পুষ্টিকর ও সুস্বাদু লটকন খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি লটকন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা লটকন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি গর্ব অবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি ফল হওয়ায় এই ফলের উপকারিতা অনেক। তাই লটকন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
বর্তমানে বর্ষার মৌসুমে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলের নাম হলো লটকন। এই ফল সাধারণত ছোট ও গোলাকার হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় এই ফলের রং সবুজ থাকলেও পাকলে এটি হলুদ বর্ণ ধারণ করে। অতীতে এই ফলের তেমন কোন কদর না থাকলেও দিন দিন এই ফলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টক মিষ্টি স্বাদের এই ফল অনেকের কাছেই ভীষণ প্রিয় আবার অনেকে এই ফলের টক স্বাদের জন্য একে পছন্দ করেন না। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে যারা শুধুমাত্র মুখের স্বাদের জন্য এই ফল খেয়ে থাকেন। কিন্তু এই ফলের উপকারিতার কথা জানেন না। আপনি যদি এই ফলের উপকারিতার কথা জানতে পারেন তবে আপনিও অবাক হবেন।
এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। লটকন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্তস্বল্পতা দূর করে, আয়রনের অভাব পূরণ করে।
এছাড়াও এটি হজমশক্তি বৃদ্ধিতে, ওজন কমাতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। এই ফলের অনেক উপকারিতা থাকলেও তেমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই। এই কারণে বিশেষজ্ঞগণ বর্ষার মৌসুমে এই ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
লটকনের পুষ্টিগুণ
আমাদের দেশে অনেক ধরনের মৌসুমী ফল রয়েছে। বর্ষার মৌসুমে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিচিত ফল হচ্ছে লটকন। এর টক মিষ্টি স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য এটি মানুষের কাছে এত বেশি জনপ্রিয়। দেখতে গোলাকার ও হলুদ আবাদ হলুদাভাব এই ফলে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে রয়েছে-
- খাদ্য শক্তিঃ ৯২ কিলোক্যালরি
- আমিষঃ ১.৪২ গ্রাম
- চর্বিঃ ০.৪৫ গ্রাম
- খনিজ পদার্থঃ ০.৯ গ্রাম
- আয়রনঃ ৫.৩৪ গ্রাম
- ভিটামিন বি-১ঃ ১০.০৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি-২ঃ ০.২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সিঃ ৫৫ মিলিগ্রাম
- লৌহঃ ৩.৩ গ্রাম
- ক্যালসিয়ামঃ ২ গ্রাম
এছাড়াও লটকনে সামান্য পরিমাণ পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিড ও এনজাইম বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
লটকন খাওয়ার উপকারিতা
লটকন ফল খুবই পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ ও ঔষধি গুণাগুণ বিশিষ্ট একটি টকমিষ্টি জাতীয় ফল। এই ফলে ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় এটি আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এই ফলে রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। নিয়মিত লটকন খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। লটকন ফলের উপকারিতা গুলো হলো-
ভিটামিন সি এর অভাব পূরণঃ ছোট আকৃতির টক মিষ্টি স্বাদের এই ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। কেউ যদি নিয়মিত ২/৩ টি লটকন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে তবে তার শরীরের প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়ে যাবে।
শক্তির ভালো উৎসঃ লটকন খাদ্যশক্তির একটি ভালো উৎস। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি বিদ্যমান। এতে কাঁঠালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ খাদ্যশক্তি বিদ্যমান। কেননা ১০০ গ্রাম লটকনে প্রায় ৯২ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি বিদ্যমান থাকে।
পানিশূন্যতা থেকে মুক্তিঃ লটকন ফল অনেক রসালো হয়ে থাকে। এই ফল ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে এটি শরীরের পানির ভারসাম্য পূরণ করে শরীরকে পানি শূন্যতার হাত থেকে রক্ষা করে। সেই সাথে এটি তৃষ্ণা মেটাতেও সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ লটকনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ লটকনে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান। এর ফলে লটকন হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সেই সাথে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ লটকনে শর্করা বিদ্যমান না থাকার কারণে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সেইসাথে এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি খেলে অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। যার ফলে খুব দ্রুত ওজন কমে যায়। এতে চর্বি পরিমাণও অনেক কম থাকে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত লটকন খেতে পারেন।
রক্তশূন্যতা দূর করেঃ লটকনে প্রচুর পরিমাণ আয়রন বিদ্যমান। আর এই আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে। তাই যাদের রক্তশূন্যতার সমস্যা রয়েছে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত লটকন খেতে পারেন। এছাড়াও এটি শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ লটকনের ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকার কারণে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে এটি ত্বকের বলিরেখা বা বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই ফল খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং বলিরেখা দূর হয়ে যাবে।
মুখের রুচি ফেরাতেঃ যাদের খাবারের প্রতি অনীহা রয়েছে তারা চাইলে নিয়মিত লটকন খেতে পারেন। কেননা টক মিষ্টি এই ফল মুখের রুচি ফেরাতে কাজ করে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লটকন খুবই উপকারী একটি ফল। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী। সেই সাথে এতে শর্করা বিদ্যমান না থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে এটি খেতে পারেন। তবে অধিক পরিমাণে খাওয়া যাবে না। সেইসাথেই ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে।
দাঁত ও হাড়ের যত্নেঃ লটকনের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান থাকায় এটি দাঁত ও হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ঃ লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। যার ফলে এটি বেরিবেরি, স্কার্ভি সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা প্রদান করে থাকে। সেই সাথে এটি চোখের সংকোচন ও প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
মানসিক অবসাদ দূর করতেঃ লটকনে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যেগুলো মানসিক অবসাদ দূর করতে এবং মানুষকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। তাই মানসিক অবসাদ দূর করার জন্য নিয়মিত লটকন খাওয়া উচিত। সেই সাথে একটি বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
ক্ষতস্থান নিরাময়েঃ লটকন ক্ষতস্থান নিরাময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। আর ভিটামিন সি খুব দ্রুত ক্ষতস্থান ভালো করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এই সুমিষ্ট লটকন ফল। এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করে এবং ক্যান্সার কোষ তৈরিতে বাধা প্রদান করে থাকে।
চর্মরোগ প্রতিরোধেঃ লটকনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি। যা ত্বকে কোলাজেন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। যা প্রতিরোধে সাহায্য করে এই লটকন ফল।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ লটকনে পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এর ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গনোরিয়া ও ডায়রিয়া দূর করতেঃ লটকনের পাশাপাশি এই গাছের পাতা ও এর বীজ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। লটকন গাছের পাতার গুড়া ডায়রিয়া প্রতিরোধে এবং এর বীজ গনোরিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও লটকন, লটকনের বীজ, এই গাছের পাতা ও শিকড় আমাদের আরো অনেক উপকারে আসে। এই গাছের পাতা ও শিকড় পেটের নানা ধরনের অসুখ নিরাময়ে ও জ্বর ভালো করতে কাজ করে থাকে। তাই বর্ষার মৌসুমে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে বাঁচতে নিয়মিত পরিমান মতো লটকন খাওয়া উচিত।
লটকন খাওয়ার নিয়ম
লটকন হলো হলুদাভাব গোলাকার ছোট একটি ফল। এই ফল আঙ্গুরের মতো থোকায় থোকায় জন্মে। এটি খাওয়ার জন্য শুরুতে এটিকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর এর উপরের খোসা ফেলে দিয়ে ভিতরের অংশটি অংশটি খাওয়া হয়। তবে এর বিচি ফেলে দিতে হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ফলটি সরাসরি খাওয়া হলেও অনেক সময় এটিকে জ্যাম বা জুস বানিয়ে খাওয়া হয়ে থাকে। লটকন সাধারণত টক ও মিষ্টি দুই ধরনের স্বাদের হয়ে থাকে। তবে টক লটকনের তুলনায় মিষ্টি লটকনের চাহিদা অনেক বেশি। এটি খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন একবারে অধিক পরিমাণে লটকন খাওয়া না হয়।
লটকনের বিচি খেলে কি হয়
আমরা অনেক সময় ফল খাওয়ার পাশাপাশি এর বিচিও খেয়ে থাকি। এর সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ হলো কাঁঠাল। সাধারণত লটকনের বিচি খেতে নিষেধ করা হয়। কেননা এই বিচি খেলে অনেক সময় হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে লটকনের বিচি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
বিশেষ করে যাদের পেটের বিভিন্ন রোগ ও গনোরিয়া রোগ আছে তাদেরকে লটকনের বিচি খেতে বলা হয়। কেননা এই বিচি পেটের বিভিন্ন রোগ ও গনোরিয়া রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে যাদের এই ধরনের কোন সমস্যা নেই তারা লটকনের বিচি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কিনা
লটকন নিয়ে অনেকের অনেক রকম প্রশ্ন থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে কমন একটি প্রশ্ন হলো গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কিনা? কেননা একটি মেয়ের জীবনে গর্ভকালীন সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে খাবার-দাবার থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
এখন প্রশ্নের উত্তরে ফিরে আসি। এর উত্তর হলো হ্যাঁ, অবশ্যই খাওয়া যাবে। তবে তা পরিমাণ মতো খেতে হবে। লটকনে যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা একজন গর্ভবতী নারীর শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল সহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। তবে এটা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এটিকে ভালোভাবে ধুয়ে তারপর খেতে হবে। যাদের এই ফলে এলার্জি রয়েছে তাদের এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা
আমরা উপরে আলোচনা করেছি একজন গর্ভবতী মহিলা নিয়মিত পরিমাণ মত লটকন খেতে পারবেন। এতে তার নানা ধরনের উপকার মিলবে। নিচে গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
- লটকনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান। গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা যদি পরিমিত পরিমাণে এই ফল খেয়ে থাকেন তবে তার শরীরের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়ে যাবে। সেই সাথে এই ভিটামিন সি গর্ভবতী মহিলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
- লটকনে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান রয়েছে। যা গর্ভবতী মহিলার হজমের সমস্যা দূর করতে কাজ করে থাকে।
- আমরা সকলেই জানি গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক বেশি আয়রনের প্রয়োজন পড়ে। আর এই আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে লটকন। কেননা লটকনে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। তাই নিয়মিত এই ফল খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলার আয়রনের অভাব পূরণ হয়ে যাবে। এছাড়াও এটি গর্ভবতী মহিলার রক্তশূন্যতা দূর করতেও সাহায্য করে।
- অনেক নারীর গর্ভাবস্থায় অরুচি দেখা দেয়। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারে না। তাদের জন্য লটকন একটি সমাধান হতে পারে। টক মিষ্টি এই ফল মুখের নিচে ফেরাতে কাজ করে থাকে।
- গর্ভাবস্থায় শিশুর দাঁত ও হাড়ের সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। আর লটকনে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। যার কারণে গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার ফলে শিশুর দাঁত ও হাড়ের গঠন ভালো হয়।
এছাড়াও গর্ভবতী মহিলার দুর্বলতা দূর করতে, শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে, প্রসবকালীন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে লটকন কাজ করে থাকে। এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান, ভিটামিন ও এনজাইম গর্ভবতী মহিলাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে বেশি পুষ্টির আশায় কখনোই অধিক পরিমাণ লটকন একবারে খাওয়া উচিত নয়। এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লটকনের অপকারিতা
সব জিনিসেরই উপকারিতা ও অপকারিতা দুই দিকই রয়েছে। লটকনও ব্যতিক্রম নয়। অতিরিক্ত হারে এই ফল খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই পর্বে আমরা লটকনের অপকারিতা সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
- সুস্বাদু এই ফলে প্রচুর পরিমাণে মানে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় কিডনি রোগীদের এই ফল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে তাদের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত এই ফল খাওয়ার ফলে ক্ষুধা মন্দা তৈরি হতে পারে। যা আপনাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
- অধিক পরিমাণে লটকন খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্যাস, বদহজম ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- অনেকেরই লটকনে এলার্জি রয়েছে। তাই যাদের এ সমস্যা রয়েছে তাদের লটকন পরিহার করাই উত্তম। নয়তো এটি খাওয়ার ফলে চুলকানি, লালচে ফোলা দাগ সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- লটকন যেহেতু রক্তের শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে। তাই অধিক পরিমাণ লটকন খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কমে যেতে পারে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
তবে লটকনের এত এত প্রকারের কাছে এর ক্ষতিকর দিকগুলো কিছুই না। কেউ যদি নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ লটকন খেতে পারেন তবে এর থেকে সে শুধু উপকারিতায় পাবে। তাই লটকনের অপকারিতা এড়াতে অবশ্যই পরিণত পরিমাণ লটকন খেতে হবে। একবারে অধিক পরিমাণ লটকন খাওয়া কখনোই উচিত নয়।
লেখকের মন্তব্য
লটকন খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। বিশেষ করে এটি আমাদের দেহের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে থাকে। তাই মৌসুমী এই ফল যতদিন পাওয়া যায় আমাদের উচিত ততদিন পর্যন্ত নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে এই ফল খাওয়া। এতে করে আমাদের শরীর বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা লাভ করবে। তবে বেশি উপকারের আশায় এই ফল কখনোই অধিক পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে এসেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই তা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে তা আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url