বাচ্চাদের বমি হলে কি খাওয়া উচিত - বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার দোয়া
প্রিয় পাঠক, আপনার বাচ্চাটি মাঝে মধ্যে বমি করছে এবং তা নিয়ে আপনি অনেক দুশ্চিন্তায় আছেন? তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বাচ্চাদের বমি হলে কি খাওয়ানো উচিত এবং বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বমি বন্ধ করার দোয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন। যেগুলো আমল করলে এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখলে আপনার সন্তানের বমি ভালো হয়ে যাবে। তাই এই সমস্ত কিছু জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
শিশুরা বিভিন্ন কারণে বমি করে থাকে। সাধারণত তারা খাবারের অনিয়ম বা গতি জনিত অসুস্থতার কারণে বমি করে থাকে। অনেক সময় শিশুর পেটে গ্যাস জমে থাকার কারণে সে বমি করে। বিশেষ করে ছোট্ট শিশুদের সেই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই তাকে খাওয়ানোর পর ঢেকুর তুলন। এতে করে পেটের ভেতরে জমানো গ্যাস বের হয়ে এবং শিশু আর বমি করবে না।
এই আর্টিকেলে আমরা বাচ্চাদের বমি হলে কি খাওয়া উচিত, বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার দোয়া, বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়, বাচ্চাদের বমি হলে কি ঔষধ খাওয়াতে হবে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাই এ সম্পর্কে জানার জন্য আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বাচ্চাদের বমি হলে কি খাওয়া উচিত
বাচ্চারা বিভিন্ন কারণে বমি করতে পারে। হতে পারে সেটি ফুড পয়জনিং, যানবাহনে চলাচলের সময় অসুস্থতা, ইনফেকশন, ডায়রিয়া বা শরীরের অন্যান্য সমস্যা। যে সমস্যায় হোক না কেন আপনার শিশু যদি বমি করে তবে এতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে যদি ঘন ঘন বমি করে তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
সাধারণত শিশুদের হজমের সমস্যার কারণে বমি হতে পারে। এইজন্য এই সময় তাদের খাবারের প্রতি যত্ন দিতে হবে। শিশুকে এই সময় যেমন তেমন খাবার দেওয়া যাবে না। এই সময় শিশুকে পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি দিতে হবে। যেন শিশু দুর্বল হয়ে না পড়ে। বাচ্চাদের বমি হলে যেসব খাবার খাওয়াবেন সেগুলো হলো-
- শিশুদের বমি হলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। তাই শিশুর শরীরের পানির ঘাটতি পূরণের জন্য তাকে ঘন ঘন পানি খাওয়ান। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে পারেন। যা শিশুকে দুর্বল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। আপনি চাইলে স্যালাইন বাজার থেকে কিনে বা বাড়িতে তৈরি করে সেটি খাওয়াতে পারেন।
- এ সময় শিশুকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ান। হতে পারে সেটি স্যুপ। কেননা তরল খাবার একদিকে শিশুর শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবে অন্যদিকে পানি শূন্যতা দূর করবে। সেই সাথে এসব খাবার খুব সহজেই হজম হওয়ার কারণে তা শিশুর জন্য অনেক উপকারী হবে।
- বমি হওয়ার কারণে হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই এ সময় শিশুকে হালকা খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এ সময় কখনোই একবারে বেশি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। এতে সমস্যারও বাড়তে পারে। এ সময় অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ান যাতে সেগুলো খুব সহজে হজম হয়।
- শিশুরা বমি করতে শুরু করলে তাকে দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে শিশুরা যখন খালি পেটে থাকে তখন দুধের তৈরি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। এতে বমির ভাব আরো বাড়তে পারে। তবে আপনি চাইলে অল্প পরিমাণ টক দই খাওয়াতে পারেন। কেননা এতে বিদ্যমান প্রবায়োটিক শরীরের বিদ্যমান ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এবং পাকস্থলীকে ভালো করতে সাহায্য করে।
- শিশুরা বমি করতে শুরু করলে তাকে পাকা কলা খাওয়াতে পারেন। এতে একদিকে যেমন তার শরীরে পুষ্টি যোগাবে অন্যদিকে তেমনি খুব সহজে হজম হয়ে যাবে। তবে এ সময় ভুলেও আম খাওয়াবেন না। এতে সমস্যারও বাড়তে পারে।
- শিশুর বমি হতে শুরু করলে তাকে বাইরের খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। এ সময় শিশুর খাদ্য তালিকায় মুগ ডালের খিচুড়ি, ভাত, সিদ্ধ আলু রাখতে পারেন। এগুলো খাওয়ার ফলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়বে না।
- শিশু যদি অনবরত বমি করতে থাকে তবে তাকে বাঁ দিক করে বা উপর করে শুইয়ে দিতে হবে। এরপর শিশুর শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিয়ে তাকে চিত করে শুইয়ে দিতে হবে। এবার তাকে খাওয়ার ১৫/২০ মিনিট পূর্বে বমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। এরপর তাকে পর্যাপ্ত পানি ও নরম খাবার খাওয়াতে হবে।
- শিশুর বমি হতে শুরু করলে তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করেন। এতে করে তার বমি হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। বমি বন্ধ হওয়ার ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পর তাকে শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করুন। এর আগে শিশুকে নরম খাবার খাওয়ান।
- আপনার শিশু যদি দুই তিন বছর বা তার বড় হয় তবে তাকে সামান্য পরিমাণ আদা খাওয়াতে পারেন। প্রাচীনকাল থেকেই বমির চিকিৎসায় আদার ব্যবহার হয়ে আসছে। এ কারণে শিশুকে অল্প পরিমাণ আদা খাওয়াতে পারলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।
- সন্তানের বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দিলে তাকে লবঙ্গ ও দারুচিনি গুড়ো করে খাওয়াতে পারেন। এতে করে খুব সহজেই বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার দোয়া
সাধারণত নবজাতক শিশুর বমি হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে খাবার পর শিশু যদি বমি করে তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। তবে যদি অতিরিক্ত মাত্রায় বমি করে বা কিছু খাওয়ার পরপরই প্রত্যেকবার মনে করে তবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তবে বেশিরভাগ বাচ্চাদের বমি হয় তাদের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা থেকে।
বাচ্চারা বমি করলে তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই বমি যাতে না হয় তার জন্য কিছু আমল রয়েছে। যেগুলো করার মাধ্যমে বাচ্চাদের বমি হওয়া দূর করা সম্ভব। বমি ভালো হওয়ার জন্য আপনারা যে দোয়াটি পড়বেন সেটি হলো-
আল্লহুম্মা রাব্বান্নসি আযহিবিল বাসা ওয়াসফিল কার্বা ওয়াশফিন মিনাল আযাব ইয়া রহমানু ইয়া রহিম।
অর্থঃ হে মানুষের পালন করতে আল্লাহ আপনি আমাদের রোগ দূর করুন, দুঃখ দূর করুন এবং যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দান করুন। হে পরম দয়াময়, হে অতি দয়ালু।
আপনি যদি বিশ্বাসের সাথে এই দোয়াটি পাঠ করেন তবে আল্লাহর রহমতে আপনার সন্তানের বমি বন্ধ হয়ে যাবে। এই দোয়াটি পাঠ করার পূর্বে আপনি একবার করে সুরা ফাতেহা এবং সূরা ইখলাস তেলাওয়াত করুন। এরপর বাচ্চার মাথায় হাত রেখে উক্ত দোয়াটি সাতবার পাঠ করুন। আশা করা যায় আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনার সন্তানের বমি হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
এছাড়াও আপনি বাচ্চার বমি বন্ধ করার জন্য আরও একটি দোয়া করতে পারেন। সেটি হলো-
বিসমিল্লা হিললাজি লা ইয়াযুররু মায়াসমিহি সাইউং ফিল আরজি ওলাফিস-সামায়ি ওহুয়াস সামিউল আলিম। বিসমিল্লা হিসিফাউং মিন কুল্লিদা-আওকিলা ইয়া আরজুর লায়ি মা আকি ও ইয়া সামাউ আকলিয়ি ওগিজাল মাউ ওকুজিয়াল আমর্ ওয়া কি-লাল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ফাসাইয়াক ফিকা হুমুল্লাহ অহুয়াস সামিউল আলিম।
এই দোয়াটি একটি সাদা কাগজে বা কাপড়ে লিখে তা শিশুর যেকোনো হাতে বেঁধে দিতে হবে। এ সময় সুরা ফাতেহা ও সূরা ইখলাস তেলাওয়াত করা উত্তম। এই দোয়াটি পানিতে ধুয়ে শিশুকে সেই পানি খাওয়ানো যেতে পারে। এতে করে শিশুর বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব দূর হবে। তবে দোয়াটি করার সময় আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে।
দোয়াটি লিখার সময় পবিত্রতা অবলম্বন করা সবচেয়ে ভালো। সেই সাথে প্রতিনিয়ত এই দোয়া পড়ে বাচ্চাকে ফুঁ দিলে বাচ্চা বমি বমি ভাব দূর হয়। আল্লাহ তা'লা সমস্ত রোগের শেফা দান করেন। এজন্য আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে দোয়াটি পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে বাচ্চার ভূমি সংক্রান্ত সমস্ত রকম সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
শুধু দোয়া করলেই চলবে না এর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কেননা অনেকের ক্ষেত্রে এই দোয়াতে কাজ নাও হতে পারে। তাই বাচ্চাও অতিরিক্ত বমি করলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বেশি দেরি হয়ে গেলে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও আপনি বাচ্চার বমি হওয়ার জন্য সূরা মুহাম্মদ এর ৬ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করতে পারেন। এর বাংলা উচ্চারণ হলো-
ওয়াল্লা জিনা আমানূ ওয়া আমিলুছ সলিহাতি ওয়া আমানূ বিমা নুঝঝিলা আলা মুহাম্মাদীও ওয়াহুয়াল হাক্কু মির রব্বিহিম। কাফফারা আনহুম সাইয়িআতিহিম ওয়া আসলাহা বালাহুম।
যে কোন দোয়ায় পাঠ করার পূর্বে কয়েকবার দুরুদ শরীফ পাঠ করা উত্তম এবং দোয়া পাঠ করা হয়ে গেলে এরপর আরো কয়েকবার দুরুদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর রহমতে বমিভাব দূর হয়ে যাবে।
বাচ্চাদের বমি বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চা বমি করতে শুরু করলে প্রতিটি মা-ই দুশ্চিন্তা করে। এ সময় তারা চাইলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে বাচ্চার বমি বন্ধ করতে পারে। এই পর্বে আমরা বাচ্চাদের বমি হওয়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আপনি যদি এ বিষয়টি জেনে না থাকেন তবে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এ পর্বটি পড়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই বাচ্চাদের বন্ধ করতে পারবেন।
লেবু
বাচ্চাদের বমি দূর করার জন্য আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে লেবু। এর জন্য একটি লেবু নিয়ে তার গন্ধ নিতে শুরু করুন। কেননা লেবুর খোসায় যে উপাদান থাকে তা আপনার বমি বমি ভাব দূর করতে পারে।
এলাচ
শিশুদের বমি দূর করতে আরেকটি যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে থাকে তা হলো এলাচ। এর জন্য হাফ চামচ এলাচ গুড়ো নিয়ে তাতে সামান্য জিনিস যোগ করে আপনার সন্তানকে খাওয়াতে পারেন। এতে করে তার বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে। কেননা এলাচের গুঁড়ো পেটের উপর একটি শান্ত প্রভাব ফেলে। যার ফলে গা গুলানো বন্ধ হয় এবং বমিও বন্ধ হয়।
আদা
বমি দূর করার আরেকটি কার্যকরী উপাদান হলো আদা। প্রাচীনকাল থেকেই আদা বাচ্চাদের বমি ভাব দূর করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই বাচ্চারা বমি করলে বা বমি বমি ভাব হলে তাকে সামান্য আদা খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এতে করে তার বমি হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
লবঙ্গ
বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে আরেকটি যে জিনিস সাহায্য করতে পারে সে হলো লবঙ্গ। আমাদের রান্নাঘরে খুব সহজেই এটি পাওয়া যায়। আপনি যদি আপনার সন্তানকে একটি লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়াতে পারেন তবে নিমিষেই তার বমি বমি ভাব দূর হবে। সেই সাথে সে যদি বমি করে তবে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে যদি চিবিয়ে খেতে না পারে তাহলে কয়েকটি লবঙ্গ ভালোভাবে পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি খেতে দিন। এতেও উপকার পাওয়া যাবে
শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা
বাচ্চার বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করতে পারে তার শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা। বাচ্চার বমি বমি ভাব হলে তাকে বলুন ১ থেকে ৪ গুনা পর্যন্ত শ্বাস নিতে বলুন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার ১ থেকে ৪ গুনা পর্যন্ত শ্বাস ছাড়তে বলুন। এতে করে আপনার সন্তানের বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
জিরা
বাচ্চাদের সাধারণত বমি হয় পেটে গ্যাস হওয়ার কারণে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে জিরা। জিরাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো বমি ভাব কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে এটি পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে। তাই হাতের নাগালে পাওয়া জিরা আপনার বাচ্চার বমি ভাব দূর করতে পারে।
মৌরি
জিরার মতো মৌরিও বমি অবিভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এটির স্বাদও বাচ্চারা পছন্দ করে থাকে। তাই আপনার বাচ্চার বমি বমি ভাব হলে তাকে এক চামচ মৌরি খাইয়ে দিন। এতে করে খুব দ্রুত তার বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগারের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। অর্থাৎ এটি গা গুলানো বা বমি বমি ভাব দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এই ভিনেগার পেটকে শান্ত রাখে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে। এর জন্য এক গ্লাস পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ও মধু যোগ করুন। এবার সেই পানি আপনার বাচ্চাকে খেতে বলুন। দেখবেন আস্তে আস্তে তার বমি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা বমি বমি ভাব দূর হয়ে গিয়েছে।
পুদিনা পাতা
বমি বমি ভাব দূর করা বা বমি বন্ধ করার কাজে যে আরেকটি ঘরোয়া উপাদান সাহায্য করতে পারে তা হলো পুদিনা পাতার রস। এই রস খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত গা গুলানো ভালো হয়ে যাবে। আপনি চাইলে এর স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এতে মধু যোগ করতে পারেন। এটি হাতে লাগালে থাকে বলে খুব সহজে এর সাহায্যে বমি বমি ভাব দূর করা বা বমি বন্ধ করা যায়।
ওআরএস
ওআরএস বাচ্চাদের বমি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য বাচ্চা বমি করতে থাকলে বা বমি বমি ভাব হলে তাকে ওআরএস মিশ্রিত পানি পান করান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বমি কমে যাবে বা বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
দারুচিনি
বমি বন্ধ করার কাজে আরেকটি যে জিনিস সাহায্য করে তা হলো দারুচিনি। দারুচিনি পেটকে প্রশমিত করে এবং গা গুলানো প্রতিহত করে। এজন্য আপনি চাইলে সামান্য দারুচিনি চিবিয়ে বা দারুচিনির চা বানিয়ে খেতে পারেন। এতে করে আপনার বমি বন্ধ হয়ে যাবে।
ভাতের মাড়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য বমি হলে আপনি তা নিরাময়ের জন্য ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য এক কাপ চাল পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ফুটান। এবার চাল ভালো ভাবে ফুটে গেলে তা থেকে পানি ছেঁকে নিন। এবার সেই পানি আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান। তাহলেই দেখবেন তার বমি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এছাড়াও বমি বমি ভাব দূর করার জন্য সামান্য ব্যায়াম, ভিটামিন b6 যুক্ত খাবার সাহায্য করতে পারে। এছাড়া আপনি আকুপ্রেশার এবং অ্যারোমাথেরাপি ব্যবহার করে খুব দ্রুত আপনার বমি বমি ভাব দূর করতে পারেন। আপনি বমি বমি ভাব ভাব দূর করার জন্য পেপারমিন্টের সুবাসে গ্রহণ করতে পারবেন।
বাচ্চাদের বমি হলে কি ঔষধ
ছোট শিশুরা বিভিন্ন কারণে বমি করতে পারে। বেশিরভাগ শিশুই খাবারের অনিয়মের জন্য এবং গতির অসুস্থতার জন্য বমি করে থাকেন। যদি শিশু অল্প বমি করে তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই তবে শিশু যদি অধিক পরিমাণ বমি করে তবে তা ভালো করার জন্য তাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে। শিশুদের বমিতে কি কি ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে সেগুলো নিয়ে এই পর্বে আলোচনা করব।
শিশুর বমি বন্ধ করার জন্য তাকে যেসব ওষুধ খাওয়াতে পারেন সেগুলো হলো-
- জোফার 4 mg ট্যাবলেট
- ওন্ডানবিক 4 mg ট্যাবলেট
- পেরিসেট 4 mg ট্যাবলেট
- ভোমিহল্ট 4 mg ট্যাবলেট
- অন্ডেম 4 mg ট্যাবলেট
এছাড়াও বাচ্চার বয়স যদি একটু বেশি হয় তবে তাকে মেক্লিজিন + পাইরিডক্সিন ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও জয়ট্রিপ 150 mg ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন। এটি আপনার শিশুর গতির অসুস্থতার জন্য যে বমি তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
তবে অবশ্যই এসব ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাচ্চাকে কোন ঔষধ খাওয়াবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়ালে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
ছোট শিশুরা বিভিন্ন কারণে বমি করতে পারে। যদি শিশু অল্প বমি করে এবং তা যদি অনেকদিন পর পর করে তবে এতে চিন্তার কোন কারণ নাই। তবে শিশু যদি বারবার বমি করে বা অধিক পরিমাণ বমি করে তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এই সময় শিশুকে যতটা সম্ভব তরল ও হালকা খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলে শিশু খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url