নিয়মিত আমলকি খাচ্ছেন? জেনে নিন এর উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেল করার মাধ্যমে আপনি প্রতিদিন কয়টা আমলকি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী সে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারবেন। আমলকির অনেক গুণাগুণ থাকলেও সঠিক পরিমাণে আমলকি না খাওয়া হলে তা আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
আমলকি এমনই একটি ছোট ফল যা খাওয়ার পর আপনি একটু কষটা ও তেতো ভাব অনুভব করতে পারেন। কিন্তু কিছু সময় পরই দেখতে পাবেন মিষ্টি স্বাদ অনুভব হচ্ছে। যত ধরনের ভিটামিন সি জাতীয় ফল রয়েছে তার মধ্যে আমলকি এর মধ্যে ভিটামিন সি এর পরিমাণ সবচাইতে বেশি।
আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগবালাই এর সমস্যা সমাধানে আমলকি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকি চুলের জন্যও অনেক বেশি উপকারী। এটি ভালো করে ব্লেন্ড করে চুলে ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এটি চুলের রুক্ষতা কমাতেও সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি ত্বকে উজ্জ্বল আভা নিয়ে আসে।
নিয়মিত দুই থেকে একটি করে আমলকি খাওয়ার ফলে যেই পরিমাণে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। আমলকি আপনার শরীরের রক্তকে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার রাখে এবং চামড়ার লাবণ্যতা বৃদ্ধি করে এবং পাশাপাশি এটি আপনার যৌনশক্তিও বাড়িয়ে দেয়।
আমলকি কিভাবে খেতে হয়
ভেষজ গুণাগুনে ভরপুর আমলকি আপনার জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। শুধু তাই নয় আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরিতেও আমলকির নির্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় আমলকি খেলে আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। তাহলে চলুন আমলকি খাওয়ার উপায় জেনে নিই-
- আপনি চাইলে ছোট এই ফলটি অর্থাৎ আমলকি ভালভাবে চিবিয়ে খেতে পারেন। মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই বুঝতে পারবেন প্রথম দিকে এটি একটু তেঁতো লাগছে পরবর্তীতে মিষ্টি লাগছে।
- তবে আপনি জুস বা অন্য কোনভাবেও এটিকে খেতে পারেন।
- আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে দুটি আমলকি ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে পারেন।
- কাঁচা আমলকির রস করেও নিয়মিত খেতে পারেন।
- এছাড়াও আপনি চাইলে শুকনো আমলকি রাতের বেলা পানিতে ভিজিয়ে সকালে উঠে সেই পানি খেতে পারে। এতেও দারুন উপকার পাওয়া যায়।
আপনি আমলকি যেমন করেই খান না কেন এরপর গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের উপকার পাবেন। নিয়মিত কিছু দিন এটি খাওয়ার ফলে আপনি নিজেই পার্থক্য দেখতে পাবেন।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এছাড়াও আমলকিতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকায় থেকে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার শরীরের নানাবিধ উপকারিতা পেতে চান তবে প্রতিদিন অন্তত একটি করে আমলকি খাওয়া শুরু করুন।
শুধু শরীরের জন্য নয় ত্বকের জন্য আমলকি রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে এই আমলকি। এই পর্বে আমরা আমলকির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমলকির উপকারিতা গুলো হলো-
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- আমলকির রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত এক থেকে দুইটি আমলকি খেতে পারেন।
- বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে আমলকি রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে থাকে। যার প্রভাবে নিয়মিত এটি খাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুকি অনেকটা কমে যায়।
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আর এই কোলাজেন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ও ত্বককে স্বাস্থ্যকর করে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- আমলকির রস মুখের রুচি ও স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তাই যাদের রুচির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ম করে আমলকি খেতে পারেন।
- আমলকি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনি হয়ে উঠতে পারেন চর্বিবিহীন সুঠামদেহের অধিকারী।
- রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমলকির জুস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে এটি শরীরের পেশি মজবুত করতেও সাহায্য করে থাকে।
- আমলকিতে বিদ্যমান ভিটামিন সি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় এটি শরীরকে চাঙ্গা করতে ও শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- আমলকিতে বিদ্যমান ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ ত্বকের আদ্রতা বজায় রেখে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে কাজ করে থাকে।
- আমলকির রস চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি চুল পড়া কমাতে ও চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি চুলের বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত আমলকির রস ব্যবহারে মাথার খুশকি দূর হয়।
- আমলকিতে বিদ্যমান ফাইটো কেমিক্যাল চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত রেখে চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- আমলকির রস শরীরের অবস্থিত ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কাজ করে থাকে। যার ফলে ত্বক থেকে ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে ত্বক দাগ মুক্ত ও পরিষ্কার থাকে।
- আমলকি কিছু ক্যান্সার ও কিডনি রোগ থেকে মুক্তি প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে আমলকির রস খুবই উপযোগী।
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান। যার ফলে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
- আমলকির রস অনিদ্রা, মানসিক চাপ, ব্যথা বেদনা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিক বিদ্যমান থাকায় এটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় এটি ক্ষত নিরাময়ে ও টিস্যু মেরামতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। যার ফলে কোথাও কেটে গেলে খুব সহজেই তা ভালো হয়ে যায়।
- এটি হৃৎযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। সেইসাথে এটি ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমলকি খাওয়ার সঠিক সময়
আমলকি খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখতে পারেন। যেই সময়ে আপনি এক থেকে দুইটির মতো আমলকি খেতে পারেন। তবে এইক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ক থেকে দুইটির মতো আমলকি খেতে পারেন, তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো কাজ করতে পারে।
শুধু তাই নয় আপনি যখন আমলকি খাবেন তখন এটি আপনার লিভার ভালো রাখতেও সাহায্য করে। ব্লাড প্রেসারের মাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে আমলকি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। চুলের পুষ্টি জোগায় এবং আপনার বয়স বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কারণ এতে সেলুলার ড্যামেজ রোধ করার ক্ষমতা থাকে।
আপনি চাইলে জুস বা যেকোন রকম ভাবেও এই আমলকি খেতে পারেন। শীতের সময় আমলকির ফলন একটু বেশি হয়ে বলে আপনি বেশি করে এই ফল খাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে এক থেকে দুইটি আমলকি খাবেন।
এছাড়াও আপনি চাইলে দিনের যেকোনো সময় আমলকি খেতে পারেন। তবে প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট নিয়মে খেলে তা থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে শরীরের জন্য সুবিধা হয়। তাই আপনি যখনই আমলকি খান না কেন একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।যার মাধ্যমে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
অন্য যেকোন ফল থেকে আমলকির গুনাগুন একটু বেশি কিন্তু আমলকির পুষ্টিগুণ বেশি পেতে হলে কিভাবে খেতে হবে? যেহেতু এটি যেকোন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। যদি আপনি আমলকি ফলটি পেয়ারা অথবা লেবুর পরিবর্তে খেতে চান, তাহলে সেইক্ষেত্রেও আপনাকে এটি ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।
কমলা অথবা আপেলের থেকেও আমলকিতে গুনাগুনের পরিমাণ অনেক বেশি। পাশাপাশি আম, কলাতে যেই পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে তার থেকেও অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি আমলকিতে রয়েছে। খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো-
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান আমলকির রসে রয়েছে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত সকালে খালি পেটে আমলকি খান। আমলকি আপনার পাইলসের সমস্যাকেও দূর করতে সাহায্য করে।
- আমলকির রস ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। তাই যাদের রক্তের সুগারের পরিমাণ বেশি তারা প্রতিদিন সকাল করে এক থেকে দুইটি আমলকি গ্রহণ করুন। এতে আপনার রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- খালি পেটে আমলকি খাওয়ার ফলে এটি আপনার যৌবন ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- যদি আপনার বদহজম অথবা পেটের কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে আপনি নিয়মিত খালি পেটে আমলকি খেতে পারেন। এটি আপনার পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
- আমলকিতে যেই পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে তা আপনার বয়সকে কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত খালি পেটে এটি খাওয়ার ফলে আপনার বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর কম লাগবে।
- খালি পেটে প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ত্বকের কালো দাগ দূর হয় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ে।
- আপনার শরীরে যদি পর্যাপ্ত ফ্যাট থাকে তাহলে সেই ফ্যাট কমানোর জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে খালি পেটে আমলকি গ্রহণ করুন। কিছুদিনের মধ্যে আপনার শরীরের চর্বি বা ফ্যাট কমে যাবে।
- আমলকির নির্যাস রস থেকে যেই পরিমাণে পুষ্টি থাকে তা আপনার দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর কাজে খুবই সাহায্য করে। তাই দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে খালি পেটে আমলকির রস গ্রহণ করুন।
- যদি কোন ধরনের অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে তাহলে দুধের সাথে আমলকির গুড়া এবং সাথে অল্প কিছু চিনি মিক্স করে প্রতিদিন নিয়মিত খেতে পারেন। এতে দারুন উপকার পাবেন।
প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত
প্রতিদিন নিয়ম করে আপনি কি পরিমান আমলকি খেতে পারবেন তা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ প্রতিদিন যদি আপনি এক থেকে দুইটি আমলকি খেতে পারেন তাহলে তা আপনার রক্ত পরিষ্কার করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। এমনকি আমলকি নিয়মিত খেলে আপনার যৌন শক্তিও অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমলকির রস অনেক বেশি পরিমাণে টক হওয়ার কারণে যদিও অনেকে খেতে পারে না। কিন্তু তারপরেও যদি আপনি এটিকে টক মনে করে খেতে না পারেন তাহলে কেটে টুকরো করে নিতে পারেন। আমলকি ফুটিয়ে খেলেও আপনি উপকার পাবেন। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে যদি আপনি এক থেকে দুইটি আমলকি খেতে পারেন তবে তা আপনার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারে আসবে।
প্রয়োজনে আপনি আমলকির রস জুস করে নিয়ে তারপর অন্য যেকোন রসের সাথে অর্থাৎ ফলের রসের সাথে মিক্স করে খেতে পারেন। পরিমিত পরিমাণে আমলকির রস খাবেন যেন সমস্যা দেখা না দেয়। তবে আপনি কখনোই একদিনে তিনটির বেশি আমলকি খাবেন না। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে আমলকি খেয়ে ফেলেন হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম
শুধু কাঁচা আমলকি নয় শুকনো করেও আমলকি খাওয়া যায়। তবে এর জন্য সঠিক কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি শুকনো আমলকি খেতে পারেন। তাহলে চলুন সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
- শুকনো আমলকি খাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে কিছু কাঁচা আমলকি সংগ্রহ করতে হবে।
- সংরক্ষিত কাঁচা আমলকি গুলো আপনাকে রোদে শুকাতে হবে।
- শুকিয়ে আসার পর আমলকি গুলোকে আপনি গুঁড়ো করে নিতে পারেন।
- সেই আমলকির গুঁড়ো দিয়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের আমলকির মোরব্বা তৈরি করে খেতে পারবেন।
- অনেকে আবার শুকনো আমলকি দিয়ে আচার তৈরি করে থাকে যা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়।
- খালি পেটে বিভিন্ন ফলের রসের সঙ্গে আপনি আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে অথবা আমলকির রস মিক্স করে খেতে পারেন।
- শুকিয়ে যাওয়া আমলকি আপনি সামান্য লবণ দিয়েও খেতে পারবেন।
- আপনি চাইলে শুকনো আমলকির গুড়া সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খেতে পারেন। এতেও দারুন উপকার পাবেন।
আশা করি আপনি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন কিভাবে শুকনো আমলকি খাওয়া যায়। আমলকি সাধারণত শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। তাই এই সময় তা ভালো হবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে সারা বছর আপনি এর উপকার লাভ করতে পারেন।
আমলকির ক্ষতিকর দিক
যদি আমলকি আপনার খুব পছন্দের ফল হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে এটিও জেনে রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত পরিমাণে আমলকি খাওয়াও কিন্তু আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে আমলকি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যান্য সুপার ফুডের মতোও অতিরিক্ত আমলকি খেলে বেশ কিছু ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে চলুন আমলকির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
- আমলকিতে ঠান্ডা ভাব রয়েছে। যার কারণে এটি সর্দি কাশি তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। তাই যাদের আগের থেকে ঠান্ডা লেগে রয়েছে তারা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় অতিরিক্ত পরিমাণ আমলকি খেলে এটি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
- আমলকি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে থাকে। তাই কোন সার্জারির পূর্বে এবং পরে আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা ঐ সময় আমলকি খেলে রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। যা আপনার বিপদের কারণ হতে পারে।
- আমলকি ও আদা একসাথে খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি এর কার্যকারিতাও কমে যেতে পারে।
- যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা যদি অতিরিক্ত আমলকি খায় তবে তাদের এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। কেননা আমলকির টক এতটাই প্রবল যে এটি পেটে এসিডিটি তৈরি করতে পারে।
- আমলকি ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের ব্লাড সুগার কম তারা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নয়তো ব্লাড সুগার অনেক কমে গিয়ে আপনার জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে।
- কার্ডিয়াক সমস্যা জনিত কোন ধরনের সমস্যা থাকলে আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। নয়তো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অনেকের ক্ষেত্রে আমলকি খাওয়ার ফলে এলার্জি দেখা দেয়। যাদের এ সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমাদের শেষকথা
আমলকির অনেক গুণাগু থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই আমাদের অবশ্যই এটি খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আমাদের প্রতিদিন নিয়ম করে এক থেকে দুইটি আমলকি খেতে হবে। যাতে করে আমরা এর থেকে অনেক বেশি উপকারিতা পেতে পারি। তবে কখনোই আমাদের একদিনে এর চেয়ে বেশি আমলকি খাওয়া উচিত নয়।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। সেই সাথে আমলকি খেতে আপনার কেমন লাগে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url