মুখে টমেটো ব্যবহারের অপকারিতা - টমেটো বেশি খেলে যেসব বিপদ হতে পারে
প্রিয় পাঠক, আপনি কি নিয়মিত টমেটো খাওয়ার পাশাপাশি এটি দিয়ে রূপচর্চাও করছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। এ আর্টিকেলে আমরা মুখে টমেটো ব্যবহারের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই মুখে টমেটো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই এর অপকারিতা সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি টমেটো বেশি খেলে কি কি বিপদ হতে পারে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। টমেটো অনেক উপকারী একটি সবজি হলেও কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
টমেটো খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি বা ফল। অনেকে এটিকে ফল হিসেবে গ্রহণ করলেও সবজি হিসেবে এর পরিচিতি বেশি। শুধু খাওয়ার কাজে নয় রূপচর্চার কাজেও এটিকে ব্যবহার করা হয়। মুখের ত্বক ভালো রাখতে টমেটো দিয়ে রূপচর্চা কমবেশি সবাই করে থাকেন।
কিন্তু টমেটো দিয়ে মুখে ফেসিয়াল করার কারণে ত্বকের যেই ক্ষতি হচ্ছে সেই সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন। লাল লাল টমেটো মুখে লাগিয়ে ফর্সা হওয়ার পরিবর্তে লাল ফুসকুড়ি হয়ে ত্বকে জ্বালাপোড়ার সমস্যা তৈরি হতে পারে যার ফলে আপনার সৌন্দর্যহানি হয়। এই আর্টিকেলে গেলে আমরা মুখে টমেটো ব্যবহারের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
মুখে টমেটো ব্যবহারের অপকারিতা
টমেটোর অপকারিতার কথা শুনে হয়তো চমকে উঠছেন। কিন্তু চমকে উঠলেও এটি সত্যি যে টমেটো যদি অতিরিক্ত মুখে ব্যবহার করা হয় তাহলে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় যদিও এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে মুখে টমেটো ব্যবহারে মুখের চামড়াও উঠে যেতে পারে। সেই সাথে মুখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে। জ্বালাপোড়াই নয় মুখে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। টমেটোতে এক ধরনের সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে যা অত্যাধিক পরিমাণে অম্ল উৎপাদন করতে পারে।
যার ফলে মুখে টমেটো লাগানোর ফলে অ্যালার্জিও হতে পারে। হয়তো আপনি মুখের ট্যান ট্যান ভাব উঠাতে টমেটো ব্যবহার করছেন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারে ত্বক রুক্ষ হয়ে লাল লাল র্যাশ বের হতে পারে।
মেয়েদের ফেসিয়ালে টমেটো ব্যবহারের অপকারিতা
মেয়েদের ফেসিয়ালে টমেটোর অপকারিতা অনেক রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। বেশিরভাগ মেয়েরাই ফেসিয়াল করতে গিয়ে টমেটো ব্যবহার করে থাকেন। শুধু তাই নয় টমেটোকে পেস্ট করে নিয়ে মুখে ঘষতে থাকেন। যার ফলে ত্বক ধীরে ধীরে রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের জন্যে টমেটোর অপকারিতা না জেনে উল্টোপাল্টা ভাবে ব্যবহারের ফলে দেখা দেয় ত্বকের নানা সমস্যা।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে যেসব খাবার খাবেন
ফেসিয়াল করার পূর্বে মেয়েরা যদি ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে না নেয় তাহলেও উঠতে পারে ছোট ছোট অনেক ব্রণ। ছোট ছোট ব্রণে সারা মুখ ভরে যেতে পারে যার ফলে তাকে দেখতে অনেক কুৎসিত লাগে। মেয়েদের ফেসিয়াল করার সময় টমেটো অতিরিক্ত ঘষার কারণে যেই ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দেয় সেগুলো হলো-
- অতিরিক্ত মাত্রায় যখন টমেটোর পেস্ট দিয়ে ফেসিয়াল করা হয়, তখন মুখের শুষ্ক ভাব অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে ত্বকের কোমলতা খুব সহজেই হারিয়ে যায়।
- মেয়েরা যদি টমেটোর পেস্ট ব্যবহারের পূর্বে খুব ভালোভাবে মুখ ধুয়ে না নেয় তাহলে টমেটোর ফেসিয়াল করেও হতে পারে নানা সমস্যা। এই সমস্যা নিয়মিত টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহারের ফলে আরও বেশি বেড়ে যেতে পারে।
- ফেসিয়ালের সময় আপনি হয়তো মুখের মৃত চামড়া তুলে ফেলার জন্যে টমেটো ব্যবহার করছেন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে যখন মুখে ঘষতে থাকবেন তখন এর কারণে আপনার মুখে জ্বালাপোড়াও করতে পারে।
- টমেটোর পেস্ট মুখে পরিমাণমতো মাখার কারণে যদি মুখে এলার্জি উঠে যায়, তাহলে টমেটোর পেস্ট ব্যবহার করা আপনার জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে। এই সমস্যা হলে টমেটোর পেস্ট ব্যবহার না করাই উত্তম।
- যদি টমেটোর ফেসিয়াল করার পূর্বে গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার না করে নেন, তাহলে মুখে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। যার ফলে মুখ দেখতে খুবই অসুন্দর লাগতে পারে।
- মেয়েদের অনেক বেশি পরিমাণে টমেটোর ফেসিয়াল করার অভ্যাস থাকায় অনেক সময় পূর্বের দিনের রেখে দেওয়া টমেটোর পেস্ট ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু যখনই আপনি পূর্বের রেখে দেওয়া টমেটো পেস্ট ব্যবহার করবেন, তখন এতে ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে টমেটোর পেস্ট মুখে ব্যবহার করার ফলে ত্বকের নতুন সমস্যার উৎপত্তি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত টমেটোর পেস্ট ব্যবহার করা যেমন ক্ষতিকর ঠিক তেমনি পুরনো দিনের টমেটোর পেস্ট মুখে লাগানো ত্বকের জন্যে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।
- মেয়েরা অনেক সময় মুলতানি মাটির সাথে টমেটোর প্যাক মিক্স করে নিয়ে ব্যবহার করে। কিন্তু যদি আপনার ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ হয় তাহলে মুখের চামড়া আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- যদি আপনি মুখ পূর্ব থেকেই তোয়ালে চাপা দিয়ে ভাপ না নিয়ে থাকেন, তাহলে টমেটোর পেস্টের সাথে অতিরিক্ত আরও কিছু উপাদান যুক্ত করে নিয়ে ব্যবহার করার ফলে সমস্যা হতে পারে।
- মেয়েরা অনেক সময় বয়সের ছাপ কমানোর জন্যে টমেটো দিয়ে ফেসিয়াল করে থাকে। মনে করে থাকে বয়সের ছাপ টমেটোর ফেসিয়াল করলে কমতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সৌন্দর্য বাড়ার বদলেও ত্বক অমসৃণ হয়ে পড়তে পারে।
- শুধু হালকা গরম পানিই নয় যদি আপনার টমেটোর প্যাক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি ব্যবহার না করেন, তাহলে সেটিও আপনার মুখের ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ভাব কমিয়ে দিতে পারে।
ছেলেদের মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা
ছেলেদের মুখে টমেটোর অপকারিতা অনেকেরই অজানা থাকতে পারে। যদিও অনেক ছেলেরাই টমেটো ব্যবহার করাটা একটু বেশি পছন্দ করতে পারে। যেহেতু মেয়েদের মুখের ত্বক এবং ছেলেদের মুখের ত্বক কখনোই এক নয়। কারণ ছেলেদের দাঁড়ি থাকার কারণে শেভ করতে হয়। শেভ করার ফলে ছেলেদের দাড়ি যখন ফেলে দেওয়া হয়।
তখন মুখের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ থাকতে পারে। এই সময় ছেলেরা মনে করে থাকে যে, টমেটোর ফেসপ্যাক লাগিয়ে রাখলেই হয়তো মুখের ত্বক অনেক বেশি কোমল হবে এবং রুক্ষ ভাব কমে যাবে। কিন্তু এই রকম নাও হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় ছেলেদের মুখে টমেটোর প্যাক লাগানোর ফলে মুখের নানা জায়গায় কালচে ছোপ পড়ে যেতে পারে।
যখন বারবার মুখের উপরে টমেটোর প্যাক দিয়ে ঘষা হবে তখন মুখের চামড়া নিজের থেকেই কোমলহীন হয়ে পড়ে। দেখা দেয় অনেক বেশি পরিমাণে চুলকানি হয়। যার ফলে লাল লাল ছোট ছোট দানার মত বের হতে দেখা যায়। যা মুখের সৌন্দর্য অনেকটুকু হানি করে ফেলে। তাই ছেলেদের টমেটোর ফেসিয়ালে একটু সতর্ক হতে হবে।
মুখে টমেটো ঘষলে কি ধরনের অপকার হয়
টমেটো মুখে ঘষলে যেই ধরনের অপকার হতে পারে তা যদি না জানেন, তাহলে প্রতিনিয়ত ত্বকের ক্ষতি হতেই থাকবে। হয়তো বুঝতেই পারবেন না কিভাবে ত্বকের ক্ষতি করছেন। আর তা যদি হয় মুখে তাহলে তো কথাই নেই। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখা আপনার জন্যে ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে যেতে পারে। যেহেতু টমেটোতে ভিটামিন সি রয়েছে।
তাই আপনি হয়তো অনেক আনন্দে মুখে টমেটো এর ফেসিয়াল করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুদিন ব্যবহার করার পর মুখে টমেটোর অপকারিতা গুলো বুঝতে পারবেন। তবে মুখে টমেটো ব্যবহারের কারণে যেই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন সেগুলো হলো-
মুখের ত্বকে র্যাশ দেখা দেয়ঃ মুখে হয়তো র্যাশ উঠে ভরে যাচ্ছে কিন্তু আপনার মাথায় কিছুই আসছে না যে এই সমস্যা কেন হচ্ছে। নিয়মিত টমেটোর ফেসপ্যাক অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করার ফলে আপনার মুখের ত্বকে ইনফেকশন হয়ে র্যাশ দেখা দিচ্ছে।
ত্বকের রুক্ষ ভাব বেড়ে যাওয়াঃ মনের অজান্তে হয়তো টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করেই যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি কি বলতে পারবেন ত্বকের রুক্ষ ভাব কি কারণে হচ্ছে? ত্বকের রুক্ষ ভাব আপনার অতিরিক্ত টমেটোর ফেসিয়াল করার কারণে ধীরে ধীরে বাড়তে পারে যা ত্বকের সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়।
ব্রণ উঠতে পারেঃ নিয়মিত মনের সুখে হয়তোবা টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করছেন আর মুখে ব্রণ উঠে ভরে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি শুধু ভেবেই যাচ্ছেন টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ব্রণ কমে যায় এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। হতে পারে এটি শুধু আপনার কল্পনায়। কিন্তু বাস্তবে তার কতটুকু প্রতিফলন হচ্ছে তা আপনি ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন।
ত্বকে জ্বালাভাব হতে পারেঃ বারবার মুখে হাত দিচ্ছেন আর জ্বালাভাব অনুভব করছেন। কিন্তু এই সমস্যা আপনার টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করার কারণে হচ্ছে না তো? যখন টমেটোর ফেসপ্যাক ফেসিয়ালের জন্যে বারবার মুখে ঘষতে থাকেন, তখন মুখের চামড়া উঠে যেয়ে ত্বকে জ্বালাপোড়ার ভাব সৃষ্টি হয়।
চুলকানি হতে পারেঃ যাদের অনেক বেশি চুলকানি বা এলার্জি রয়েছে তারা টমেটোর ফেসিয়াল থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন। যদি আপনি নিয়মিত টমেটোর ফেসিয়াল করে থাকেন তাহলে আপনার চুলকানিও হতে পারে।
মুখে কালচে ছোপ পড়ে যায়ঃ মুখের কালচে ছোপ ছোপ দাগ টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করার কারণে দেখা দিতে পারে। কালচে দাগ খুব সহজে মুখ থেকে উঠতে চায় না। তাই হয়তো আপনি আরও বেশি করে টমেটোর প্যাক গালে ঘষছেন যেন দাগ উঠে যায়। কিন্তু সেটি নাও হতে পারে উল্টো আপনার মুখে আরো কালচে ভাব পড়ে যেতে পারে। তাই টমেটোর ফেসিয়াল করার সময় সতর্ক হয়ে ব্যবহার করতে হবে।
লাল লাল ছোট দানা সৃষ্টিঃ মুখে অতিরিক্ত টমেটো ব্যবহারের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মুখে লাল লাল ছোট ছোট দানা সৃষ্টি হয়। এতে করে আপনার চেহারা ভালো হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হয়ে যায়।
মুখে টমেটো কিভাবে লাগালে ক্ষতি বেশি হয়
মুখে টমেটো অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণও বেশি হতে পারে যা হয়তো আপনার চিন্তারও বাহিরে থাকবে। টমেটো খুব ভালোভাবে বেটে নিয়ে মুখে ব্যবহার করার রীতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। কিন্তু এই টমেটো আপনার মুখের ত্বকে লাগালে আপনি যেমন উপকার পেতে পারেন ঠিক তেমনি আপনার ক্ষতিও হতে পারে।
দীর্ঘদিন ব্যবহার করার ফলে সেই ক্ষতির মাত্রা কমানো আপনার জন্যে কঠিনও হতে পারে। মুখে টমেটো ঘষলেই আপনি শুধু সুন্দর হয়ে যাবেন না। বরং ত্বক আরও বেশি অসুন্দর হয়ে উঠতে পারে। তাই মুখে টমেটো লাগিয়ে ক্ষতি বাড়াতে না চাইলে এটি ব্যবহারের সময় সচেতন হয়ে ব্যবহার করতে হবে। সেই সাথে অতিরিক্ত পরিমাণ টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
টমেটো বেশি খেলে যেসব বিপদ হতে পারে
সারা বিশ্বেই টমেটোর কদর রয়েছে এর পুষ্টিগুণের জন্য। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার পরেও অতিরিক্ত পরিমাণ টমেটো খেলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। টমেটো বেশি খেলে যেসব বিপদ হতে পারে সেগুলো হলো-
- টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও অক্সালের বিদ্যমান থাকে। আর এই উৎপাদন গুলো খুব সহজে শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয় না। যার ফলে অতিরিক্ত টমেটো খেলে এই উপাদান গুলি শরীরে জমতে থাকে এবং কিডনিতে পাথর তৈরি করে।
- আইবিএস হলো একটি জটিল পেটের অসুখ। এইসব রোগীদের জন্য টমেটো খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কেননা টমেটো বিদ্যমান ফাইবার রোগীদের পেটে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। সেইসাথে এটি পেট ব্যথা, বমি এমনকি ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
- টমেটোতে সোলানিন নামক এক ধরনের বিশেষ যৌগ বিদ্যমান থাকার কারণে অতিরিক্ত টমেটো খাওয়ার ফলে গিঁটে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি অস্থিগুলো ফুলে যেতে পারে। কেননা এই যৌগ কোষের ক্যালসিয়াম তৈরির কাজ করে থাকে।
- টমেটোতে সাইট্রিক ও ম্যালিক এসিড বিদ্যমান। যার ফলে অতিরিক্ত টমেটো খেলে পেটে আইসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- টমেটোর পিছে অতিরিক্ত পরিমাণ পিউরিন বিদ্যমান থাকে যা রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে যাদের রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি তারা টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- টমেটো খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। টমেটো খেলে যাদের এই সমস্যা দেখা দেয় তারা টমেটো খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
- টমেটোতে সালমোনেলা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। যার প্রভাবে ডায়রিয়া হয়। তাই টমেটো খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এটি ভালোভাবে ধুয়ে তারপর খাওয়া উচিত।
- টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত টমেটো খাওয়ার ফলে এই লাইকোপেনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে লাইকোপিনোডার্মিয়া নামক এক ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যার কারণে ত্বকের রং বর্ণহীন হয়ে যায়।
তবে উপরোক্ত সমস্যা গুলো তখনই দেখা দিবে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খাওয়া হবে। তবে যদি কেউ পরিমিত পরিমাণে টমেটো খায় তবে এটি তার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তবে অবশ্যই আইবিএস রোগীরা টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত মুখে টমেটো লাগালে কি ক্ষতি হয়
মুখে টমেটো ব্যবহার করলেই ভাবছেন ত্বক সুন্দর হয়ে যাবে। মুখে অনেক বেশি উজ্জ্বল ভাব ফিরে আসবে। কিন্তু সেটি নিতান্তই আপনার কল্পনা। কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। ঠিক তেমনি প্রয়োজনের বেশি মুখে টমেটো ব্যবহার করাটাও আপনার জন্যে খুব বেশি ভালো হবে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টমেটো মুখে লাগালে যে ধরনের ক্ষতি হয় সেগুলো হলো-
- এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মুখে লাল লাল ফুসকুড়ি উঠতে পারে। দেখা দিতে পারে ছোট ছোট দানা।
- মুখের ময়েশ্চারাইজার ভাব কমতে পারে।
- মুখের চামড়া উঠে জ্বালাভাব সৃষ্টি হতে পারে।
- ত্বক শুষ্ক হলে রুক্ষতা বাড়তে পারে।
- মুখের ত্বকে চুলকানির সম্ভাবনা থাকতে পারে।
- মুখের নানা জায়গায় কালচে ছোপ পড়ে যেতে পারে।
টমেটো দিয়ে ফর্সা হওয়ার পরিবর্তে জ্বালাপোড়া কেন হয়
টমেটো দিয়ে ফর্সা না হয়ে জ্বালাপোড়া হওয়ার কথা এটিই কি প্রথম শুনেছেন? ফর্সা হওয়ার জন্যে আপনি হয়তো টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করছেন। কিন্তু হয়তো বলতেই পারবেন না টমেটোর ফেসপ্যাক আপনার জন্যে কতটা ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
নিজেকে ফর্সা করতে টমেটোর প্যাক ব্যবহার করছেন। অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করার কিছু দিনের মধ্যেই আপনার ত্বকের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। সেই সাথে চামড়াও উঠতে পারে। আর যখনই আপনার ত্বকের চামড়া উঠা শুরু করবে তখন জ্বালাপোড়াও করতে থাকবে।
যা আপনার ত্বকের লাবণ্য ভাব কমিয়ে আপনাকে খুব সহজেই অসুন্দর করে তুলবে। তাই অতিরিক্ত টমেটো ব্যবহার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন তা না হলে ধীরে ধীরে ত্বক রুক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
টমেটোর অতিরিক্ত ফেসিয়াল করে মুখে এলার্জি হলে কি করবেন
শুধু টমেটোর ফেসিয়াল মুখে এলার্জি হয়েছে এই রকম অনেকেই রয়েছেন। কারণ যখনই টমেটোর ফেসিয়াল অতিরিক্ত মাত্রায় মুখে ঘষছেন তখন মুখের চামড়া খুব সহজেই উঠে এলার্জি তৈরি হতে পারে। শুধু তাই নয় যাদের অনেক বেশি পরিমাণে জন্মগতভাবে এলার্জি রয়েছে তাদের অল্প ব্যবহারেই পুরো মুখে এলার্জি ভরে যেতে পারে।
টমেটোর অতিরিক্ত ফেসিয়াল করে মুখের এলার্জি ভাব বেড়ে গেলে কোনভাবেই সেটিকে নিয়ন্ত্রণে নাও আনা যেতে পারে। তাই পূর্ব থেকেই যখন টমেটোর ফেসপ্যাক ব্যবহার করবেন, তখন পরিমিত পরিমানে সতর্ক হয়ে আলতো করে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এরপরও যদি আপনার এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় তবে মুখে টমেটোর ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।
টমেটোর সাথে লেবুর রস ব্যবহারে কি কোন ক্ষতি হয়
মুখে টমেটো লাগানোর অপকারিতা না জেনেই টমেটোর সাথে লেবুর রস ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন। কিন্তু টমেটোর সাথে লেবুর রস মিক্স করে কতটুকু উপকার পাচ্ছেন আর ক্ষতি হচ্ছে সেই সম্পর্কে কতটুকু ধারণা রয়েছে।
যদি কোন রকমের ধারণা ছাড়াই আপনি মনে করে থাকেন, টমেটোর সাথে লেবুর রস ব্যবহার করে খুব ভালো করছেন তাহলে কখনোই সেটি সঠিক নয়। টমেটোর সাথে লেবুর রস ব্যবহার করে যেই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন সেগুলো হলো-
- ছোট লাল লাল দানাতে মুখ ভরে যেতে পারে।
- যেহেতু লেবুতে অ্যাসিডিটি রয়েছে তাই ত্বকে জ্বালাভাব হতে পারে।
- মুখের ত্বকে লেবুর রস ব্যবহারে ব্রণ আরও বাড়তে পারে।
- এমনকি মুখে লাল র্যাশও দেখা যেতে পারে।
- ভিটামিন সির অতিরিক্ত ব্যবহারে মুখের চামড়াতেও কালো ছোপ দাগ পড়তে পারে।
- লেবুর রস এবং টমেটো মিক্স করে লাগালে চামড়া উঠে যেতে পারে।
মুখে টমেটো ব্যবহারে কি চুলকানি বা ফুসকুড়ি উঠে
মুখে টমেটো ব্যবহার করে চুলকানি দেখা দিলে খুব সহজে নাও সেরে যেতে পারে। চুলকানি অথবা ফুসকুড়ি যেকোনটি দেখা দিক না কেন তার জন্যে টমেটোর ফেসিয়াল অনেক ভাবে দায়ী। যদি আপনার নিয়মিত ফেসপ্যাক এর তালিকায় টমেটোর ফেসপ্যাক প্রথমেই থাকে, তাহলে এটিকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
কারণ এটি আপনার মুখের ত্বককে খুব সহজেই ড্যামেজ করে দিতে পারে। যখন আপনার অতিরিক্ত মাত্রায় চুলকানি উঠবে তখন যদি আপনি এই টমেটোর ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চুলকানি বেড়ে যেয়ে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে যার ফলে মুখের চামড়া ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।
মুখের এলার্জিজনিত সমস্যা একবার হয়ে গেলে সেটি সারানো খুব বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মুখে টমেটো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলে পূর্ব থেকেই এড়িয়ে চলুন।
লেখকের মন্তব্য
আমরা টমেটো অনেক গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে থাকলেও খুব কম মানুষ রয়েছে যারা টমেটোর অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা রাখে। কিন্তু টমেটোর অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা উচিত। কেননা উপকারের জন্য ব্যবহার করা টমেটো আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠুক এটি আমরা কেউ চাইনা।
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে এসেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই তা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে তা আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url