পরে কফি পান করা উচিত। এতে করে ঘুম ঘুম ভাব কেটে যাবে। কিন্তু রাতে খাবারের পরে কফি খাওয়া উচিত নয়। এতে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত করতে পারে বা ঘুম কম হতে পারে।

অল্প পরিমাণে কফি পান করুন
দিনের শুরুতে বড় একমত কফি নিয়ে অনেকেই বসে যান। কিন্তু এক মগ কফির তুলনায় কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে অল্প করে কফি পান করলে আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু একসাথে অনেকগুলো কফি নিয়ে বসে যায় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

ব্ল্যাক কফি খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি
ব্ল্যাক কফিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন। এই ক্যাফেইন পান করার ফলে আমাদের মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যার কারণে আমাদের শরীর থেকে অনেকটা পানি বের হয়ে যায়। তাই কফি বা এ ধরনের পানীয় পান করার আগে শরীরে পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে হবে। এজন্য আমাদের পানি পান করতে হবে।

অল্প ঘুমের জন্য কফি
অনেক সময় কাজ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং কাজের ফাঁকে আমরা বিরতির নিয়ে থাকি। ঐ সময় অনেকে পাওয়ার ন্যাপ নিতে পছন্দ করে। এমনকি আমাদের ক্লান্তি ছেড়ে ফেলতে এ পাওয়ার ন্যাপের কোন তুলনা হয় না। এজন্য আপনি যদি ক্লান্তি কাটিয়ে চাঙ্গাভাবে কাজ চালিয়ে যেতে চান তাহলে দিতে হবে একটি ছোট ঘুম। এই ছোট ঘুমের আগে হালকা করে কফি পান করে নিলে ঘুম থেকে উঠার পর আপনি আরও ঝরঝরে অনুভব করবেন।

ক্যাফেইন গ্রহনের মাত্রা জেনে রাখুন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম কফি গ্রহণ নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তাই প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ কফি বা ক্যাফেইন আপনার শরীরে প্রবেশ করতে সেটা আপনার খেয়াল রাখা দরকার। অতিরিক্ত ক্যাফে অনুগ্রহ করার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কফি কিভাবে পান করবেন
কফির আসল কার্যকারিতা আসলে নির্ভর করে আপনি কিভাবে কফি পান করছেন তার ওপরে। কারণ কফিতে বাড়তি দুধ এবং চিনি পান করার ফলে কফির আসল কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য ব্ল্যাক কফি খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপকারি। তবে যে কোন উপায়ে পান করার আগে আপনি চিনির পরিবর্তে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে করে কফির পুষ্টিগুণ আরো বৃদ্ধি পায়।

ব্ল্যাক কফির অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। ব্ল্যাক কফি যদিও এক প্রকার ফলের বীজ থেকে তৈরি হয় তবুও এটি অতিরিক্ত খেলে তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। উপরে আমরা ব্ল্যাক কফি খাবার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এই পর্বে আমরা ব্ল্যাক কফির অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ব্ল্যাক কফ এর অপকারিতা হলো-
  • অতিরিক্ত কফি পান করার ফলে আমাদের শরীরের ভিতরে হরমোনের চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক উদ্বেগ বাড়তে পারে। তাই সবসময় পরিনতই পরিমাণে কফি পান করা উচিত।
  • ব্ল্যাক কফি হার্টের জন্য ভালো হলেও অতিরিক্ত সেবনে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কেননা কপিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
  • ব্ল্যাক কফি সবসময় উচ্চ ক্যাফেইন যুক্ত হয়ে থাকে। উচ্চ ক্যাফেইন যুক্ত হওয়ার কারণে অনেকের পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকের পেটে এসিডিটি বা পেট জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি গ্রহণ করার ফলে আমাদের দেহ প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন লৌহ, জিংক, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি শোষণ হতে বাধা পায়। এজন্য কখনো অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি পান করা ঠিক নয়। অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি সেবন আমাদের শরীরের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • অতিরিক্ত ব্লগ কফি খাওয়ার কারণে আমাদের ঘুমের জটিলতা বা ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ তাই সবসময় রাতে ঘুমানোর আগে কফি পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  • কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন শরীর থেকে ক্যালসিয়াম নির্মাণের হার বৃদ্ধি করে। যার ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে অস্টিওপরোসিস রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এজন্য অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
  • অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত কফি সেবন করলে আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। কেননা কফি মূত্রবর্ধক হওয়ার কারণে এটি শরীর থেকে পানি শোষণ করে নেয়। এছাড়াও কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন আসক্তি সৃষ্টি করতে পারে। তার জন্য কফি খাওয়া ছেড়ে দিলে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রশিক্ষণ বা শিখার সময় কফি ভালো নাকি খারাপ

মানুষ প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করে। আমরা যখন কোন কিছু শিখতে চাই বা কোন প্রশিক্ষণে যাই তখন তার আগে আমাদের অল্প পরিমাণ কফি পান করা উচিত। কেননা কফি পান করার ফলে আমাদের মন চাঙ্গা ও সতেজ থাকে। সেই সাথে স্মৃতিশক্তি আরো প্রখর হয়।

এর ফলে আপনি যা শিখবেন বা শেখাবেন তা দীর্ঘক্ষণ মনে থাকবে। এছাড়াও আপনি কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে অল্প করে কাউকে পান করে নিতে পারেন। এতে করে ওই কাজের প্রতি একঘেয়েমি না এসে মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারবেন।

ব্ল্যাক কফির পুষ্টিগুণ

ব্ল্যাক কফি সাধারণত কফি বীজ পুড়িয়ে গুড়া করে তৈরি করা হয়। ব্ল্যাক কফি খুব কম ক্যালোরি সম্পন্ন হয়ে থাকে। নিচে প্রতি ১০০ গ্রাম ব্ল্যাক কফির পুষ্টিগুণ আলোচনা করা হলো-
  • ক্যালরিঃ ০
  • শর্করাঃ ০
  • চর্বিঃ ০
  • ফাইবারঃ ০
  • প্রোটিনঃ ০.১ গ্রা.
  • সোডিয়ামঃ ২ মি.গ্রা.
  • পটাশিয়ামঃ ৪৯ মি.গ্রা.
  • কোলেস্টেরলঃ ০
  • ভিটামিন সিঃ ০
  • ক্যালসিয়ামঃ ২ মি.গ্রা.
  • ম্যাগনেসিয়ামঃ ৩ মি.গ্রা.
  • ক্যাফেইনঃ ৪০ মি.গ্রা.
তবে কফিতে দুধ ও চিনি মিশ্রিত করলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও কফিতে সামান্য পরিমাণ ভিটামিন বি২, বি৩, বি৫, ম্যাঙ্গানির সহ আরো পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে।

লেখকের মন্তব্য

বর্তমান পৃথিবীতে যেসব পানীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে তার মধ্যে কফি একটি। এটি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। কফির অনেক উপকারিতা থাকলেও আমাদের নির্দিষ্ট নিয়মে ও পরিমান মত কফি গ্রহণ করা উচিত। এতে করে একদিকে যেমন আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হবো না অন্যদিকে তেমনি এর উপকারিতা গুলো লাভ করব।

প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে এসেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই তা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে তা আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url