কেন খাবেন থানকুনি পাতা? থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
থানকুনি আমাদের নিকট অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। এই গাছ বাড়ির আনাচে কানাচে, মাঠে-ঘাটে দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সকল দেশেই এই গাছের দেখা মিলে। এই গাছ যেখানে সেখানে দেখতে পাওয়া গেলেও এর উপকারিতা অপরিসীম। আমাদের শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপকারে আসে এই পাতার রস।
বিশেষ করে এই পাতা পেটের বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ে ও ঠান্ডা কাশি নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে এই পাতার রস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা এই পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি হলো খুবই ছোট পাতা বিশিষ্ট এক ধরনের বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগ নিরাময় করার জন্য আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এই উদ্ভিদের ব্যবহার হয়ে আসছে। যেসব ভেষজ উদ্ভিদ আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো থানকুনি। এটি তিতা স্বাদ যুক্ত হওয়ার কারণে অনেকে এটি খেতে পছন্দ করেন না।
কিন্তু এই ছোট্ট গাছের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি হয়তো অবাকই হবেন। এটি শুধু আপনাকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিবে তা-ই নয় রূপচর্চার কাজেও এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খেতে শুরু করে তবে তার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো হলো-
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ হজমশক্তি বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতার রস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য কয়েকটি থানকুনি পাতা উঠিয়ে তাতে লবণ মিশিয়ে তা থেকে রস বের করে সেই রস নিয়মিত খেতে হবে। এছাড়াও আপনি চাইলে থানকুনির পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি নিয়মিত খেতে পারেন। এতেও হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
মূত্রনালী সংক্রমণ ও পেটের আলসার দূর করতেঃ থানকুনিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান বিদ্যমান থাকার কারণে এটি মূত্রনালীর যে কোন সংক্রমণ ও পেটের আলসার দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য আপনাকে প্রথমে থানকুনি পাতা তুলে ভালোভাবে ধুয়ে তা সেদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর থানকুনির পাতা সেদ্ধ করা পানি ভালোভাবে ছেঁকে একটি গ্লাসে নিয়ে তাতে সামান্য মধু যোগ করে প্রতিদিন খেতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতেঃ আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন সমস্যার কারণে শরীরে রক্ত সঠিকভাবে চলাচল করে না। যাদের এ সমস্যা রয়েছে তাদের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে থানকুনি পাতা। এই পাতার রস নিয়মিত গ্রহণ করলে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে। সেই সাথে এই রস রক্ত পরিষ্কার করতে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে থাকে।
মানসিক অবসাদ দূর করেঃ থানকুনি পাতায় বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি শরীরের স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে মানসিক অবসাদ দূর হয়। সেই সাথে এটি ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
লিভার সুস্থ রাখতেঃ লিভার সুস্থ রাখতে থানকুনির গুরুত্ব অপরিসীম। এর জন্য চিকিৎসকরা প্রতিদিন সকালে পাকা কলার সাথে কয়েকটি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন খাওয়ার ফলে তা লিভার সুস্থ রাখার কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ থানকুনি পাতার রস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এতে বিদ্যমান Bacoside B মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। নিয়মিত এই রস গ্রহণ করার ফলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও Pentacyclic Triterpenes-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যার ফলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাতের ব্যথা ও প্রদাহ দূর করতেঃ বাতের ব্যথা দূর করার জন্য উপকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ হতে পারে থানকুনি পাতা। এর জন্য অন্তত দুইটি থানকুনি পাতার রস নিয়মিত খেতে হবে। এর ফলে বাতের ব্যথা সহ প্রদাহ অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য থানকুনি পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে থানকুনি পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত থানকুনি পাতার রস গ্রহণ করতে পারেন তাহলে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকবেন।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেঃ থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান থাকার কারণে এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে যে সব পণ্যে এই পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয়েছে সেসব পণ্য ব্যবহারে ত্বক সতেজ ও প্রাণবন্ত থাকে। সেই সাথে এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ার কারণে এটি ব্রণ কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
অনিদ্রা দূর করেঃ ঘুম হলো আল্লাহ তায়ালা নিয়ামত। অনেকেই এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত। ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীর শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই সমস্যায় আক্রান্ত। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে খেতে পারেন। এতে করে কিছুদিনের মধ্যে আপনার এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কেননা এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান স্ট্রেস লেভেল কমাতে ও নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে ভালো ঘুম হয়।
বলিরেখা দূর করতেঃ থানকুনি পাতায় বিদ্যমান ফ্ল্যাভোনয়েড ও ম্যাডেকাসসাইড সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে কাজ করে থাকে। সেই সাথে এটি ত্বকে রক্ত সঞ্চালন এবং কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আর কোলাজেন ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতেঃ থানকুনিতে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন বিটা ক্যারোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে ত্বক নরম ও কোমল থাকে। সেই সাথে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না।
মৃত কোষ পুনর্গঠনেঃ শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের চামড়া অনেক বেশি শুষ্ক থাকে। কেননা এ সময় ঠান্ডায় চামড়ার কোষ মরে যায়। চামড়াকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে থানকুনি পাতার রস। এই রস মৃত কোষকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং ত্বককে মসৃণ রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ থানকুনি পাতায় বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর জন্য নিয়মিত দু চামচ থানকুনি পাতার রস মধু দিয়ে খেতে পারেন। এটি বয়স্ক এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই কার্যকরী।
টক্সিন অপসরণেঃ আমাদের শরীরে নানাভাবে টক্সিন জমে। এই টক্সিন ঘাম ও মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে গেলেও অনেক সময় দেখা যায় এগুলো শরীরের মধ্যে থেকে যাচ্ছে। যার ফলে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়। এর জন্য আপনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই চামচ থানকুনির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে রক্তে বিদ্যমান সমস্ত টক্সিন ঘাম ও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। ফলে শরীরে কোন ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।
চুল পড়া কমায়ঃ বর্তমান মেয়েদের একটি সাধারণ সমস্যা অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে থানকুনি পাতা। এর জন্য প্রতিদিন এক চামচ থানকুনি পাতার গুঁড়ো দিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করে তা মাথায় ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহারে চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে।
কাশি ও গলা ব্যথা সারাতেঃ ঠান্ডার সমস্যায় থানকুনি পাতার রস খুবই কার্যকরী। এর জন্য থানকুনি পাতার রসের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেতে হবে। তাহলেই সাত দিনের মধ্যে কাশি ভালো হয়ে যাবে। এছাড়াও এই রস শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় কাজ করে থাকে। আপনি যদি থানকুনি পাতার রস ও চিনি একসাথে খেতে পারেন তাহলে তা গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। আবার তুলসী পাতার রস, থানকুনি পাতার রস ও গোলমরিচ একসাথে খেলে তা ঠান্ডা ও জ্বর নিরাময়ে কাজ করে।
ক্ষত সারাতেঃ বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে অনেক সময় কেটে গিয়ে রক্তপাত শুরু হয় অথবা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই রক্তপাত বন্ধ করতে এবং ক্ষত সারাতে থানকুনি পাতা সাহায্য করে থাকে। থানকুনি পাতায় এমন উপাদান রয়েছে যা খুব দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এর জন্য কয়েকটি থানকুনি পাতা নিয়ে ভালোভাবে পিষে তা ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে। তাহলেই সেখানকার রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে এবং কিছুদিনের মধ্যে ক্ষত সেরে যাবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ বর্তমানে ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য থানকুনি পাতার রস খুবই উপকারী। এই রস রক্তের শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় থানকুনি পাতার রস গ্রহণ করতে হবে। তাহলে খুব সহজে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানেঃ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নির্মূল করতে থানকুনি পাতার রসের সাহায্যে একটি ঘরোয়া ঔষধ তৈরি করা যায়। এর জন্য আধা কেজি গরুর খাটি দুধ, ২৫০ গ্রাম মিশ্রি ও ১৭৫ গ্রাম থানকুনি পাতার রস ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে হবে। নিয়মিত এক সপ্তাহ খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে।
এছাড়াও থানকুনি পাতার রস আমাশয়, পেট ব্যথা, মল পরিষ্কার সহ বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাহলে আর দেরি কেন নিয়মিত থানকুনি পাতা গ্রহণ শুরু করুন এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করুন।
থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়
থানকুনি পাতার রস খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম থাকলেও আপনি এটি যেভাবে খান না কেন এর থেকে আপনি উপকার পাবেনই পাবেন। থানকুনি পাতার রস খাওয়ার জন্য আপনাকে সর্ব প্রথম থানকুনি পাতা তুলে আনতে হবে। এরপর এটি ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ করা হয়ে গেলে সেই পানি ভালোভাবে থেকে আপনি সেই পানি খেতে পারেন।
আপনি চাইলে সেই পানির সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে করে দারুন উপকার পাবেন। এছাড়াও কেউ যদি চায় তবে থানকুনি পাতা তুলে ভালোভাবে ধুয়ে তাতে সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে তার থেকে রস বের করে সরাসরি সেই রস খেতে পারেন। এতেও আপনি দারুন উপকার পাবেন।
আবার আপনি যদি চান তবে থানকুনি পাতা গাছ থেকে উঠিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে তা চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও অনেকে বিভিন্ন তরকারিতে এই পাতা ব্যবহার করে থাকেন। আবার অনেকে এই পাতা ভাজি করে খেয়ে থাকেন। আপনি যেমন করে খান না কেন এই পাতা থেকে সমান উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি চাইলে এই পাতা ভালো ভাবে পিষে এর বড়া তৈরি করে খেতে পারেন।
আবার এমন অনেক লোক রয়েছে যারা আলু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদির সাথে থানকুনি পাতা ভালোভাবে ভেজে তা ভর্তা করে খেতে পছন্দ করে। এছাড়াও অনেকে এই পাতার জুস বানিয়ে গ্রহণ করে থাকে। আপনি যেমন ভাবে গ্রহণ করেন না কেন এই পাতার রস আপনার পেটে গেলে এর থেকে আপনি উপকার পাবেন। তাই আপনার যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে আপনি এই পাতা খেতে পারেন।
চুলের জন্য থানকুনি পাতার উপকারিতা
চুল আমাদের সবার নিকট অনেক বেশি প্রিয়। বিশেষ করে মহিলাদের কাছে তাদের চুল অনেক পছন্দের। তারা চুলের জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকে। চুলের যত্নে থানকুনি পাতার উপকারিতা অপরিসীম। এটি যেমন চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে তেমনি চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো কোলাজেন। কেননা কোলাজেন নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। আর থানকুনি পাতার রস কোলাজের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতার রস গ্রহণ করে তবে তার শরীরে কোলাজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আর এটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও চুল পড়া রোধ করতে প্রতিদিন এক চামচ থানকুনি পাতার গুঁড়ো দিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করে তা মাথায় ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহারে চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে। সেই সাথে থানকুনি পাতার রস গ্রহণ ও এর গুঁড়ো দিয়ে তৈরিকৃত হেয়ার প্যাক ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে নতুন চুল গজাবে, চুল পড়া ও চুলের অকালপক্কতা রোধ করা সম্ভব।
সেই সাথে থানকুনি পাতার রসের বিদ্যমান অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে মাথার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি এটি মাথার ত্বকের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে এবং মাথার ত্বককে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়। চুল ঘন ও কালো হয়।
সেই সাথে থানকুনি চুলের গোড়া মজবুত করতে ও মাথার খুশকি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পাতার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে মাথার খুশকি কমে যায়। সেইসাথে এটি চুলকে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আপনি চাইলে এই পাতার রস সরাসরি মাথার ত্বকে লাগাতে পারবেন। এতে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাবেন।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
প্রত্যেকটি জিনিসেরই উপকারিতা ও অপকারিতা দুই দিকই রয়েছে। থানকুনিরও তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। থানকুনির অপকারিতা গুলো হলো-
- থানকুনি পাতার স্বাদ কিছুটা তিতা ধরনের হওয়ায় এটি খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে।
- অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তাই কেউ যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত থানকুনি পাতার রস খেয়ে ফেলে তবে তার পেট ব্যথা, মাথা ঘোরা সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।
- থানকুনির পাতা যেহেতু রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করেন তাদের এই পাতার রস না খাওয়াই উত্তম। আর খাওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- যাদের লিভারের সমস্যা হয়েছে তারা এই পাতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন অথবা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- অনেকের এই পাতার রসে এলার্জি থাকতে পারে। তাই যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা এই পাতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- যেকোনো ধরনের অপারেশনের পূর্বে এবং পরে এই পাতার রস না খাওয়াই ভালো।
থানকুনি পাতার উপকারিতার কাছে এর অপকারিতা গুলো কিছুই না। সামান্য সাবধানতা অবলম্বন করলে এর থেকে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং এটি খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায়।
লেখকের মন্তব্য
থানকুনি একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এটি আমাদের জন্য অনেক উপকারী। আমাদের উচিত প্রতিদিন নিয়মিত অন্ততপক্ষে ২/৩ থানকুনি পাতা চিবিয়ে এর রস গ্রহণ করা। তাহলে আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাদের এই রস খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে তাদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উত্তম।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url