কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা
রসুন হলো পেঁয়াজ জাতীয় ঝাঁঝালো একটি মসলা যা রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এই রসুন। এটি সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রাচীনকাল থেকেই এর ঔষধি গুনাগুনের জন্য এর বেশ কদর রয়েছে। রসুন এ প্রায় ১০০ টির বেশি রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান। যেগুলো একে সুপারফুডের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
১৫ শতকের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে রসুনকে ব্যবহার করা হতো রক্ত রক্ত পাতলা রাখার জন্য। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস সারভাইকাল ক্যান্সারের চিকিৎসায় সর্বপ্রথম রসুনের ব্যবহার করেছিলেন। রসুনে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী থায়ামিন, নয়াসিন, ফোলেট, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, সালফার কম্পাউন্ড সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান।
রসুন একদিকে যেমন মানুষের উপকার করে থাকে অন্যদিকে কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে কাঁচা রসুনে অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার। কাঁচা রসুনের বিদ্যমান অ্যালিসিন নামক উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও কাঁচা রসুন হার্ট ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
সেই সাথে যারা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত এবং গর্ভবতী মহিলা কাঁচা রসুনের তারা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই এদের কাঁচা রসুন খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা এমনকি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তবে একজন সাধারণ মানুষের জন্য এটি অনেক বেশি উপকারী। এই আর্টিকেলে আমরা রসুন খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারী ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম
আমরা সকলেই কমবেশি রান্নার কাজে রসুন ব্যবহার করে থাকি। আমরা হয়তো অনেকেই শুধুমাত্র স্বাদ বাড়ানোর কাজেই রসুন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা রসুন হল প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। তবে এটি যেমন তেমনভাবে খেলেই চলবে না। এটি খাওয়ারও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। রান্নার কাজে ব্যবহৃত রসুনের তুলনায় কাঁচা রসুন শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনিক ২/৩ কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারে। আমরা অনেকেই মনে করি কাঁচা রসুন শুধুমাত্র সকালে খালি পেটে খেতে হয়। কিন্তু আমাদের এ ধারণাটি অনেকাংশে ভুল। আপনি দিনের যেকোনো সময় কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন। তবে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে।
কাঁচা রসুন এ বিদ্যমান অ্যালিসিন নামক উপাদান তাপ পেলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্না করা রসুনে এটি খুব একটা পাওয়া যায় না। তাই আমাদের উচিত কাঁচা রসুন খাওয়ার চেষ্টা করা। তবে এর স্বাদ বাড়ানোর জন্য কাপ নিতে মধ্য যোগ করতে পারেন। এছাড়াও আপনি গরম ভাতের সাথে কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এতেও দারুন উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়া আপনি চাইলে একে ধনেপাতার সাথে বেটে, নারকেল এর সাথে মিশিয়ে, সালাতে বা দই এ মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে রসুন ভালো ভাবে কুচি করে নিয়ে তা পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার অনেকে কয়েক কোয়া রসুন সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানির সাথে মিশিয়ে তা খেয়ে ফেলেন। এতেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
মোটকথা আপনি রসুন যেমনভাবে খান না কেন খালি পেটে কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি এর পুরোপুরি উপকার পাবেন। আপনি যদি রসুন খাওয়ার ফলে মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে চিন্তা করেন তবে তা নির্মল করার জন্য দাঁত মাজুন বা মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন। এতে গন্ধ চলে যাবে।
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাঁচা রসুন খেলে কি হয়
আমরা সকলে কমবেশি রসুন খেয়ে থাকি। কিন্তু তা রান্না করে। খেতে করে রসুনের অনেক গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি রসুন হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। তবে তা অবশ্যই কাঁচা অবস্থায় গ্রহণ করতে হবে। আমরা সচারচর এটি কাঁচা খায় না কারণ আমরা এর উপকারিতা সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা। এই পর্বে আমরা কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
রসুন কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রে এর সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য প্রকারী তা পাওয়া যায়। কাঁচা রসুন এ এমন কতগুলো উপাদান বিদ্যমান থাকে যা রান্নার পরে খুব কম অংশই অবশিষ্ট থাকে। এজন্য এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে
রসুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে বিদ্যমান অ্যালিসিন নামক উপাদান রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা চাইলে প্রতিদিন ২/৩ কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এছাড়াও রসুন রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করতে কাজ করে থাকে।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক
কাঁচা রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হওয়ার কারণে এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সংক্রামণ যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি প্রতিরোধ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
রসুনে বিদ্যমান অ্যালিসিন নামক উপাদান রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে যৌনাঙ্গে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় ফলের ফলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পুরুষের এক ধরনের যৌন সমস্যা ইরেকটাইল ডিসফাংশন থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে কাঁচা রসুন। এছাড়াও পুরুষের যৌন শক্তিবর্ধক হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধিতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এটি পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে
রসুনে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলী বিদ্যমান থাকার কারণে এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, কালো দাগ, ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল রাখতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এটি ত্বকের এলার্জি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে
ওজন কমাতে
কাঁচা রসুন ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের উপাদান শরীরের বিপাকক্রিয়া শক্তিশালী করে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে দ্রুত ওজন কমে যায়। তাই যাদের ওজন জনিত সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে নিয়মিত রসুন খেতে পারেন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও বয়সের ছাপ দূর করতে
কাঁচা রসায়নে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যার ফলে এটি নিয়মিত সেবনে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং বয়সের চাপ দূর হয়। এছাড়াও এটি দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে দেহে রোগ ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ফলে দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ নির্মূল করতে
আমরা অনেকেই কারখানায় কাজ করে থাকি। এর ফলে আমাদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে অনেক ধরনের মেটালিক পদার্থ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাবারের মেটালিক পদার্থের মিশ্রণ থাকার কারণে তা আমাদের শরীরের প্রবেশ করে। এইসব ক্ষতিকর উপাদান থেকে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। রসুন এইসব ক্ষতিকর মেটালিক পদার্থকে ভেঙে শরীর থেকে বাইরে বের করে দেয়।
হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে
রসুনে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ম্যাঙ্গানিজ সহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান বিদ্যমান। এসব উপাদান গুলো হাড়কে সুস্থ রাখতে এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও নিয়মিত রসুন খেলে এটি হাড়ের অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের উপাদান ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে
রসুন হার্টের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এছাড়াও এটি রক্তনালী প্রসারিত করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। এর ফলে হার্ট ভালো থাকে। এছাড়াও এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন হওয়ার কারণে হৃদ যন্ত্রের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
হজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কাঁচা রসুন হজম শক্তি বৃদ্ধিকে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এটি পাচনতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। এর ফলে বদহজম, পেট ফোলা, গ্যাসের সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও এটি পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতেও কাজ করে থাকে। নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
লিভারকে সুস্থ রাখতে
রসুন আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে লিভারের উপর চাপ কম হয়। যার ফলে লিভার সুস্থ থাকে এবং এর কর্মক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
জ্বালাপোড়া কমাতে
রসুনে বিদ্যমান শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ শরীরের জ্বালাপোড়া কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ জনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে থাকে।
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে
কাঁচা রসুনে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে শরীরের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে। এটি শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি কারসিনোজেনিক গুণ। অর্থাৎ এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি শরীরের কোষকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে। সে সাথে একটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। কাঁচা রসুন সাধারণত স্তন, পেট, ফুসফুস ইত্যাদিকে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
কাঁচা রসুনের অপকারিতা
প্রত্যেক জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দুই দিক রয়েছে। এটি নির্ভর করে জিনিসটি কোন পদ্ধতিতে কি পরিমান ব্যবহার করছেন তার ওপর। কাঁচা রসুনের তেমনি উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। আমরা এতক্ষন কাঁচা রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এই পর্বে আমরা কাঁচা রসুনের অপকারিতা সম্পর্কে জানব।
মুখে দুর্গন্ধঃ রসুন খাওয়ার অন্যতম অপকারিতা হলো এটি খাওয়ার ফলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এটি হওয়ার প্রধান কারণ হলো রসুন এ বিদ্যমান সালফার। এই সমস্যার কারণেই অনেকেই রসুন খেতে চায় না।
রক্তপাতলা হওয়াঃ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি রসুন খাওয়ার ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আর এর মূল কারণ হলো রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া। এই কারণে যারা অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে থাকেন তাদের রক্ত অনেক বেশি পাতলা হয়ে যেতে পারে। এর ফলে নানা ধরনের বিপত্তি দেখা যেতে পারে। এছাড়াও যারা এসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করেন তাদের কোন অবস্থাতেই কাঁচা রসুন বেশি খাওয়া উচিত নয়। কেননা এসপিরিন জাতীয় ওষুধ নিজেই রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে।
মাথা ঘুরানোঃ অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ঘুরানোর মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও রসুন যেহেতু রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপ তারা খেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা অনুভব, বমি বমি ভাব এমনকি বমি পর্যন্ত হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম হওয়াঃ কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে অধিক পরিমাণ কাঁচা রসুন খেয়ে থাকে তবে তার ঘামের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে যা তার জন্য মোটেও মঙ্গলজনক ব্যাপার নয়।
ডায়রিয়া হওয়াঃ অধিক পরিমাণে কাঁচা রসুন গ্রহণ করলে তা থেকে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এছাড়াও যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের কাছে রসুন খেলে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
লিভারের সমস্যাঃ অধিক পরিমাণে কাঁচা রসুন খেলে তা খুব সহজেই লিভারের ক্ষতিসাধন করতে পারে। কেননা এতে বিদ্যমান অ্যালিসিন উপাদান অতিরিক্ত পরিমাণে লিভারে গেলে তা থেকে বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
চোখে রক্তক্ষরণ হওয়াঃ অতিরিক্ত পরিমাণ কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে চোখের কর্নিয়া এবং আইরিশের অভ্যন্তরের রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমনকি আপনার দৃষ্টি শক্তি ও চলে যেতে পারে।
নারীর যৌনাঙ্গ টিস্যুর ক্ষতিঃ রসুন পুরুষের জন্য উপকারী হলেও যেসব নারীরা যৌনাঙ্গে ছত্রাক জনিত প্রদানের চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব রোগের ক্ষেত্রে রসুনের বিদ্যমান উপাদান গুলো যৌনাঙ্গের টিস্যুর ক্ষতিসাধন করে।
গর্ভবতী নারীর জন্যঃ গর্ভবতী নারীর জন্য কাঁচা রসুন ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অধিক পরিমাণ কাঁচা রসুন খেলে তা প্রসবকালে প্রসব বেদনা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ গ্রহণ করছে সেসব মায়ের কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তাছাড়া দুধের স্বাদ পরিবর্তন করতে পারে। যা নবজাতক শিশুর জন্য অস্বস্তিকর।
রসুনের এতসব অপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর উপকারিতা তুলনায় তা অতি নগণ্য। এছাড়াও আমরা যদি পরিণত পরিমাণে রসুন খেতে পারি তবে তা আমাদের শরীরের জন্য অপকারিতা নয় বরং উপকারিতায় বয়ে আনবে। তাই আমরা এর অপকারিতার কথা মাথায় রেখে নিয়মিত পরিণত পরিমাণ অর্থাৎ ২/৩ কোয়া রসুন গ্রহণ করব।
ভরা পেটে রসুন খেলে কি হয়
আমরা রসুনকে সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। তবে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক রকম সুফল বইয়ে আনে। রসনে এমন কতগুলো পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তবে এই রসুন ভরা পেটে নাকি খালি পেটে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে আমরা তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ভরা পেটে তুলনায় খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে তা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। আমাদের মধ্যে অনেকে বলে থাকে যে ভরা পেটে রসুন খেলে তা অনেক ক্ষতি সাধন করে। কথাটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। রসুন যেভাবে খাওয়া হোক না কেন তা থেকে কোন না কোন উপকার পাওয়া যাবে।
তবে ভরা পেটে রসুন খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের ভরা পেটে রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তারা যদি রসুন খায় তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এমনকি ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গরম ভাতের সাথে কাঁচা রসুন খেলে রুচি বৃদ্ধি পায়।
যাদের খালি পেটে রসুন খেতে সমস্যা হয় তারা চাইলেই ভাতের সাথে অথবা ভরা পেটে সামান্য পরিমাণ কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এতে কিছুটা হলেও উপকার পাবেন। তবে যেহেতু খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে এর উপকারিতা অনেক বেশি তাই আমাদের ভরা পেটে কাঁচা রসুন না খেয়ে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আশা করি বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা-খালি পেটে রসুন খেলে কি হয়
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি রসুন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। আমরা এটিও যদি সে রান্না করা রসুনের তুলনায় কাঁচা রসুন আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকারী। কিন্তু আমরা অনেকেই সংশয়ের মধ্যে থাকি যে কখন রসুন খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
গবেষকদের মতে সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে তা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার মিলে। সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে তা আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার চলুন তা জেনে নেওয়া যাক-
শরীরকে চাঙ্গা রাখেঃ কেউ যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন গ্রহণ করে তবে তা সারাদিন শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এটি শরীরে সারাদিনের কাজ করার শক্তি যোগাবে।
ঠান্ডার সমস্যা দূর করেঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি নিয়মিত খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেতে পারেন। এভাবে কিছুদিন খাওয়ার ফলে আপনার ঠান্ডা লাগার সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
হৃদরোগের সমস্যা দূর করতেঃ বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই যারা হৃদরোগে ভুগছেন তাদের জন্য রসুন খুবই উপকারী। এটি হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এটি হৃদস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রণ করে ফলে হৃদপেশীর দেয়ালের চাপ অনেকটাই কমে যায়। এর ফলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।
ডিটক্সিফাইঃ রসুন প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে পরিচিত। এতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেউ যদি নিয়মিত সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে তবে তা তার শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মেটাবলিক রেট বেশি থাকে। এর ফলে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়ঃ নিয়মিত সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে তা আমাদের বিপাকক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে। এর ফলে শরীরের ভিতরে অবস্থিত বিষাক্ত উপাদানসমূহ মূত্রের মাধ্যমে খুব সহজেই শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে যায়।
রক্ত পরিশুদ্ধ করেঃ আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রক্ত। বিভিন্ন কারণে রক্তের বিষাক্ত পদার্থ জমতে পারে। রসুন এই বিষাক্ত পদার্থ দূর করে রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। এছাড়া এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে। এ কারণেই রক্ত পরিশুদ্ধ রাখতে রসুনের ভূমিকা অপরিসীম।
রাতে রসুন খেলে কি হয়
রসুনের রয়েছে গুনাগুন। এটি এক দিকে যেমন রান্নার সাত বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে তেমনি কাঁচা অবস্থায় এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। কেউ যদি রাতে ঘুমানোর পূর্বে কয়েক কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী হবে। তাহলে চলুন রাতে রসুন খেলে কি হয় তা জেনে নেওয়া যাক-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ রসুনের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। কেউ যদি প্রতিদিন রাতে কয়েক কোয়া কাঁচা রসুন সেবন করে তবে তার সর্দি, কাশি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ কমে যাবে।
ভালো ঘুম হওয়াঃ রাতে ঘুমানোর পূর্বে রসুন খেলে তা ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে। কেননা রসুনের বিদ্যমান ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড সেরোটোনিন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে ক্লান্তি দূর হয়ে ভালো ঘুম হয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ রসুন এ বিদ্যমান অ্যালিসিন নামক উপাদান শরীরের রক্ত না লিখে প্রসারিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও একটি রক্তকে পাতলা করে ফলে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়। তাই যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে তাদের নিয়মিত ঘুমানোর পূর্বে কাঁচা রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ রসনে প্রচুর পরিমাণ পরিপাক এনজাইম বিদ্যমান। যার ফলে রাতে ঘুমানোর পূর্বে কাঁচা রসুন খেলে তা খাবার খেয়ে খুব সুন্দর ভাবে পরিপাক হতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষাতে কাজ করে থাকে।
লেখকের মন্তব্য
গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরেই কম বেশি রসুনের দেখা মিলে। সাধারণত এটি তরকারির স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও এটি শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তবে রান্না করার রসুনের তুলনায় কাঁচা রসুনের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বিশেষ করে কেউ যদি সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেতে পারে তবে এর থেকে অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব। তবে গর্ভবতী মহিলা ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে রসুন খাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনি এটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!!
আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি এখানে লিখুন। প্রতিটি মন্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
comment url