প্রতিদিন ওয়ালনাট বা আখরোট খাচ্ছেন? জেনে নিন এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
ওয়ালনাট বা আখরোট হলো এক ধরনের বাদাম জাতীয় খাবার। এটি একটি শক্ত খোলস দ্বারা আবৃত থাকে। এর ভেতরে অবস্থিত বাদাম দেখতে অনেকটা মস্তিষ্কের মত। বাদামের উপরে বাদামী বর্ণের আস্তরণ বিদ্যমান থাকে। এতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান।
এটি গাছ থেকে পেরে খোসা ছাড়িয়ে সরাসরি হওয়া যায়। তবে সম্পূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়ার জন্য এটিকে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হয়। এছাড়াও এর পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধির জন্য দুধ ও মধুর সাথেও এটি খাওয়া যেতে পারে। ওয়ালনাট বা আখরোট খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ইত্যাদি। এ আর্টিকেলে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
ওয়ালনাট বা আখরোট কি
ওয়ালনাট বা আখরোট হলো এক ধরনের বাদাম জাতীয় ফল যা অনেক পুষ্টিকর ও খেতে অনেক সুস্বাদু। এই ফলটি সাধারণত গোলাকার হয়ে থাকে। এই ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিয়ে ভেতরের বীজটি খাওয়া হয়। ভিতরের বীজটি সাধারণত দুইটি অংশে বিভক্ত থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণ আমিষ ও ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান রয়েছে। এই বীজের উপরে বাদামি বর্ণের একটি আস্তরণ লক্ষ্য করা যায় যা আয়রনের ভরপুর।
পুষ্টিগুণের বিচারে প্রকৃতিতে পাওয়া বিভিন্ন বাদামের মধ্যে আখরোট অন্যতম। অনেকে একে জিউসের বাদাম বলে আখ্যায়িত করে। এজন্য একে দৈব খাদ্যও বলা হয়। এটি সাধারণত ড্রাইফুড হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও এটিকে মধু ও দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
আখরোট বা ওয়ালনাট খাওয়ার নিয়মাবলী
আখরোট বাদাম জাতীয় ফল হওয়ার কারণে এটি বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। নিচে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পানিতে ভিজিয়ে
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ৪/৫ আখরোট রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। কেননা সকালে খালি পেটে আখরোট খাওয়ার উপকারিতা অনেক। সেই সাথে আপনি চাইলে এটিকে না ভিজিয়েও খেতে পারেন। এক্ষেত্রে বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে নিরাপদ হলো এটিকে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া।
ড্রাই ফুড হিসেবে
আখরোট অনেক পুষ্টিকর হয় এটি ড্রাইফুড হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে ড্রাই ফুডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এর পুষ্টিগুণ বিবেচনায়। ড্রাইফুডে বিভিন্ন ধরনের ফলের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বাদাম মেশানো হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কাজু বাদাম, কাঠবাদাম ও আখরোট। এসব বাদাম মিশানোর ফলে ড্রাইফুডের পুষ্টি উপাদান অনেক গুনে বৃদ্ধি পায়। তাই আপনি চাইলে ড্রাইফুড হিসেবে আখরোট খেতে পারেন।
গুড়ো করে
আপনি চাইলে আখরোট বা ওয়ালনাট শুকিয়ে গুড়ো করে বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন কফি, কেক ইত্যাদি। এতে একদিকে যেমন এগুলোর স্বাদ বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে আখরোট মেশানোর কারণে পুষ্টিগুণও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান বিশ্বে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করার জন্য খাবারের মধ্যে আখরোটের গুড়ো মেশানো হচ্ছে। এতে করে আখরোটের পুষ্টি উপাদান কমে যাওয়ার বা নষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না।
মধু বা দুধের সাথে মিশিয়ে
আপনি চাইলে পানির পরিবর্তে এটিকে দুধ ও মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে একদিকে যেমন আখরোটের উপকারিতা পাবেন এর পাশাপাশি দুধ ও মধুর উপকারিতাও পাবেন। যা আপনার শরীরের পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করবে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ২/৩ একটি আখরোট দুধ বা মধুর সাথে মিশে খেতে পারেন তবে এটি আপনাকে সারাদিন চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে সেইসাথে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
ওয়ালনাট বা আখরোট এর উপকারিতা
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো আখরোট। এর পুষ্টিগুণের জন্য দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ইত্যাদি। এসব উপাদান শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। আখরোট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা কালো ও বাদামী। এই দুই ধরনের আখরোটই শরীরের জন্য উপকারী। আখরোটের উপকারিতা গুলো-
হার্ট ভালো রাখে
বেঁচে থাকার জন্য একটি সুস্থ হার্টের কোন বিকল্প নেই। আর এই হার্ট সুস্থ রাখার জন্য আপনাকে যে জিনিসটি সাহায্য করতে পারে তা হলো আখরোট। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান। যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এছাড়াও এটি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হার্ট ভালো রাখার জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় আখরোট রাখতে পারেন।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
আখরোট শর্করা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেহেতু রক্তের শর্করা পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাই কেউ যদি নিয়মিত আখরোট খেয়ে থাকেন তবে তার শরীরের সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে। এছাড়াও নিয়মিত আখরোট খেলে তা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে
আখরোট মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য নিয়মিত আখরোট খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে
আখরোটে এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যেগুলোর কারণে শরীরে হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এতে বিদ্যমান ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন আখরোটে ফ্যাট থাকার কারণে তা ওজন বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। তাদের এ ধারণাটি সঠিক নয়। বরং এতে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও ফাইবার দেহের পুষ্টি উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে দেহের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত আখরোট খাওয়া উচিত নয়। এতে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
ক্যান্সার সাধারণত হয়ে থাকে শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য। বিজ্ঞানের এত আবিষ্কারের পরেও বর্তমান সময়েও ক্যান্সার মরণঘাতী রোগ হিসেবে পরিচিত। এই ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে আখরোট সাহায্য করতে পারে। কেননা এতে বিদ্যমান পলিফেনলস, ইউরোলিথিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। সেই সাথে এটি ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এজন্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত আখরোটখাওয়া প্রয়োজন।
শিশুদের সঠিক বিকাশে
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যেসব পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তার প্রায় সব কয়টি আখরোটে বিদ্যমান। কেননা এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি উপাদান। এসব উপাদান শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
হাড় মজবুত করে
আমাদের অনেকেরই হাড়ের সমস্যা রয়েছে। হাড়ের সমস্যা দূর করতে সমস্যা দূর করতে এবং হাড়কে মজবুত করতে আখরোট সাহায্য করে থাকে। এতে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি এসিড হারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে হাড়কে মজবুত করতেও সাহায্য করে।
শুক্রাণুর মান বৃদ্ধি করে
একজন পুরুষের সন্তান দানের সক্ষমতা নির্ভর করে বীর্যের স্বাস্থ্যবান শুক্রাণুর উপস্থিতির উপর। তাই সন্তান লাভের জন্য শুক্রানুর মান বৃদ্ধি করা অনেক বেশি জরুরী। প্রাকৃতিক উপায়ে যেসব খাবারের মাধ্যমে শুক্রানুর মান বৃদ্ধি করা সম্ভব তাদের মধ্যে অন্যতম হলো আখরোট। নিয়মিত এটি মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে শুক্রানুর মান বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আখরোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আখরোটে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে খুব সহজেই যেকোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আখরোট খাওয়া জরুরী।
চুল পড়া রোধে
আখরোট শুধু শরীরের জন্য নয় এটি চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এতে বিদ্যমান পটাশিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড চুলের গোড়া মজবুত করে ও চুল পড়া রোধ করে। সেই সাথে এটি চুলকে ঘন, কালো ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য
গর্ভবতী মায়ের জন্য আখরোট অনেক বেশি উপকারী। কেউ যদি গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ২/৩ আখরোট খেতে পারেন তবে তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার সংঘটিত হবে। সেই সাথে এতে বিদ্যমান ফলিক এসিড অনাগত সন্তানের শরীর ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। এছাড়াও আখরোটে রয়েছে থায়ামিন, ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন ইত্যাদি। যা মা ও শিশুর জন্য অনেক বেশি উপকারী।
ত্বক ভালো রাখতে
আখরোটে বিদ্যমান ভিটামিন ত্বক ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
ভালো ঘুমের জন্য
বর্তমানে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কারণে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা রয়েছে। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা এই সমস্যার সমাধানের জন্য খাবার তালিকায় আখরোট রাখতে পারেন। কেননা এতে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রক্তচাপ কম রাখে এবং স্ট্রেস কমায়। যার ফলে ভালো ঘুম হয়।
মানসিক চাপ কমাতে
আখরোটে বিদ্যমান অ্যামাইনো এসিড সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন ক্ষরণের ফলে মেজাজ ভালো থাকে। সেই সাথে এতে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
আখরোট কোথায় পাওয়া যায়
অন্যান্য বাদামের মতো আখরোটও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। আপনার যে পরিমাণ আখরোট প্রয়োজন সেই পরিমাণে কিনতে পারবেন। ভালো মানের এক কেজি আখরোটের দাম ১৯০০ থেকে ২১০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি কম পরিমাণ আখরোট কিনতে চান তবে তুলনামূলক দাম একটু বেশি পড়বে।
আখরোটের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার পর দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও আখরোটের চাষ শুরু হয়েছে। তাই আখরোট কেনার জন্য বাজারে যেতে পারেন। কেননা নিয়মিত আখরোট খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা সংঘটিত হয়।
আখরোট ও মধুর উপকারিতা
মধু এমনিতেই শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। এর সাথে যদি আখরোট যোগ করা হয় তবে তা অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়ে যায়। এতে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে।
তাই কেউ যদি নিয়মিত আখরোট ও মধু খেয়ে থাকে তবে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে, ঘুম ভালো হবে, মানসিক অবসাদ দূর হবে, শরীর চাঙ্গা হবে ইত্যাদি। এছাড়াও আখরোট ও মধু হার্ট ও মস্তিষ্কের জন্য অনেক বেশি উপকারী। নিয়মিত এটি খাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমবে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এর পাশাপাশি এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। আখরোটে ফাইবার বিদ্যমান থাকার কারণে তা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে। বলা যেতে পারে নিয়মিত আখরোট ও মধু খেলে মানুষ প্রায় সকল ধরনের রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমবে। তাই স্বাস্থ্যবান শরীর পেতে নিয়মিত মধু ও আখরোট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত
উপরে আমরা আখরোটের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে যে প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন পাঁচটি আখরোটই যথেষ্ট। একদিনে এর বেশি পরিমাণ আখরোট খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত নয়। এতে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আখরোট খাওয়ার সর্বোত্তম উপায়টি হলো রাতে পানিতে আখরোট ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া। এতে করে আখরোট থেকে সম্পূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে আপনি চাইলে পানির পরিবর্তে দুধ ও মধু ব্যবহার করতে পারেন। এতেও দারুন উপকার পাওয়া যাবে।
আখরোটের অপকারিতা
প্রতিটি খাদ্যেরই উপকারিতা ও অপকারিতা দুই দিকই বিদ্যমান থাকে। আখরোটের এত সব উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যে কোন খাবারই একবারে অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আখরোট ও তেমনি বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আখরোটের ক্ষতিকর দিকগুলো হলো-
- অতিরিক্ত আখরোট খাওয়ার ফলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আখরোটে উচ্চমাত্রার ফাইবার বিদ্যমান থাকায় যাদের বদহজম ও আলসারের সমস্যা রয়েছে তাদের এটি না খাওয়াই ভালো। এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আখরোট খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের এটিতে এলার্জি রয়েছে তাদের এটি পরিহার করাই উত্তম।
- কালো আখরোট শরীর থেকে আয়রন শুষে নেয়। তাই বেশি পরিমাণ কালো আখরোট খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
- আখরোট বেশি খেলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এটি হয় এর খোসায় বিদ্যমান কিছু উপাদানের জন্য। তাই যাদের এই সমস্যা দেখা দেয় তাদের আখরোটের খোসা থেকে দূরে থাকা উচিত।
লেখকের মন্তব্য
আখরোটের সামান্য কিছু অপকারিতা থাকলেও এর উপকারিতা অনেক বেশি। তাই আখরোট খেলে যাদের কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় না তাদের প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ আখরোট হওয়া উচিত। বিশেষ করে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। এছাড়াও মধু ও আখরোট নিয়মিত খেলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত আখরোট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url