OrdinaryITPostAd

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না - গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি

আপনি কি মা হতে চলেছেন? তাহলে আপনাকে অভিনন্দন। পৃথিবীতে একজন নারীর সবচেয়ে সুখকর স্মৃতি হলো মা হওয়া। মা হওয়ার সময় আমাদের মনে যেসব প্রশ্নও উকি দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো এ সময় কি কি খাবার গ্রহণ করা উচিত। গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টির দিকে নজর দিতে হয় তা হলো খাবার। এই সময় অনেক বেশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হয়।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
খাবারের উপর মা ও শিশু দুজনেরই স্বাস্থ্য নির্ভর করে। এই সময় যেমন অধিক ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিত তেমনি কিছু কিছু খাবার পরিহার করা উচিত। যেগুলো মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এই আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না

গর্ভধারণের সময়কাল একজন মায়ের কাছে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। এ সময় সকল কিছু সঠিকভাবে পালন করতে হয়। বিশেষ করে খাবারের প্রতি আলাদা যত্ন নিতে হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই খাবারের মধ্যে থাকবে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও মিনারেল।

তবে এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে গর্ভবতী মা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এমনকি এসব খাবার তার গর্ভধারণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কে। গর্ভধারণের সময় আপনাকে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সেগুলো হলো-

চা/কফিঃ আমাদের অনেকেরই কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। গর্ভধারণের সময় আমাদের এই অভ্যাসটি পরিহার করতে হবে। কেননা এই সময় যদি দিনে ২০০ মিলি এর বেশি চা/কফি খাওয়া হয় তবে তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সাথে এটি শিশুর ওজন জনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কম সিদ্ধ বা হাফ সিদ্ধ ডিমঃ গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়া অনেক বেশি জরুরী। কেননা এতে শরীরের অনেক পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। আমরা অনেকেই হাফসিদ্ধ ডিম খেতে অনেক পছন্দ করি। কিন্তু গর্ভধারণের এই সময়ে কম সিদ্ধ করা ডিম খাওয়া চলবে না। কেননা কম সিদ্ধ করা ডিমে স্যালমোনেলা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা পেটে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এ সময় কোন ঝুঁকি না নিয়ে পুরোপুরি সিদ্ধ না হওয়া ডিম খাওয়া যাবে না। ডিম পুরোপুরি সিদ্ধ হলে এই ব্যাকটেরিয়া মারা যায়।

বিভিন্ন ধরনের ফলমূলঃ গর্ভাবস্থায় ডাক্তারগণ অনেক বেশি ফলমূল খেতে বললেও বেশ কিছু ফলমূল খেতে নিষেধ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আনারস, আঙুর, পেঁপে, তেঁতুল, তরমুজ ইত্যাদি। গর্ভধারণের পর এসব ফল খেলে তা বিভিন্নভাবে ভ্রুনের ক্ষতি সাধন করে থাকে। এমন কি এসব ফল খাওয়ার কারণে গর্ভপাতও হতে পারে।

কম সিদ্ধ মাংসঃ গর্ভাবস্থায় কম সিদ্ধ মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। কেননা এতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট বিদ্যমান থাকতে পারে। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও কম সিদ্ধ মাংস খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা গর্ভাবস্থায় এমনিতেই হজমের সমস্যা তৈরি হয়।

অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবারঃ গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকে। সেই সাথে এসব খাবারে ক্ষতিকর ফ্যাট বিদ্যমান থাকার কারণে গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় মাখন, ঘি, ডালডা, ক্রিম, ভাজাপোড়া, পুডিং ইত্যাদি খাওয়া পরিহার করতে হবে। এর সময় অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খেলে দাঁতের ক্ষয় হয়।

কাঁচা বা কম সিদ্ধ মাছঃ আমরা অনেক সময় কম সিদ্ধ মাছ বা কাঁচা মাছের সুশি খেতে অনেক বেশি পছন্দ করি। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছের সুশি অনেকে খেয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় এ ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে। কেননা এতে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকতে পারে যা বিভিন্ন ধরনের অসুখ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া অনিয়মিত এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে মায়ের দেহে লিস্টেরিয়া, স্যালমোনেলা, ভিব্রিও সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে।

এলার্জি জাতীয় খাবারঃ আপনার যেসব খাবারে এলার্জি রয়েছে গর্ভকালীন সময় সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা এসব খাওয়ার ফলে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও গর্ভধারণের সময় হারবাল বা ভেষজ ঔষধ খাওয়া পরিহার করতে হবে।

কাঁচা দুধঃ আমরা অনেকেই কাঁচা দুধ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে থাকি। গর্ভধারণের সময় কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরিকৃত খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে। কেননা কাঁচা দুধে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। তাই এ সময় কাঁচা দুধ বা কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরিকৃত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উত্তম।

অ্যালকোহলঃ আমাদের অনেকেরই অ্যালকোহল পান করার অভ্যাস রয়েছে। যাদের এই বদ অভ্যাস রয়েছে গর্ভাবস্থার সময় তাদের একটি পরিহার করা উচিত। কেননা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত অ্যালকোহল পান করার ফলে শিশুর হৃদযন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি নিয়মিত অ্যালকোহল পান করার ফলে অকালে গর্ভপাতও হতে পারে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার ও কলিজাঃ গর্ভকালীন সময়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার, রান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ ও মটরশুঁটি, পোড়া মাছ মাংস ইত্যাদি খাওয়া পরিহার করতে হবে। কেননা এসব খাবারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। এছাড়াও এ সময় গর্ভবতী মায়েদের কলিজা খেতে নিষেধ করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান থাকলেও ভিটামিন এ এর পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে তা গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উপরে উল্লেখিত খাবার গুলো পরিহার করে একজন গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে মাছ-মাংস, ডিম ও দুধ। তবে অবশ্যই এগুলো খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে রান্না করে নিতে হবে। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যেমন পেয়ারা, আপেল, কমলা ইত্যাদি খেতে হবে। তাহলেই গর্ভের শিশু ও মা উভয়েই ভালো থাকবেন।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

একজন মায়ের কাছে সবচেয়ে আনন্দের বাণী হলো তার সন্তানের মা ডাক। এই মা ডাক শোনার জন্য একজন গর্ভবতী মহিলা দশ মাস অনেক কষ্ট করে থাকে। সন্তানের মুখ দেখার মাধ্যমে তার এই কষ্টের পরিসমাপ্তি ঘটে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাই এ সময় খুব সাবধানতার সাথে চলাচল করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি যে দিকটা খেয়াল রাখতে হয় তা হলো খাবার। এ সময় মা ও শিশু দুজনেরই পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য নানারকম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম সবুজ শাক সবজি। তবে কিছু কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে। এসব সবজি এড়িয়ে চলায় উত্তম। এরপর আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না।

করলাঃ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ গর্ভাবস্থায় যে সবজি খেতে নিষেধ করেন তার মধ্যে একটি হলো করলা। এটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি হলেও গর্ভাবস্থায় এটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে অবস্থিত গ্লাইকোলাইসিস, ম্যারাডোসিন, সেপোনিক ইত্যাদি পদার্থ বিদ্যমান থাকে যা গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিসাধন করে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় করলা এড়িয়ে চলায় ভালো।

পেঁপেঃ গর্ভাবস্থায় যে সবজিটি একেবারেই খাওয়া উচিত নয় তা হল কাঁচা পেঁপে। কাঁচা পেঁপের অনেক গুনাগুন থাকলেও এটি গর্ভবতী মহিলার বিভিন্ন ধরনের প্রতিশোধন করে থাকে। এতে বিদ্যমান ল্যাটেক্স জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে। ফলে এটি নবজাতকের জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। আর তাই ডাক্তারগণ গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেতে নিষেধ করেন।

সজিনাঃ আমরা অনেকেই রয়েছি যাদের সাজিনা খেতে অনেক ভালো লাগে। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ এই সবজিটি গর্ভাবস্থায় খেতে নিষেধ করেন। কেননা এতে বিদ্যমান আলফা সিটেস্টেরল নামক এক ধরনের উপাদান যা গর্ভপাতও ঘটাতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সাজিনা খাওয়া পরিহার করতে হবে।

বেগুনঃ বেগুন আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি সবজি। তবে অনেকেরই এই বেগুনে এলার্জি থেকে থাকে। যাদের বেগুনে এলার্জি রয়েছে তারা গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা এ সময় বেগুন খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিলে গর্ভধারণে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। তাই যাদের এই সবজিতে এলার্জি রয়েছে তাদের এটি না খাওয়াই ভালো।

এছাড়াও এ সময় কাঁচা বিভিন্ন ধরনের সালাদ, না ধোয়া বা খোসা ছাড়ানো সবজি, কাঁচা মুলা, অঙ্কুরিত বীজ যেমন মটরশুঁটি, শিম, প্যাকেট সবজি ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এসব খাবারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকতে পারে। যেগুলো গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এছাড়াও এই সময় অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না

ফল একজন মানুষের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় ফলের বিকল্প নেই। এ সময় প্রচুর পরিমাণ ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। তবে সব ফলে যে গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি উপকারী তা বলা যাবে না। এমন কতগুলো ফল হয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া একদমই উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় এসব ফল খেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি বেশি হয়। গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাওয়া যাবেনা সেগুলো হলো-

আনারসঃ ডাক্তারগণ গর্ভাবস্থায় যে ফলটি সবচেয়ে বেশি খেতে নিষেধ করেন তা হলো আনারস। কেননা এতে বিদ্যমান ব্রোমেলাইন নামক এক ধরনের উপাদান বিদ্যমান থাকার কারণে এটি জরায়ুতে তীব্র সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে গর্ভপাতও হতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কখনোই আনারস খাওয়া উচিত নয়।

আঙ্গুরঃ গর্ভাবস্থায় আরেকটি জনপ্রিয় ফল যা খাওয়া একেবারেই উচিত নয় তা হলো আঙ্গুর। সবুজ বা কালো কোন ধরনের আঙ্গুরই গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। দুই ধরনের আঙ্গুরই গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। কেননা এতে বিদ্যমান রেজভেরট্রোল মায়েদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। এটি বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়াও কালো আঙ্গুরের খোসা সহজে হজম না হওয়ার কারণে হজমজনিত বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও আঙ্গুরের তাপ উৎপাদনকারী উপাদান বিদ্যমান থাকে যা মা ও গর্ভের শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

পেঁপেঃ পেঁপে অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ার পরও গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া একদম উচিত নয়। কেননা এতে বিদ্যমান ল্যাটেক্স জরায়ুকে সংকোচন করে। এর ফলে গর্ভবতী নারীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এমন কি এটি গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। সেইসাথে এটি গ্রহণের বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করে। তাই গর্ভাবস্থায় ফাঁকা পেঁপে খাওয়া একেবারে উচিত নয়।

তেঁতুলঃ তেঁতুল প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকলেও গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা এ সময় অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন সি গ্রহণ করা গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণ তেতুল খেলে প্রোজেস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে ভ্রূণের ক্ষতি হয়। এমনকি গর্ভপাতও ঘটতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে প্রথম তিন মাস তেতুল খাওয়া পরিহার করতে হবে।

হিমায়িত ফল বা টিনজাত ফলঃ আমরা অনেক সময় দীর্ঘদিন ফলকে সংরক্ষণ করার জন্য হিমায়িত করা হয়। ফলে সব ফল গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেইসাথে বাজারে বিভিন্ন ধরনের টিনজাত ফল কিনতে পাওয়া যায়। যা সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে একটি গর্ভবতী মায়ের খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। খেতে মা ও শিশু দুজনেরই ক্ষতি সাধন হতে পারে।

এছাড়াও এ সময় কামরাঙ্গা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খেলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই সাথে অতিরিক্ত পরিমাণ কামরাঙ্গা খেলে তা গর্ভপাতের কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ গর্ভাবস্থায় ফলমূল ও শাকসবজির পরে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাহলে মাছ। তবে অবশ্যই তা মিঠা পানির মাছ হতে হবে। কোন অবস্থাতেই গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত নয়। কেননা সামুদ্রিক মাছে অধিক মাত্রার পারদ বিদ্যমান থাকে। যার ফলে এটি গর্ভধারণের নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে।

বিশেষ করে শার্ক, সোর্ডফিশ, টাইলফিশ, টুনা ইত্যাদি বড় মাছগুলোতে ছোট মাছের তুলনায় পারদ এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এসব মাছ একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। কেননা উচ্চমাত্রায় পারদের সংস্পর্শে আসার শিশুদের বুদ্ধি ও দক্ষতা কম হয়ে থাকে।

এছাড়াও এই সময় কাঁচা বা কম সিদ্ধ মাছ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুশি, সেভিচে, গ্রাভলাক্স ইত্যাদি। এসব খাবার কাঁচা মাছ অথবা কম সিদ্ধ মাছ দিয়ে তৈরি হয় বলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। যা আপনার পেটে গিয়ে নানা ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে। কেননা এ সময় মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি

লেবু পুষ্টিগোনে ভরপুর একটি ফল। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। গর্ভাবস্থায় পরিণত পরিমাণ লেবু খাওয়া হলে এটি ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। সেই সাথে এটি শিশুর বিকাশেও সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় লেবু বমি ভাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে লেবুর ইনহেলেশন থেরাপি হালকা থেকে মাঝারি বমি ভাব দূর করতে পারে।

ভিটামিন সি একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। সেই সাথে ভিটামিন সি আয়রন শোষণকে ত্বরান্বিত করে। যার ফলে শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয় না। আর লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকার কারণে এটি গর্ভাবস্থায় অনেক উপকারে আসে। তবে ভিটামিন সি এর জন্য শুধুমাত্র লেবুর উপর নির্ভরশীল না হয়ে লেবুর পাশাপাশি অন্যান্য ফল খাওয়াতে হবে।

লেবুতে বিদ্যমান আর একটি উপাদান ফোলেট যা শিশুর ভ্রূণের স্নায়বিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। একটি লেবুতে সাধারণত ৬.৩৮ মাইক্রগ্রাম ফোলেট বিদ্যমান থাকে। যার ফলে শিশুর স্নায়বিক বিকাশের জন্য নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ লেবু খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় লেবু পানি শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

তবে গর্ভাবস্থায় অধিক পরিমাণ লেবু খেলে তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে দাঁতের জন্য। কেননা অতিরিক্ত লেবু খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে শুরু করে। এছাড়াও এটি পেটে অম্বলের সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণ লেবু না খেয়ে পরিমিত পরিমান লেবু খাওয়া উচিত। তাহলে এর থেকে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

লেখকের মন্তব্য

একজন মা নানা প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে একটি শিশুর জন্ম দিয়ে থাকে। শিশুকে এক নজর দেখার পর মায়ের সকল কষ্ট দূর হয়ে যায়। এই শিশুকে জন্মদানের জন্য মাকে খাবারের প্রতি অনেক বেশি যত্নবান হতে হয়। এ সময় অনেক বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হয়। সেই সাথে কিছু কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। উপরে উল্লেখিত খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু ভাইয়ের জন্যই ক্ষতিকর। তাই এসব খাবার পরিহার করাই উত্তম।

প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

comment url