জাফরান কি? জাফরান খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম
জাফরান হলো জাফরান গাছের ফুল থেকে সংগ্রহকৃত এক ধরনের মসলা যা সাধারণত জাফরান ক্রোকাস নামে পরিচিত। জাফরান ক্রোকাস উৎপাদনের জন্য প্রথমে হাত দিয়ে একটি একটি করে এর ফুল সংগ্রহ করা হয়। এরপর একে শুকিয়ে ফুলের ভেতরের গাঢ় লাল বা হলুদ বর্ণের গর্ভমুণ্ড সংগ্রহ করা হয়। মূলত এটি জাফরান।
পৃথিবীতে যত ধরনের মসলা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে দামি মশলা এটি। এজন্য এটিকে লাল স্বর্ণ বলা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত খাবারের গুণগতমান বৃদ্ধি করতে এবং খাবারকে আকর্ষণীয় দেখাতে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে বিরিয়ানি ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ব্যাপক ব্যাবহার রয়েছে।
জাফরানের চাষ সর্ব প্রথম গ্রিসে হলেও ইরানি জাফরান সবচেয়ে জনপ্রিয়। বর্তমানে বাংলাদেশেও এর চাষ শুরু হয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা জাফরানের যাবতীয় উপকারিতা এবং জাফরান এর দাম বাংলাদেশে কেমন সে বিষয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
জাফরান কি
জাফরান হলো ওজনের দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান মসলা। এটি মূলত জাফরান গাছের ফুলের পরাগ দণ্ড। পরিণত বয়সে ফুলকে শুকিয়ে এই দণ্ড সংগ্রহ করা হয়। যা মূলত জাফরান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাফরান একটি গাছের নাম হলেও আমরা সাধারণত এই গাছের ফুলের পরাগ দণ্ডকেই জাফরান নামে চিনি।
বাংলাদেশে বেশ কিছু দেশে উৎপাদিত জাফরান পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইরানি জাফরান। ইরানে ব্যাপকভাবে জাফরান উৎপাদিত হয়। তবে এর প্রথম চাষ করা হয়েছিল গ্রিসে। এটি সাধারণত বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই সাথে বিরিয়ানিও প্রসাধনের খাবারের মধ্যে এটির ব্যবহারে একদিকে সেটি যেমন পুষ্টিকর হয়ে ওঠে অন্যদিকে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
জাফরান এর উপকারিতা ॥ জাফরান দুধের উপকারিতা
একসময় জাফরানের মূল্য সোনার চেয়েও বেশি ছিল। বর্তমানে এর ব্যাপক উৎপাদন হওয়ার ফলে এর দাম কিছুটা কমে গেলেও ওজনের দিক দিয়ে মসলার মধ্যে সবচেয়ে দামি মসলা জাফরান। এটি শুধু দামে নয় উপকারিতার দিক দিয়েও অন্যান্য মসলার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। এটি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। জাফরান খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস দুধের মধ্যে সামান্য জাফরান মিশিয়ে তারা গ্রহণ করা। জাফরানের উপকারিতা গুলো হলো-
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুরঃ জাফরানের বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। সেই সাথে এটি দেহকে ফ্রী রেডিক্যাল ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর নির্যাস থেকে ক্রোসিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এছাড়াও এর ফুলের পাপড়িতে কেম্পফেরল বিদ্যমান।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে জাফরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি যেহেতু বিভিন্ন ধরনের হরমোনকে উদীপ্ত করে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত জাফরান খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এর জন্যই আগে জাপানে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়া লোকদের চিকিৎসায় জাফরান ব্যবহার করা হতো।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জাফরান কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে যাদের রক্তচাপ কম থাকে তাদের জন্য জাফরান অনেক বেশি উপকারী। এটি নিয়মিত সেবনে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে যাদের রক্তচাপ বেশি তারা এটি সেবন করলে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই যাদের রক্তচাপ ওঠানামা করে তারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য জাফরান সেবন করতে পারেন।
ক্লান্তি দূর করতেঃ দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ করার ফলে আমরা অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এই ক্লান্তি ঝটপট দূর করতে এক গ্লাস জাফরান মেশানো দুধই যথেষ্ট। সেইসাথে নিয়মিত জাফরান খেলে শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়। এটি খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ অন্যান্য রোগের মত ক্যান্সার হঠাৎ করেই শরীরে বাসা বাঁধে না। ক্যান্সার মূলত সৃষ্টি হয় কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য। কোষে যদি দীর্ঘদিন ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার ভাইরাস অবস্থান করে তবে সেখানে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। জাফরান ক্যান্সার সৃষ্টি হয় সেইসব ভাইরাস ধ্বংস করে দেয় এবং তাদের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। বিশেষ করে প্রটেস্ট ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে জাফরান কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
আয়রনের ঘাটতি পূরণেঃ জাফরানে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান। তাই যাদের শরীরে আয়রনের অভাব রয়েছে তারা চাইলে নিয়মিত জাফরান খেয়ে তাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
ঘুম ভালো হওয়াঃ আমাদের অনেকেরই অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে ঘুম ঠিকমত হয় না। এর ফলে শরীর অনেক খারাপ হয়ে যায়। নিয়মিত জাফরান খেলে তা ঘুম ভালো হতে সাহায্য করবে। সেই সাথে এটি আপনার স্ট্রেস কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যার ফলে খুব ভালো ঘুম হবে।
রক্তস্বল্পতা দূর করতেঃ জাফরান যেহেতু প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান রয়েছে তা এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা আয়রন রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত জাফরান পেতে পারেন। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতেঃ আমাদের অনেকেরই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে। নিয়মিত জাফরান সেবনে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়। সেইসাথে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে। এর ফলে হজমজনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ জাফরানে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন বিদ্যমান থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে এটি শরীরের ইমিউনো সিস্টেম বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃ জাফরানে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে। সেই সাথে এতে বিদ্যমান পটাশিয়াম হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সেই সাথে এটি রক্ত পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে থাকে।
ওজন বাড়াতেঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা দেখতে অনেক রোগা পাতলা। নিয়মিত জাফরান সেবন করার ফলে আপনার রোগা পাতার শরীরকে খুব দ্রুত সুস্থ সবল ও স্বাস্থ্যবান শরীরের পরিণত করতে পারেন। জাফরানে বিদ্যমান ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওজন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
সর্দি কাশি দূর করতেঃ জাফরান সর্দি-কাশি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য জাফরান অনেক বেশি উপকারী। নিয়মিত এটি সেবনে অ্যাজমার সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।
জ্বর কমাতেঃ জ্বর কমাতে জাফরানের জুড়ি মেলা ভার। জাফরানি বিদ্যমান ক্রোসিন নামক উপাদান অতিরিক্ত জড় কমাতে সাহায্য করে থাকে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত জাফরান সেবন করে তাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। সেই সাথে এটি চোখের ছানি পড়ার সমস্যাও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও জাফরান জয়েন্টের ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, দুর্বলতা, কিডনি, যকৃত, টিউমার, মূত্রথলি, মাসিকের ব্যথা ইত্যাদির বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে কাজ করে থাকে।
জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়
জাফরান সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্রশ্ন হলো জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়। এই পর্বে আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ইতিমধ্যে আমরা জাফরানের অনেক উপকারিতার কথা জেনেছি। সেই সাথে একটিও জেনেছি যে মসলার মধ্যে সবচেয়ে দামি মসলা এটি। কেউ যদি নিয়মিত রাতের বেলা এক চিমটি জাফরান এক গ্লাস দুধের মধ্যে ভালোভাবে মিশিয়ে সেবন করেন তবে কিছুদিনের মধ্যে আপনি নিজেই এর পার্থক্য বুঝতে পারবেন। নিয়মিত জাফরান সেবনে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন জাফরানের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে হলে এক গ্লাস দুধের মধ্যে সামান্য জাফরান ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে দুধের কালার হলুদ হতে শুরু করবে। এরপর সেই দুধ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। নিয়মিত এই দুধ খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। সেই সাথে এটি ত্বকের বলিরেখা দূর করতে কাজ করবে।
শুধু খাওয়ার কাজে নয় বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী যেগুলো রূপচর্চার কাজে ব্যবহৃত হয় সেগুলোর অনেকগুলোতে জাফরানের মিশ্রণ থাকে। এছাড়াও বাজারে জাফরানের ক্রিম পাওয়া যায় যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি চাইলে খুব সহজেই বাড়িতেই জাফরান দিয়ে রূপচর্চা করতে পারবেন। জাফরান দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ও এর ব্যবহার নিম্নরূপঃ
গোলাপজল ও জাফরানের ব্যবহার
আমাদের প্রায় সকলের বাড়িতেই গোলাপজল রয়েছে। আপনি চাইলে দুই টেবিল চামচ গোলাপ জলের সাথে এক চিমটি জাফরান মিশিয়ে এক ঘন্টা রেখে দিন। এরপর নরম তুলা বা স্পঞ্জের সাহায্যে ওই মিশ্রণে ভিজিয়ে তা আপনার ত্বকে লাগান। এটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করবে। যাদের ত্বক অনেক বেশি তৈলাক্ত তারা এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে পারেন। সেই সাথে টি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে।
গ্লো ফেইস মাস্ক
প্রথম একটি বাটিতে তিন চামচ কাঁচা দুধ, চার-পাঁচটি জাফরান, এক চামচ চিনি ও সামান্য অলিভ অয়েল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার এটি আপনার ত্বকে ভালোভাবে লাগান এবং পাঁচ মিনিট মেসেজ করুন। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ভালো হবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এটি ব্যবহারেই কিছুদিনের মধ্যে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।
মধু ও জাফরান ফেসপ্যাক
আমরা সকলে জানি মধুতে প্রচুর পরিমাণ অ্যকসিডেন্ট বিদ্যমান। এক চামচ মধুর সাথে সামান্য জাপান মিশিয়ে তা মুখে লাগালে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে মুখে বিদ্যমান মরা কোষগুলো উঠে গিয়ে মুখ আরো বেশি প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল দেখায়। এর জন্য এক টেবিল চামচ মধুর সাথে সামান্য জাফরান মিশিয়ে তার মুখে ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে। এরপর এটি ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলেই উপকার পাওয়া যাবে।
চন্দন কাঠ, দুধ ও জাফরানের ফেসপ্যাক
এটি ব্যবহারে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। এর জন্য হাফ কাপ খাটি গরুর দুধের মধ্যে সামান্য পরিমাণ জাফরান মিশিয়ে এক ঘন্টা রেখে দিন। এরপর এতে এক টেবিল চামচ চন্দন কাঠের গুড়া মেশান। ভালোভাবে মেশানো হলে এটি হাতের সাহায্যে মুখে এবং সমস্ত শরীরে লাগান। এরপর এটি শুকানোর জন্য ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহারের ত্বক হয়ে উঠবে অনেক বেশি উজ্জ্বল ও ফর্সা।
জাফরান মিশ্রিত ফেসপ্যাক ব্যবহার করার ফলে এটি আপনার ত্বকের ডেড সেল, ডার্ক সার্কেল, কালো দাগ, ব্রণের দাগ ইত্যাদি দূর করবে। সেই সাথে এটি আপনার ত্বকের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করবে এবং ত্বকে নতুন কোষ সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। যার ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে সুন্দর ও হেলদি। ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নেও জাফরানের ভূমিকা অপরিসীম।
গর্ভাবস্থায় জাফরান এর উপকারিতা
জাফরান শুধুমাত্র একজন সুস্থ মানুষের জন্যই উপকারি তা নয়। এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। গর্ভাবস্থায় কেউ যদি নিয়মিত পরিমাণ মতো জাফরান খেয়ে থাকে তবে তার শরীরের অনেক পুষ্টির অভাব পূরণ হয়ে যায়। সেই সাথে এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান থাকার কারণে তা গর্ভবতী মহিলার রক্তশূন্যতা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। গর্ভাবস্থায় জাফরানের উপকারিতা গুলো হলো-
বাচ্চার গায়ের রংঃ গর্ভাবস্থায় কেউ যদি রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস দুধে সামান্য পরিমাণ জাফরান মিশিয়ে খেয়ে থাকে তবে এতে গর্ভে থাকা বাচ্চার গায়ের রং উজ্জ্বল হতে শুরু করে। তাই গর্ভের বাচ্চা ফর্সা করতে চাইলে গর্ভবতী মহিলাকে নিয়মিত জাফরান মেশানো দুধ খেতে হবে।
হাড় মজবুত করেঃ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের যে সমস্যাটি বেশি দেখা যায় তা হলো ক্যালসিয়ামের অভাব। এর কারণে গর্ভের বাচ্চার বিকাশ সঠিকভাবে হয় না। সেই সাথে বাচ্চার দাঁত ও হাড় মজবুত হয় না। এছাড়াও আয়রনের অভাবের কারণে গর্ভবতী মহিলার দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়। তবে কেউ যদি নিয়মিত জাফরান খেয়ে থাকেন তবে এতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মায়ের শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করবে। যার ফলে শিশুর সঠিক বিকাশ এবং দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে।
মেজাজ ভালো রাখেঃ গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের হরমোন ক্ষরণের কারণে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অল্পতেই অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়। তবে কেউ যদি নিয়মিত জাফরান খেয়ে থাকেন তবে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হরমোনের করণ নিয়ন্ত্রণ করবে। সেই সাথে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এর ফলে মেজাজ শান্ত থাকবে।
ঘুম ভালো হওয়াঃ গর্ভাবস্থায় আমাদের কমন একটি সমস্যা ঠিকমতো ঘুম না হওয়া। এর ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। কেউ যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস উষ্ণ গরম দুধের সাথে সামান্য জাফরান মিশিয়ে খেতে পারেন তবে সে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। কেননা এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মনকে শান্ত রাখে ফলে ঘুম ভালো হয়।
ব্যথা নাশক হিসেবেঃ জাফরান ব্যথা হিসেবে কাজ করে থাকে। গর্ভাবস্থায় আমাদের অনেকেরই অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যা হলো হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথা ইত্যাদি। কেউ যদি নিয়মিত জাফরান খেয়ে থাকেন তবে এতে বিদ্যমান অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই ধরনের ব্যথা উপশমে কাজ করে থাকে। সেই সাথে এটি গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন ধরনের ক্র্যাম্পস থেকে মুক্ত রাখে।
বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষাঃ জাফরানে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে একটি বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে গর্ভবতী মহিলাকে সুরক্ষিত রাখে। সেই সাথে এতে বিদ্যমান অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন থেকে গর্ভবতী মহিলাকে রক্ষা করে থাকে।
আয়রনের ঘাটতি পূরণঃ গর্ভবতী মহিলার আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো আয়রনের ঘাটতি। এর জন্য গর্ব অবস্থায় প্রায় সকল নারীরই আয়রনের ওষুধ সেবন করতে হয় তবে কেউ যদি নিয়মিত জাফরান খেয়ে থাকেন তবে তার শরীরে আয়রনের অভাব পূরণ হয়ে যাবে। এর ফলে গর্ভের বাচ্চার শারীরিক গঠন সঠিকভাবে হবে এবং গর্ভবতী মহিলার রক্তশূন্যতার অভাব দেখা দিবে না।
চুল পড়া বন্ধ করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেকেরই প্রচুর পরিমাণ চুল উঠে যায়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি নিয়মিত জাফরান খেতে পারেন। জাফরানের থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল চুলের ভিতর পুষ্টি যোগায় এবং চুল পড়া বন্ধ করে। সেই সাথে আপনি চাইলে দুধ, জাফরান, মধু ও মেহেদি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগাতে পারেন। এর ফলেও চুল পড়া বন্ধ হবে।
অকাল প্রসব ঝুঁকি রোধঃ গর্ভাবস্থায় অনেকেরই অকাল প্রসব হয়ে থাকে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে গর্ভধারণের পঞ্চম মাসের শুরু থেকেই নিয়মিত জাফরান খেতে হবে। নিয়মিত জাফরান খাওয়ার ফলে অকাল প্রসবের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
তবে গর্ভাবস্থায় পাঁচ মাসের পূর্বে জাফরান খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে করে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি আপনার গর্ভপাতও হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত জাফরান সেবন জরায়ুকে উদ্দীপ্ত করে ফলে অকাল-প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম
জাফরানের মত জাফরান তেলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে এটি আমাদের মাথার চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি চুল পড়া বন্ধ করে, চুলকে ঘন কালো করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি চুলের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। জাফরান তেল ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। সেগুলো হলো-
জাফরান তেল ব্যবহারের পূর্বে এটি যখন কিনবেন তখন অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে কিনতে হবে। কেননা বাজারে অনেক নকল তেল রয়েছে। এই তেল অনেক ঘন হওয়ার কারণে এটি সরাসরি চুলে ব্যবহার করা উচিত নয়। এর সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
আপনি চাইলে যখন তখন এই তেল ব্যবহার করতে পারবেন না। যখন তখন ব্যবহার করলে এই তেল থেকে তেমন উপকার পাওয়া যায় না। এই তেল সপ্তাহে দুই দিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। এবার পাঁচ মিনিট মাথায় তেল মালিশ করুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে মধ্যেই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
জাফরান এর দাম বাংলাদেশে
বিরিয়ানি, শরবত এবং অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের গুণগতমান ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই জাফরানের ব্যবহার হয়ে আসছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে এই মসলার আকাশ ছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে এটি অনেকের নাগালের বাহিরে। তবে এর আকাশ ছোঁয়া দামের পেছনে রয়েছে এটি উৎপাদনের প্রক্রিয়া।
"লাল স্বর্ণ" খ্যাত এই মসলা উৎপাদনের জন্য জাফরান গাছের ফুল একটি করে হাত দিয়ে সংগ্রহ করা হয়। মেশিন দিয়ে সংরক্ষিত ফুল থেকে জাফরান তৈরি হয় না। আবার ১ লক্ষ ৭০ হাজার ফুল থেকে মাত্র এক কেজি জাফরান সংগ্রহ হয়। তাই এতে অনেক সময় ব্যয় হয় ও অনেক শ্রমিক প্রয়োজন। আর এই কারণে জাফরানের দাম আকাশ ছোঁয়া।
জাফরানের কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে এর দামের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সবচেয়ে ভালো মানের এক গ্রাম জাফরানের মূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। যার প্রতি কেজির মূল্য ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা। আবার এর চেয়ে একটু নিম্নমানের জাফরানের প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা মূল্যে। তবে সবচেয়ে নিম্নমানের জাফরানের মূল্য আরো কম। এর প্রতি কেজি মাত্র তিন লক্ষ টাকা।
জাফরান অনেক হালকা হওয়ার কারণে এবং এটি সংগ্রহ প্রক্রিয়া অন্যান্য মসলার থেকে আলাদা হওয়ার কারণে এর এত দাম হয়ে থাকে। এটি অনেক দামি পণ্য হওয়ার কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এর নকল তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে। যেগুলো ক্রয় করার মাধ্যমে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। তাই জাফরান কিনার পূর্বে অবশ্যই সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে দিতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
জাফরান অনেক দামে একটি মসলা হওয়া সত্ত্বেও এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর পাশাপাশি এটি বিভিন্ন খাবারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজ করে থাকে। আমাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস দুধের সাথে সামান্য জাফরান মিশিয়ে গ্রহণ করা উচিত। এতে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url