খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা - কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়
আমরা সাধারণত রমজান মাসে ছোলা খেয়ে থাকি। তবে শুধু রমজান মাস নয় সারা বছরে ছোলা খাওয়া প্রয়োজন। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান।
ছোলা কাঁচা বা সিদ্ধ দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তবে সিদ্ধ ছোলার তুলনায় কাঁচা ছোলা অধিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। কেউ যদি সকালে নিয়মিত খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেয়ে থাকে তবে তার সারাদিনের শক্তির জোগান এই ছোলা থেকেই পেয়ে যাবে। নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে শরীর শক্তিশালী হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা, কাঁচা ছোলা খেলে মোটা হওয়া যায় কিনা সহ ছোলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম
আমরা সকলেই কম-বেশি ছোলা চিনি। এটি হল একটি ডাল জাতীয় উদ্ভিদ। এতে প্রচুর পরিমাণ আমিষ, খাদ্য আঁশ, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস এবং আয়রণ বিদ্যমান থাকে। তবে কোন খাবার থেকে কতটুকু পুষ্টি উপাদান পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে সেই খাবারটি কিভাবে খাওয়া হচ্ছে তার উপর। আমরা অনেকেই ছোলা অনেক বেশি তেল মসলা দিয়ে রান্না করে খায়। যা একেবারেই উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কী হয়?
ছোলার সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় এটি যদি সকালে খালি পেটে খাওয়া যায়। এর জন্য প্রথমে রাতে এক মুঠো ছোলা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজানোর সময় পানির পরিমাণটা একটু বেশি দিতে হবে। কেননা ভেজানোর পর ছোলা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। এবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সেই ছোলা খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারেন।
আপনি চাইলে এর সাথে পেঁয়াজ, ধনেপাতা, শসা, লেবুর রস ও সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে সালাদ তৈরি করে খেতে পারেন। ছোলা খাওয়ার পর অবশ্যই আপনাকে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। কেননা এতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকার কারণে তা হজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। আর পানি এই উচ্চমাত্রার ফাইবার হজমে সাহায্য করে থাকে।
তবে সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার সময় কোন অবস্থাতেই এর খোসা খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত ছোলা খাওয়া না হয়। অতিরিক্ত ছোলা খেয়ে ফেললে ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। মোটকথা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো ছোলা খেলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের অনেক উপকারে আসবে।
প্রতিদিন ছোলা খেলে কি হয় - খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই সকাল-সন্ধ্যায় ছোলা খেয়ে থাকি। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিপ্রধান বিদ্যমান থাকায় এটি আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিচে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো।
প্রোটিন ও আয়রনের ভালো উৎসঃ যারা মাছ মাংস খায় না তারা সব সময় প্রোটিন নিয়ে চিন্তিত থাকে। কেননা মাছ মাংস না খাওয়ার কারণে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়। তাদের জন্য ছোলা দারুন একটি সমাধান হতে পারে। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন বিদ্যমান। এর ফলে খাবার তালিকায় ছোলা রাখলে তা শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়াও ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন বিদ্যমান। যা শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার সহজে হজম হয় না। এর ফলে ছোলা খাওয়ার পর অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। যার কারণে ক্ষুধা কম লাগে। সেই সাথে আপনাকে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতেঃ ছোলাতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি শরীরের মাত্রা কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে কাজ করে থাকে।
খাদ্যনালী ভালো রাখেঃ আমাদের খাদ্যনালীতে অনেক সময় ক্ষতিকর জীবাণু বাসা বাঁধে। ছোলা খাদ্যনালীর এসব ক্ষতিকর জীবন ও দূর করতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখেঃ ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ এনটিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট বিদ্যমান থাকে। যা আমাদের রক্তনালীকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে বিদ্যমান খনিজ পদার্থ রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে। যার ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং হার্ট ভালো থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের প্রতি সতর্ক হতে হয়। তারা যেকোনো খাবার গ্রহণ করতে পারেনা। যেসব খাবারের শর্করার মাত্রা কম সেগুলো খাবার গ্রহণ করতে হয়। ছোলাতে বিদ্যমান শর্করা খুব সহজে শরীর শোষণ করতে পারেনা। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত পরিমান মত ছোলা খেতে পারেন। এটি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ শোলাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান থাকে। যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
রক্তের চর্বি কমাতেঃ ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট বিদ্যমান থাকলেও এর বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এসব ফ্যাট শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। কেননা এগুলো রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তনালি ও হার্ট ভালো থাকে।
টক্সিন দূর করতেঃ নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীর থেকে সমস্ত ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শক্তির ভালো উৎসঃ সকালে খালি পেটে একমুঠো কাঁচা ছোলা খেলে তা শরীরে সারাদিনের শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তাই নিয়মিত সোলা খাওয়ার ফলে এটি শরীরের দুর্বলতা দূর করে শরীরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান। এসব উপাদান চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ছোলাতে বিদ্যমান প্রোটিন চুলের ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী রাখে। এর ফলে চুল পড়া রোধ হয়। সেই সাথে নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে তা চুলের অকালপক্কতা থেকে রক্ষা করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ছোলাতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতেঃ যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ছোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেউ যদি নিয়মিত খালি পেটে কাঁচা ছোলা খান তবে এটি তার যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ছোলা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বকের যেকোন সমস্যার দূর করতে সাহায্য করে। এ কারণে নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে তা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়ের জন্যঃ গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন বিদ্যমান থাকায় এটি গর্ভাবস্থায় অনেক উপকারে আসে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলার রক্তশূন্যতা দূর হয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেঃ নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতেঃ কাঁচা ছোলায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি বিদ্যমান। যা মস্তিষ্কের উন্নতি করতে সাহায্য করে। সেইসাথে এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও কাজ করে থাকে।
কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়
কাঁচা ছোলা রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান। এ কারণে নিয়মিত খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে তা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের মধ্যে যাদের ওজন অনেক কম তারা চাইলে নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেতে পারেন।
এতে অনেক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকার কারণে কিছুদিনের মধ্যে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। তবে মোটা হওয়ার জন্য কখনোই শুধুমাত্র ছোলার উপর নির্ভর করা উচিত নয়। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়ার পাশাপাশি মোটা হওয়ার জন্য পুষ্টিকর খাবারও গ্রহণ করতে হবে। এ কারণে শুধুমাত্র ছোলা ফেলে মোটা হওয়া যাবে না।
আবার অনেকেই রয়েছেন যাদের স্বাস্থ্য ভালো। তারা যদি নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেতে পারেন তবে তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কাঁচা ছোলায় উচ্চমাত্রার ফাইবার বিদ্যমান থাকার কারণে এটি দীর্ঘক্ষণ পেটে থাকে। হলে ক্ষুধা কম লাগে। এছাড়াও এতে ফ্যাটের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকায় এটি আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
কিন্তু ওজন কমানোর জন্য আপনি শুধু কাঁচা ছোলার উপর নির্ভর করবেন তা একেবারেই উচিত নয়। এটি আপনাকে কখনোই দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করবে না। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়ার পাশাপাশি শরীর চর্চা করতে হবে। তবেই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কাঁচা ছোলা অনেক পুষ্টিকর এবং উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে যাদের ওজন অনেক কম তাদের ওজন বাড়াতে এবং যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে কখনোই ওজন বাড়াতে বা কমাতে সম্পূর্ণভাবে ছোলার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। কেননা এটি অনেক পুষ্টিকর হওয়া সত্ত্বেও ওজন বাড়াতে বা কমাতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয়
ছোলা সিদ্ধ বা কাঁচা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তবে অনেকেই মুখের স্বাদের জন্য কাঁচা ছোলার পরিবর্তে সিদ্ধ ছোলা খেয়ে থাকেন। কাঁচা ছোলাতে প্রচুর উপকারিতা থাকলেও সিদ্ধ ছোলাতে সেই পরিমাণ উপকারিতা থাকে না। সিদ্ধ ছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো-
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ সিদ্ধ ছোলা খাওয়ার ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা মনে হয়। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান। যা হজম হতে সময় বেশি লাগে। এর ফলে বেশি বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও এতে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম থাকে। ফলে নিয়মিত সিদ্ধ ছোলা খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকে। তারা চাইলেই যে কোন খাবার খেতে পারেনা। তাদের খাবার তালিকায় কম শর্করাযুক্ত খাবার রাখতে হয়। আর ছোলাতে শর্করার পরিমাণ কম থাকে। সেইসাথে এতে প্রোটিন ও ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে। আর এই প্রোটিন ও ফাইবার দেহের শর্করার শোষণ কমিয়ে দেয়। যার ফলে রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য নিয়মিত সিদ্ধ ছোলা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণেঃ সিদ্ধ ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান থাকার কারণে এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফাইবার খুব সহজে হজম না হওয়ার কারণে বেশি বেশি ক্ষুধা পায় না। এর ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেঃ সেদ্ধ ছোলার সাথে মধুমেশে নিয়মিত খেলে তা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর ফলে হার্ট ভালো থাকে।
পুষ্টি চাহিদা পূরণেঃ সিদ্ধ চলাতে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে নিয়মিত সিদ্ধ ছোলা খেলে তা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও সিদ্ধ ছোলা মুখের রুচি বাড়াতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে থাকে। কেননা এটি অনেক মুখরোচক হয়ে থাকে। যার ফলে বৃদ্ধ থেকে শিশু সবাই সিদ্ধ ছোলা খেতে পছন্দ করে। যদিও কাঁচা ছোলা তুলনায় সিদ্ধছলায় উপকারিতা কম তবুও এর নানা উপকারিতা রয়েছে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ছোলা রাখা।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি জিনিসেরই উপকারী এবং অপকারী দুই দিকে রয়েছে। নিয়ম মেনে খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি নিয়ম না মেনে খেলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ছোলারও তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন ছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক-
- ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান থাকায় এটি হজম হতে অনেক সময় লাগে। যদি অধিক পরিমাণে ছোলা খাওয়া হয় তবে তা হজমের সমস্যা তৈরি করে। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি অস্বস্তি অনুভব হয়।
- মূত্রের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে অক্সালেট বের হয়ে যায়। শরীরে অক্সালেট এর পরিমাণ বেশি হলে তা কিডনি পাথরের সৃষ্টি করে। আর ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ অক্সালের বিদ্যমান। এ কারণে অধিক পরিমাণ ছোলা খেলে কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়ে।
- অনেকের ছোলাতে এলার্জি রয়েছে। যাদের ছোলা খেলে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যায় তাদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব, পেট ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যাদের হার্টের সমস্যা হয়েছে তাদের ছোলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। কেননা হার্টের রোগীরা যেসব ওষুধ সেবন করেন তা শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। এর ফলে এসব রোগী অতিরিক্ত ছোলা খেলে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমা হয়। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
- ছোলা হজম হতে একটু বেশি সময় লাগে। সেই সাথে অন্ত্র এটিকে পুরোপুরি শোষণ করতে পারে না। এর ফলে অনেকেরই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
- যে সব ব্যক্তি আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছেন তারা ছোলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হন। কেননা অধিক পরিমাণ ছোলা খেলে তা শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এসব রোগের ক্ষেত্রে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে সমস্যা আরো জটিল হতে পারে।
- আমরা অনেকেই তেল মশলা ব্যবহার করে ছোলা খেতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু যাদের ওজন বেশি তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর। কেননা এতে ওজন আরো বেড়ে যেতে পারে।
পরিমিত পরিমাণ ছোলা গ্রহণে উপরিউক্ত সমস্যা গুলো দেখা দেয় না। তবে যদি অধিক পরিমাণ ছোলা খাওয়া হয় তবে এসব সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ছোলা খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ ছোলা খেতে হবে। তাহলেই এর থেকে উপকার পাওয়া যাবে।
লেখকের মন্তব্য
ছোলার বেশ কিছু অপকারিতা থাকলেও এর উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত প্রতিদিন পরিমাণ মতো ছোলা গ্রহণ করা। তবে কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত লাভের আশায় অধিক পরিমাণ ছোলা খাওয়া উচিত নয়। এতে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url