হিট স্ট্রোক কি - হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক, আপনি কি হিট স্ট্রোক হওয়ার কারণ ও এর লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেল করার মাধ্যমে আপনি হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে খুব সহজেই এই সমস্যা সমাধান করা যায়। হিট স্ট্রোক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
প্রচন্ড তাপদাহের কারণে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো হিট স্ট্রোক। বর্তমানে নির্বিচারে বন উজার করার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনাও দিন দিন বাড়ছে। সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে।
এই সমস্যা দেখা দিলে ত্বক শুষ্ক ও লালচে বর্ণ ধারণ করে, কথাবার্তা পেচিয়ে আসে, মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা অনুভব হয়। এছাড়াও এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। সাধারণত শিশু ও বয়স্ক ব্যাক্তি এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কেননা তাদের শরীর এই অবস্থায় তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
বর্তমানে এই সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ মানুষ এই সমস্যা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। কেননা এই সমস্যা দেখা দিলে বেশিরভাগ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। তবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। সেই সাথে বেশি বেশি পানি পান করা এবং প্রচন্ড গরমে বাইরে অবস্থান না করা।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রতিটি মানুষকে এই রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানাতে হবে। এই সমস্যায় আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসায় দেরি হওয়ার কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাই এই সমস্যা হলে খুব সহজে যেন প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে সেই সম্পর্কেও মানুষজনকে অবগত করতে হবে। হিট স্ট্রোকে আতঙ্কিত নয় বরং এ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে জীবন যাপন করতে পারলেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
হিট স্ট্রোক কি
হিট স্ট্রোক হলো গুরুতর তাপজনিত সমস্যা। সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে অনেক বেশি বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। প্রচন্ড গরমে যখন শরীর তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তখন হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা যখন ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে তখন তাকে হিট স্ট্রোক বলে।
হিট স্ট্রোকের শুরু হঠাৎ করে অথবা ধীরে ধীরে হতে পারে। কেউ যদি দীর্ঘক্ষন অধিক পরিশ্রম করে, আদ্র পরিবেশে কাজ করে বা প্রচন্ড গরমে অবস্থান করে তবে তার হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা দীর্ঘক্ষণ এসব পরিবেশে অবস্থান করার ফলে শরীর তা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে হিট স্ট্রোক দেখা দেয়। দ্রুত চিকিৎসা না করা গেলে এটি মরণঘাতী হতে পারে।
হিট স্ট্রোক কখন ও কেন হয়
গ্রীষ্মের তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকার কারণে যেকোনো সময়ে হেট স্টোর হতে পারে। হেট স্টোরক হওয়ার প্রধান কারণ শরীর ক্লান্ত লাগা। যেসব কারণে মানুষের হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে সেগুলো জানা আমাদের জন্য একান্ত জরুরী। হিট স্ট্রোক হওয়ার কারণগুলো হলো-
- হিট স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীর ক্লান্ত লাগা। দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রচন্ড গরমে অবস্থান করলে বা কাজ করলে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
- হিট স্ট্রোকের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো শরীরে পানি শূন্যতা। প্রচন্ড গরমে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- গরমের সময় আমাদের শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ লবণ ও তরল পদার্থ বের হয়ে যায়। এর ফলে শরীরের পানির অভাব দেখা দেয় যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অনেক সময় বাইরের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার পরেও সরাসরি সূর্যালোতে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ির ভেতরে তাপমাত্রা দ্রুত ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন এর ভিতরে অবস্থান করা শিশু ও বৃদ্ধের হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- কিছু ঔষধ যেমন মূত্রবর্দ্ধক, বিষন্নতার ঔষধ, মানসিক রোগের ঔষধ ইত্যাদি শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। দীর্ঘদিন এসব ওষুধ খাওয়ার ফলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়
প্রচন্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে শরীরের তাপ অতিরিক্ত পরিমাণ বেড়ে যায়। যার প্রভাবে হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। হিট স্ট্রোকের যাদের বেশি হয় তারা হলেন-
- শিশু ও বয়স্ক (> ৬০ বছর) ব্যক্তিরা এ রোগে আক্রান্ত বেশি হয়ে থাকেন। কেননা এরা শরীরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।
- যারা দীর্ঘ সময় ধরে প্রচন্ড গরমে অথবা সূর্যের আলোর নিচে কাজ করে থাকে তাদের হিট স্ট্রোক বেশি হয়। যেমন কৃষক, দিনমজুর, রিক্সাচালক, শ্রমিক ইত্যাদি।
- যাদের বাড়িঘর নেই অথবা যারা সবচেয়ে উপরে তালায় থাকেন তাদের এটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- যারা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করে না তাদের এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেননা শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিলে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলার এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের শরীর থেকে খুব দ্রুত পানি অপসারণ হয়ে যায়। যার ফলে তারা বেশি বেশি পানি পান না করলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।
- মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের গরমের বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই তাদের এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত (যেমন হৃদরোগ বা ফুসফুস জনিত রোগ) ব্যক্তিদের এটি হওয়া সম্ভাবনা বেশি।
- কিছু কিছু ঔষধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন মূত্রবর্দ্ধক, বিষন্নতার ঔষধ, মানসিক রোগের ঔষধ, BP ওষুধ, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ইত্যাদি। এসব ওষুধ যারা দীর্ঘদিন ধরে সেবন করেন তাদের হেডস রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
তাপদাহের কারণে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বেড়ে গেলে এবং তীব্র গরমে দীর্ঘক্ষন রোদে অবস্থান করলে অথবা কঠোর পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে হিট স্ট্রোক হওয়ার পূর্বেই এর কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো হলো-
- শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে যাওয়া।
- শরীরে ঝিমঝিম অনুভূত হওয়া।
- নিঃশ্বাস এর গতি বেড়ে যাওয়া।
- ঘাম কম হওয়া। তবে যারা অধিক পরিশ্রম করে তাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সময়ও ঘাম হতে পারে।
- ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব হওয়া।
- মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা অনুভব করা। চোখে ঝাপসা দেখা।
- খিচুনি হওয়া।
- কথাবার্তা পেঁচিয়ে যাওয়া।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন দ্রুত হওয়া।
- তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
- প্রচন্ড তৃষ্ণা বা পানি শূন্যতা অনুভব করা।
- যেকোনো কিছুতে বিরক্ত বোধ করা, হঠাৎ করেই রাগান্বিত হয়ে যাওয়া।
- পেশীতে খিচ ধরা বা ব্যথা অনুভব করা।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং রং হলুদ হয়ে যাওয়া।
- এমনকি সে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
এসব লক্ষণ দেখা দিলেই বুঝে নিতে হবে ব্যক্তিটি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে। এসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে অথবা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা করা না গেলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।
হিট স্ট্রোক হলে করণীয় ॥ হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রচন্ড গরমের কারণে আমাদের অনেকেরই সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই হিট স্ট্রোক হলে প্রাথমিক অবস্থায় কি করতে হয় তা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। এতে করে খুব দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে অনেকটা সুস্থ করে তোলা যায়। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো দেখার দেওয়ার সাথে সাথে আমাদের যা করা উচিত তা হলো-
- হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সর্বপ্রথম যত দ্রুত সম্ভব শীতল কোন স্থানে নিয়ে যাওয়া। সম্ভব হলে তাকে ফ্যানের নিচে বসানো। যদি ফ্যান না পাওয়া যায় তবে তাকে শীতল স্থানে বসিয়ে অনবরত বাতাস করা।
- শরীরে পরিহিত অতিরিক্ত কাপড় খুলে ফেলা।
- রোগীকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো।
- গোসল করানো সম্ভব না হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ভালোভাবে মুছে দেওয়া। সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দেওয়া। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকবে।
- রোগীকে প্রচুর পানি ও খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- মাথায় অনবরত ঠান্ডা পানি ঢালা।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে সচেতন রাখার চেষ্টা করা।
- রোগীর আশেপাশে ভিড় না করা। রোগীর চারপাশ খোলামেলা রাখা। যাতে বাতাস আসতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বমি করে তবে তাকে এক পাশ করে শুইয়ে দেওয়া যাতে করে বমি শ্বাসনাল এর মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
- খুব দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে তার শ্বাস-প্রশ্বাস ও নাড়ির স্পন্দন ঠিকমতো চলছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা। প্রয়োজনে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
দ্রুত চিকিৎসা করা না গেলে হিট স্ট্রোক থেকে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। তাই হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা জেনে রাখা প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে অনেকাংশে সুস্থ করে তোলা যায়।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ॥ হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে পৃথিবী তাপমাত্রায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে নির্বিচারে বন উজাড় করার ফলে পৃথিবী উষ্ণ হয়ে উঠছে। আর এর প্রভাবে হিট স্ট্রোকের মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি তা জানা থাকলে খুব সহজেই আমরা এই মারাত্মক সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পারে। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে আমাদের করণীয় গুলো হলো-
- হালকা রঙের ঢিলা ঢালা পোশাক পরিধান করা। বিশেষ করে সুতি কাপড় ব্যবহার করা।
- শরীরের লবণ ও তরলের ঘাটতি মেটানোর জন্য বেশি বেশি পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি পান করা।
- গরমের সময় যতটা সম্ভব বাড়ির বাইরে বের না হওয়া। বিশেষ করে দুপুর ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকা।
- বাইরে বের হলে মাথায় টুপি, চোখে চশমা ও ছাতা ব্যবহার করা। সেই সাথে সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।
- ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, ভারী খাবার কম খাওয়া।
- খাবারের তালিকায় বেশি বেশি তরল খাদ্য রাখা।
- ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্থানে অবস্থান করা।
- যারা রোদে পরিশ্রম করেন তাদের মাথায় টুপি ব্যবহার করা এবং একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ না করে মাঝে মাঝে সামান্য বিরতি নেওয়া।
- চা, কফি, অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকা।
- বেশি বেশি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া।
- রোদের মধ্যে অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে বিরত থাকা।
- বয়স্ক এবং শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া। ঘরে এবং গাড়িতে তাদের একা রেখে কোথাও চলে না যাওয়া।
হিট স্ট্রোক হলে কি হয়
হিট স্ট্রোক হলো একটি তাপ জনিত শারীরিক সমস্যা যার প্রভাবে মানুষের শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এ সময় মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা বোধ করা, পানি শূন্যতা অনুভব করা সহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় রোগীর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যেমন-
- শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- হিট স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- হিট স্ট্রোকের কারণে রক্তনালী গুলো প্রসারিত হয়ে যায়। যার ফলে সমস্ত শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে হৃৎপিণ্ডের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে।
- হিট স্ট্রোকের প্রভাবে যকৃত ও কিডনির নানা ধরনের ক্ষতি সাধন হতে পারে। এমনকি এগুলো তাদের কর্মক্ষমতা হারাতে পারে।
- এই সমস্যা দেখা দিলে বেশি কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- হিট স্ট্রোকের কারণে ত্বক পুড়ে ও ফুলে যেতে পারে।
- সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না হলে হিট স্ট্রোকে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মনে রাখতে হবে হিট স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা। যা নিরাময় করতে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেখকের মন্তব্য
হিট স্ট্রোকের ফলে শরীর তার স্বাভাবিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে। এটি এমন একটি সমস্যা যার দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তবে এটি থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সচেতন থাকা। বিশেষ করে যাদের এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদের অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থেকে ধৈর্য সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তবে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। কেননা সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url