লেবু কেন খাবেন? এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আমরা সকলেই কম বেশি লেবু খেয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকে জানে না লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এই সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। লেবু শুধু খাবার কাজে নয় এটি রূপচর্চা ও খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই লেবু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
বাঙ্গালীদের খাওয়ার প্লেটে এক টুকরো লেবু থাকবে না এটা কখনো হবার না। লেবু বাঙ্গালীর জীবনের সাথে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আবার এই গরমে শরীরকে একটু আরাম দিতে আমরা অনেকেই লেবুর পানি পান করি । লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও ফাইবার ।
অতিরিক্ত গরমে শরীরকে ঠান্ডা করে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসতে সাহায্য করে লেবুর শরবত। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে রূপচর্চা পর্যন্ত সকল কাজেই লেবু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেবুর রস থেকে শুরু করে এর খোসা পর্যন্ত আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
আরো পড়ুনঃ মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই লেবুর যেমন অনেক উপকারীতা রয়েছে আবার তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে চলুন আমরা লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
লেবু খাওয়ার উপকারিতা
শরীরের ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরকে চাঙ্গা করতে লেবুর উপকারিতা রয়েছে। লেবুর যেমন অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি গরম ভাতের সাথে এক টুকরো লেবু চিপে নিলে তা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আবার এমন অনেক মানুষ আছে যারা সকালে লেবু চা খেতে পছন্দ করেন। এই পর্বে আমরা লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। লেবু খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো-
ভিটামিন সি এর ভালো উৎসঃ লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান। একজন মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার অনেকাংশ ভিটামিন সি এক টুকরা লেবুতে বিদ্যমান থাকে। তাই কেউ যদি নিয়মিত লেবু খান তবে তার শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি পূরণ হয়ে যাবে।
রক্ত পরিশোধনেঃ লেবু রক্ত পরিশোধন করে। নিয়মিত লেবু খাওয়ার ফলে রক্তের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন শরীর থেকে বের হয়ে যায় এবং রক্ত পরিষ্কার থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে ও ত্বককে সুস্থ রাখে।
শ্বাসনালী ও গলার প্রদাহ সারাতেঃ শ্বাসনালী ও গলার প্রদাহ সারাতে লেবুর রস কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে আমাদের শরীরের কোথাও কোন ক্ষত হলে তা দ্রুত ভালো করে তুলতে সাহায্য করে এই লেবুর রস।
ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে। লেবুর রসের বিদ্যমান পেকটিন ফাইবার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও লেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন সি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন কমে যায়। লেবুতে বিদ্যমান পেকটিন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
পানি শূন্যতা দূর করেঃ লেবুর তৈরি শরবত শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধেঃ লেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন সি অ্যান্টিসেপটিক এর কাজ করে এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ লেবুর রস হজম শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে লেবুর রস গ্যাস্টিকের সমস্যা প্রতিরোধ করতে ও আলসার সারাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ লেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন সি ক্যান্সার কোষ গঠন প্রতিরোধ করে। এর ফলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়াও লেবুতে ফ্লেভানয়েড নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি শরীরের বিদ্যমান ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে বাইরে বের করে দেয়। যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
হার্টের জন্যঃ লেবুর রসে বিদ্যমান পটাশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডিটক্সিফিকেশনঃ সামান্য গরম পানিতে লেবুর রস পরিপাক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে এবং লিভার কে সুস্থ রাখে। সেই সাথে এটি শরীরের সমস্ত টক্সিন দূর করে দেয়।
ত্বকের জন্যঃ লেবুর রস ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই সাথে ব্রণে লেবুর রস দিলে ব্রণ দূর হবে আর নতুন ব্রণ উঠতেও এই রস বাধা প্রদান করবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ লেবু রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত লেবু খেতে পারেন। তাহলে এর থেকে উপকার পাওয়া যাবে।
সাইট্রিক এসিডের উৎসঃ লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। যা মানুষের কিডনি পাথর হওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত লেবু খেলে কিডনি পাথর হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রক্তস্বল্পতা রোধ করেঃ লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকার পাশাপাশি এতে সামান্য পরিমাণ আয়রনও বিদ্যমান রয়েছে। আর এ আয়রন লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে কাজ করে থাকে। এর ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ আমাদের অনেক সময় মুখে তীব্র দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এই দুর্গন্ধ দূর করতে এক টুকরো লেবু যথেষ্ট। এর জন্য এক টুকরো লেবু মুখের মধ্যে কিছুক্ষণ রেখে দিন এরপর দেখবেন মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে সুগন্ধ বের হচ্ছে।
বয়সের চাপ দূর করতেঃ আমাদের ত্বকের বিভিন্ন কারণে বলিরেখা সৃষ্টি হয়। এই বলিরেখা দূর করার জন্য আমরা অনেকে অনেক রকম উপায় অবলম্বন করে থাকি। লেবুর সাহায্যে এই বলিরেখা খুব সহজে দূর করা যায়। এর জন্য ত্বকের বলিরেখায় নিয়মিত ১৫ মিনিট করে লেবুর রস দিয়ে রাখতে হবে এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে কিছুদিনের মধ্যে ত্বকের বলি লেখা দূর হয়ে যাবে।
লেবুর খোসার উপকারিতা
লেবুর মতো লেবুর খোসারও অনেক গুনাগুন রয়েছে। এই পর্বে আমরা লেবুর খোসার উপকারিতা গুলো আলোচনা করব। সেগুলো হলো-
- লেবুর খোসায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- লেবুর খোসা খারাপ কলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- লেবুর খোসা হাড়ের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
- লেবুর খোসায় রয়েছে পেকটিন ,ক্যালসিয়াম ,ভিটামিন সি, ফাইবার এবং খনিজ। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
- লেবুর খোসার মধ্যে পটাশিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য লেবুর খোসা বেশ কার্যকর। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- লেবুর খোসা মুখে বা কনুইয়ের কালো দাগ, বলিরেখা, বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
- লেবুর খোসাতে থাকা ফাইবার পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- এটি হজমের সাহায্য করে এবং পেট ফোলা রোধ করে।
লেবু ও গরম পানির উপকারিতা
- প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সারা দিনের হজম শক্তি ভালো থাকে।
- ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে দেহের পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক থাকে।
- এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- লেবু ও গরম পানি দেহের হরমোনকে স্বয়ংক্রিয় রাখে।
- লেবু ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে খেলে দেহের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
লেবুর শরবত এর উপকারিতা
আমরা অনেক সময় কাজ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে শরীরকে ঠান্ডা করতে ও ক্লান্তি দূর করতে লেবুর শরবত খেয়ে থাকি। বিশেষ করে এই গরমের সময় লেবুর শরবত বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। এই পর্বে আমরা লেবুর শরবতের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। লেবুর শরবতের উপকারিতা গুলো হলো-
পানি শূন্যতা দূর করেঃ গরমের দিনে আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। লেবুর শরবত আমাদের শরীরের পানির ভারসাম্য ঠিক রেখে শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্লান্তি দূর করেঃ এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত নিমেষে ক্লান্তি দূর করে দেয়। এছাড়াও মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা দূর করে এই লেবুর শরবত।
ওজন কমায়ঃ ঔষধের চেয়েও দ্রুত গতিতে লেবু ওজন কমায়। কারণ লেবু শরীরে অতিরিক্ত চর্বি ছড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবুতে বিদ্যমান পেকটিন ফাইবার ক্ষুদা কমাতে সাহায্য করে। এজন্য নিয়মিত লেবুর শরবত খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত ওজন কমে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ লেবুতে থাকা ভিটামিন এ, সি, ই ,বিটা ক্যারোটিন পাকস্থলী, স্তন, জরায়ু, লিভার, ফুসফুস ও অগ্নাশয় এর ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পাকস্থলীর পাথর দূর করেঃ লেবুতে থাকা চর্বি বিরোধী উপাদান যা চর্বিকে গলাতে সাহায্য করে। এছাড়াও পাকস্থলীর পাথর দূর করতে দরকার উচ্চ ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার যা লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে।
শক্তি বৃদ্ধি করেঃ ক্লান্ত শরীরে এক গ্লাস লেবুর শরবত আমাদের শরীরকে চাঙ্গা করতে এবং শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। কেননা লেবুর শরবত শর্করার একটি ভালো উৎস। যা শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
মানসিক শান্তি প্রদানঃ লেবুর শরবত আমাদের সতেজতা ও ঠান্ডা অনুভুতি দেয়। যার ফলে আমরা মানসিকভাবে শান্তি পাই এবং এটি মেজাজ উন্নত করতেও কাজ করে থাকে।
ঠান্ডা জনিত রোগ উপশম করেঃ হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে চায়ের মত খেলে অল্পতে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা দূর হয়। তাছাড়াও লেবুস্নায়ু ও মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়। আবার এটি ফুসফুস পরিষ্কার করে অ্যাজমা সমস্যা সমাধান করে।
লেবু দিয়ে রূপচর্চা
লেবুর অসংখ্যা গুনাগুন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গুণ হলো এটি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। লেবু শুধু খাওয়ার কাজে নয় এটি রূপচর্চার কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেবু দিয়ে রূপচর্চার উপকারিতা গুলো হলো-
লেবু ত্বকের কালচে ভাব দূর করে
অনেকেরই কালচে কোনই ও হাঁটুর মধ্যে কালসে ভাব রয়েছে। এ সকল কালচে দাগ দূর করতে আক্রান্ত স্থানে লেবু ও লবণের মিশ্রণ ঘষে নিন। ফলাফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে দুই দিন কিংবা তিনদিন লেবু ও লবন এর মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। এতে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
মাথার ত্বকে ব্যবহার
লেবুতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক ও প্রদাহরোধক উপাদান মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে। লেবু খুশকি ও রুক্ষতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। চিটচিটে ভাব দূর করে ফলে খুশকি দূর হয়। তাই মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে এলোভেরা জেল এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। বিশ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এর ফলে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে যায়।
দাঁতে ব্যবহার
ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে লেবুর তৈরি হোয়াইটিং প্যাক বেশ কার্যকর। এর জন্য ব্রেকিং সোডা ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশে পেস্ট তৈরি করে নিন এবং তা দাঁতের উপরে পাতলা করে প্রলেপ দিয়ে রাখুন। তারপর টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজে নিন এবং পানি দিয়ে কুল কুচি করুন। দেখবেন দাঁত ঝকঝক করবে ।
ঠোঁটে ব্যবহার
গরমকালের ঠোঁট শুষ্ক ও মলিন হলে। এই সমস্যা দূর করতে লেবুর রস ও লাল চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। লেবু ও চিনির এই সংমিশ্রণটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এবার লেবু ও চিনি সংমিশ্রণ আলতোভাবে ঠোঁটে মালিশ করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মুখে ব্যবহার
মুখের ত্বক ভালো রাখতে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। বয়সের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা করে, ত্বকের ক্ষয় দূর করে। লেবু ত্বক মসৃণ রাখে গরম ও ঘামের কারণে হওয়া তৈলাক্ত ভাব কমায়। এমনকি লেবু ত্বকের মৃতকোষ এবং ত্বক ফাটা দূর করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে তাই লেবু ব্যবহার করুন। লেবুর রসের সঙ্গে ডাবের পানি মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকে খুব ভালো কাজ করে।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
লেবু পানি
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে একটি লেবু অর্ধেক করে কাটুন। এক গ্লাস পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করুন। এটি দিনে যেকোনো সময়ে পান করতে পারেন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনার ওজন কমে যাবে
আদা ও লেবু
আদা ও লেবু ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। আদা ও লেবু মিশ্রিত পানিও নিয়মিত পান করলে বাড়তি মেদ দূর হয়ে যায়। এর ফলে আপনি হয়ে উঠেন সুঠাম দেহের অধিকারী।
মধু ও লেবু
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দুই চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু মিশন এবং এটি সকালে খালি পেটে পান করুন এতে করে দ্রুত ওজন কমবে।
পুদিনা পাতা ও লেবু
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দুই চা চামচ লেবুর রস ও কয়েকটি পুদিনা পাতার কচি মেশান। পানিটি প্রতিদিন পান করুন । এটি স্বাদ বাড়াতে এতে মধু ব্যবহার করতে পারেন।
শশা ও লেবু
লেবু ও শশা স্লাইস করে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। শশায় থাকা পটাশিয়াম হজমের গন্ডগোল দূর করে এবং লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার অপকারিতা
কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। লেবুর অনেক গুনাগুন থাকা সত্ত্বেও এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে যে যে সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-
- রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে মুখমণ্ডলের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- পেট খারাপ হতে পারে।
- এসিডিটি এবং বমির আশঙ্কা থাকে।
- মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
- দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়।
- ডিহাইড্রেশন তৈরি হয়।
- সানবার্ন হতে পারে।
- উৎসেচক ভেঙ্গে যায়।
- কিছু মানুষের ত্বক লেবুর রসের প্রতি এলার্জিক হয়ে থাকে। এর ফলে লেবুর সংস্পর্শে আসলে তাদের ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
লেবুর রসের উপকারিতার তুলনায় এর ক্ষতিকর দিক অনেক কম। অতিরিক্ত লেবু না খেলে এসব সমস্যা দেখা দেয় না। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত অল্প পরিমাণ লেবুর রস গ্রহণ করা। এতে করে আমরা এর থেকে অনেক বেশি উপকৃত হব।
লেখকের মন্তব্য
লেবু অনেক উপকারী একটি ফল। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফাইবার সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, শরীরকে সুস্থ রাখতে, বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। শুধু খাওয়ার কাজে নয় এটি খাবারের স্বাদ পরিবর্তন করতে রান্নার কাজে, রূপচর্চার কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এর যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই ক্ষতিকর দিকের কথা মাথায় রেখে এটি আমাদের খেতে হবে। একবারে কখনোই অনেক লেবু খাওয়া উচিত নয়। এতে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি তো আপনার আপনজনের মধ্যে শেয়ার করবেন। এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url