আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় - গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়
সন্তান একজন মানুষের জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবারের যখন কেউ গর্ভবতী হয় তখন আমাদের মধ্যে নানারকম আকাঙ্ক্ষা ও প্রশ্ন কাজ করে থাকে। এর মধ্যে কমন একটি প্রশ্ন হল গর্ভের সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে। সেটি সঠিকভাবে জানার জন্য আমরা বিজ্ঞানসম্মত উপায় অর্থাৎ আলট্রাসনোগ্রাম এর রিপোর্ট ব্যবহার করতে পারি।
এই রিপোর্টের মাধ্যমে খুব সহজেই গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা জানা যায়। তবে এর জন্য অবশ্যই গর্ভের বাচ্চার বয়স ২২ সপ্তাহের বেশি হতে হবে। তবে গর্ভের বাচ্চার বয়স যদি ৩০ সপ্তাহ অতিক্রম করে তবে ফলাফল আরো ভালো পাওয়া যায়। এই আর্টিকেলে আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রাণী তাদের বংশ বিস্তারের জন্য গর্ভধারণ করে থাকে। মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। গর্ভধারণের আগে একজন মায়ের অবশ্যই জানা উচিত যে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে সে সম্পর্কে। কেননা বর্তমান বিশ্বে গর্ভের বাচ্চা সঠিক জায়গায় না থাকার কারণে মা ও শিশু উভয়ের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে।
আমরা অনেকেই ধারণা করে থাকি যে গর্ভের বাচ্চা পেটের যেকোনো এক সাইডে থাকবে। কিন্তু আমাদের এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। গর্ভের বাচ্চা যখন নড়াচড়া শুরু করে তখন সে পেটের সব জায়গায় অবস্থান করতে পারে। তবে গর্ভধারণের শুরুতে বাচ্চা জরায়ুতে অবস্থান করবে। পরের বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস অতিক্রম করবে তখন সে পেটের সব জায়গায় নড়াচড়া করবে।
তবে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার সবচেয়ে অনুকূল অবস্থা হলো মাথা নিচের দিকে এবং পা উপরের দিকে থাকা। এই অবস্থাকে সিফালিক উপস্থাপনা বলা হয়ে থাকে। গর্ভের বাচ্চা এই অবস্থায় থাকলে খুব সহজেই প্রসবের সময় বাচ্চা বের হয়ে আসে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চার এই অবস্থানের উল্টোটাও দেখা যায়। সেক্ষেত্রে বাচ্চার পা নিচের দিকে এবং মাথা উপরের দিকে অবস্থান করে।
এই অবস্থায় বাচ্চা ডেলিভারি হতে অনেক কষ্ট করতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চা পেটের মধ্যে আড়াআড়ি ভাবে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে শিশু পেটে আনুভূমিকভাবে শুয়ে আছে বলে অনুভূত হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নবজাতকের পিঠ মায়ের পেটের সাথে লেগে থাকে। মায়ের পেটে আলতো করে হাত দিলে নবজাতকের পিঠ অনুভব করা যায়।
মোটকথা গর্ভে বাচ্চা বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে পেটের যে কোন জায়গায় অবস্থান করতে পারে। আমাদের সমাজের একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে ছেলে বাচ্চা পেটের ডান দিকে অবস্থান করে। যা মোটেও ঠিক নয়। কেননা ছেলে হোক বা মেয়ে গর্ভাবস্থায় সকল বাচ্চাই পাঁচ মাস বয়সের পর থেকে পেটের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতে পারে। তবে এর আগে সে পেটের মাঝখানে অবস্থান করে।
গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় হলে এমন একটি পর্যায় যেখানে অনেক বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। এ সময় মা ও শিশু উভয়েরই সঠিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করতে হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভাস। যদি গর্ভাবস্থায় খাবার কম খাওয়া হয় তবে মা ও শিশু দুজনেই অপুষ্টিতে ভোগে। এ সময় কোন এক বেলা কম খাওয়া বা না খাওয়ার অর্থ হলো মা ও শিশুর পুষ্টির ঘাটতি হওয়া।
এ সময় মা ও শিশু উভয়েরই বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হয় বিধায় গর্ভবতী মায়ের বেশি বেশি খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এই সময় যদি সে ডায়েটে থাকে তবে তা পরিহার করতে হবে। কেননা শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত একমাত্র মায়ের মাধ্যমে করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো-
- শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে। এর ফলে শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
- সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণ না করার কারণে শিশুর হাত পা ও মস্তিষ্ক বিকৃত হতে পারে। এমন কি শিশু মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে পারে।
- গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকলে মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিতে পারে। যার ফলে রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় সঠিকভাবে খাবার না খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যেতে পারে। যার ফলে মা ও শিশু উভয়েরই নানা ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
তাই গর্ভবতী মা ও শিশুর কথা চিন্তা করে তাদের যথাসম্ভব পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত। সেই সাথে তাদের শরীরে যেন পুষ্টির ঘাটতি দেখা না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। কেননা মায়ের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণই একজন শিশুকে স্বাস্থ্যবান করে করে তুলতে সাহায্য করে। সেই সাথে মায়ের শরীর সুস্থ থাকার প্রধান উপায় হলো তাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো। তাই গর্ভাবস্থায় মা যেন খালি পেটে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়
গর্ভধারণের পর আমাদের অনেকের মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দেয় যে গর্ভাবস্থায় কখন পেট বড় হয়। এর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। আলাদা আলাদা ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সময় ভিন্ন হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় তিন মাস পর পেট বড় হতে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে তার তিন মাসের আগেই পেট বড় হতে শুরু করে।
আবার কিছু কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভবতী হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পেট বড় হতে শুরু করেছে। এর বিভিন্ন কারণ হতে পারে। যেমন পেটে গ্যাস তৈরি হওয়া, পেট ফোলা ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় এই তিনটি সমস্যা বেশি দেখা দেয় বলে অনেকেরই এই কারণে পেট ফুলতে শুরু করে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে জমজ বাচ্চার কারণে গর্ভধারণের কিছুদিন পর থেকেই পেট বাড়তে শুরু করে।
তবে সাধারণত ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ বা তিন থেকে চার মাসের মধ্যে পেট বাড়তে শুরু করে। তবে যেসব মহিলা আগেও গর্ভধারণ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই সময়কাল আরো কম হতে পারে। কেননা পূর্বে গর্ভধারণের কারণে জরায়ু ও পেটের বেশি প্রসারিত থাকে। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি তাদের পেট বড় হতে শুরু করে।
সাধারণত তিন মাস বয়স পর্যন্ত জরায়ু পিউবিক হাড়ের ভেতরে অবস্থান করার কারণে পেটের আকারের কোন পরিবর্তন বোঝা যায় না। কিন্তু এই সময়কালের পর যখন এটি মায়ের পেলভিসের বাইরে বের হয়ে আসে তখন আস্তে আস্তে পেট বড় হতে শুরু করে। এছাড়াও বয়সের উপর ভিত্তি করে পেট বড় হওয়ার সময়সীমা আলাদা হতে পারে।
বেশি বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে পেটে রাখার তাড়াতাড়ি পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে পেটের আকার একটু দেরিতে পরিবর্তন হতে শুরু করে। আবার জিনগত কারণেও পেটে আকার পরিবর্তনে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের যদি খুব তাড়াতাড়ি পেটে রাখার পরিবর্তন হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে তারও তাড়াতাড়ি পেটে আকার পরিবর্তন হয়।
তাই পেটে রাখার পরিবর্তন হওয়ার বা পেট বড় হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা নেই। কারো কারো ক্ষেত্রে তিন মাসের পরে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে তিন মাস আগে পেট বাড়তে শুরু করে। তবে সাধারণত ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যেই পেট বড় হতে শুরু করে। এর আগে বা পরেও যদি পেট বড় হতে শুরু করে তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। এরপরও যদি মনে সন্দেহ থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়
গর্ভাবস্থায় আমাদের উচিত মধ্যে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় তা হলো গর্বের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। এটি জানার বিজ্ঞানসম্মত উপায় হল আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট। এই রিপোর্টের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই বাচ্চা লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারি। সেই সাথে বাচ্চা কি অবস্থায় রয়েছে, বাচ্চার হার্টবিট কত সমস্ত কিছুই এর মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়।
তবে গর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। এই সমস্যা হলো ২২ সপ্তাহ। এর কম বয়সে আলট্রাসনোগ্রাম করলে বাচ্চা লিঙ্গ নির্ণয় করা যায় না। তবে একদম ১০০% সঠিক খবর পেতে ৩০ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় বাচ্চার লিঙ্গ খুব ভালোভাবে বোঝা যায়।
আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে যে শুধু বাচ্চার লিঙ্গ জানা যায় বিষয়টি তেমন নয়। এর মাধ্যমে বাচ্চার দৈর্ঘ্য প্রস্থ, বয়স, গর্ভে ত্বরণের পরিমাণ, ভ্রুনের সংখ্যা সহ বিভিন্ন বিষয়ে সঠিকভাবে জানা যায়। সাধারণত শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে এই সমস্ত কিছু জানা যায়। যে ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাম করে থাকেন তিনি খুব ভালোভাবে সমস্ত বিষয় বুঝিয়ে দেন।
গর্ভবতী মহিলার সঠিক চেকাপের জন্য তিনবার আলট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। প্রথম আলট্রাসনোগ্রাম ১০ থেকে ১৪ সপ্তার মধ্যে করতে বলা হয়। এতে বাচ্চা কোন পজিশনে রয়েছে সেটি দেখা হয়। এরপরে ২০ থেকে ২২ সপ্তাহ হয়ে আরেকটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলা হয়। এতে বাচ্চার অবস্থা, পেটে তরলের পরিমাণ, ভ্রুনের সংখ্যা ইত্যাদি দেখা হয়। এবং সর্বশেষ ৩৮ সপ্তাহে আরেকবার আলট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
আমরা অনেকেই আলট্রাসনোগ্রাম এর রিপোর্ট বুঝতে পারিনা। আপনি যদি আলট্রাসনোগ্রামের কিছু তথ্য জেনে রাখতে পারেন তবে আপনি নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বুঝতে পারবেন। বিষয়গুলো হলো-
Fetal Number: এটি দ্বারা সাধারণত গর্ভে কয়টি ভ্রুনের অস্তিত্ব রয়েছে তা জানা যায়। অর্থাৎ এর মাধ্যমে গর্ভের একটি সন্তান নাকি দুটি সন্তান রয়েছে তা খুব ভালোভাবে জানা যায়।
Fetal Position: এর মাধ্যমে গর্ভে থাকা ভ্রুনের অবস্থান জানা যায়। এটি দ্বারা গর্ভে ভ্রম সঠিক জায়গায় তৈরি হয়েছে কিনা তা বোঝা যায়।
Fetal Heart Rate: এর সাহায্যে গর্ভের বাচ্চার হৃদস্পন্দন পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ বাচ্চাটির প্রতি মিনিটে হার্টবিট কত তা জানা যায়।
Fetal Anatomic Survey: এর মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার হার্ট, লিভার, কিডনি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কিনা তা জানা যায়।
Gestational Age(GA): এই অংশে গর্ভধারণের সময়সীমা উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ বাচ্চার বয়স কত হয়েছে তা এই অংশ থেকে জানা যায়।
Amniotic Fluid Index: এই অংশে গর্ভে তরলের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। এই অংশ থেকেই জানা যায় বাচ্চা সঠিক পরিমাণ তরলে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে কিনা।
এছাড়াও এতে আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। যেমন ভ্রুনের ব্যাস, মাথার পরিধি, সন্তানের পেটের পরিধি ইত্যাদি। সেই সাথে বাচ্চার লিঙ্গও নির্ণয় করা যায়। এসময় গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ 140 BPM এর কম থাকে তবে মেয়ে সন্তান এবং বেশি হলে ছেলে সন্তান হয়। এছাড়াও সন্তানের হার্টবিট যদি ১৪০বারের বেশি হয় তবে মেয়ে সন্তান এবং এরকম হলে ছেলে সন্তান হয়ে থাকে।
গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে সহজ ঘরোয়া পরীক্ষায় জেনে নিন
আগে যখন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার তেমন ছিল না তখন দাদী নানীরা বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতিতে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করে থাকেন। এজন্য তারা গর্ভবতী মায়ের আচার-আচরণ লক্ষ্য করতেন। সেইসাথে নাভির রেখাও লক্ষ্য করতেন। নিচে গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা বোঝার ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- গর্ভাবস্থায় সকল মায়েরই ক্লান্তি বেড়ে যায়। এই সময় অধিকাংশ নারীই শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ধারণা করা হয় যদি অলসতা ভাব বেশি লাগে তবে কন্যা সন্তান এবং কম লাগলে পুত্র সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় খুব বেশি মুড সুইং হয়ে থাকে। যদি এমনটা ঘটে তবে ধরে নেয়া যেতে পারে গর্ভের সন্তানটি মেয়ে। আর যদি এর বিপরীতটা লক্ষ্য করা যায় তবে গর্ভের সন্তানটি ছেলে।
- আবার যদি গর্ভবতী মহিলা বেশি বেশি বমি করে তবে তার কন্যা সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা কন্যা সন্তান হলে শরীরে হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয় তাই বমি বেশি পায়। এর বিপরীতটা হলে পুত্র সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- ঘুমানোর প্রবৃত্তি করেও গর্ভের সন্তান ছেলে মাকে মেয়ে তা বোঝা যায়। যদি অজান্তেই ডানদিক হয়ে ঘুমান তবে মেয়ে সন্তান এবং যদি বাম দিকে ঘুমান তবে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- অনেক লোক গর্ভাবস্থায় পেটের আকার দেখে বলে দিতে পারেন সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। তাদের ধারণা যদি গর্ভাবস্থায় মায়ের পেট নিচের দিকে বেশি ঝুলে যায় তবে ছেলে সন্তান হবে। আর যদি পেট উপরের দিকে উঁচু হয় তবে মেয়ে সন্তান হবে।
- গর্ভাবস্থায় অনেকেই কিছুই খেতে পারেন না আবার অনেকেই অনেক বেশি খেতে পছন্দ করেন। যদি আপনার খাবারের তালিকায় মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রাধান্য থাকে তবে বুঝতে হবে গর্ভের সন্তানটি মেয়ে। আর যদি নোনটা বা টক জাতীয় খাবার খেতে বেশি ইচ্ছা হয় তবে খুব শীঘ্রই আপনার কোল আলো করে একটি পুত্র সন্তান আসতে চলেছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
- সন্তান পুত্র নাকি কন্যা তা একটি ছোট্ট পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা যায়। এক্ষেত্রে একটি গ্লাসে পানি ও বেকিং সোডা নিয়ে তাতে সামান্য পরিমাণ আপনার ইউরিন মেশান। যদি সেটি বিক্রিয়া করে ফেনা উঠে ও শব্দ করে তবে গর্ভের সন্তানটি পুত্র সন্তান এবং যদি মিশ্রণটি কোন বিক্রিয়া না করে তবে গর্ভের সন্তানটি কন্যা সন্তান বলে ধরে নেয়া যায়।
- আবার অনেকে ধারণা করে থাকেন মেয়ে সন্তান মায়ের উজ্জ্বলতা কেড়ে নেয়। তাই যদি গর্ভাবস্থায় মায়ের ত্বক ফ্যাকাশে ও মলিন হয়ে যায় তবে গর্ভের সন্তানটি কন্যা সন্তান এবং এর বিপরীত হলে গর্ভে সন্তানটি পুত্র সন্তান।
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শারীরিক সুস্থতার জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। গর্ভবতী মহিলাকে সারাদিনরাত মিলিয়ে অন্তত ১০ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। এ সময় বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের কারণে শরীরের ক্লান্তি ভাব বেড়ে যায়। এই ক্লান্তি ভাব দূর করতে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি বিশ্রামের প্রয়োজন। সেই সাথে ঘুমানোর জন্য ঢিলা সুতি কাপড় পরিধান করাও জরুরী। এতে ঘুম ভালো হয়।
তবে গর্ভাবস্থায় ঘুম যেমন জরুরী আবার অতিরিক্ত শুয়ে থাকা ও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এ সময় যেহেতু বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায় এর ফলে শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই এ সময় মনে হয় সব সময় শুয়ে থাকতে। তবে গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে নানা ধরনের বিপদ দেখা দিতে পারে।
এ সময় অতিরিক্ত শুয়ে থাকার কারণে গর্ভবতী মহিলার পাকস্থলের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যার ফলে বদহজম, এসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে শিশুর হৃদস্পন্দন ও নড়াচড়া কমে যায়। এমনকি তখন শিশুর অক্সিজেনের মাত্রা ও কমে যায়। এর ফলে শিশু বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি চিত হয়ে শুয়ে থাকার কারণে শিশুর শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। এমনকি শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই একদিকে যেমন গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি পরিশ্রম করা উচিত নয় তেমনি অনেক বেশি শুয়ে থাকা ও মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সঠিক ঘুম হওয়া প্রয়োজন।
যদি কোন কারণে রাতে মায়ের সঠিকভাবে ঘুম না হয় তবে তার ক্লান্তি দূর হয় না। এর ফলে সারাদিন শুয়ে থাকতে মনে চায়। তাই রাতে মায়ের সঠিক ঘুম হওয়া খুবই জরুরী। এতে করে মা ও শিশু দুজনেই ভালো থাকবে। তবে কোন অবস্থাতেই গর্ভাবস্থায় ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমানো উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ঘুমের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দে থাকি যে কোন পাশে ঘুমালে তা মা ও শিশু ভাইয়ের জন্যই ভালো। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মা যে কোন ভাবেই ঘুমাতে পারেন। তিনি যেভাবে সুবিধা মনে করেন সেভাবেই ঘুমাতে পারেন। তবে বেশিক্ষণ চিৎ হয়ে ঘুমানো উচিত নয়।
অতিরিক্ত চিৎ হয়ে ঘুমানোর ফলে যেমন মায়ের কোমরে ও পিঠে ব্যথা অনুভব হয় সেই সাথে বুক জ্বালাপোড়া করে। এছাড়াও অতিরিক্ত চিৎ হয়ে ঘুমানো গর্ভের বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ডান বা বাম যে কোন ভাবেই ঘুমানো যেতে পারে। তবে বা দিক ফিরে ঘুমানো বেশি ভালো।
প্রতিটি মানুষেরই লিভার ডান পাশে অবস্থিত তাই গর্ভাবস্থায় যদি ডান দিকে ঘুমানো হয় তবে এতে লিভারের উপর বেশি চাপ পড়ে। সেই সাথে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় যা গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়ের জন্যই হুমকির কারণ। তাই লিভারকে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা দিতে এবং সঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে ডান দিক হয়ে না ঘুমানোই ভালো। বরং বামদিক হয়ে ঘুমালে শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক থাকে এবং সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকে।
তাই গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমানো উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি ডান পাশে ঘুমালে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তা হলো-
- রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়
- ভ্রুনের বিকাশ সঠিকভাবে হয় না
- নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়
- লিভারে অনেক বেশি চাপ পড়ে
- পিঠে ব্যথা অনুভব হয়
- এমনকি গর্ভের অবস্থানও সামান্য পরিবর্তন হতে পারে
বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে মা তার সুবিধামত যে কোন পজিশনে ঘুমাতে পারেন। এ সময় ডান দিক করে ঘুমালেও তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বামদিক করে ঘুমানোই মা ও শিশু উভয়ের জন্যই উপকারী। তাই এ সময় যথাসম্ভব বাম দিক করে ঘুমানো উচিত। ঘুমের মধ্যে ডানদিক হলে সমস্যা নেই। পরে ঘুম থেকে জায়গা পেলে আবার বাম দিকে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার গর্বের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে বলতে নিষেধ করেছেন। তাই আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করব শুধুমাত্র বাচ্চার অবস্থা দেখার জন্য। কোন অবস্থাতেই গর্বের বাচ্চা লিঙ্গ সম্পর্কে জানতে চাইবো না। কেননা দেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url